আরবি রমজান মাস মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পবিত্র এই মাসের জন্য মুসলমানরা সারাবছর অপেক্ষা করে থাকে। কারন রমজান মাসের রোজা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজ। আর এই লেখার বিষয় হলো ফরজ রোজার অন্যতম একটি সুন্নত সেহরি খাওয়া নিয়ে। সেহরি বা সেহেরি বা সাহরী (আরবি: سحور, প্রতিবর্ণী. সুহুর, অনুবাদ ‘ঊষার পূর্বের খাবার’) যা সুন্নত তরিকা মেনেই আমাদেরকে সারাদিন রোজা রাখতে হয়। রমজানের রোজা পালনের জন্য শেষ রাতে সেহরি খাওয়া প্রত্যেক মুসলমানের জন্য আবশ্যক। এটি নবী করিম সাঃ এর নির্দেশ।
সেহরি খাওয়ার কিছু সহিহ্ নিয়ম আছে যা আমরা অনেকেই জানিনা। আসুন জেনে নেই সেহরি খাওয়ার সঠিক উপায় যা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য জরুরী।
১. সেহরিতে খাওয়ার পরিমান
সাহারিতে খাবারের পরিমাণ অধিক হওয়া যাবে না, এতে বান্দা রোজার কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়। অতিরিক্ত খাবার শরীরে অলসতা তৈরি করে। ফলে মানুষ যেমন এবাদত মুখী হতে পারেনা এবং জৈবিক চাহিদা বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে অভুক্ত ও অনাহারি মানুষের ক্ষুধার কষ্ট অনুভব করা যায় না।
তাই বলে নামমাত্র খাবার বা পানি খেয়ে রোজা রাখলে শরীরের সমস্ত শক্তি একেবারে নিঃশেষ হয়ে যায়। ফলে মানুষের এবাদত বন্দেগী করায় দুষ্কর হয়ে যায়। এ সম্পর্কে আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (রাহঃ) বলেছেন, “মানুষ স্বাভাবিক ক্ষুধায় যতটুকু খাবার গ্রহণ করে সেহরিতে সেই পরিমাণ খাবার খাওয়া মুস্তাহাব। অর্থাৎ খুব বেশি বা কম নয়; বরং মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা উচিত।”
২. সেহরি খাওয়ার সঠিক সময়সূচী
আযানের আগে সেহরি খাওয়া ফরজ। অনেক সময় দেখা যায় সাহরি খেতে খেতে আজান শুরু হয়ে যায় এটা কখনোই কাম্য নয়। আধুনিক যুগের ফকিহদের মতে, কুরআনুল কারীমের ৫০ আয়াত তার তিলের সাথে মানে যথা নিয়মে ধীরস্থির ভাবে তেলাওয়াত করতে ২০ মিনিট সময় প্রয়োজন হয়। তাই আজানের ২০ মিনিট আগে সেহরি খাওয়া শেষ করা সুন্নত।
অনেকে ঘুম থেকে উঠতে দেরি করে সেহরি খাওয়ার জন্য। ফলে অনেক সময় দেখা যায় সাহরি খেতে খেতে আজান পড়ে যায়। ফরজ রোজা পালানোর জন্য সেহেরির সময়ের প্রতি সর্বোচ্চ সর্তকতা অবলম্বন করা প্রত্যেক মুসলমানের আবশ্যকীয়।
সুতরাং সাহারি খেতে খেতে যদি আযান পড়ে যায় সঙ্গে সঙ্গে খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে।
৩. সেহরিতে কি ধরনের খাবার খাওয়া উত্তম
সাহারিতে সবসময় পুষ্টিকর খাবার রাখা আবশ্যকীয়। সারাদিন রোজা রাখার ফলে শরীরে পানি শূন্যতা এবং খাবারের ঘাটতি দেখা যায়। যার কারণে পুষ্টিকর খাবার খেলে, শরীরের ক্ষতি পূরণের পাশাপাশি সারাদিন সিয়াম পালনে দুর্বলতা আসে না।
কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার রোজা রাখা অবস্থায় আপনার দেহে পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টি সাধন করবে। কলা, আম, গাজর, আপেল, বাদাম, ডাল হতে পারে আঁশ সমৃদ্ধ খাবার।
কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার ভাত, কর্ণ সুপ, আলু, কিংবা দুধ জাতীয় খাবার। এই সকল পুষ্টিদায়ক খাবার সেহরিতে রাখা অত্যন্ত প্রয়োজন।
৪. সেহরি খাওয়াতে কি কি বর্জন করতে হবে
সেহরিতে বর্জন করতে হবে অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার। কারণ এই জাতীয় খাবার খেলে দেহের পানি শূন্যতা তৈরি হয়।
সেহরি খাওয়ার পরে দেখা যায় অনেকে অনেক বেশি পানি পান করে। তবে সেহরিতে অতিরিক্ত পানি পান অনেক সময় হজমজনিত সমস্যার কারন হতে পারে। এমনকি হতে পারে পাকস্থলীর ওপর অতিরিক্ত চাপ যা দেহের জন্য ক্ষতিকর।
সারাদিন রোজা রাখার জন্য অনেকে আছেন অনেক ভারী খাবার অতিরিক্ত মাত্রায় খেয়ে থাকেন যা শরীরের জন্য ক্ষতির কারন হতে পারে।
তৃষ্ণা ও শরীরের তাপমাত্রা আরো বাড়িয়ে দিবে চা, কফি ও ক্যাফেইন সমৃদ্ধ খাবার। এসব খাবার থেকে আমাদেরকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে।
সেহরি খাওয়ার সময় অনেকে আছেন যারা সেহরি না খেয়ে রোজা রাখেন। যা মোটেও ঠিক নয়, কেননা হাদিসে বর্ণনায়, সেহেরির মাঝে বরকত নিহিত আছে।
৫. সাহরি খাওয়ার পর করণীয়
সর্বপ্রথম সেহরি খাওয়ার পর আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে হবে। সেহরি খাওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে শোয়া সুন্নতের পরিপন্থী।
পরিশেষে বলা যায় যে, মুমিন মুসলমানদের উচিত সেহরির সহীহ নিয়ম মেনে চলা এবং সেই অনুযায়ী আমল করা।
এখনকার অনেকে অনেক রকম গুজব ছড়ায় সেহরি এবং রোজা সম্পর্কে তাদের কুসংস্কারে অনেক মুসলমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমাদের উচিত সঠিক নিয়মে রোজা পালন করা এবং সেহরির পর অবশ্যই নিয়ত করা। আল্লাহতালা মুসলিম উম্মাহকে সাহারি ও ইফতারের সুন্নতের উপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমীন।
GIPHY App Key not set. Please check settings