in ,

CuteCute LoveLove

হিউমিডিফায়ার কি এবং এর উপকারিতা

Humidifier Buy in Bangladesh

আমি যে পত্রিকা অফিসে চাকরি করি সেটি সম্প্রতি নতুন ভবনে থানান্তর করেছে। ভবনে এখনও কাজ বাকি আছে। সেখানে এসির ব্যবস্থা এখনও করা হয়নি। প্রথম প্রথম সমস্যা বোঝা যায়নি। শীতের সময়। এসির খুব একটা প্রয়োজন হয় না। আর এত বড় অফিসে পুরো জায়গাজুড়ে এয়ার কন্ডিশন সিস্টেম চালু করতে খরচ অনেক। আপাতত এসি লাগানোর কাজটা পেছানো হয়েছে। কিন্তু পুরো ভবনই কাঁচে ঘেরা। কয়েক জায়গায় কাঁচের দরজা লাগানো বারান্দা আছে। বুক হাঁশফাস করলে সেখানে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে অফিসের সহকর্মীরা জায়গাটিকে স্মোকিং জোন বানিয়ে ফেলায় সে সুযোগও বন্ধ। আস্তে আস্তে গরম পড়তে শুরু করলো। তখন আমরা অস্বস্তিটা ভালোভাবে টের পেতে শুরু করি।

অফিসের ভেতরের অংশে অর্থাৎ যেখানে অনেকগুলো বিভাগ একসঙ্গে আছে, তাদের নিঃশ্বাস নিতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছিল। একটানা স্ক্রিনে তাকিয়ে কাজ করা আর একসঙ্গে এত মানুষ নিঃশ্বাস নেয়ার ফলে জায়গাটিতে দমবন্ধ হওয়ার জোগাড়। আমাকেও পাতার কাজের জন্য সেখানে যেতে হয়। ১০-১৫ মিনিট, যতক্ষণই থাকি না কেন, আমার মনে হয় বের হলেই বাঁচি। পরিস্থিতির উন্নতির জন্য কয়েক জায়গার কাঁচ খুলে ফেলা হলো। তাতেও কাজ হচ্ছে না। পর্যাপ্ত অক্সিজেন পাওয়ার মতো বাতাসের প্রবাহ তো নেই। অফিসের অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এমন সময় অফিসে আইটির একজন জানালেন, কয়েক জায়গায় এয়ার হিউমিডিফায়ারের ব্যবস্থা করতে। এই সহজ সমাধান পেয়ে স্বভাবতই অফিসের এইচআর খুশি। ব্যবস্থা করা হলো হিউমিডিফায়ারের। শুরু থেকেই যন্ত্রটির প্রতি আমার কৌতূহল ছিল। ভাবছিলাম, এককালে সবাই এয়ার কন্ডিশনারের কথাই ভাবতো, নাহয় এ্যাডজাস্ট ফ্যানের। কিন্তু এয়ার হিউমিডিফায়ার সম্প্রতি বাড়ি কিংবা অফিসে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সামনাসামনি দেখে যন্ত্রটির উপকারের বিষয়টি আমি ভালোভাবে বুঝতে পারলাম। সে জায়গা থেকেই মূলত এই লেখাটি। এই গরমে কেন আপনি এয়ার হিউমিডিফায়ার কেনার কথা ভাববেন। নিজ অভিজ্ঞতার আলোকে তা বলার চেষ্টা করবো আজ।

হিউমিডিয়াফার কি

এয়ার হিউমিডিফায়ারের কথা বললে প্রথমেই এয়ার কন্ডিশনারের সঙ্গে তুলনার কথা মাথায় আসে। এই দুটোর মধ্যে তুলনা করার কিছু নেই। প্রায় সব এয়ার কন্ডিশনারেই হিউমিডিয়ার থাকে। এয়ার হিউমিডিফায়ার মূলত কোনো এলাকার হিউমিডিটি নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এমন সরল বাক্যে অবশ্য বিস্তারিত বোঝানো যায়না। সেজন্য একটু তুলনা করা যেতে পারে। এয়ার কুলারের কথা ভেবে দেখুন। ঘরের ভেতরে থাকা গরম বাতাস বের করে ঠান্ডা বাতাস সরবরাহ করে এই যন্ত্র। কিন্তু যখনই ঠান্ডা বাতাস ঘরে থাকবে তখন বাতাসে থাকা জলীয়বাষ্পও কমবে। ফলে ঘরের বাতাস হবে শুষ্ক। এজন্য এসির বাতাসে থাকলে হাত, ঠোটের চামড়া শুকিয়ে যায়। এমনকি তৃষ্ণাও লাগে। আর এসির জন্য বদ্ধ ঘর দরকার। তাই অনেক সময় এসি থেকে নির্গত গ্যাসে নিঃশ্বাসে সমস্যা হয়। কিন্তু এয়ার হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করার জন্য বদ্ধ ঘরের প্রয়োজন নেই।

এয়ার হিউমিডিফায়ার কোনো ঘরের বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এই গরমে ঘরের ভেতর তপ্ত বাতাস বের করে ঘরের ভেতর আর্দ্র পরিবেশ তৈরি করতে পারে। আজকাল এয়ার কুলার কিংবা এসির উপর চাপ কমাতে এয়ার হিউমিডিফায়ারের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। তাছাড়া খরচ কম বলে এই যন্ত্রটি সবাই কেনার সুযোগ পান।

হিউমিডিফায়ার ব্যবহারের সুবিধা এবং উপকারিতা

হিউমিডিফায়ারের উপকারি দিক নিয়ে আলোচনা করতে গেলে সবাই আগে স্বাস্থ্যগত বিষয় নিয়েই আলোচনা করবে। কিন্তু শুধু স্বাস্থ্যগত দিক নয় বরং এর পাশাপাশি আরো কিছু উপকারী দিক নিয়েও আলোচনা করা হলো।

স্বাস্থ্যগত উপকারিতা

বদ্ধ করে এসি বা এয়ার কন্ডিশনার চালু রাখলে গরমে আরাম পাবেন। কিন্তু ঘর থেকে বের হওয়ার পর? সেই একই অস্বস্তি আর ক্লান্তি। অসহ্য গরমে আবার ঘরে ফিরে যাওয়ার মানসিক তাগিদ। এয়ার হিউমিডিফায়ারের ক্ষেত্রে এমন সমস্যা থাকবে না। আপনি ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় থাকবেন শুধু গরম অনুভব করবেন না সেভাবে। তাছাড়া এসি ব্যবহার করলে ইনফ্লুয়েঞ্জা, মাথা ঘোরানো, শুকনো কাশি কিংবা বুকে কফ জমার মতো সমস্যা বাড়ে। এয়ার হিউমিডিফায়ারের ক্ষেত্রে এমনটি হবে না। শুধু তাই নয়, ত্বকের আর্দ্রতার সমস্যাও দূর হচ্ছে।

এছাড়া যেকোনো ফ্লু কিংবা বায়ুবাহিত রোগের সময় বাতাসের হিউমিডিটি নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। এয়ার হিউমিডিফায়ারের সাহায্যে করোনাকালে যেমন অনেকে রোগের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে প্রস্তুতি নিতে পেরেছে এই গরমেও ফ্লু ঠেকাতে হিউমিডিফায়ার সাহায্য করতে পারে।

খরচের চিন্তা কম

এসি ব্যবহারের খরচ একবার বিবেচনা করুন। এসি কেনার পর বদ্ধ রুমের ব্যবস্থা করতে হবে। তারপর এসির ব্যবস্থাপনা, ঘর পরিষ্কার রাখা, মেরামত করা থেকে শুরু করে আরও অনেক খরচ আছে। হিউমিডিফায়ারের ক্ষেত্রে কিন্তু এত ঝামেলা নেই। বিদ্যুৎ খরচের বিষয়টিও সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। কিছুক্ষণের জন্যই তো ব্যবহার করবেন। বদ্ধ ঘরের কোনো প্রয়োজন নেই। যখন ঘরের গরম বাতাস দূর হবে তখন বন্ধ করে দিলেই হলো। বিদ্যুৎসাশ্রয় হলো।

সহজেই পরিষ্কার করা যায়

এয়ার হিউমিডফায়ারের যত্ন নেয়াটা খুব কঠিন কিছু নয়। যেহেতু এই যন্ত্র ঘরের ভেতরের বাতাস পরিশোধন করে তাই ধূলিকণা সহজেই জমা হয় যন্ত্রের ভেতর। সেটা পরিষ্কারের জন্য টেকনিশিয়ানের সহযোগীতার প্রয়োজন নেই। আপনি নিজেই করতে পারবেন।

ভালো থাকবে ইনডোর প্লান্ট

যাদের ইনডোর প্লান্টের শখ রয়েছে তারা এয়ার হিউমিডিফায়ারের উপকার ভালোভাবেই উপভোগ করতে পারবেন। ইনডোর প্লান্টের জন্য আর্দ্রতা একটি জরুরি অনুসঙ্গ। এয়ার হিউমিডিফায়ারের মাধ্যমে হিউমিডিটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে ভালো থাকবে ইনডোর প্লান্ট। আপনার ঘরে থাকবে প্রকৃতির ছোঁয়া।

কাঁঠের আসবাবের দীর্ঘস্থায়ীত্ব

হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করলে ভালো থাকে কাঠের আসবাব। সহজে ঘুণে ধরবে না যেহেতু পর্যাপ্ত আর্দ্রতা নিশ্চিত করা হচ্ছে। আপনার ঘরের পরিবেশ থাকবে নির্মল। ভ্যাপসাভাব দেয়াল কিংবা অন্য কিছুতেই প্রভাব ফেলতে পারবে না। আপনাকে শুধু ব্যবহারের নিয়ম জানতে হবে।

কখন ব্যবহার করতে হয় হিউমিডিফায়ার

গরম কিংবা শীতকালে বাতাসের আর্দ্রতা সহনশীল থাকে না। একেবারে বিপরীতই বলা যায় দুই সময়। এমনকি বর্ষাকালেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ জরুরি হয়ে পড়ে। এই সময়গুলোতে আপনার ঘরের হিউমিডিটি পরীক্ষা করুন। হিউমিডিটি পরীক্ষার যন্ত্র আছে। দামও বেশি নয়। সেলসি.কম থেকে হিউমিডিটি পরীক্ষার যন্ত্র সহজেই ঘরে বসে অনলাইনে অর্ডার দিয়ে সংগ্রক করে নিতে পারেন। পশ্চিমা দেশে ঘরের পরিবেশ ভালো রাখতে নিয়মিত এমন যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। যাহোক, আমাদের দেশে আস্তে আস্তে এ যন্ত্রেরও ব্যবহার বাড়ছে। তবে কিছু এয়ার হিউমিডিফায়ারে এ যন্ত্র আগে থেকেই থাকে। বাজারে যে কয়টি হিউমিডিফায়ার চেকার রয়েছে সেগুলো এই লিংক থেকে দেখে নিতে পারেন। আর্দ্রতা বুঝে তা নিয়ন্ত্রণ করলে আপনার স্বাস্থ্য, ঘরের পরিবেশ, আসবাব এমনকি ইনডোর প্লান্টও ভালো থাকবে। তাই আর্দ্রতা বুঝে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করবেন। সবসময় ব্যবহার করা উচিত না। প্রতিটি যন্ত্রেরই কিছু ক্ষতিকর দিক আছে। এই যন্ত্রেরও আছে। একটানা ব্যবহারে আর্দ্রতা বেশি হয়ে যেতে পারে কিংবা কমে যেতে পারে। সেটা কোনোভাবেই ভালো হতে পারে না।

এয়ার হিউমিডিফায়ার ব্যবহারে কিছু পরামর্শ

এয়ার হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি। এগুলো খেয়াল রাখতে পারলে আপনারই লাভ। এই যন্ত্রের পূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত হবে। যেমন–

  • অফিস কিংবা ঘর, যেখানেই ব্যবহার করুন না কেন, হিউমিডিটি লেভেল পরীক্ষা করবেন। সে অনুযায়ী হিউমিডিফায়ারের সেটিংস ব্যবহার করতে পারবেন।
  • হিউমিডিফায়ারের ভেতর পানি দিতে হয়। নিয়মিত পানি বের করতে হবে। আপনার ম্যানুয়ালেই নির্দেশনা দেয়া আছে। নাহলে বাতাসে ক্ষতিকর জলীয় পদার্থ ছড়াবে।
  • ম্যানুয়াল অনুযায়ী নিয়মিত যন্ত্র পরিষ্কার করবেন। নাহলে কদিন পর একটি পার্ট নষ্ট হয়ে গেলে বাড়তি খরচ গুণতে হবে।
  • ফিল্টার পরিষ্কার করার সময় সতর্ক থাকুন। ফিল্টারটিই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
  • হিউমিডিফায়ারে ডিস্টিলড বা পিউরিফাইড পানি ব্যবহার করুন। এসব পানিতে খনিজ পদার্থ থাকে না। ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকির সম্ভাবনা নেই।
  • ঘরে শিশু থাকলে হিউমিডিফায়ার ব্যবহারের সময় সতর্ক নজর রাখুন।
  • ঘরে বিদ্যুতের লাইনগুলো চেক করুন। হিউমিডিফায়ারে যেন বাজে আউটপুট না আসে। সেজন্য ইলেকট্রিক স্ট্যাবিলাইজার ব্যবহার করতে পারেন।

শেষ কথা, হিউমিডিফায়ারের উপকারি ও ব্যবহারযোগ্য দিকগুলো নিয়ে আলোচনা তো হলো। কিন্তু বাজারে তো এয়ার হিউমিডিফায়ারের অভাব নেই। দামেরও ফারাক আছে। শুধু ফিচারই যে দামের ফারাক করে তা কিন্তু না। আরও অনেক বিষয় আছে। কেনার ক্ষেত্রে কি কি বিষয় ভাবা দরকার সে নিয়ে অন্য আরেকদিন নাহয় কথা বলা যাবে। আপাতত এই লেখাটি আপনাকে হিউডিফায়ার কেনার ব্যাপারে সিন্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে এটুকু আশা করতে পারি।

What do you think?

Written by আমিরুল আবেদিন আকাশ

পেশাগত জীবনে আমি একজন সাংবাদিক। শিক্ষাজীবন এখনও শেষ করিনি। এরইমধ্যে একটি পত্রিকায় চাকরি এবং বই অনুবাদ করছি। ইংরেজি কন্টেন্ট লেখার অভিজ্ঞতা থাকায় বাংলায় তথ্যবহুল লেখা প্রচার-প্রসারের আগ্রহ থেকেই বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখি করছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

সেহরির সহীহ উপায়

রমজানে সেহরি খাওয়ার সহীহ উপায়

রমজান মাসের প্রস্তুতি

পবিত্র রমজান মাসের প্রস্তুতি, করণীয় ও বর্জনীয়