in , ,

আজওয়া খেজুরের উপকারিতা ও পুষ্টিগুন

আজওয়া খেজুরের উপকারিতা

খেজুর খায় না বা চিনে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুস্কর। বিশেষ করে আমরা মুসলমানরা এই মরুভুমির ফলটিকে অনেক বেশী ভালোবাসি আর খেতে পছন্দও করি। খেজুর ছাড়া যেন ইফতারি করার কথা আমরা চিন্তাও করতে পারি না। খেজুরের নানা রকম জাত রয়েছে তার মধ্যে আজওয়া খেজুর সবচেয়ে বেশী জনপ্রিয় এর স্বাদ এবং স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য। এই খেজুরটি সম্পর্কে মহানবী (সাঃ) তিরমিজি শরীফে বলেছেন “আজওয়া খেজুর জান্নাতের ফল, এর মধ্যে বিষের নিরাময় আছে”। এখান থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, এই ফল আমাদের দেহের জন্য কতটা উপকারী। তাই আজকে আমরা আজওয়া খেজুরের উপকারিতা ও পুষ্টিগুন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।  

আজওয়া খেজুরের উপকারিতা

১। পুরুষ এবং নারীর উর্বরতা বাড়ায়

অনেক নারীই কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে গর্ভবতী হতে পারেন না। আজওয়া খেজুরের সবচেয়ে বড় উপকারিতা হল এটি পুরুষ এবং নারীর উর্বরতা বাড়ায়। National Centre for Biotechnology Information এর দেয়া তথ্য মতেঃ

  • আজওয়া পুরুষের শুক্রাণু বৃদ্ধি করে
  • নারীর জরায়ুর এন্ডোমেট্রিয়াল লাইলিং পুরু করে যেটা গর্ভধারনে সাহায্য করে
  • এছাড়াও এই খেজুর গর্ভাবস্থায় নানাবিধ শারীরিক সমস্যা দূর করে

২। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে রাখে

আজওয়া খেজুরের আরো একটি বড় উপকারিতা হল এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে। এতে প্রচুর পরিমানে পটাসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে যেগুলো রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে এবং হার্টবিট স্বাভাবিক রাখতে উল্লেখযোগ্য ভুমিকা রাখে। এছাড়াও এই খেজুরে থাকা পটাসিয়াম রক্তনালীকে কার্যকর রাখতে সাহায্য করে।

খেজুরের নানা রকম জাত রয়েছে তার মধ্যে আজওয়া খেজুর সবচেয়ে বেশী জনপ্রিয় এর স্বাদ এবং স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য। এই খেজুরটি সম্পর্কে মহানবী (সাঃ) তিরমিজি শরীফে বলেছেন “আজওয়া খেজুর জান্নাতের ফল, এর মধ্যে বিষের নিরাময় আছে”।

৩। প্রসব বেদনা কম করে

ইসলাম বলে যে আজওয়া খেজুর প্রসবকালীন ব্যাথা কমাতে সাহায্য করে এবং বিজ্ঞান এটা সমর্থনও করে। বলা হয় যে গর্ভাবস্থায় ৩৬ সপ্তাহের পর থেকে প্রতিদিন ৬টি করে আজওয়া খেজুর খেলে নিম্নলিখিত উপকারিতাগুলো পাওয়া যায়ঃ

  • প্রসব ত্বরান্বিত করে
  • সারভিক্সকে প্রসবের জন্য উপযুক্ত করে
  • প্রসব বেদনা কম করে

৪। ক্যান্সার প্রতিরোধ করে

সম্প্রতি এক গবেষণায় এটি প্রমানিত হয়েছে যে আজওয়া খেজুর ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। এতে থাকা Luteolin নামক উপাদানটি Hepatocellular Carcinoma অর্থাৎ লিভার ক্যান্সার প্রতিরোধে অবিশ্বাস্য রকম কাজ করে। তাই যারা নিয়মিত খেজুর খায় তারা পেটের ক্যান্সার থেকে নিরাপদ থাকে।

৫। হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে

আমাদের অন্ত্রের সুরক্ষার জন্যেও এই খেজুর চমৎকার কাজ করে। এটি খাবারকে দ্রুত হজম হতে সাহায্য করে। এতে উচ্চ মাত্রায় ডায়াটারি ফাইবার এবং পলিফেনল রয়েছে যেগুলো অন্ত্রের মাইক্রোবায়োটার উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই কখনো বেহিসেবি খাবার খেয়ে ফেললে পটাপট কটা খেজুর খেয়ে নিন।

৬। চোখের জন্য উপকারী

আমাদের যান্ত্রিক জীবনে আমরা দিনের অধিকাংশ সময়ই কাটিয়ে দেই কম্পিউটারের সামনে বসে। বলা হয়ে থাকে যে, নিয়মিত আজওয়া খেজুর খেলে রাতকানা রোগ হয় না। তাই চোখের দৃষ্টি ভালো রাখার জন্য নিয়মিত খেজুর খাওয়ার অভ্যাস করুন।

৭। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে

খেজুরে ফাইবারের পরিমান অনেক বেশী থাকে। তাই কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে এটি দারুন কার্যকর। শুধু যে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে তাই নয়, এটি ডায়রিয়া রোধ করতেও সাহায্য করে। তাই ডায়রিয়া হলে দু-চারটে খেজুর খেতে ভুলবেন না।

৮। ওজন নিয়ন্ত্রন করে

মাত্র কয়েকটা খেজুর আপনার পেট পূর্ণ করে ক্ষুধা দূর করতে পারে। তাই আপনি যদি অল্প পরিমান খাবার খেয়ে আপনার পেট পূর্ন করতে চান তাহলে আপনার জন্য খেজুর সবচেয়ে ভালো খাবার। এতে আপনার ওজনও নিয়ন্ত্রনে থাকবে। তাই আপনি যদি ডায়েট করতে চান তবে খাদ্য তালিকাতে অবশ্যই খেজুর রাখুন।

৯। কোলেষ্ট্রল কমাতে পারে

আজওয়া খেজুরে কোন ক্ষতিকর চর্বি নেই। তাই আপনার যদি কোলেষ্ট্রলের সমস্যা থেকে থাকে তাহলে অন্য কোন চর্বি জাতীয় খাবারের পরিবর্তে খেজুর খেয়ে কোলেষ্ট্রল নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারেন।

আজওয়া খেজুরের পুষ্টিগুন

প্রতি ১০০ গ্রাম খেজুরে নিম্নলিখিত পুষ্টিগুন পাওয়া যায়ঃ

  • শক্তি ২৭৭ কিলো ক্যালোরি
  • শর্করা ৭৪.৯৭ গ্রাম
  • প্রোটিন ১.৮১ গ্রাম
  • সর্বমোট চর্বি .১৫ গ্রাম
  • কোলেষ্ট্রল ০ গ্রাম
  • ডায়াটারি ফাইবার ৬.৭ গ্রাম
  • ভিটামিন এ ১৪৯ আইইউ
  • ভিটামিন কে ২.৭ মাইক্রোগ্রাম
  • সোডিয়াম ১ মাইক্রোগ্রাম
  • পটাসিয়াম ৬৯৬ মাইক্রোগ্রাম

ক্যালসিয়াম ৬৪ মাইক্রোগ্রাম এছাড়াও আজওয়া খেজুরে ফলেট, রিবোফ্লভিন, থিয়ামিন ও নিয়াসিন রয়েছে যেগুলো আমাদের সুস্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। এতে রয়েছে ক্যারোটিন যা আমাদের চোখের সুস্থতার জন্য বিশেষভাবে জরুরী। আজকে আমরা আজওয়া খেজুরের উপকারিতা ও পুষ্টিগুন সম্পর্কে জানলাম। তাই আজ থেকেই আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকাতে আজওয়া খেজুর যুক্ত করে নিন। সুস্থ ও রোগ্মুক্ত জীবন উপভোগ করুন।

What do you think?

Written by সানজিদা আলম

একজন ফ্রিল্যান্স কন্টেন্ট রাইটার। টেকনোলজি, স্বাস্থ্য, প্রোডাক্ট রিভিউ এবং ইনফরমেটিভ কন্টেন্ট নিয়ে কাজ করতে ভালো লাগে। লেখালেখির পাশাপাশি ভালোবাসি পড়তে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

শীতের পোশাক গুছানোর নিয়ম

শীত শেষে পোশাকগুলো গুছিয়ে রাখবেন যেভাবে

পুরুষের শালীন পোশাক

পুরুষের শালীন পোশাক- ইসলাম কী বলে?