in ,

হিউমিডিফায়ারের ধরন এবং ব্যবহার

কেনার আগে জানা দরকার

হিউমিডিফায়ারের ধরন ও ব্যবহার

কদিন আগে এয়ার হিউমিডিফায়ার -এর গুরুত্ব নিয়ে বিশদ আলোচনা করেছিলাম। কিন্তু এয়ার হিউমিডিফায়ারের এত মডেল রয়েছে বাজারে যে কেনার সময় হিমশিম খাওয়াটাই স্বাভাবিক। অনেকে বাজেটের ভিত্তিতে মডেল খোজ করেন যদিও এটি এক ধরনের বোকামি। এমন কিছু করলে ভালো কোনো পণ্য পাওয়া কঠিন। বিশেষত প্রযুক্তিপণ্যের পূর্ণ উপকার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হতে পারেন।কিভাবে? দেখা গেলো আপনি একটা হিউমিডিফায়ার কিনলেন। কিন্তু এই পণ্য আপনি শুধু ব্যবহার করতে পারেন বর্ষার সময়ে। কেনার সময় এর ব্যবহারের দিকগুলো ভেবে দেখেননি। আবার অনেকে ইউটিউবেই বিভিন্ন রিভিউ দেখেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিদেশিদের করা রিভিউ থেকে আপনি ধারণা পাচ্ছেন। ভুলে গেলেন? বাইরের আবহাওয়া আর আমাদের আবহাওয়া এক নয়? তাই হিউমিডিফায়ার কেনার সময়েও কিছু বিষয়ে মনোযোগ দেয়া জরুরি। কি সেসব বিষয়? আসুন দেখে নেয়া যাক।

আমরা মূলত এই লেখায় ঘর কিংবা গাড়ির জন্য ব্যবহৃত এয়ার হিউমিডিফায়ার নিয়ে আলোচনা করবো। কারণ কমার্শিয়াল স্পেসে ব্যবহার করা হিউমিডিফায়ার এবং ঘরের জন্য ব্যবহার করা হিউমিডিফায়ারে ফারাক আছে। আমরা আজ মূলত এসব বিষয়েই আলোচনা করব।

হিউমিডিফায়ারটি কোথায় ব্যবহার করবেন?

হিউমিডিফায়ার আসলে কোথায় ব্যবহার করা হবে? অনেকে বেডরুমে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করেন গরম কিংবা বৃষ্টির দিনে। আবার অনেকে গাড়ির ভেতর আর্দ্রতা ধরে রাখতে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করেন। কিছু কিছু হিউমিডিফায়ার বাতাসে থাকা জীবাণু দূর করতে সাহায্য করে। সেজন্য হিউমিডিফায়ার কি কাজে আসবে এবং কোথায় ব্যবহার করা হবে তা ভেবে নিন। তারপর বাছাই করুন আপনার মডেল। শুধু বাজেটের ভিত্তিতে অনেকে কিনে ফেলেন। বাজারে ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকারও হিউমিডিফায়ার পাওয়া যায়। কিন্তু আপনি যদি ভাবেন সেটা আপনার ঘরের সব জায়গায় কাজে আসবে তাহলে ভুল ভাবছেন। যেমন বাজারে Baseus Elephant Humidifier –এরকম দাম দিয়ে কিনতে পাওয়া যাবে। এর দাম কম এবং কাজেও আসে। কিন্তু ঠিক কি কাজে আসে? প্রচন্ড গরমে হয়তো আপনি ঘরে বিশ্রাম নিচ্ছেন। তখন ঘরের বাতাস এত গরম যে টিকে থাকতে পারছেন না। সেক্ষেত্রে এই হিউমিডিফায়ার আপনাকে আরাম দেবে। তবে ঘরভর্তি মানুষের জন্য এত ছোট হিউমিডিফায়ার কাজ করবে না।

আবার গাড়ির জন্য নির্ধারিত হিউমিডিফায়ারের কাজও একটু ভিন্ন। যেমন Baseus Moisturizing Car Humidifier। এই পণ্যটির ডিজাইন এবং ইনস্টলের পদ্ধতি একটু ভিন্ন। তাই কোথায় ব্যবহার করবেন তা ভেবে হিউমিডিফায়ার কিনতে হবে।

কিভাবে কাজ করে?

হিউমিডিফায়ার কিভাবে কাজ করে সেটাও ভেবে দেখা জরুরি। সচরাচর বাজারে চার ধরনের মেকানিজমসমৃদ্ধ হিউমিডিফায়ার পাওয়া যাবে। সেগুলো হচ্ছে:

বাষ্পীকরন হিউমিডিফায়ার

এ ধরনের হিউমিডিফায়ারের ভেতরে এমন একটি মোটর থাকে যা ভেতরে থাকা ফিল্টারের পানি বাষ্প আকারে ছড়িয়ে দেয়। এ ধরনের ইউনিট ঠান্ডা বাতাস দেয়। তবে এমন হিউমিডিফায়ার কিনলে প্রতিদিনই পরিষ্কার করতে হবে। নাহলে ফিল্টারের ভেতর শ্যাওলা জমবে।

ইম্প্যালার হিউমিডিফায়ার

এ ধরনের হিউমিডিফায়ারের ভেতরে এক ধরনের ডিস্ক থাকে যেটা পানিকে ভেঙে আরও ক্ষুদ্র বিন্দুতে পরিণত করে বাতাসে ছড়িয়ে দেয়। আমাদের এখানে কমদামি হিউমিডিফায়ারগুলো এ ধরনের মেকানিজম ব্যবহার করে।

আল্ট্রাসনিক হিউমিডিফায়ার

এগুলোও ঠান্ডা বাতাস বের করে এবং ভেতরে থাকা দুটো সিরামিক প্লেটের ঘর্ষণে আল্ট্রাসনিক ফ্রিকোয়েন্সি তৈরি হয়। এগুলোও ভালো কিন্তু অনেক সময় হিউমিডিফায়ারের ভেতর থেকে সুক্ষ্ম ধূলিকণাও বাতাসে মিশে যেতে পারে। ফলে অ্যালার্জির সমস্যা আছে এমন অনেকেরই ঝামেলা হতে পারে।

স্টিম হিউমিডিফায়ার

নাম থেকেই বুঝে নিতে পারছেন, স্টিম বের হয় এসব হিউমিডিফায়ার থেকে। কমার্শিয়াল স্পেসে সচরাচর এমন হিউমিডিফায়ারই বেশি পাওয়া যায় এবং এদের দাম তুলনামূলক বেশি।

এই চার ধরনের হিউমিডিফায়ারই বেশি পাবেন। গাড়ির হোক, কিংবা দেয়ালে লাগানোর উপযুক্ত হোক অথবা ঘরের–আপনাকে আগে বুঝতে হবে এর ভেতরের মোটরটা বা মেকানিজমটা কেমন।

আকার ও ধারণ সক্ষমতা

হিউমিডিফায়ার কেনার ক্ষেত্রে আকার ও ধারণ সক্ষমতা সবসময় দ্বিতীয় ভাবনা। মোটরের আকার যেমন আপনার ব্যবহারের জায়গা অনুসারে নির্ধারিত হবে তেমনি আপনার ঘরের পরিবেশের ভিত্তিতেও কিছু বিষয় ভাবনার অন্তর্ভূক্ত করতে হবে। আপনার হিউমিডিফায়ার দিনে কতটুকু পর্যন্ত হিউমিডিটি দিতে সক্ষম? শুধু তাই নয়, আপনার হিউমিডিফায়ার একটানা ব্যবহার করতে পারবেন নাকি আপনাকে নির্দিষ্ট একটি সময়ের ব্যবহার করতে হবে তা-ও নির্ভর করে ধারণ সক্ষমতার ওপর। সচরাচর ১০০০ মিলি ধারণসক্ষমতা সম্পন্ন একটি হিউমিডিফায়ার সারাদিনই আপনার রুমকে হিউমিডিটি দিতে পারবে। কিন্তু আপনি কতটুকু জায়গা কাভার করছেন তা-ও ভাবা জরুরি। সব হিউমিডিফায়ার চাইলেই বড় জায়গাজুড়ে হিউমিডিটি দিতে পারে না। কেনার আগে তাই কতটুকু জায়গাজুড়ে হিউমিডিটি পাবেন এবং কতক্ষণ ব্যবহার করা যাবে তার বিস্তারিত তথ্য দেখে নিবেন।

মোটর পাওয়ার

অনেকেই হিউমিডিফায়ার কেনার সময় শুধু মেকানিজম দেখেই মুগ্ধ হন। কিন্তু যন্ত্রে থাকা মোটর কতটুকু সক্ষম তা যেন যাচাই করেন না অনেকে। এমনটা করলে আখেরে ভালো আউটপুট পাবেন তো না-ই উলটো বিরক্ত হতে হবে। তাই মোটরের সক্ষমতা দেখে নিন। আপনি যদি না-ও বোঝেন তাহলে একবার ইন্টানেট ঘেটে দেখুন। শর্ট কিছু কি-ওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করলেই দেখতে পাবেন মোটর কতটুকু কার্যকর।

কন্ট্রোলিং

হিউমিডিফায়ারের কন্ট্রোলিংটা জরুরি। আপনি ব্যবহার করছেন এটা জরুরি না। আপনি কিভাবে ব্যবহার করতে পারছেন সেটাই জরুরি। বাজারে হিউমিডিফায়ারগুলো সহজে ব্যবহারযোগ্য হয় বলেই অনেকে কেনার প্রতি আগ্রহ দেখান। কিন্তু কতটা সহজ? আপনি হিউমিডিটির ওপর কতটা নিয়ন্ত্রণ পাচ্ছেন সেটাই শেষ পর্যন্ত সবচেয়ে বড় বিষয়।

পরিষ্কার করা সহজ কি-না

হিউমিডিফায়ারের যত্ন না নিলে তা সহজেই নষ্ট হয়ে যাবে। তাই এমন হিউমিডিফায়ার নিতে হবে যেটি পরিষ্কার করা সহজ। সচরাচর কমদামি মডেলে পরিষ্কার করার প্রক্রিয়া কঠিন। দেখা গেলো হিউমিডিফায়ারের ফিল্টার খুলতে গেলে খুবই সতর্ক থাকতে হয়। না হলে পলকা হিউমিডিফায়ার ভেঙে যেতে পারে। অথবা আপনি না বুঝেই মেশিনের কোনো ক্ষতি করে ফেললেন। তাই এমন একটি মডেল খুজুন যার সবকিছুই সহজ। পরিষ্কার করা কিংবা দেখভালে যেন কোনো ঝামেলা না থাকে।

শব্দের মাত্রা

হিউমিডিফায়ার প্রচন্ড শব্দ করে। বড় হিউমিডিফায়ার হলে শব্দ তো হবেই। কিন্তু বেশি শব্দ হলে রাতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটবে। তবে কিছু মডেল আছে যেগুলো একেবারেই শব্দ করে না। যেমন Xiaomi F600 Humidifier. এই হিউমিডিফায়ার খুব বেশি শব্দ করে না। তারপরও পাঁচ লিটারের মতো এর ধারণক্ষমতা এবং অনেকক্ষণ হিউমিডিটি দিতে পারে। এটি নিয়ে একটি বিস্তারিত রিভিউ পরে দেয়ার ইচ্ছে আছে।

স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে কি-না

হিউমিডিফায়ার থেকেও নানা স্বাস্থ্যঝুঁকির শঙ্কা থাকে। এ কথা আমরা সবাই জানি। তারপরও কোম্পানিগুলো আপনার নিরাপত্তার জন্য নানা চেষ্টা চালায়। আপনি যে মডেলটি কিনবেন সেটিও কি আপনায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিতে পারবে? আপনার ত্বক বা নিঃশ্বাসের ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ উপাদান দূর করতে পারবে? এসব দেখে নিন কেনার সময়। প্রয়োজনে বুঝে নিন বিক্রেতা থেকে।

What do you think?

Written by আমিরুল আবেদিন আকাশ

পেশাগত জীবনে আমি একজন সাংবাদিক। শিক্ষাজীবন এখনও শেষ করিনি। এরইমধ্যে একটি পত্রিকায় চাকরি এবং বই অনুবাদ করছি। ইংরেজি কন্টেন্ট লেখার অভিজ্ঞতা থাকায় বাংলায় তথ্যবহুল লেখা প্রচার-প্রসারের আগ্রহ থেকেই বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখি করছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

how to save money taka

সংসার খরচ কমানোর দুর্দান্ত কিছু টিপস

আইফোন সুরক্ষার উপায়

হ্যাকারদের হাত থেকে আপনার আইফোন কিভাবে রক্ষা করবেন