in

প্রাকৃতিকভাবে টেস্টোস্টেরন বৃদ্ধির পাঁচ উপায়

প্রাকৃতিকভাবে টেস্টোস্টেরন বৃদ্ধির উপায়

নারী-পুরুষ উভয়ের স্বাস্থ্য ও ভালো থাকার ক্ষেত্রে টেস্টোস্টেরন অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। লো টেস্টোস্টেরনের কারণে দেহে নানা অনাকাঙ্খিত উপসর্গ দেখা দিতে পারে যেমন কম যৌনাকাঙ্খা, কম এনার্জি, মনোযোগের সমস্যা এবং পেশি কমে যাওয়া। এ ছাড়া লো টেস্টোস্টেরন নানা সিরিয়াস সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে যেমন হৃদরোগ, মেটাবলিক সিনড্রোম, অস্টিওপোরোসিস এবং এমনকি মৃত্যুঝুঁকি বৃদ্ধি। এই লেখায় আমরা প্রাকৃতিকভাবে টেস্টোস্টেরন লেভেল বাড়ানোর পাঁচটি উপায় জানব।

১. বাড়তি ওজন কমানো

অতিরিক্ত দৈহিক ওজন, বিশেষ করে স্থূলতা টেস্টোস্টেরন লেভেলের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ফ্যাট সেলে এক ধরণের এনজাইম থাকে, যেটা টেস্টোস্টেরনকে এস্ট্রাডিওলে রূপান্তরিত করে। এস্ট্রাডিওল হল এস্ট্রোজেনেরই আরেক রূপ। তাই স্বাভাবিক টেস্টোস্টেরন লেভেল বজায় রাখার জন্য ওজন কমানো খুবই জরুরী।

কিন্তু তার মানে এই নয় যে আপনাকে অনেক ওজন করাতে হবে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, গড়ে ৪৬ পাউন্ড ওজন কমালে সেটা আপনার টেস্টোস্টেরন লেভেলের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করবে। তবে এই পরিমাণটা নির্ধারিত নয়। আপনাকে কি পরিমাণ ওজন কমাতে হবে তা নির্ভর করবে আপনার দেহে কতটুকু চর্বি জমে আছে তার ওপর। আপনার জন্য একটি সাজেশন হল – বাড়তি চর্বি কমানোর জন্য শরীরচর্চা করুন।

২. শরীরচর্চার গুরত্ব

সঠিক টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বজিয়ে রাখার জন্য টেস্টোস্টেরন অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ। তবে যে কোনো ধরণের শরীরচর্চা বা ব্যায়াম করলেই হবে না; কি ধরণের ব্যায়াম ও কি মাত্রার ব্যায়াম করছেন সেটাও জরুরী।

গবেষণায় দৌড়ানোর মতো ব্যায়ামের সাথে হাই-ইনটেনসিটি ইন্টারভাল ট্রেইনিং (HIIT)-এর তুলনা করা হয়। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, HIIT এই তুলনায় বিজয়ী হয়। এটি ব্যাপকভাবে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বৃদ্ধি করে। তবে উল্লেখ্য যে, যারা HIIT- তে অংশ নিয়েছিল ১২ ঘন্টা পর তাদের টেস্টোস্টেরনের মাত্রা আবার কমে যায়। সম্ভবত তাদের দেহ টেস্টোস্টেরনকে ব্যবহার করছিল ব্যায়ামের ক্লান্তি কাটিয়ে ওঠার জন্য। তাই এ ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষা প্রয়োজন।

৩. সঠিক ডায়েট

টেস্টোস্টেরন উৎপাদনে আপনার ডায়েট খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এমন অনেক খাবার আছে যেমন মধু, বাদাম যেগুলোকে টেসটোসটেরন বুস্টার হিসাবে প্রচার করা হয়। তবে আপনি যা যা খাচ্ছেন সেগুলো আপনার দেহে কিরূপ প্রভাব ফেলছে তা বোঝা খুব জরুরী।  

আপনি চেষ্টা করবেন যথাসম্ভব প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলতে। প্রক্রিয়াজাত খাবারের মধ্যে আছে চিপস, বার্গার, বিভিন্ন ফাস্ট ফুড ইত্যাদি। এগুলোর বদলে আপনি প্রাকৃতিক, স্বাভাবিক খাবার খাওয়ার চেষ্টা করবেন। সবজি বাজার থেকে প্রাকৃতিক খাবার কেনার চেষ্টা করুন। কৃত্রিম প্রিজারভেটিভ ব্যবহার করে সংরক্ষণ করা সবজি এড়িয়ে চলুন। একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল অনুসারে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে, চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া কমিলে দিলে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমতে পারে। যেসব সুঠাম ওজনওয়ালা ভাইয়েরা টেস্টোস্টেরন বাড়াতে চান, তারা তাদের খাবারে চর্বির পরিমাণ বাড়ানোর চেষ্টা করতে পারেন।

সয়াজাতীয় খাদ্যপণ্যগুলো নিয়ে সচেতনতা দেখা যায়। বলা হয় যে, টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ কমাতে সয়াজাতীয় পণ্যের ভূমিকা আছে। কারণ সয়াতে আইসোফ্লাভোন নামক এস্ট্রোজেনের মতো একটি যৌগ আছে। যাইহোক, একটি বড়সড় গবেষণায় দেখা গেছে যে, এমনকি উচ্চ মাত্রায় সয়া খেলেও টেস্টোস্টেরনের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে না। তবুও সাবধান থাকা উত্তম। অতিরিক্ত সয়াজাতীয় খাবার না খাওয়ার চেষ্টা করব আমরা।

৪. সঠিক পরিমাণে ঘুম

বিগত কয়েক বছরে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে ঘুমের গুণগত মান ও ঘুমের পরিমাণ দুটোই কমেছে। এটি টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমিয়ে দেয়।

গবেষণায় ঘুমের সময়কাল এবং টেস্টোস্টেরনের মাত্রার সাথে সরাসরি সম্পর্ক পাওয়া গেছে। এক ঘন্টা ঘুম কম হলে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা প্রায় ছয় পয়েন্ট কমে যায়। এ ছাড়া, দেখা গেছে যারা দৈনিক প্রয়োজনের তুলনায় কম ঘুমিয়েছে তাদের দিনের বেলা টেস্টোস্টেরনের মাত্রা ১৫% কমে যায়। নিয়মিত ঘুম কম হলে এটা হরমোনের ভারসাম্যে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।

সঠিক সময়ে ঘুমানোর জন্য একটা ঘুমানোর রুটিন করুন। চেষ্টা করবেন প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমোতে যাওয়ার। ঘুমানোর আগে ফোন, ল্যাপটপ এগুলো ব্যবহার থেকে দূরে থাকবেন। আশা করা যায় এসবের মাধ্যমে আপনার ঘুমের কোয়ালিটি বৃদ্ধি পাবে, আর ফলস্বরূপ আপনার টেস্টোস্টেরনের মাত্রাও ভালো থাকবে।

৫. এন্ডোক্রাইন বিঘ্নকারীগুলো এড়িয়ে চলুন

বিপিএ (বিসফেনল এ) এর মতো এন্ডোক্রাইন বিঘ্নকারী কেমিক্যালগুলো আমাদের পরিবেশে অনেক বেড়ে গেছে নানা দূষণ, কসমেটিক ও প্লাস্টিকের ব্যবহারের কারণে। এসব কেমিক্যালগুলো আমাদের এন্ডোক্রাইন সিস্টেমে বিঘ্ন ঘটায়, আর এই সিস্টেম টেস্টোস্টেরন উৎপাদনে অনেক গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ফলে টেস্টোস্টেরন উৎপাদনও কমে যায়।

গবেষণায় উচ্চমাত্রার বিপিএর সংস্পর্শের সাথে কিশোরদের মধ্যে লো টেস্টোস্টেরনের সম্পর্ক পাওয়া গেছে। বিপিএর সংস্পর্শ এড়িয়ে চলার জন্য প্লাস্টিক কন্টেইনার ব্যবহার করা এড়িয়ে চলুন। এর বদলে কাঁচ বা ধাতব জিনিস ব্যবহার করুন। প্লাস্টিক কন্টেইনারে খাবার গরম করবেন না। কন্টেইনার বা রান্নাঘরের সামগ্রী কেনার সময় “বিপিএ-মুক্ত” পণ্য কেনার চেষ্টা করবেন। তাহলে অনাকাঙ্খিতভাবে এন্ডোক্রাইন বিঘ্নকারী জিনিসগুলো আপনার ঘরে ঢুকতে পারবে না।

৬. বোনাস – অশ্বগন্ধা পাউডার

অশ্বগন্ধা পাউডার একটি হার্বাল সাপ্লিমেন্ট। মানসিক চাপ দূর করা এবং উদ্বিগ্নতা কমানোর জন্য অশ্বগন্ধা পাউডার বেশ পরিচিত। কিন্তু টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বৃদ্ধিতেও এর ভূমিকা আছে। অশ্বগন্ধার একটি গবেষণায় দেখা গেছে, এটি গবেষণায় অংশ নেওয়া সাবজেক্টদের টেস্টোস্টেরন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করেছে। এর পাশাপাশি উদ্বিগ্নতা ও বিষণ্নতাও তাদের কমে গিয়েছিল। সুতরাং এই পাউডারটি মানসিক ও হরমোনের ভারসাম্য রক্ষায় বেশ উপকারী। স্বাভাবিক টেস্টোস্টেরন লেভেল বজায় রাখা সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ওজন নিয়ন্ত্রণ, নিয়মিত ব্যায়াম, সঠিক ডায়েট, পরিমিত ঘুম এবং এন্ডোক্রাইন বিঘ্নকারীগুলো এড়িয়ে চলার মাধ্যমে আপনি স্বাভাবিক টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বজায় রাখতে পারবেন। আপনার টেসটোসটেরন মাত্রা এবং সামগ্রিক সুস্থতা স্বাভাবিকভাবে ধরে রাখতে অবশ্যই জীবনধারায় পরিবর্তন আনতে হবে। একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের পুরুষালি ও কর্তব্যপরায়ণ হওয়া একটি উচিত। শক্তি, সাহস, দায়িত্ববোধ ও রক্ষকত্বের মতো বৈশিষ্ট্যগুলো প্রতিটি মুসলিম পুরুষের থাকতে হবে। ইসলাম পুরুষদের উপর যে ভূমিকা ও দায়িত্ব অর্পণ করেছে সেগুলো রক্ষা করলে পরিবারের ভরণপোষণ, ঈমান রক্ষা করা এবং সমাজে ন্যায়বিচার ও নৈতিক মূল্যবোধ সমুন্নত রাখা সহজ হয়ে যায়। আর এসব বৈশিষ্ট্যগুলোর বহিঃপ্রকাশ দেখা যায় যখন টেস্টোস্টেরনের মাত্রা স্বাভাবিক থাকে।

What do you think?

Written by শাহেদ হাসান

আমি লেখালেখি করতে বরাবরই ভালোবেসেছি। বর্তমানে গ্রন্থ অনুবাদ ও মৌলিক লেখার পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়া ও বিভিন্ন ব্লগেও লেখালেখি করছি। পড়াশোনা করছি রাজশাহী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

skin care for teenagers problems and solutions

টিনএজারদের ত্বকের যত্ন: সমস্যা ও সমাধান

হাত পায়ের কালো দাগ

হাত ও পায়ের কালো দাগ দূর করার সহজ উপায় জানুন