ঘরোয়া উপায়ে চুলের যত্নের প্রসঙ্গ এলেই ডিম, টক দই, লেবু, পেঁয়াজ ইত্যাদির পাশাপাশি যেটির কথা মনে আসে তা হলো অ্যালোভেরা যা বাংলায় ঘৃতকুমারী নামে পরিচিত। বহু বছর যাবত চুলের যত্নে এলোভেরা ব্যবহার হয়ে আসছে এ উপমহাদেশে। চুল পড়া, চুলের আগা ফেটে যাওয়া, খুসকি ইত্যাদি সাধারন চুলের সমস্যা মোকাবেলায় অ্যালোভেরার জুড়ি মেলা ভার। গবেষণায় দেখা গেছে, অ্যালোভেরায় অন্তত ৭৫ ধরনের প্রয়োজনীয় উপাদান রয়েছে যা চুলের সমস্যার সমাধান করে চুলকে সুন্দর রাখতে সাহায্য করে।
অ্যালোভেরার কিছু উপকারিতা সম্পর্কে আলোকপাত করা হলোঃ
১। অত্যাবশ্যকীয় ভিটামিনের আধার হিসেবে অ্যালোভেরাঃ
অ্যালোভেরায় রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট উৎপাদনকারী প্রয়োজনীয় ভিটামিন যেমনঃ ভিটামিন এ, ভিটামিন বি এবং ভিটামিন সি। এন্টিঅক্সিডেন্ট চুলের ভেতর এবং বাইরের স্বাস্থ্য রক্ষা করে, চুলের জন্য ক্ষতিকর কিছু থেকে চুলকে রক্ষা করে। শুধু তাই নয়, অ্যালোভেরাতে রয়েছে ভিটামিন বি-১২ যা লোহিত রক্তকণিকার জন্য উপকারি এবং তা চুলের বৃদ্ধিতে সহায়ক।
এছাড়াও রয়েছে ফলিক এসিড যা চুলের স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে অপরিহার্য উপাদান হিসেবে কাজ করে।
চুল পড়া, চুলের আগা ফেটে যাওয়া, খুসকি ইত্যাদি সাধারন চুলের সমস্যা মোকাবেলায় অ্যালোভেরার জুড়ি মেলা ভার। গবেষণায় দেখা গেছে, অ্যালোভেরায় অন্তত ৭৫ ধরনের প্রয়োজনীয় উপাদান রয়েছে যা চুলের সমস্যার সমাধান করে চুলকে সুন্দর রাখতে সাহায্য করে।
২। এন্টিব্যাকটেরিয়াল, এন্টিসেপটিক এবং এন্টি-ফ্ল্যামেটরির উৎসঃ
অ্যালোভেরায় ব্র্যাডিকাইনেস নামক এক ধরনের এনজাইম থাকে যা জীবাণু দ্বারা সংঘটিত প্রদাহ নিবারনে সাহায্য করে। এ প্রক্রিয়াকে বলা হয় এন্টি ফ্ল্যামেশন যা চুলের জন্য উপকারি।
এছাড়া এতে রয়েছে এন্টি সেপটিক এবং এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান যা চুলের খুসকি জনিত ছত্রাক রোধ করে থাকে।
৩। চুলের ত্বকের সুরক্ষায় অ্যালোভেরাঃ
অ্যালোভেরায় রয়েছে প্রটিউলাইটিক এনজাইম যা মাথার ত্বকের ক্ষতিগ্রস্থ্য টিস্যু মেরামতে সাহায্য করে। এতে চুল হয় সুন্দর ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল।
এছাড়া, অ্যালোভেরা চুলের আদ্রতা ধরে রাখতে এবং চুল শুষ্ক হওয়া রোধে সাহায্য করে। প্রাকৃতিক কনডিশনার হিসেবেও এটা ব্যবহার করা যায়।
অ্যালোভেরার নির্যাস বের করার নিয়মঃ
১। অ্যালোভেরা কেটে কিছুক্ষণ উঁচু কোন স্থান থেকে ঝুলিয়ে রাখতে হবে যাতে কাঁটা অংশ থেকে নির্গত আঠালো পদার্থ (রেজিন) বেরিয়ে যায়।
২। তারপর অ্যালোভেরা ধুয়ে ছুড়ি দিয়ে উপরের সবুজ ত্বক তুলে ফেলতে হবে। ভেতরের স্বচ্ছ অংশটাই মূলত নির্যাস।
৩। তারপর একটি ব্লেন্ডারে নির্যাস নিয়ে তাতে ভিটামিন ই বা এসেনশিয়াল ওয়েল এর (লেভেন্ডার, টি-ট্রি, নিম ইত্যাদি নানা রকমের) কয়েক ফোঁটা ব্যবহার করে ভালো করে ব্লেন্ড করে নিতে হবে।
৪। মিশ্রনটি ফ্রিজে রেখে অনেকদিন সংরক্ষণ করা যায়।
সুন্দর চুলের জন্য কয়েকটি অ্যালোভেরা হেয়ার মাস্কঃ
১। চুলের দ্রুত বর্ধনের জন্যঃ
যা যা লাগবেঃ
ক. অ্যালোভেরা জেল
খ. ক্যাস্টর অয়েল
গ. একটা ডিম
যেভাবে বানাবেনঃ
ক. একটি পাত্রে চুল বুঝে পরিমাণমতো অ্যালোভেরা জেল নিয়ে তাতে ২-৩ টেবিল চামুচ ক্যাস্টর তেল এবং একটা ডিম মিশিয়ে নিতে হবে ভালো করে।
খ. তারপর চুল ভাগ করে চুলের ত্বকে ভালো করে লাগিয়ে নিতে হবে।
গ. তারপর একটি শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে চুল ঢেকে অন্তত বিশ মিনিট রাখতে হবে তবে ত্রিশ মিনিটের বেশি নয়। যাদের ঠান্ডার ধাত আছে তাদের বেশিক্ষণ না রাখাই ভালো।
ঘ. তারপর শ্যাম্পু সহযোগে চুল ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে।
এটি সপ্তাহে একবার ব্যবহারই যথেষ্ট।
হেয়ার মাস্কটি কিভাবে কাজ করেঃ
ক্যাস্টর অয়েল ওমেগা-৬ এবং ফ্যাটি এসিডের উৎকৃষ্ট উৎস যা চুলের দ্রুত বর্ধনে সাহায্য করে। এছাড়া এটি চুলকে ময়েশ্চারাইজ করে এতে চুলে কম জট পাকে।
আমিষের সহজলভ্য উৎস ডিম। আমিষ চুলকে ক্ষতি হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে।
২। খুশকি রোধে অ্যালোভেরা মাস্কঃ
যা লাগবেঃ
ক. অ্যালোভেরা জেল
খ. ২ টেবিল চামুচ নারিকেল তেল
গ. ২ টেবিল চামুচ লেবুর রস
যেভাবে বানাবেনঃ
ক. চুলের পরিমাণ ও ঘনত্ব বুঝে একটি পাত্রে অ্যালোভেরা জেল নেবেন
খ. তারপর তাতে নারিকেল তেল ও লেবুর রস মিশিয়ে বড় কোন চামুচ দিয়ে ভালো করে নাড়বেন।
গ. মাথার ত্বক ও চুলে ভালো করে লাগিয়ে একটি শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে চুল ঢেকে রাখতে হবে অন্তত ত্রিশ মিনিট।
ঘ. এরপর যেকোন ভালো মানের শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে।
এটি সপ্তাহে অন্তত দুই দিন ব্যবহার করা উচিৎ।
হেয়ার মাস্কটি কিভাবে কাজ করেঃ
১। নারিকেল তেলে রয়েছে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল ও এন্টি ফাঙ্গাল উপাদান যা চুলের ত্বককে সুস্থ্য রাখে এবং খুশকি রোধ করে।
২। ভিটামিন সি ও সাইট্রাস এসিডের সহজলভ্য উৎস লেবু যা খুশকি মোকাবেলায় সাহায্য করে। মাথার ত্বকের পিএইচ লেভেল ঠিক রাখে।
৩। চুলের আগা ফাটা রোধে এলোভেরা হেয়ার মাস্ক
যা যা লাগবেঃ
১। অ্যালোভেরা জেল
২। দুই টেবিল চামুচ মধু
৩। দুই টেবিল চামুচ সূর্যমুখী তেল
যেভাবে বানাবেনঃ
১। চুলের ঘনত্ব ও পরিমাণ বুঝে একটি পাত্রে পরিমাণমতো এলোভেরা জেল নিতে হবে।
২। মধু এবং তেল মিশিয়ে চামুচ দিয়ে নেড়ে মিশ্রন তৈরী করতে হবে।
৩। মাথার ত্বক ও চুলে ভালো করে লাগিয়ে শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে চুল ঢেকে অপেক্ষা করতে হবে অন্তত বিশ-ত্রিশ মিনিট।
৪। তারপর শ্যাম্পু করে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে।
সপ্তাহে একদিন ব্যবহার করা যাবে।
হেয়ার মাস্কটি কিভাবে কাজ করেঃ
মধু আঠাল এবং রসালো তরল। এ ধরনের পদার্থ বাতাসের আদ্রতা ধরে রাখে। মাথার ত্বকে ব্যবহার করলে তা ত্বকের শুষ্কতা কমায় যা আগা ফাটা রোধে সহায়ক।
সূর্যমুখী তেল চুলের শুষ্কতা প্রতিরোধে লড়াই করে চুলকে ঝলমলে করে তোলে।
সতর্কতাঃ
- অ্যালোভেরা ব্যবহারের আগে হাতের কবজিতে সামান্য লাগিয়ে যদি কোন ধরনের প্বার্শপ্রতিক্রিয়া যেমন চুলকানি বা জ্বলন হয়ে থাকে তবে অ্যালোভেরা ব্যবহার না করাই উত্তম।
- যাদের ঠাণ্ডার ধাত রয়েছে তারা অ্যালোভেরার হেয়ার মাস্ক ১৫ মিনিটের বেশি ব্যবহার করবেন না।
- হেয়ার মাস্ক ব্যবহারের আগে নিশ্চিত হতে হবে ব্যবহৃত উপাদানসমূহ কোন ধরনের এলার্জির সৃষ্টি করে কি না।
GIPHY App Key not set. Please check settings