in

টোনার কী? ত্বকের যত্নে টোনারের গুরুত্ব জানেন তো?

importance of skin toner

শীত, গ্রীষ্ম কিংবা বর্ষা – পুরো বছরজুড়ে আমাদের ত্বক ভালো রাখতে স্কিন টোনার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অনেকেই মনে করেন টোনার ব্যবহার করা তেমন প্রয়োজনীয় নয়। এটি কিন্তু একটি ভুল ধারণা। কারণ নিয়মিত টোনার ব্যবহার করলে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা তো দূর হয়ই, সেই সাথে ত্বক হয়ে ওঠে দারুণ মসৃণ ও স্বাস্থ্যজ্জ্বল। আজকের লেখায় থাকছে ত্বকের যত্নে টোনারের গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত।

টোনার কী?

টোনার হলো পানির মতো পাতলা কনসিসটেন্সির এমন একটি স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট, যা ত্বকের লোমকূপে জমে থাকা মেকআপ ও ধুলোবালি পুরোপুরি দূর করতে ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া টোনারে থাকা বিভিন্ন অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট, যেমন: ভিটামিন সি, স্যালিসাইলিক অ্যাসিড, টি ট্রি অয়েল, গ্লাইকোলিক অ্যাসিড আমাদের ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করতেও সহায়তা করে।

ফেসওয়াশ ব্যবহার করেও আবার টোনার কেন?

এখন আপনারা প্রশ্ন করতে পারেন, “ফেইসওয়াশ তো ব্যবহার করিই, তাহলে আলাদা করে টোনার ব্যবহার করবো কেন?”

বলছি! আসলে ক্লেনজার বা ফেসওয়াশ দিয়ে খুব ভালোভাবে মুখ ধোয়া সত্ত্বেও অনেক সময় আমাদের লোমকূপে মেকআপ কিংবা ধুলোবালি থেকে যেতে পারে, যা থেকে পরবর্তীতে ব্রণের সংক্রমণ হতে পারে। টোনার ব্যবহার করলে ত্বক একদম ভেতর থেকে পরিষ্কার হয় এবং লোমকূপে আর কিছুই জমতে পারেনা। ফলে ত্বক সবসময় থাকে পরিষ্কার ও ব্রণমুক্ত।

ত্বকের যত্নে টোনারের ভূমিকা কী?

অনেকেই মনে করেন, যাদের ত্বক সেনসিটিভ বা অ্যাকনেপ্রণ, তাদের টোনার ব্যবহার করা উচিৎ নয়। আসলে আগেকার সময়ে টোনারে অ্যালকোহল ব্যবহার করা হতো বলে এটি সব স্কিন টাইপে স্যুট করতোনা। কিন্তু বর্তমান সময়ে বেশিরভাগ টোনারই অ্যালকোহল ফ্রি ও মাইল্ড ফর্মুলার হয়ে থাকে।

তাই আপনার স্কিন টাইপ যেটিই হোক না কেন, চোখ বন্ধ করে নিজের স্কিন কেয়ার রুটিনে টোনার অ্যাড করতে পারেন। চলুন এখন জেনে নেয়া যাক আমাদের ত্বক সুন্দর রাখতে টোনার কী কী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সে সম্পর্কে।

ত্বকের পিএইচ লেভেল ব্যালেন্স করে

প্রতিদিন আমরা যখন ফেইসওয়াশ বা ক্লেনজার ব্যবহার করি, তখন সেগুলো আমাদের ত্বকের পিএইচ লেভেল অনেকটা বাড়িয়ে দেয়। এর ফলস্বরূপ ত্বকে ড্রাইনেস বা বাম্পস দেখা দিতে পারে। টোনার ব্যবহার করলে ত্বকের পিএইচ লেভেল সব সময় নিয়ন্ত্রিত থাকে ও ত্বক কখনোই অতিরিক্ত শুষ্ক অনুভূত হয় না।

পোরস বড় হয়ে যাওয়ার সমস্যা কমায়

অনেকেই অভিযোগ করেন যে, তাদের মুখের পোরস বা লোমকূপগুলো দিন দিন বড় হয়ে যাচ্ছে এবং মেকআপ করার পরেও তা বোঝা যাচ্ছে। এই সমস্যা সমাধান করতে টোনার ম্যাজিকের মতো কাজ করে। নিয়মিত টোনার ব্যবহার করলে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই পোরস ছোট হতে শুরু করে ও সেই সাথে ত্বক হয়ে ওঠে আগের চাইতে মসৃণ ও কোমল।

ত্বক হাইড্রেটেড রাখে

ত্বক সবসময় কোমল, মসৃণ ও চকচকে রাখতে হাইড্রেশনের কোনো বিকল্প নেই। ময়েশ্চারাইজারের পাশাপাশি ত্বকে প্রয়োজনীয় হাইড্রেশনের যোগান দিতে টোনারের ভূমিকা অতুলনীয়। বিশেষ করে যে টোনারগুলোতে রোজ ওয়াটার, মধু, অ্যালোভেরা অথবা শশার এক্সট্র‍্যাক্টস থাকে, সেগুলো ব্যবহার করলে ত্বক সব সময় হাইড্রেটেড রাখা সম্ভব হয় এবং সেই সাথে ত্বকে ন্যাচারাল গ্লো ও দেখা যায়!

ত্বকের ব্যারিয়ার স্ট্রং করে তোলে

প্রতিদিন চারপাশের পরিবেশের দূষিত উপাদানগুলোর কারণে এবং একইসাথে ভুলভাল স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করার কারণে আমাদের ত্বকের ব্যারিয়ার ড্যামেজ হতে পারে। এই ড্যামেজের কারণে স্কিনে ড্রাইনেস, রেডনেস, অ্যাকনে অথবা ক্লোজড কমেডোনসের সমস্যা খুব বেশি হয়। যদি আপনারা নিজেদের স্কিন কেয়ার রুটিনে টোনার অ্যাড করেন ও নিয়মিত ব্যবহার করেন, তাহলে এটি আপনার ত্বকের ব্যারিয়ারকে স্ট্রং করবে এবং এর ফলে দ্রুতই আপনার ত্বক হয়ে উঠবে আরো হেলদি।

যেকোনো প্রোডাক্ট দ্রুত স্কিনে অ্যাবজর্ব করতে সাহায্য করে

অনেকের ত্বকেই মেকআপ ঠিকভাবে বসতে চায় না। আবার অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায়, তারা ভালো ভালো স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করেও আশানুরূপ ফলাফল পাচ্ছেন না। টোনার ব্যবহার করে এই সমস্যাটি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। কেন জানেন? কারণ যেহেতু টোনার ব্যবহার করলে আমাদের লোমকূপে কোনো ময়লা বা মেকআপ জমে থাকতে পারে না, তাই লোমকূপ বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকেনা। তখন যেকোনো স্কিন কেয়ার বা মেকআপ প্রোডাক্ট আমাদের ত্বকের সাথে খুব দ্রুত মিশে যেতে পারে ও ঠিকভাবে কাজ করতে পারে।

টোনার কখন কিভাবে ব্যবহার করতে হয়?

আপনারা প্রতিদিন সকালে ও রাতে যখন ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ পরিষ্কার করবেন, তার পরপরই মুখ হালকা ভেজা থাকা অবস্থায় টোনার ব্যবহার করতে পারেন। চাইলে একটি কটন প্যাডে কয়েক ফোঁটা টোনার নিয়ে তা পুরো মুখে ব্যবহার করতে পারেন। আবার চাইলে হাতের আঙ্গুলের সাহায্যে ড্যাবিং মোশনেও টোনার ব্যবহার করা যায়। তবে হ্যাঁ, চোখের চারপাশের এরিয়াতে টোনার ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্ক থাকুন। তা না হলে ইরিটেশন বা চুলকানি হতে পারে।

টোনার কোনটা ভালো?

আমি জানি, টোনার সম্পর্কে বিস্তারিত জানার পর আপনারা অনেকেই এখন প্রশ্ন করবেন যে কোন ব্র্যান্ডের টোনার ব্যবহার করা যেতে পারে? এবার এই প্রশ্নের উত্তর দেই৷ সবসময় চেষ্টা করবেন নিজের ত্বকের ধরন ও সমস্যা অনুযায়ী টোনার বেছে নিতে। যেমন ধরুন,

০১। আপনার যদি অয়েলি স্কিন হয় এবং একইসাথে এনলারজড পোরস থাকে, তাহলে Biotique ব্র‍্যান্ডের Bio Cucumber Pore Tightening Toner ব্যবহার করে দেখতে পারেন।

০২। যাদের ড্রাই স্কিন, তারা হাইড্রেটিং টোনার হিসেবে Mamaearth ব্র‍্যান্ডের Rose Face Toner with Witch Hazel and Rose Water for Pore Tightening এই টোনারটি ব্যবহার করে দেখতে পারেন।

০৩। সেনসিটিভ স্কিনের জন্য Simple ব্র‍্যান্ডের Kind to Skin Soothing Facial Toner খুব ভালো কাজ করে। তাই বিগিনাররা নিশ্চিন্তে এটি ব্যবহার করতে পারেন।

এটুকুই ছিলো আজকের আলোচনা। আশা করি এখন থেকে আপনারা সবাই সুন্দর ত্বক পেতে প্রতিদিন টোনার ব্যবহার করবেন। এমন আরো তথ্যবহুল লেখা পড়তে আমাদের সাথেই থাকুন।

What do you think?

Written by সুমাইয়া রহমান দোলা

লেখালেখি শুরু করেছিলাম শখের বশেই৷ এখন এটি আমার নেশা, আবার পেশা ও বটে। প্রতিনিয়ত চেষ্টা করছি এখন ভালো লেখক হয়ে ওঠার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

what is testosterone

টেস্টোস্টেরন কি? দেহে টেস্টোস্টেরনের ভূমিকা

low testosterone and treatment

টেস্টোস্টেরন ঘাটতির লক্ষণ ও চিকিৎসা