আপনার কি সারাক্ষনই ক্ষুধা লাগে? তাহলে আপনি নিশ্চয় জানেন এটি কতটা বিরক্তিকর একটি সমস্যা। প্রায় সবসময় ক্ষুধার অনুভূতি আমাদের মেজাজকে উগ্র করে দিতে পারে, শুধু তাই নয়, অনেক দ্রুতগতিতে আপনার এনার্জিও কমিয়ে দিতে পারে। এখানেই শেষ নয়, এই অহেতুক ক্ষুধার অনুভূতি আপনার অসময়ে খাওয়ার বা অতিরিক্ত খাওয়ার ঝোঁক বাড়িয়ে দিতে পারে। আর এর ফলাফল হল ওজন বৃদ্ধি সহ আরো অন্যান্য রোগ।
কিন্তু আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন, আপনার সবসময় কেন এত ক্ষুধা লাগে? অনেকেই মনে করেন যে মানসিক চাপের কারনে ক্ষুধা লাগে কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলেন যে এর আসল কারন হল পুষ্টির অভাব।
বিস্তারিত জানার আগে চলুন দেখি এই পুষ্টির অভাব পূরনের জন্য কি ধরনের স্বাস্থ্যকর খাবার আমাদের খাওয়া প্রয়োজন। স্বাস্থ্যকর খাবার বলতে এমন খাবারকে বোঝায় যা সুষম হবে এবং আপনার প্রতিদিনের পুষ্টির চাহিদা পূরন করবে। কারন প্রতিদিনের পুষ্টির চাহিদা পূরন না হলে আপনার অহেতুক ক্ষুধাবোধ বেড়ে যাবে।
ভারতের প্রখ্যাত সেলিব্রেটি পুষ্টিবিদ লাভনীত বাত্রা বলেন “আমাদের শরীরে থাকা নির্ধারিত হরমোন বিভিন্ন কারনে ক্ষুধার তাড়না বাড়িয়ে দিতে পারে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য সঠিক সমাধান খুঁজে বের করতে হবে যেটা আমাদের শরীরের এনার্জীকে দীর্ঘস্থায়ী করবে।“
আর শরীরের এনার্জীকে দীর্ঘস্থায়ী করার সবচেয়ে ভালো উপায় হল ভরপুর পুষ্টিকর খাবার খাওয়া। লাভনীত বাত্রা তার ইন্সট্রাগ্রামে এমন কিছু পুষ্টিকর খাবারের উল্লেখ করেছেন। চলুন দেখি সেগুলো কি কি।
স্বাস্থ্যকর খাবার বলতে এমন খাবারকে বোঝায় যা সুষম হবে এবং আপনার প্রতিদিনের পুষ্টির চাহিদা পূরন করবে। কারন প্রতিদিনের পুষ্টির চাহিদা পূরন না হলে আপনার অহেতুক ক্ষুধাবোধ বেড়ে যাবে।
১। কাঠ বাদাম (Almonds):
কাঠ বাদামকে সুপারফুড বলা হয়। এগুলো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন ই, ম্যাগনেসিয়াম, স্বাস্থ্যকর চর্বি, প্রোটিন এবং ফাইবার সমৃদ্ধ। লাভনীত বাত্রার মতে, “প্রোটিন এবং ফাইবার উভয়ই অহেতুক ক্ষুধাবোধ তৈরি হতে বাধা দেয়। এছাড়াও, গবেষণায় দেখা গেছে যে বাদাম খাওয়ার ফলে ক্ষুধা কমে যায় এবং ভিটামিন ই এবং মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট উন্নত হয়।”
২। নারিকেল (Coconut):
আপনি কি জানেন, নারিকেল আপনার ক্ষুধা দূর করার জন্য একটি দুর্দান্ত খাবার হতে পারে! পুষ্টিবিদদের মতে নারিকেলে উপস্থিত মিডিয়াম চেইন ট্রাইগ্লিসারাইডস (এমসিটি-র অন্তর্ভুক্ত ক্যাপ্রিক, ক্যাপ্রিলিক, ক্যাপ্রোইক এবং লরিক অ্যাসিড) শরীরের চর্বি দ্রুত পোড়াতে এবং অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণের চাহিদা হ্রাসের মাধ্যমে ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে। তারা আরো বলেন যে, নারিকেলের শাঁসে থাকা উচ্চ ফাইবার পাকস্থলিতে পরিপূর্ণতার অনুভূতি বাড়িয়ে তুলতে পারে, যা পরবর্তীতে অতিরিক্ত খাওয়া প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে।
৩। অঙ্কুরিত শস্যদানা (Sprouts):
অঙ্কুরিত শস্যদানার উপকারিতার কথা নতুন করে আর বলার প্রয়োজন নেই। আপনি যদি অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর ডায়েটের জন্য একটি খাদ্যতালিকা করতে চান তবে নিঃসন্দেহে এটিকে রাখতে পারেন। লাভনীত বাত্রা বলেন যে, অঙ্কুরিত ছোলা প্রোটিন এবং ফাইবার সমৃদ্ধ যা আপনার পাকস্থলিকে পূর্ণ হওয়ার অনুভূতি দেয়। অঙ্কুরিত ছোলায় থাকা প্রোটিন হজম হতে বেশি সময় নেয় এবং শরীরে ক্ষুধা তৈরির হরমোনের মাত্রাও ঠিক রাখে। আর এই ফ্যাক্টরগুলোই আপনাকে কম খেতে সাহায্য করে।
৪। বাটারমিল্ক (Buttermilk):
বাটারমিল্ককে প্রোবায়োটিকের একটি বড় উৎস হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এতে প্রচুর পরিমানে মিল্ক প্রোটিন রয়েছে যা আমাদের দীর্ঘসময় হাইড্রেটেড রাখতে এবং পাকস্থলিকে পূর্ন রাখতে সাহায্য করে। বিভিন্ন সমীক্ষাতে দেখা গেছে যে, বাটারমিল্কে থাকা উচ্চ মাত্রার ক্যালসিয়াম এবং প্রোটিন ক্ষুধার অনুভূতিকে প্রভাবিত করে অতিরক্ত খাদ্য গ্রহনে বাধা দিতে পারে।
৫। সবজির জুস (Vegetable Juice):
বিভিন্ন ধরনের সবজির জুস অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর পানীয়। এই ধরনের জুসের সাথে তিসির বীজ অথবা চীয়া সিড যোগ করে এর স্বাস্থ্য উপকারিতা অনেকগুন বাড়িয়ে নেয়া যায়। কারন সবজির জুসে উচ্চ মাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইবার থাকে যা শরীর থেকে টক্সিন বের করে দিতে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখে। এটি দীর্ঘসময় আপনার পাকস্থলিকে পূর্ন রাখতে এবং অন্ত্রকে ভালো রাখতে যাহায্য করে।
গাজর, শশা ইত্যাদি সবজির জুস অনেক বেশী স্বাস্থ্যকর আর এর সাথে তিসি বা চিয়া সিড যোগ করেও খেতে পারেন কারন এগুলোতে রয়েছে স্বাস্থ্যকর চর্বি যা আপনার সুস্বাস্থ্যের জন্য জরুরী।
এখানে আমরা অত্যন্ত সুপরিচিত ৫টি খাবার নিয়ে আলোচনা করলাম যা আপনার পাকস্থলিকে দীর্ঘসময় পূর্ন রাখতে সাহায্য করবে। এতে আপনি ক্ষুধা অনুভব করবেন কম এবং অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহন থেকে বিরত থাকতে পারবেন যা ওজন কমানোর ডায়েটের জন্য অনেক জরুরী। তাহলে আর দেরি কেন, এখুনি এই খাবারগুলো আপনার খাদ্য তালিকাতে যোগ করুন আর শুরু করে দিন স্বাস্থ্যকর সহজ ডায়েট।
GIPHY App Key not set. Please check settings