ভ্যাকুয়াম ক্লিনার নিয়ে ধারাবাহিক আলোচনার প্রথম পর্বে আমরা ভ্যাকুয়াম ক্লিনার কি এবং এর প্রকারভেদ নিয়ে আলোচনা করেছি। দ্বিতীয় পর্বে আমরা আলোচনা করবো ভ্যাকুয়াম ক্লিনার কিভাবে কাজ করে এবং এটি ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে ।
এই ডিভাইস সম্পর্কে এখন আমরা কমবেশী সবাই জানি। আমাদের দেশেও এখন এটি সহজলভ্য। তবে এই ডিভাইসটি যারা প্রথমবারের মত ব্যবহার করবেন তাদের জন্য এর ব্যবহারবিধি জানা জরুরি। দ্বিতীয় পর্বের শুরুতেই তাই আমরা দেখবো যে ভ্যাকুয়াম ক্লিনার কিভাবে ব্যবহার করতে হবে। চলুন তাহলে শুরু করি-
১ম ধাপ
ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ব্যবহারের আগে প্রথমে এর ময়লা জমা করার ব্যাগ বা কাপ চেক করুন। এটি যদি আগে থেকেই ময়লায় পূর্ন হয়ে থাকে তবে ডিভাইসটি ময়লা টানতে পারবে না। তবে আপনার উচিত প্রতিবার ব্যবহারের পরে এই ব্যাগ বা কাপটি পরিস্কার করে রাখা। এতে ডিভাইসটিও ভালো থাকবে এবং পরবর্তী ব্যবহারের সময় ঝামেলা কম হবে।
২য় ধাপ
ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের উচ্চতা পরীক্ষা করুন। বেশিরভাগ মেশিনেরই উচ্চতা অ্যাডজাস্ট এর জন্য একটি ইনডিকেটর থাকে। আপনার মেঝে বা কার্পেটের দৈর্ঘ অনুযায়ী ভ্যাকুয়ামের উচ্চতা ফিক্স করুন। কারন উচ্চতা যদি বেশী হয়ে যায় তাহলে পর্যাপ্ত সাকশন হবে না আর যদি কম হয়ে যায় তবে পর্যাপ্ত এয়ারফ্লো থাকবে না।
ভ্যাকুয়াম ক্লিনার এমন একটি ডিভাইস যেটা ব্যবহারের অসুবিধার চেয়ে সুবিধা অনেক বেশী। তাই ধীরে ধীরে আমাদের দেশে এই ডিভাইসটি অনেক বেশী জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। আপনি যদি শ্বাসতন্ত্রের বা এলার্জি জনিত রোগে ভুগে থাকেন তাহলে আপনার জন্য এই ডিভাইসটি অনেক বেশী উপকারী।
৩য় ধাপ
ডিভাইস চালানোর আগে ছোট খাট জিনিস সরিয়ে রাখুন। সহজে সরানো যায় এমন হালকা আসবাব যেমন টি টেবিল, ছোট র্যাক, চেয়ার ইত্যাদি একপাশে সরিয়ে রাখুন। এতে ডিভাইসটি চালনা করতে সুবিধা হবে।
৪র্থ ধাপ
প্রায় সব মডেলের সাথেই একাধিক এটাচমেন্ট থাকে। আপনি গৃহের কোন অংশটি পরিস্কার করতে চাচ্ছেন তার উপর নির্ভর করে প্রয়োজনীয় এটাচমেন্টটি ডিভাইসের সাথে সংযুক্ত করে নিন।
৫ম ধাপ
ডিভাইসের সাথে থাকা পাওয়ার কর্ডটি নিকটবর্তী সকেটে প্রবেশ করান। ডিভাইসের গায়ে অন-অফ সুইচ বা নব থাকবে। এই সুইচ অন করলে একটি লাল বাটন জ্বলে উঠবে। এর অর্থ হল ডিভাইসটি ব্যবহারের জন্য তৈরি।
৬ষ্ঠ ধাপ
ডিভাইসের মোটরের ঘূর্ণনের স্পিড কম বেশি করা যায়। বেশিরভাগ ডিভাইসে হাই, মিডিয়াম, এবং লো-এই তিনটি ভিন্ন স্পিড সেটিং থাকে। আপনার প্রয়োজনীয় স্পিড সেট করুন।
৭ম ধাপ
এবার আপনার প্রয়োজন মোতাবেক ডিভাইসটিকে সামনে পিছনে টেনে পরিস্কারের কাজটি চালিয়ে যান। পরিস্কারের কাজটি চলাকালীন যদি ‘ভ্যাক গেজে’ লাল আলো জ্বলে উঠে তাহলে বুঝতে হবে যে ডাষ্ট ব্যাগ বা কাপটি ময়লাতে পূর্ন হয়ে গেছে। ডাষ্ট কভার খুলে ডাষ্ট ব্যাগ বের করে ময়লা পরিস্কার করে আবার যথাযথ জায়গায় সেটি লাগাতে হবে।
৮ম ধাপ
কাজ শেষ হলে মোটর অফ করে সকেট থেকে পাওয়ার কর্ডটি খুলে নিন। ডিভাইসটি পরিস্কার করে উপযুক্ত স্থানে সংরক্ষন করুন।
ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ব্যবহারের সুবিধা
- ভ্যাকুয়াম ক্লিনার সময় এবং শক্তি সাশ্রয় করে। হাইজিনের পাশাপাশী সাধারন ঝাড়ুর চেয়ে অনেকবেশি নিরাপদও। দশ মিনিটের মধ্যেই এই ডিভাইস পরিচ্ছন্নতার কাজ করে ফেলতে পারে অপরদিকে ঝাড়ু দিয়ে এই কাজটি করতে প্রায় ঘন্টাখানেক সময় লেগে যেতে পারে।
- সহজেই ব্যবহার করা যায়। শুধুমাত্র পাওয়ার কর্ডটি সকেটে লাগান এবং ক্লিনিং এর কাজ শুরু করে দিন।
- বাতাসকে বিশুদ্ধ করে। ক্লিনারের সাথে HEPA অথবা ভিন্ন ধরনের ফিল্টার সংযুক্ত থাকে যা বাতাসে থাকা বিভিন্ন জীবানু, ব্যাকটেরিয়া, এবং ভাইরাসকে দূর করে বাতাসকে বিশুদ্ধ করে।
- বাসায় থাকা পোষা প্রাণীর লোম পরিস্কার করে। অনেক সময় ঘরে পোষা প্রাণীর লোম সোফা, বিছানার চাদর, কার্পেটে আটকে যায় যেটা ভ্যাকুয়াম ক্লিনার চমৎকারভাবে পরিস্কার করে।
- বর্তমানে বাজারে প্রায় সকল ভ্যাকুয়ামেই অসাধারন সব ফিচার রয়েছে। ফলে পরিচ্ছন্নতার কাজটি হয়েছে সহজ ও আরামদায়ক।
- কার্যগত সুবিধার তুলনায় দাম অনেকটায় আয়ত্বের মধ্যে।
- রোবট ভ্যাকুয়াম ব্যবহার করে আপনি বাসায় উপস্থিত না থেকেও পরিচ্ছন্নতার কাজটি করে ফেলতে পারবেন।
অসুবিধা
- আপনি যে মডেলের ক্লিনারই ব্যবহার করুন না কেন তা সাধারন ঝাড়ুর চেয়ে ভারী হবেই। আর এই কারনে অনেকেই ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ব্যবহার করতে চান না।
- বিদ্যুৎ বিল বেড়ে যাবে। যেহেতু এই ডিভাইসটি বিদ্যুতে চলে সেক্ষেত্রে এটি ব্যবহারের ফলে স্বাভাবিকভাবে কিছু বেশি বিল গুণতে হবে মাস শেষে।
- একটি ডিভাইসের সাথে একাধিক ডাস্ট ব্যাগ থাকে না। তাই এই ব্যাগটি নষ্ট হয়ে গেলে আপনাকে অবশ্যই নতুন একটি কিনে নিতে হবে।
পরিশেষে, ভ্যাকুয়াম ক্লিনার এমন একটি ডিভাইস যেটা ব্যবহারের অসুবিধার চেয়ে সুবিধা অনেক বেশী। তাই ধীরে ধীরে আমাদের দেশে এই ডিভাইসটি অনেক বেশী জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। আপনি যদি শ্বাসতন্ত্রের বা এলার্জি জনিত রোগে ভুগে থাকেন তাহলে আপনার জন্য এই ডিভাইসটি অনেক বেশী উপকারী। আপনাদের সুবিধার জন্য ভ্যাকুয়াম ক্লিনার নিয়ে ধারাবাহিক আলোচনার তৃতীয় ও শেষ পর্বে আমাদের দেশে সহজলভ্য সেরা কিছু ডিভাইস নিয়ে আলোচনা করবো। তাই আমাদের সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ।
GIPHY App Key not set. Please check settings