বিষন্নতা, হতাশা বা ডিপ্রেশন- এ জাতীয় শব্দগুলোর সাথে আমরা ইদানীং খুব বেশি পরিচিত। আমাদের আশেপাশের বন্ধুবান্ধব থেকে শুরু করে আত্মীয়স্বজন সবার মাঝেই এই শব্দগুলো খুবই গভীর ভাবে যুক্ত হয়ে আছে। কিন্তু আমরা কেউ-ই তেমন একটা গুরুত্ব দেই না এই কঠিন কঠিন শব্দ গুলোর প্রতি।
আমরা ডিপ্রেশন বলতে শুধু মন খারাপ বুঝিয়ে থাকি। অথচ ডিপ্রেশন কিংবা হতাশা একটি মানসিক রোগ। আমাদের শরীরের কোনো অংশে যেমন অসুখ হলে, ডাক্তারের শরণাপন্ন হই ঠিক একই ভাবে আমাদের উচিত মনের অসুখ হলেও ডক্তারের পরামর্শ নেওয়া। শরীরের যেমন অসুখ হয় তেমনি মনের অসুখ হওয়াটাও অস্বাভাবিক না। কিন্তু আমরা শরীরে যেভাবে যত্ন নেই, তার বিপরীতে মনের যত্ন নেই না বললেই চলে। আমরা নিজের শরীর স্বুস্থ রাখার জন্য কতই না পুষ্টিকর খাবার খাই। কত ডায়েট করি নিয়ম মেনে চলি, আরো কত কি!
কিন্তু মনের স্বাস্থ্যের জন্য? তেমন কিছুই করা হয় না আমাদের। এই বিষয়টিকে মাথায় রেখে আজকে আমি শেয়ার করব, মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য আমরা কি কি খাবার খেতে পারি। এবং মানসিক স্বাস্থ্য ভালো করার পিছনে এই খাবার গুলোর কার্যকারিতা কতটুকু।
আমরা তো সবাই জেনে এসেছি পোলাও মাংস খারাপ দেহের জন্য। ক্ষতি করে। কিন্তু এইটা কি জানেন যে এতে যে পরিমান শর্করা থাকে তা দিয়ে আপনার ব্রেইন ২-৩ দিন পর্যন্ত একটানা কোনো কিছু নিয়ে ভাবতে পারে। কিন্তু আফসোসের বিষয় কি জানেন? এই ভারী খাবার গুলোকে হজম করতে আমাদের পাকস্থলীর অনেক বেশি শক্তির প্রয়োজন হয়। যে শক্তি আমরা পোলাও মাংস খেয়ে অর্জন করি তার বেশিরভাগ ই খরচ হয়ে যায় হজম করতে। জিনিসটা আসলে লস প্রজেক্ট। হা হা!
হঠাৎ হঠাৎ মন খারাপ হয়ে যাওয়ার কারণ
সবার সাথে আপনি খুব ভালো সময় পার করছেন, নাচ-গান, আড্ডা। সেখান সুখকর পরিস্থিতি থেকে আপনার মন হঠাৎ করেই খারাপ হয়ে গেলো। আপনার আশেপাশের সকল কিছুকে আপনার বিতৃষ্ণা লাগা শুরু করলো। আপনি খুব চেষ্টা করছেন ঠিক থাকার জন্য কিন্তু তারপরও ঠিক থাকতে পারছেন না। এমনকি আপনি এই মন খারাপের কারণও খুঁজে পাচ্ছেন না।
আমরা জানি যে আমাদের মনের সকল কিছুই নিয়ন্ত্রণ করে আমাদের মস্তিষ্ক। আমাদের ব্রেইনের রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলই হচ্ছে আমাদের মন এবং শরীরে আউটপুট। আমাদের শরীরে কিছু হরমোন আছে যেগুলো শুধু মাত্র কাজ করে আমাদের মনকে প্রফুল্ল কিংবা বিষন্ন করতে। আর এই হরমোন গুলো নিঃসৃত হয় গ্রন্থি থেকে।
আসল কথায় আসি এখন। হরমোন আমাদের মস্তিষ্ককে যা বলবে আমাদের মস্তিষ্ক সেটাই আউটপুট দিবে। এখন হরমোন যদি ঠিকঠাক কাজ না করে, তবে মস্তিষ্ক আমাদের ভালো আউটপুট দিতে পারবে না। আর এর ফল হচ্ছে বিষন্নতা, হতাশা।
আমাদের দেহে যখন ভিটামিন বি১২ বা ফলিক এসিড এর ঘাটতি দেখা দেয়, তখন আমাদের দেহের হরমোন গুলো ঠিকঠাক কাজ করে না। ভিটামিন ডি ও এর সাথে সম্পর্কিত। এই ভিটামিন গুলো আমাদের দেহে সঞ্চিত থাকে না। হুট করেই ঘাটতি দেখা দিতে পারে। আর এমন হুট করেই ঘাটতি দেখা দিলে আমাদের মন মানসিকতা খারাপ হয়ে যায়। যার প্রভাব আমাদের আশেপাশের সকলের মাঝে পরে।
মন খারাপ থেকে বাঁচার জন্য করনীয় বিষয়গুলো
আজকে আমি মূলত আর্টিকেল টি শুরু করেছি খাদ্যাভ্যাস নিয়ে। কি ধরনের খাবার খেলে সাধারণত হুট হাট মন খারাপ কিংবা দীর্ঘ মেয়াদি বিষন্নতা থেকে মুক্তি পেতে পারি। এতোক্ষন আলোচনা করলাম কি কি কারনে এই সমস্যা গুলো হয়। তো চলুন শুরু করি এর প্রতিকার বিষয়ক খাবার নিয়ে।
ভিটামিন ডি এর অভাব পূরণ
মন মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে দেহে ভিটামিন ডি এর অভাব। ভিটামিন ডি এর ঘাটতি পুরনে আসলে কোনো ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন হয় না। এইটা সাধারণত প্রাকৃতিক ভাবেই তৈরি হয়ে থাকে।
আমাদের ত্বকে প্রচুর পরিমানে কোলেস্টেরল থাকে। যা কিনা সূর্যের আলোর সাথে বিক্রিয়া করে ভিটামিন ডি উৎপন্ন করে।
আপনি নিশ্চয়ই শুনে থাকবেন, মন ভালো করার জন্য অনেক ডাক্তার পরামর্শ দেয়, বদ্ধ ঘর পরিহার করতে। বাইরে গিয়ে ঘুরাঘুরি করতে। এর পিছনের কারণ হচ্ছে এই ভিটামিন ডি। আপনি যখন সারাক্ষন রুমে বসে থাকবেন, আপনার দেহে ভিটামিন ডি উৎপন্ন হবে না। এই ভিটামিনের ঘাটতিতে আপনার মন বিষন্ন হয়ে পরবে। এই জন্য আপনাকে সূর্যের আলো পোহাতে হবে। এছাড়াও ডিমের কুসুমে ভিটামিন ডি থাকে। হুট করে মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো টুক করে একটা ডিম সিদ্ধ করে খেয়ে নিন।
আমাদের প্রধান খাদ্য ভাত, ব্রেইনের প্রধান খাদ্য কি?
আমি আগেই বলেছি আমাদের মন কিন্তু নিয়ন্ত্রণ করে আমাদের ব্রেইন। আমাদের ব্রেইনকে আমরা যা দিব ব্রেইনও আমাদের সেইম জিনিস দিবে আউটপুট হিসেবে।
আমরা ক্ষুধা লাগলে ভাত খাই। রুটি খাই। এতে আমাদের ক্ষুধা নিবারণ হয়। হাত পায়ে বল পাই। কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছেন ব্রেইনের প্রাধান খাদ্য কি। ব্রেইন কিসে বল পায়?
আমাদের খাবারের মৌলিক উপাদান হচ্ছে, শর্করা, আমিষ, ভিটামিন, চর্বি এবং খনিজ লবন। এর মধ্যে আমাদের ব্রেইন শুধুমাত্র শর্করাটাকে গ্রহণ করতে পারে। সেই হিসেবে বলতে পারি আমাদের ব্রেইনের প্রধান খাদ্য শর্করা।
এখন আমাদের খুজে বের করতে হবে কোন কোন খাদ্যের মধ্যে শর্করার পরিমান বেশি। ভাত কিংবা রুটিতেও শর্করা থাকে। কিন্তু তা আমাদের জন্য যথেষ্ট না। সবচেয়ে বেশি শর্করা থাকে চিনিতে।গ্লুকোজ তো শর্করা সৃষ্টির ভান্ডার।
কোনো কিছু হুট হাট ভুলে যাচ্ছেন? কোনো কিছুতে খুব জোড় করেও মনোযোগ বসাতে পারছেন না? অনেক পড়তেছেন কিন্তু পড়া মুখস্থ হচ্ছে না? কি করবেন?
এক চামচ চিনি মুখে দিয়ে দিন। কিংবা একটা মিষ্টি মুখে পুরে দিন। এরপর আস্তে আস্তে দেখবেন সব ঠিকঠাক হয়ে যাচ্ছে। এইখানে আরেকটা বিষয় বলি, চিনি কিন্তু আমাদের দেহের জন্য ভালো না। ফ্যাট জমে যেতে পারে। তাই চিনি বা চিনি দিয়ে তৈরি খাবার বাদ দিয়ে শর্করার বিকল্প উৎস হাতের কাছে রাখাই সবচেয়ে উত্তম।
পোলাও মাংস নাকি শাক সবজি?
আমরা তো সবাই জেনে এসেছি পোলাও মাংস খারাপ দেহের জন্য। ক্ষতি করে। ফ্যাট জমায় আরো কত কি। কিন্তু এইটা কি জানেন যে এতে যে পরিমান শর্করা থাকে তা দিয়ে আপনার ব্রেইন ২-৩ দিন পর্যন্ত একটানা কোনো কিছু নিয়ে ভাবতে পারে।
কিন্তু আফসোসের বিষয় কি জানেন? এই ভারী খাবার গুলোকে হজম করতে আমাদের পাকস্থলীর অনেক বেশি শক্তির প্রয়োজন হয়। যে শক্তি আমরা পোলাও মাংস খেয়ে অর্জন করি তার বেশিরভাগ ই খরচ হয়ে যায় হজম করতে।
জিনিসটা আসলে লস প্রজেক্ট। হা হা! অন্যদিকে শাক সবজি আমাদের দেহ খুব সহজেই গ্রহণ করতে পারে এবং ব্রেইনকেও শক্তি যোগান দিতে সহায়তা করে। তাই বেশি বেশি শাক সবজি খেলে আমাদের শরীর এর সাথে মনও অনেক ভালো থাকবে।
অনেক টুকু লিখে ফেলেছি। আপনারা চেষ্টা করবেন এই খাবার গুলোর দিকে একটু বেশি নজর দিতে।আজকে শুধু কিছু খাবার নিয়ে আলোচনা করলাম। শরীরের যেমন ব্যায়াম আছে মনের ও কিছু ব্যায়াম আছে। এসব নিয়ে কথা হবে অন্যদিন।
GIPHY App Key not set. Please check settings