in

টেস্টোস্টেরন ঘাটতির লক্ষণ ও চিকিৎসা

low testosterone and treatment

টেস্টোস্টেরন হরমোন উৎপাদনে ঘাটতি দেখা দিলে শরীরে কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। মানে আপনার শরীর পর্যাপ্ত পরিমাণে টেস্টোস্টেরন উৎপাদন না করলে শরীর কিছু সিগনালের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিবে যেগুলো সম্পর্কে আমাদের ধারনা থাকা গুরুত্বপূর্ণ। এই লো টেস্টোস্টেরনের লক্ষণ এবং সাথে এর চিকিৎসা কি তা নিয়ে আমাদের এবারের পর্ব।

লো টেস্টোস্টেরনকে ভিন্ন কিছু নামেও ডাকা হয়, যেমনঃ

  • টেস্টোস্টেরন ডেফিসিয়েন্সি সিন্ড্রোম
  • টেস্টোস্টেরন ডেফিসিয়েন্সি
  • প্রাইমারি হাইপোগোনাডিজম
  • সেকেন্ডারি হাইপোগোনাডিজম
  • হাইপারগোনাডোট্রপিক হাইপোগোনাডিজম
  • হাইপোগোনাডোট্রপিক হাইপোগোনাডিজম

টেস্টোস্টেরনের কাজ কি?

টেস্টোস্টেরন হল প্রধান এন্ড্রোজেন। এটি শরীরে নানা পুরুষালি বৈশিষ্ট্যের বিকাশ ঘটায় এবং শুক্রাণু উৎপাদনের (স্পার্মাটোজেনেসিস) জন্য এটা অপরিহার্য। নারীদের চেয়ে পুরুষদের দেহে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা অনেক বেশী থাকে। টেস্টোস্টেরন শরীরে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যেমন:

  • লিঙ্গ ও অণ্ডকোষের বিকাশ;
  • বয়ঃসন্ধির সময় কণ্ঠস্বর গভীর হওয়া;
  • বয়ঃসন্ধির শুরুতে মুখে দাড়ি এবং গুপ্তাঙ্গে লোমের আবির্ভাব; পরবর্তী জীবনে অবশ্য হরমোনটি টাক পড়ার ক্ষেত্রে দায়ী থাকে;
  • পেশীর আকার ও শক্তিবৃদ্ধি;
  • হাড়ের বিকাশ ও শক্তিবৃদ্ধি;
  • যৌনকামনা;
  • শুক্রাণু উৎপাদন;
  • মেজাজ ঠিক রাখা।

আপনার দেহ সাধারণত কঠোরভাবে রক্তে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। এর মাত্রা সাধারণত সকালে সর্বোচ্চ থাকে এবং সারাদিন কমতে থাকে।

হাইপোথ্যালামাস এবং পিটুইটারি গ্রন্থি সাধারণত নিয়ন্ত্রণ করে যে আপনার অণ্ডকোষ কতখানি টেস্টোস্টেরন উৎপন্ন করবে।

হাইপোথ্যালামাস গোনাডোট্রপিন-রিলিজিং হরমোন (GnRH) নিঃসরণ করে, যা পিটুইটারি গ্রন্থিকে লুটিনাইজিং হরমোন (LH) নিঃসরণ করতে সিগন্যাল দেয়। লুটিনাইজিং হরমোন তারপর আপনার গোনাডে (অন্ডকোষ বা ডিম্বাশয়) যায় এবং টেস্টোস্টেরন উৎপাদনকে উদ্দীপিত করে।

অণ্ডকোষ, হাইপোথ্যালামাস অথবা পিটুইটারি গ্রন্থিতে সমস্যার কারণে টেস্টোস্টেরন কম উৎপন্ন হতে পারে।

টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কত হলে লো বলা হবে?

আমেরিকান ইউরোলজি অ্যাসোসিয়েশন (AUA) প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে প্রতি ডেসিলিটার (ng/dL) রক্তে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা ৩০০ ন্যানোগ্রামের কম হলে সেটাকে লো ব্লাড টেস্টোস্টেরন স্বীকৃতি দেয়।

তবে কিছু গবেষক এই মাত্রার সাথে একমত নন। তারা প্রতি ডেসিলিটার (ng/dL) রক্তে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা ২৫০ ন্যানোগ্রামের কম হলে সেটাকে লো টেস্টোস্টেরন মনে করেন। লো টেস্টোস্টেরন নির্ণয়ের সময় চিকিৎসকরা ব্যক্তির দেহের নানা লক্ষণগুলোকেও বিবেচনা করেন।

লো টেস্টোস্টেরনের লক্ষণগুলো কি কি?

সাধারণত বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে লো টেস্টোস্টেরনের উপসর্গগুলো দেখা দিতে শুরু করে। পুরুষদের দেহে লো টেস্টোস্টেরনের যেসব প্রভাব দেখা যায় তা হলঃ

  • যৌনকামনা কমে যাওয়া;
  • লিঙ্গোত্থান সমস্যা;
  • বগল ও গুপ্তাঙ্গের চুল পড়ে যাওয়া;
  • হঠাৎ করে গরম লাগা;
  • অণ্ডকোষ ছোট হয়ে যাওয়া;
  • বীর্যে শুক্রাণুর পরিমাণ কমে যাওয়া (অ্যাজুস্পার্মিয়া)। এটি পুরুষের অক্ষমতার জন্য দায়ী।

এ ছাড়া আরো কিছু লক্ষণ হলঃ

  • মন খারাপ থাকা
  • মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তিতে সমস্যা
  • দেহের ফ্যাট বৃদ্ধি পাওয়া
  • পুরুষ স্তন বড় হওয়া (গাইনেকোম্যাস্টিয়া)
  • পেশীশক্তি কমে যাওয়া
  • পেশীর ঘনত্ব কমা
  • ধী-শক্তি কমে যাওয়া

শিশুদের মধ্যে লো টেস্টোস্টেরনের লক্ষণ

বয়ঃসন্ধির আগে বা বয়ঃসন্ধির সময় বাচ্চাদের মধ্যে লো টেসটোসটেরনের নানা উপসর্গ দেখা দিতে পারে:

  • দৈহিক উচ্চতা ধীরে ধীরে বাড়া, তবে তাদের হাত-পা দেহের অন্যান্য অংশের সাথে অনুপাত বজায় না রেখে বাড়তে পারে।
  • গুপ্তাঙ্গের লোম ধীরে ধীরে বিকশিত হয়।
  • তাদের লিঙ্গ এবং অণ্ডকোষের বৃদ্ধি ধীরে হয়।
  • গলার স্বরে গভীরতা থাকে না। থাকলেও স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকে।
  • শক্তি কম হয়, কম সহনশীল হয়।

টেস্টোস্টেরন কম হওয়ার কারণ কী?

লো টেসটোসটেরনের বিভিন্ন সম্ভাব্য কারণ রয়েছে। দুই ধরনের মেল হাইপোগোনাডিজম হল:

  • প্রাইমারি হাইপোগোনাডিজম (টেস্টিকুলার ডিসঅর্ডার);
  • সেকেন্ডারি হাইপোগোনাডিজম (পিটুইটারি/হাইপোথ্যালামাস ডিসফাংশন)।

কীভাবে টেস্টোস্টেরন লেভেল পরীক্ষা করা যাবে?

আপনার মধ্যে টেস্টোস্টেরন হরমোন উৎপাদনের ঘাটতির লক্ষণ ও উপসর্গ থাকলে একজন চিকিৎসক শারীরিক পরীক্ষা করবেন। তারা আপনার মেডিকেল হিস্টোরি, কি কি ওষুধ খান অথবা খেতেন, ধূমপান করেন কী না এবং বর্তমানে লো টেস্টোস্টেরনের কি কি লক্ষণ নিজের মধ্যে দেখছেন ইত্যাদি পরীক্ষা করবেন। আপনাকে রক্তপরীক্ষাও দেওয়া হতে পারে।

রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে চিকিৎসক নির্দিষ্ট লক্ষণ, উপসর্গ এবং রক্তপরীক্ষার ফলাফল চেক করবেন।

নিম্নলিখিত পরীক্ষাগুলো লো টেস্টোস্টেরন নিশ্চিত করতে এবং এর কারণ নির্ধারণে সহায়তা করেঃ

টোটাল টেস্টোস্টেরন লেভেল ব্লাড টেস্ট:

এই পরীক্ষার ক্ষেত্রে সাধারণত সকাল ৮ টা থেকে ১০ টার মধ্যে দুটি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এসময় টেস্টোস্টেরনের মাত্রা সর্বোচ্চ থাকে। আপনি অসুস্থ হলে বা সম্প্রতি অসুস্থ হয়ে থাকলে তাদের অভিহিত করবেন। তীব্র অসুস্থতা থাকলে ভুল ফলাফল আসতে পারে।

লুটিনাইজিং হরমোন (LH) রক্ত পরীক্ষা:

এই পরীক্ষাটি দিয়ে বোঝা যায় পিটুইটারি গ্রন্থির কারণে আপনার রক্তে টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ কম কী না।

প্রোল্যাক্টিন রক্ত পরীক্ষা

উচ্চ প্রোল্যাক্টিনের মাত্রা পিটুইটারি গ্রন্থির সমস্যা বা টিউমারের লক্ষণ হতে পারে।

টেস্টোস্টেরন ঘাটতির চিকিৎসা কি?

জেনেটিক কন্ডিশনের কারণে বা শুক্রাশয়, হাইপোথ্যালামাস বা পিটুইটারি গ্রন্থির সমস্যার কারণে টেস্টোস্টেরন হরমোন উৎপাদনে ঘাটতি দেখা দিলে তা প্রতিরোধ কীভাবে করা যাবে এ ব্যাপারে এখনও পর্যাপ্ত সঠিক জ্ঞান নেই।

তবে নির্দিষ্ট লাইফস্টাইল অনুসরণ করলে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা স্বাভাবিক রাখা যায়। যেমনঃ

  • স্বাস্থ্যসম্পন্ন সুষম খাবার খাওয়া;
  • এক্সারসাইজ করা;
  • ওজন নিয়ন্ত্রণ করা;
  • মদ/সিগারেট না খাওয়া। 

What do you think?

Written by শাহেদ হাসান

আমি লেখালেখি করতে বরাবরই ভালোবেসেছি। বর্তমানে গ্রন্থ অনুবাদ ও মৌলিক লেখার পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়া ও বিভিন্ন ব্লগেও লেখালেখি করছি। পড়াশোনা করছি রাজশাহী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

importance of skin toner

টোনার কী? ত্বকের যত্নে টোনারের গুরুত্ব জানেন তো?

Budget Friendly Sunscreen SPF

১০০০ টাকার মধ্যে খুব ভালো মানের ৫টি সানস্ক্রিন সম্পর্কে জানুন