in

হ্যাকারদের হাত থেকে আপনার আইফোন কিভাবে রক্ষা করবেন

আইফোন সুরক্ষার উপায়

সকালে ঘুম থেকে উঠে রাতে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত সবচেয়ে প্রয়োজনীয় যে বস্তুটি আপনার জীবনের সাথে ওতপ্রতভাবে জড়িত সেটির নাম স্মার্টফোন কিংবা আইফোন। আপনার প্রিয় আইফোনটিতে কি নেই? প্রয়োজনীয় তথ্যাদি, ব্যাংকিং ফাইল, ছবি এমনকি আপনার সারা জীবনের উপার্জনকৃত সম্পত্তির নানা রকম তথ্য সবকিছুই ফোনে নথিভুক্ত রেখে দেন। যাতে প্রয়োজনের সময় অতি তাড়াতাড়ি হাতের নাগালে সব পাওয়া যায়।

বর্তমান আধুনিক বিশ্বে রাস্তা ঘাটে চলার সময় যেমন সন্ত্রাসের ভয় আছে, তেমনি আপনার প্রিয় ফোনটির ভয়ের নাম হ্যাকার। যদি এমন হয় আপনার প্রিয় আইফোনটি হারিয়ে যায় বা হ্যাকিংয়ের কবলে পড়ে তাহলে আপনার সকল কিছু ফাঁস হয়ে যাওয়ার বা আপনার জীবন নষ্ট করে দেয়ার ক্ষেত্রে একটা ভয়ংকর ভয়ের কারণ।

কিন্তু আপনি যদি একটু সতর্ক হন তাহলে এই হ্যাকিংয়ের হাত থেকে রক্ষা পেতে পারেন। আপনার ফোনটি যদি চুরি বা হারিয়ে যায়, ফোনের সকল তথ্য অন্য কারো নেওয়ার বা জানার ভয় থাকবে না। তার আগে জানতে হবে কিভাবে আপনার ফোনটা হ্যাকিং হতে পারে। আসুন এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।

যেভাবে স্মার্টফোন কিংবা আইফোন হ্যাক করা হয়

১. যদি আপনার ফোনটি কিছু সময়ের জন্য কারো কাছে হস্তগত হয়ে থাকে, সে একটি এ্যাপস নামিয়ে আপনার সমস্ত তথ্যাদি বা খবর অনায়াসে পেতে পারে। এটা হতে পারে স্পাই ফোন এ্যাপ্স অথবা স্পাইজি এধরনের অ্যাপ ডাউনলোড করে হ্যাকাররা হাইড করে রেখে দেয়। এ সকল অ্যাপসের কাজ হলো মোবাইল ট্র্যাঙ্কিং এপ্লিকেশন। এসব অ্যাপসের মাধ্যমে আপনার লোকেশন ট্র্যাক করা যাবে।

আপনার লোকেশন ট্র্যাক করে হ্যাকাররা আইফোনের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপস গুলো সম্পর্কে অবগত হবে। যেমন, হোয়াসআপ, ইমো, ফেসবুক, মেসেঞ্জারে যখন আপনি কোন তথ্য সংরক্ষণ করবেন বা কারো সাথে কোন গোপন আলোচনা করবেন মেসেজিং এর মাধ্যমে, কিংবা ব্যাংকিং একাউন্ট পাসওয়ার্ড ওপেন করবেন তখন সঙ্গে সঙ্গে সকল তথ্য হ্যাকারদের হাতে চলে যাবে।

২. এছাড়া যদি সারাদিন ওয়াইফাই কানেক্ট করে রেখে দেন এক্ষেত্রেও আপনার ফোনটি হ্যাকিং হতে পারে। কখনো ফ্রি ওয়াইফাই কানেক্ট করবেন না। এই সুবিধাটা অনেক হ্যাকাররা ভোগ করে থাকে। যদি পাবলিক প্লেসে ফ্রি ওয়াইফাই কানেক্ট করেন তৎক্ষণাৎ হ্যাকার আপনার ফোনের সকল ব্রাউজারের এবং সমস্ত এ্যাপসের গোপন তথ্যাদি জেনে ফেলে পরবর্তীতে আপনাকে এগুলো দিয়ে হুমকি দিতে পারে।

৩. মেসেজিংয়ের মাধ্যমে লিংক ট্রান্সফার করেও ফোন হ্যাক হতে পারে। আপনার ফোনে যদি কোন মেসেজ বা লিংক আসে যেটা সম্পর্কে আপনি অবগত নন। আপনি সেই লিংক এর মধ্যে প্রবেশ করলে হ্যাকার আপনাকে হ্যাক করতে পারবে। আধুনিক বিশ্বে সকল প্রযুক্তির তৎপরতা যত বেশি হ্যাকারদের তৎপরতা তার থেকে বেশি বৈই কম নয়। তাই আপনার ফোনে যদি কোন অবাঞ্চিত লিংক বা মেসেজ আসে সেটা সঙ্গে সঙ্গে ডিলেট করে ফেলবেন।

৪. ফোন চার্জ দেয়ার ক্ষেত্রেও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। অনিরাপদ কোন ইউএসবি দ্বারা যদি ফোন চার্জ দেন, সেক্ষেত্রেও আপনার তথ্যাদি হ্যাকারদের কাছে ফাঁস হয়ে যেতে পারে। সকল ফোন কিন্তু ডাটা ট্রান্সফার করে না। তারপরেও হ্যাকাররা আপনার ফোনের ডিভাইস নেম, ফোনের ধরন, ম্যানুফ্যাকচারার, সিরিয়াল নাম্বার, ইলেকট্রিক চিপ আইডি আপনার ফোনে ট্রান্সফার করে দিতে পারে।

৫. আপনার লক স্কিন বা পাসওয়ার্ড যদি হ্যাকাররা কোনভাবে জেনে ফেলে তাহলেও ফোন হ্যাক হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আপনার যাবতীয় ডেটার এক্সেস তৎক্ষণাৎ হ্যাকারের হাতে চলে যাবে। তাই ডেটা এক্সেস সুরক্ষিত রাখতে আপনার ফোন লক বা ফেসলক কিংবা পাসওয়ার্ড কিছুদিন অন্তর অন্তর বদলে ফেলতে হবে।

আইফোন হ্যাক হয়েছে কিনা সেটি কিভাবে জানা যাবে

নিত্যনতুন কৌশল ও পদ্ধতি আবিষ্কার করে হ্যাকাররা অতি সহজে আপনার ফোনটি হ্যাক করতে পারে। স্মার্টফোন/এ্যান্ড্রয়েড ফোন থেকে আইফোন এর সিকিউরিটি ফিচার অনেক উন্নত এবং সুরক্ষিত। হ্যাকারদের হাত থেকে আপনার আইফোনের অনিয়মিত ডেটা সুরক্ষিত রাখতে উন্নত মানের সিকিউরিটি ডিভাইস সংযোগ করা থাকে। তারপরেও হ্যাকারদের তৎপরতায়ও এই গোপনীয়তাও রক্ষা পায় না।

হ্যাকিং থেকে বাঁচাতে আপনাকে বেশ কয়েকটি বিষয়ে ধারণা থাকতে হবে। যাতে আপনি নিজেই হ্যাকারদের হাত থেকে আপনার আইফোনটিকে সুরক্ষিত রাখতে পারেন

১. আপনার ফোনের অনলাইন বা মেইলে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থাকলে বড় এবং জটিল পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে পারেন। সকল ডিভাইস সুরক্ষিত রাখার জন্য পাসওয়ার্ড সবচেয়ে বড় সুরক্ষা কবজ। ছয় ওয়ার্ডের পাসওয়ার্ড বা দুর্বল পাসওয়ার্ড ব্যবহার করলে হ্যাকারদের ফোন ট্রাক করে পাসওয়ার্ড জানতে মাত্র দশ মিনিট সময় লাগবে বড়জোড়। তাই এই ছয় ওয়ার্ডের সাথে আরো ছয় বা পাঁচ ওয়ার্ড যোগ করে পাসওয়ার্ড তৈরি করুন যাতে হ্যাকারদের হ্যাক করতে দাঁত ভেঙে যায়।

২. ফোনটি নিরাপদ রাখার জন্য টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন। এটা এমন একটা পদ্ধতি যেখানে ব্যবহারকারী প্রথম পাসওয়ার্ড ব্যবহার করার সাথে সাথে লগইন করার জন্য আরও একটি কোড ব্যবহার করতে হয়। হ্যাকার যদি কোনক্রমে ফোনটি হ্যাক করে কোডটি আপনার কাছে চলে যাবে এতে করে আপনি খুব সহজে বুঝে যাবেন আপনার ফোনটি হ্যাক হচ্ছে।

৩. যদি কখনো আপনার ফোনে অবাঞ্চিত কোন অ্যাপস দেখতে পান যা আপনি আগে কখনো ইনস্টল করেননি সঙ্গে সঙ্গে সেটা আনইন্সটল করে দিন। আপনার জিমেইল ব্রাউজারের মধ্যে ঢুকে দেখুন অনাকাঙ্খিত কোন ইমেইল আছে কিনা, থাকলে সঙ্গে সঙ্গে সেটা ডিলিট করে ফেলুন। প্লে স্টোরের মধ্যে ঢুকে যেখানে সমস্ত অ্যাপসের আইকন থাকে সেখানে চেক করুন যদি আপনার ইন্সটল ছাড়া কোন বাড়তি এ্যাপ্স থেকে থাকে সঙ্গে সঙ্গে তা আনইন্সটল করে ফেলুন।

৪. প্রয়োজন ছাড়া আপনার ফোনের ওয়াইফাই সংযোগ, ডাটা, কিংবা ব্লুটুথ বন্ধ রাখুন।

৫. আপনার ফোনে হাইপার টেক্সট প্রটোকল সিকিউরিটি অ্যাপসটি চালু করুন। এই টুলটি আপনার আইফোনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে।

What do you think?

Written by নুসরাত জাহান

পেশায় একজন নার্স। স্বাস্থ্য বিষয়ে লেখালেখি করতে ভালোবাসি। পাশাপাশি ইসলামিক বিষয় ও প্রযুক্তি নিয়ে পড়তে ও লিখতে ভালো লাগে। আমার লেখা থেকে কেউ বিন্দুমাত্র উপকৃত হলে তবেই লেখার স্বার্থকতা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

হিউমিডিফায়ারের ধরন ও ব্যবহার

হিউমিডিফায়ারের ধরন এবং ব্যবহার

বার্ধক্য

আপনার বার্ধক্যকে সুখকর করবেন কীভাবে