বর্তমান বাজার মূল্যের যে ঊর্ধগতি তা আবারো কখনো নিম্নমূখী হবে কি না সন্দেহ। আবার করোনা পরবর্তী সময়ে এখনো সব প্রতিষ্ঠান পুরোপুরি ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেনি বলে কর্মীদের বেতন-বোনাসেও নেই কোন উন্নতি। এরপর আছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব। আশঙ্কা আছে অর্থনৈতিক সংকট আরো বৃদ্ধি পাওয়ার এমনকি বিশ্বমন্দা শুরু হওয়ার। এমন পরিস্থিতিতে খরচের হাত না কমালেই নয়। কিন্তু কিভাবে? সঠিক পরিকল্পনা, জীবনধারায় সামান্য পরিবর্তন, ও কিছুটা বুদ্ধি খরচ করে চললেই অনেকটায় মিতব্যায়ী হওয়া সম্ভব। সেই সাথে সঞ্চয়ও হবে। এখানে রইল সংসার খরচ কমানোর দুর্দান্ত কিছু টিপস যা অনুস্বরণ করলে আপনি পারবেন মাসের শেষ দিন পর্যন্ত হাতে টাকা রাখতে। চলুন তাহলে শুরু করি।
১। মাসিক সব খরচের তালিকা তৈরি করুন
প্রথমেই একটা তালিকা দিয়ে কাজ শুরু করুন। এক মাসে আপনার সম্ভাব্য যে খরচগুলো হওয়ার কথা তার একটি তালিকা তৈরি করুন। যেমন, বাড়ি ভাড়া, ইউটিলিটি বিল, আপনার অফিস যাতায়তের খরচ, সন্তানের পড়ালেখার খরচ, মুদির বাজার খরচ ইত্যাদি। চেষ্টা করবেন সব ধরনের খরচ এই তালিকাতে অন্তর্ভূক্ত করার। এতে আপনার মাসিক আয় ও ব্যায়ের একটি হিসাব আপনি আগ্রীম করে ফেলতে পারেবন।
২। মাসের শুরুতে বিল মিটিয়ে দিন
যে বিলগুলো দিতেই হবে যেমন বাড়িভাড়া, গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিল, সন্তানের স্কুলের বেতন, নেটের বিল, দুধের বিল ইত্যাদি বাকি রাখবেন না কোন ভাবেই। বেতন পাওয়ার সাথে সাথেই তা পরিশোধ করে দিন। কারণ কোন মাসের বিল বাকি থাকলে তা পরের মাসে শোধ করতে গেলে মাস শেষে খরচের হিসাব আর মিলাতে পারবেন না।
করোনা পরবর্তী সময়ে এখনো সব প্রতিষ্ঠান পুরোপুরি ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেনি বলে কর্মীদের বেতন-বোনাসেও নেই কোন উন্নতি। এরপর আছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব। আশঙ্কা আছে অর্থনৈতিক সংকট আরো বৃদ্ধি পাওয়ার এমনকি বিশ্বমন্দা শুরু হওয়ার। এমন পরিস্থিতিতে খরচের হাত না কমালেই নয়।
৩। ঋন বাধিয়ে রাখবেন না
কোন কারনে কোন মাসে ঋন করে ফেললে তা খুব দ্রুত পরিশোধ করে দিন। ঋন থাকলে আপনি কখনোই সঞ্চয়ে মনোনিবেশ করতে পারবেন না। ভুলেও সামাজিক মর্যাদা বাড়াতে বা নিজে ভালো খাওয়া-পড়ার জন্য ঋন করতে যাবেন না। আপনার যা আছে তাতেই সন্তুষ্ট থাকুন। আর কোন কারনে বাধ্য হয়ে ঋন করতে হলে তা অবশ্যই পরের মাসেই বেতন পেয়েই শোধ করে দিন।
৪। মাটির ব্যাংকে টাকা জমান
ব্যাপারটা কি ছেলেমানুষি বলে মনে হচ্ছে? মোটেও কিন্তু তা নয়। ঘরে ছোট একটি মাটির ব্যাংক রাখুন। আর অফিস বা বাজার থেকে ফিরে তাতে খুচরো কয়েন, চকচকে পাঁচ দশ টাকার নোট ফেলতে থাকুন। মাস খানেক পরেই দেখবেন ঐ ব্যাংকেই ২/৩ মাসের মধ্যে ৪/৫ শত টাকা হয়ে গেছে। এভাবে জমাতে জমাতে বছর শেষে যে অংকটা হবে তা নেহাত মন্দ হবে না।
৫। সন্তানকেও সঞ্চয়ী করে গড়ে তুলুন
আপনার সন্তানকেও সঞ্চয়ের গুরুত্ব বোঝান। সে কোন খেলনা চাইলে তাকেও একটি মাটির ব্যাংক কিনে দিন এবং টিফিনের টাকা বাচিয়ে তাতে রাখতে বলুন। ঈদে আপনার সন্তান যে ঈদ সালামী পাবে সেগুলোও জমাতে বলুন। এভাবে সে নিজেই নিজের পছন্দের সামগ্রী কেনার টাকা জমিয়ে ফেলতে পারবে।
৬। কোনভাবেই ক্রেডিট কার্ডে কেনা কাটা নয়
যা কিনবেন, নগদ টাকা দিয়ে কিনুন। ক্রেডিট কার্ড দিয়ে কিনতে গেলে বেশিরভাগ সময়ই সামর্থের বাইরে যেয়ে কেনাকাটা হয়ে যায়। এছাড়াও বছর বছর ক্রেডিট কার্ডের চার্জ তো আছেই। তাই যায় কিনবেন, নিজের সামর্থ অনুযায়ী নগদে কিনুন।
৭। অনলাইন ও সুপারসপে মুদির বাজার করা বন্ধ করুন
আমরা অনেকেই এখন অনলাইন থেকে মুদির বাজারের অর্ডার দিয়ে ফেলি। আবার এক জায়গায় সব পাওয়া যায় দেখে সুপারসপ থেকে বাজার করি। কিন্তু যখন আমরা শত শত পন্যের তালিকা দেখি তখন তাৎক্ষনিক প্রয়োজন নেই, কিংবা তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ন পন্যেরও অর্ডার করে ফেলি। এতে আমাদের বাজারের খরচ অনেক বেড়ে যেতে পারে। তাই কষ্ট করে হলেও দোকানে গিয়ে দামদর করে বাজার করুন।
৮। ব্র্যান্ডের দোকান এড়িয়ে চলুন
আমরা অনেকেই ব্র্যান্ডের পোশাক পড়তে পছন্দ করি। কিন্তু কাছাকাছি কোয়ালিটির পোশাক বাইরের মার্কেটে কয়েক গুণ কম দামেও কিনতে পাওয়া যায়। তাই ব্র্যান্ডের দোকানে না গিয়ে বাইরের মার্কেট থেকে কেনাকাটা করুন।
৯। শপিং করুন একা একা
খরচ বাঁচাতে চাইলে ভুলেও বন্ধু বা আত্মীয় কারো সাথে শপিং এ যাবেন না। অন্য কারো সাথে শপিং এ গেলে দেখাদেখি আপনি প্রয়োজনের বাইরে কেনাকাটা করে ফেলবেন। পরে মাস শেষে আপনার বাজেট ঘাটতি দেখা দিবে।
১০। ইউটিলিটি বিল কমান
গ্যাস এবং বিদ্যুৎ কম খরচের চেষ্টা করুন। অপ্রয়োজনে দিনের বেলা লাইট বা ফ্যান চালিয়ে রাখবেন না। সেই সাথে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয় এমন বাল্ব ব্যবহার করুন। ম্যাচের কাঠি বাচানোর জন্য ভুলেও গ্যাস জালিয়ে রাখবেন না। মনে রাখবেন ম্যাচের কাঠির চেয়ে গ্যাস অনেক দামী।
উপরের টিপসগুলো বাদেও খরচ কমাতে আরো কিছু ছোট খাট বিষয় মেনে চলতে পারেন। যেমন
১। অফিসে যাতায়াতের খরচ কমান। সি এনজি, উবার ইত্যাদিতে না যেয়ে, সাইকেল অথবা পাবলিক বাসে যাতায়াত করুন।
২। রেস্টুরেন্টে খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করুন। সাথে ক্ষুধা লাগলেই অনলাইনে অর্ডার করার খরুচে অভ্যাস ত্যাগ করুন। সহজে অল্প সময়ে রান্না করা যায় এমন খাবার নিজে রান্না করা শিখুন।
৩। ঘন ঘন বন্ধু বান্ধবদের আড্ডার জন্য বাসায় ডাকা বন্ধ করুন। কারণ আতিথেয়তাতেও প্রচুর খরচ হয়ে যায়।
৪। প্রয়োজনের অতিরিক্ত বড় বাড়ি ভাড়া নেবেন না। আপনার ও আপনার পরিবারের জন্য যতটুক প্রয়োজন ততটুকুর মধ্যেই বাসা খুঁজে নিন।
৫। বিলাসিতা ত্যাগ করুন। আপনি যদি কোন বিলাসী পন্য ব্যবহারে অভ্যস্ত হোন যেমন দামী পারফিউম বা ঘড়ি, অথবা কোন মেকআপ সামগ্রী তাহলে এই অভ্যাস ধীরে ধীরে ত্যাগ করার চেষ্টা করুন। এতে বেশ কিছুটা অর্থ সাশ্রয় হবে।
৬। ঘরের অদরকারী জিনিস বেঁচে দিন। ধরুন আপনার ঘরে ২টি ডিনারসেট আছে যেগুলো খুবই কম ব্যবহার হয়। আপনি চাইলেই তার একটি বিক্রি করে দিতে পারেন। এভাবে ঘরের অদরকারী জিনিসগুলো বেঁচে বেশ কিছু টাকা জমিয়ে ফেলতে পারেন।
আগেই বলেছি খরচ কমানোর জন্য প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা, জীবনধারায় সামান্য পরিবর্তন, ও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হওয়া। আশাকরি উপরের সংসার খরচ কমানোর দুর্দান্ত টিপসগুলো অনুস্মরণ করে আপনিও সঞ্চয়ী হয়ে উঠতে পারবেন। আপনার জন্য রইল শুভকামনা।
GIPHY App Key not set. Please check settings