in

খুশকি সমস্যার আদ্যোপান্ত ও মুক্তি লাভের কার্যকরী ঘরোয়া উপায়

effective-home-remedies-to-treat-and-get-rid-of-dandruff

আমরা কম বেশি সবাই খুশকির সমস্যায় ভুগে থাকি। খুশকি সমস্যা থেকে মুক্তি লাভের কিছু কার্যকরী ঘরোয়া উপায় বা টিপস শেয়ার করব এবারের লেখায়। খুশকি আসলে আমাদের মাথার ত্বকের একটি সমস্যা। আর মাথায় অতিরিক্ত খুশকি হলে তার প্রথম প্রভাব পড়ে মুখের ত্বকে। যার ফলে মুখের ত্বকে বিশেষত কপাল, গাল, নাক এর মতো উঁচু অংশতে খুশকি পড়ে বলে সেখানে রেস বা ব্রণের সমস্যা দেখা দিতে পারে। অর্থাৎ মুখের ত্বকেও সমস্যা শুরু হয়ে যায়। এছাড়াও অতিরিক্ত খুশকি হওয়ার ফলে মাথার ত্বক শুষ্ক হয়ে ওঠে এবং ক্রমাগত জ্বালা ভাব এবং চুলকানি ভাব সৃষ্টি হয়। অতিরিক্ত খুশকির সমস্যা দেখা দিলে চুলের গোড়া হালকা হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে চুল পড়া বৃদ্ধি পেতে পারে।

তাই আজকে এই লেখাটির মাধ্যমে আমরা আপনাদের খুশকি সমস্যা নিয়ে কিছুটা বিস্তারিত জানাতে চেষ্টা করব এবং পাশাপাশি খুশকি দূর করার জন্য আমাদের হাতের কাছেই কিছু উপাদান ব্যবহার করে কিভাবে খুশকি সমস্যা থেকে মুক্তি লাভ করতে পারি সে সম্পর্কে ধারণা দেয়ার চেষ্টা করব।

চিহ্ন উপসর্গ:

খুশকি উপসর্গগুলোর মধ্যে রয়েছে চুলে চিড় বা ফাটল ধরা এবং কখনও কখনও হালকা চুলকানি। ত্বকের প্রদাহ সহ এই অবস্থার আরও গুরুতর রূপকে সেবোরোইক ডার্মাটাইটিস বলা হয়। এর কারণ অস্পষ্ট হলেও ধারনা করা হয় যে, এতে বেশ কিছু জেনেটিক এবং পরিবেশগত কারণ জড়িত। শীতকালে এর অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে।

খুশকির লক্ষণ এবং উপসর্গগুলোর মধ্যে নিম্নের বিষয়গুলো উল্লেখযোগ্যঃ

  • আপনার মাথার ত্বক, চুল, ভ্রু, দাড়ি বা গোঁফ এবং কাঁধে ত্বকের দাগ।
  • শিশুদের ক্ষেত্রে আঁশযুক্ত, খসখসে মাথার ত্বক।
  • খিটখিটে, তৈলাক্ত, শুষ্ক ত্বক।
  • একটি খামিরের মতো ছত্রাক (ম্যালাসেজিয়া) যা বেশিরভাগ প্রাপ্তবয়স্কদের মাথার ত্বকে দেখা যায়।
  • চুলের যত্নে আমরা যেসব শ্যাম্পু বা অন্যান্য পণ্য ব্যবহার করে থাকি তার প্রতি চুল এবং ত্বকের অতি সংবেদনশীলতা।
  • ত্বকের পৃষ্ঠে ছত্রাকের উপনিবেশ

চুলের নিয়মিত যত্নআত্তি ছাড়া প্রকৃত অর্থে খুশকি চিরতরে দুর করার কোন উপায় নাই। তবে অবস্থার উন্নতির জন্য কেটোকোনাজল বা স্যালিসিলিক অ্যাসিডের মতো অ্যান্টিফাঙ্গাল ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে। এবং ঘরোয়া উপায়ে নিয়মিত চুলের যত্নের মাধ্যমে খুশকি সমস্যা থেকে মুক্তি লাভ সম্ভব।

খুশকির লক্ষণ এবং উপসর্গগুলো জানলাম। এবার দেখে নেয়া যাক কি কারণে এসব উপসর্গগুলো দেখা দিতে পারে।

  • চুলে ধুলা-ময়লা থাকা এবং পর্যাপ্ত শ্যাম্পু না করা। আবার এমনও হতে পারে যে অতিরিক্ত শ্যাম্পু বা হেয়ার কেয়ার পণ্যের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের ফলেও চুলে খুশকিসহ অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
  • মাথার চুল ওভারব্রাশ করা, মাথার ত্বকের সংবেদনশীল ত্বকের সাথে খুব বেশি ঘর্ষণ তৈরি করে।
  • বিভিন্ন পার্সোনাল কেয়ার প্রোডাক্টের কারণে কন্টাক্ট ডার্মাটাইটিস হতে পারে যা আপনার মাথার ত্বক লাল করে দেয় এবং চুলকায়।
  • ত্বকের অন্যান্য রোগ যেমন সোরিয়াসিস এবং একজিমার কারণেও খুশকির প্রবণতা দেখা দিতে পারে।
  • এছাড়া কিছু অসুস্থতা যেমন পারকিনসন্স বা এইচআইভির মতো রোগের কারণেও চুলের ত্বকে খুশকির প্রবণতা দেখা দিতে পারে।
  • তবে লক্ষণ এবং উপসর্গগুলো আরও গুরুতর হতে পারে যদি কারো উপর মানসিক চাপ বেশি থাকে।

চুলের নিয়মিত যত্নআত্তি ছাড়া প্রকৃত অর্থে খুশকি চিরতরে দুর করার কোন উপায় নাই। তবে অবস্থার উন্নতির জন্য কেটোকোনাজল বা স্যালিসিলিক অ্যাসিডের মতো অ্যান্টিফাঙ্গাল ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে। এবং ঘরোয়া উপায়ে নিয়মিত চুলের যত্নের মাধ্যমে খুশকি সমস্যা থেকে মুক্তি লাভ সম্ভব।

খুশকি দূর করার ঘরোয়া উপায়ঃ

খুশকি সমস্যা সমাধানের জন্য সেরা ৫ টি ঘরোয়া উপায় এখানে উল্লেখ করছি যা আপনার হাতের কাছে থাকা বিভিন্ন উপাদান দিয়ে অতি সহজেই খুশকি সমস্যার টোটকা হিসেবে কাজে লাগাতে পারবেন।

মেথিঃ

মেথির মধ্যে থাকা প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, আয়রন এবং পটাশিয়াম চুলের খুশকি দূরীকরণ এর পাশাপাশি চুলের অকালপক্কতা রোধ করে চুলকে মসৃণ এবং ঘন করে। 

ব্যবহার পদ্ধতিঃ

আগের দিন রাতে মেথি ভিজিয়ে রাখুন। পরদিন সকালে উঠে মিক্সিতে মেথিগুলো বেটে নিন। এরপর গরম পানির সাথে রাতে ভেজানো মেথির পেস্টটি মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। এবার মিশ্রণটি সারা মাথায় লাগিয়ে নিন এবং ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর পরিষ্কার জল দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। এটি লাগানোর পর শ্যাম্পু করার প্রয়োজন নেই। প্রতিদিন গোসল করার আগে এটি চুলে ব্যবহার করতে পারেন।

টক দইঃ

এর অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান মাথার ত্বকে ফাঙ্গাস কমাতে সাহায্য করে। যেহেতু এটি প্রোবটিক্স এর একটি ভালো উৎস তাই এটি খুশকি নিরাময়ে সহায়তা করে। এছাড়াও শরীরের মধ্য থেকে যে কোন ধরনের ব্যাকটেরিয়া দূর করতে এবং ত্বককে মসৃণ করতে সহায়তা করে।

ব্যবহার পদ্ধতিঃ

এক কাপ টক দই নিয়ে সেটা ভালো করে ফাটিয়ে নিবেন। এবার টক দইটুকু মাথার স্কাল্পে এবং চুলে ভালো করে লাগিয়ে নিবেন। এরপর ১৫ মিনিট মিশ্রণটি মাথায় লাগিয়ে রাখার পর পরিষ্কার পানি দিয়ে যে কোন হালকা শ্যাম্পু ব্যবহার করে মাথাটা ধুয়ে ফেলুন।

সপ্তাহে তিন দিন গোসল করার আগে এটি করতে পারেন। এটি চুলকে উজ্জল এবং খুশকি বিহীন করে তুলবে।

ডিমঃ

ডিমের মধ্যে থাকা বায়োটিন চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এছাড়া এটি চুলকে খুশকি মুক্ত এবং উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে।

ব্যবহার পদ্ধতিঃ

বাটিতে ডিমগুলো ফাটিয়ে নিয়ে ভালো করে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। এবার মিশ্রণটি চুলের ডগা থেকে গোড়া অবধি ভালো করে লাগিয়ে নিন। এরপর শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে মাথাটা ঢেকে রাখুন। মিশ্রণটি মাথায় এক ঘণ্টা লাগিয়ে রাখুন। এরপর ভালো করে শ্যাম্পু করে নিন। চুলটা ভালো করে ধুয়ে নেবেন যাতে ডিমের গন্ধ না থাকে। সকালে গোসল করার আগে সপ্তাহে দুদিন এটি ব্যবহার করতে পারেন।

এলোভেরাঃ

এলোভেরায় বিদ্যমান প্রাকৃতিক অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান গুলি মাথার ত্বকে ফাঙ্গাস ইনফেকশন দূর করে খুশকি দূরীকরণে সহায়তা করে। 

ব্যবহার পদ্ধতিঃ

প্রথমে অ্যালোভেরার নির্যাস বা জেল বের করে নিন। এবার অ্যালোভেরা জেলের সাথে অলিভ অয়েল ভালো করে মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি সরাসরি মাথার ত্বকে ভালো করে লাগিয়ে নিন। ১৫ মিনিট মিশ্রণটি মাথায় লাগিয়ে রাখুন। এরপর হালকা শ্যাম্পু ব্যবহার করে মাথা ধুয়ে ফেলুন। সকালে গোসল করার আগে প্রতিদিন এটি ব্যবহার করতে পারেন। এটি ব্যবহারের ফলে খুব দ্রুত খুশকি নিরাময় হবে।

আমলকিঃ

আমলকি চুলের দ্রুত বৃদ্ধি ঘটানোর পাশাপাশি মাথার ত্বকের সুরক্ষা প্রদান করে থাকে। এর মধ্যে থাকা ভিটামিন সি মাথার ত্বকে উপযুক্ত পুষ্টি প্রদান করে। এছাড়াও আমলকির মধ্যে থাকা অ্যান্টি ফাঙ্গাল উপাদান যা মাথার ত্বক থেকে যেকোনো ধরনের ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করতে এবং স্ক্যাল্পকে আর্দ্রতা প্রদান করতে সহায়তা করে।

ব্যবহার পদ্ধতিঃ

কাঁচা আমলকিটা কেটে নিয়ে ভালো করে বেটে একটি মিশ্রণ তৈরি করে নিন। এবার মিশ্রণটির সাথে নারকেল তেল মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করুন। এবার এই প্যাকটি মাথার ত্বকে ভালো করে লাগিয়ে নিন। ৩০ মিনিট রেখে দিন। এরপর যেকোনো হালকা শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।

What do you think?

Written by S.M Tawfique

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

2 Comments

Gaming headphone

গেমিং হেডফোন কেনার আগে যা অবশ্যই জানা দরকার

how-vacuum-cleaners-work

ভ্যাকুয়াম ক্লিনার কিভাবে কাজ করে এবং এটি ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধা