in

আপনার বার্ধক্যকে সুখকর করবেন কীভাবে

বার্ধক্য

কর্মব্যস্ত এক দীর্ঘজীবন পার করার পর বার্ধক্যে এসে এনেকেই একাকিত্বে ভুগেন। এই সময়টায় পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গ সব সময় পাওয়া যায়না কারণ তারাও ব্যক্তি জীবনে কোন না কোন কাজে ব্যস্ত সময় পার করেন। তাই অনেকের কাছে বার্ধক্যের অবসর জীবন খুবই কষ্টের হয়ে ওঠে। তাই অনেকেই শেষ বয়সে এসে অবসর জীবনে কীভাবে সক্রিয়, সুখী ও সুস্থ থাকা যায় সে বিষয়ে পরামর্শ চেয়ে থাকেন। আজকে আমরা তাই আলোচনা করাবো আপনার বার্ধক্যকে সুখকর করবেন কীভাবে তা নিয়ে। চলুন তাহলে শুরু করি।

১। সখ বা সক্রিয়তা আপনার দিনের অনেকটা সময় পার করে দিবে

অবসরে এসে আপনার কোন অপূর্ন সখ পূরনের চেষ্টা করতে পারেন। এর মাধ্যমে আপনি সক্রিয় থাকবেন এবং দিনের অনেকটা সময় আনন্দের সাথে পার করতে পারবেন। যেমন ধরুন, নতুন কোন ভাষা শিখতে পারেন, অথবা আপনার পছন্দের কোন বাদ্যযন্ত্র বাজানো শিখতে পারেন। এমন কিছু শেখার চেষ্টা করুন যা আপনি সবসময় শেখার কথা ভেবেছেন কিন্তু সময়ের অভাবে পারেন নি।

২। স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহন করতে পারেন

প্রতি সপ্তাহে অন্তত ২ ঘন্টা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কোন প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করতে পারেন। এতে আপনি সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে মুক্ত হতে পারবেন এবং নিজের জীবনের পূর্ণতাও পাবেন। যেমন ধরুন আপনি মহল্লার কোন ক্লাবের খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষন দিতে পারেন অথবা দাতব্য প্রতিষ্ঠানের হয়ে তহবিল সংগ্রহ করতে পারেন।

৩। প্রাকৃতিক পরিবেশে সময় কাটাতে পারেন

নির্মল, সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশে দিনের কিছুটা সময় কাটালে নিশ্চিতভাবেই আপনি মানসিক শান্তি লাভ করবেন। প্রাকৃতিক আলো বাতাসে দেহমন সিক্ত করলে আপনি শারীরিকভাবেও আরাম বোধ করবেন। প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগের জন্য পার্কে হাটতে পারেন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত স্থানে বেড়াতে যেতে পারেন অথবা দিনের একটা সময় আপনার ঘরের বারান্দা বা উঠানে বসতে পারেন।

৪। প্রিয় কোন প্রানী পুষতে পারেন

অল্প বয়সে অনেকেরই প্রানী পোষার সখ থাকে তবে সময়ের অভাবে অনেকের দ্বারা তা সম্ভব হয় না। তাই এটাই সময় এই সখ পূরণ করার। আপনার পছন্দের যে কোন প্রানী যেমন বিড়াল, পাখি, খরগোশ অথবা অ্যাকুরিয়ামে মাছ পুষতে পারেন। এতে আপনার সময়ও ভালো কাটবে আর আপনি মানসিক প্রশান্তিও লাভ করবেন।

৫। পুরোনো বন্ধুত্বের সম্পর্কগুলো ঝালাই করে নিন

কাজের চাপে বহুদিন বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ রাখতে পারেন নি? এখুনি সময় পুরোনো সব সম্পর্কগুলোকে নতুন করে ঝালাই করে নেয়ার। আপনার বন্ধু আত্মীয়দের সাথে ফোন কল বা ভিডিও কলে কথা বলুন। প্রয়োজন হলে তাদের সাথে দেখা করুন। তাদের বাসায় যান অথবা তাদের আপনার বাসায় নিমন্ত্রন দিন। চেষ্টা করুন প্রতিদিনই কারো না কারো সাথে দেখা করার সম্ভব না হলে অন্তত কথা বলার।

৬। পার্টটাইম কোন কাজে যোগদান করুন

চাকুরি থেকে অবসরের পর অনেকেই সারাদিন কর্মহীন থেকে বিরক্তবোধ করেন। এমনকি অনেকে হতাশাও বোধ করতে শুরু করেন। এর থেকে বাঁচার জন্য আপনি চাইলে পার্টটাইম কাজ করতে পারেন। আপনি যে কাজে অভিজ্ঞ সেই কাজ অল্পবিস্তর করতে পারেন। যেমন আপনার পেশা যদি শিক্ষকতা হয়ে থাকে তবে অবসর গ্রহনের পর চাইলে গেস্ট টিচার হিসেবে কোন স্কুল কলেজ অথবা কোচিং সেন্টারে ক্লাস নিতে পারেন।

৭। হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করুন

গবেষণা থেকে এখন এটি প্রমানিত যে যারা মন খুলে হাসে এবং ছোট খাট কারনেই হাসতে পারে তাদের দীর্ঘজীবী হওয়ার সম্ভাবনা বেশী। কারণ একজন মানুষ যখন হাসে তখন তার শরীরে ডোপামিন, সেরোটোনিন এবং এন্ডোরফিন নামক রাসায়নিক পদার্থ উৎপন্ন হয়। এই রাসায়নিক পদার্থগুলো আপনার মস্তিস্ককে জানায় যে আপনি ভাল বোধ করছেন, যা আপনার সুখের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তাই ভালো থাকতে হলে মন খুলে হাসুন।

৮। হালকা ব্যায়াম করুন নিয়মিত

১২ সপ্তাহের একটি গবেষনায় দেখা গেছে যে যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেছেন অন্যদের তুলনায় তাদের মুড ও স্মৃতি অনেক উন্নত। তাই নিয়মিত হালকা ব্যায়াম অথবা হাটাহাটি করা খুবই জুরুরি। এতে শারীরিক ও মানসিক উভয় স্বাস্থেরই উন্নতি হবে।
আপনি চাইলে নিয়মিত কিছু শারীরিক কসরতও অনুশীলন করতে পারেন। যেমন সুইমিং পুলে সাঁতার কাটা, টেনিস খেলা ইত্যাদি।

৯। অতিরিক্ত খবর দেখা ক্ষতিকর হতে পারে

অবসরে যাওয়ার পর অনেকেই দেখা যায় দিনের একটা বড় সময় বিভিন্ন নিউজ চ্যানেলে খবর দেখে সময় পার করে। অতিরিক্ত খবর দেখার কারনে মানসিক চাপ স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটতে পারে। কারণ টিভিতে প্রচারিত অধিকাংশ খবরই কোন দূর্ঘটনা, চুরি-ডাকাতি অথবা কোন হতাশা বা নেতিবাচক তথ্য দিয়ে সাজানো থাকে। তাই ক্রমাগত এই সকল খবর দেখতে দেখতে মনের উপর অনেক বেশী চাপ পড়তে পারে। তাই সারাদিনে কেবল একবার ৩০ মিনিটের জন্য খবর দেখা যেতে পারে ।

১০। স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহন করুন

শরীর সুস্থ থাকলে মনও সুস্থ থাকবে। তাই সুস্থতার জন্য খাবার স্বাস্থ্যকর হওয়া খুবই জরুরী। বাইরের অস্বাস্থ্যকর তেলেভাজা খাবার না খেয়ে ঘরের তৈরি তাজা খাবার খাওয়ার অভ্যাস করা জরুরী। এছাড়াও ঔষধ সময়মত গ্রহন করার অভ্যাস করা উচিত। কোন শারীরিক অসুস্থতার কারনে ডাক্তারের স্বারনাপন্ন হতে হবে সময়মত।

বার্ধ্যক্যেকে সুখকর করার জন্য সুস্থ থাকা জরুরী। তাই কোন শারীরিক সমস্যাকেই হেলাফেলা করা যাবে না। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে। রাতে ৭ থেকে ৯ ঘন্টা ঘুমানোর চেষ্টা করতে হবে। সর্বোপরি ইতিবাচক মানসিকতা রাখতে হবে তবেই বার্ধক্যও হবে সুন্দর ও সুখকর।

What do you think?

Written by সানজিদা আলম

একজন ফ্রিল্যান্স কন্টেন্ট রাইটার। টেকনোলজি, স্বাস্থ্য, প্রোডাক্ট রিভিউ এবং ইনফরমেটিভ কন্টেন্ট নিয়ে কাজ করতে ভালো লাগে। লেখালেখির পাশাপাশি ভালোবাসি পড়তে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

আইফোন সুরক্ষার উপায়

হ্যাকারদের হাত থেকে আপনার আইফোন কিভাবে রক্ষা করবেন

শাওয়াল মাসের ছয় রোজা

শাওয়াল মাসের ছয় রোজার গুরুত্ব ও ফজিলত