রমজানের শেষ দশ দিন হলো নাজাতের দশ দিন। এই দশ দিনের মাঝে ৫ টি বিজোড় দিনের কোনো এক রাতকে বলা হয় ‘লাইলাতুল কদর’। আমরা সাধারণত এ সময়কে বলি ‘শবে কদর’।
শবে ক্বদর শব্দটি ফারসি। শব-এর অর্থ রাত বা রজনী। ক্বদর শব্দের অর্থ মহিমান্বিত, সম্মানিত, মর্যাদা, গুণাগুণ, ভাগ্য ইত্যাদি। মূলকথা শবে কদরের মোট অর্থ ভাগ্যরজনী। আর শবে কদরের আরবিই হলো ‘লাইলাতুল কদর’ মানে, সম্মানিত রাত।
নাজাতের ৫ টি বিজোড় রাতের কোনো একটিতেই লুকায়িত থাকে এই সময়টি। সেই রাতের আবহাওয়া থাকে নাতিশীতোষ্ণ, পরিবেশ থাকে শান্ত, হৃদয় অনুভব করে অন্যরকম প্রশান্তি৷
তাই, শবে কদরকে খুঁজে পেতে হলে, নাজাতের বিজোড় ৫টি দিনে সমান গুরুত্বের সাথে ইবাদত করতে হবে। আজ আমরা নাজাতের দশ দিনের বিজোড় রাতগুলোতে করণীয় ইবাদত সম্পর্কে জানবো।
১. শবে কদর তালাশ করা
আমরা বর্তমানে অনেকেই কেবলমাত্র ২৭ রমজানের রাতকে শবে ক্বদর হিসেবে গণ্য করি। আসলে, তা কিন্তু ভিত্তিহীন। প্রকৃত পক্ষে লাইলাতুল কদর নির্ধারিত কোনো রাতে হয় না। আমাদের উচিত রমজানের শেষ দশকের প্রত্যেক রাতেই কদর তালাশ করা। তবে তা শেষ দশকের যে কোনো বেজোড় রাতে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আমাদের মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে বিজোড় রাতগুলোর মাঝে লাইলাতুল ক্বদর তালাশ করতে বলেছেন।
আমাদের উচিত রমজানে ২১, ২৩, ২৫, ২৭ এবং ২৯ রমজানের এই ৫ রাতের প্রতিটিতে বিশুদ্ধ মনে ইবাদত করা। ৫ ওয়াক্তের সালাতগুলো সঠিক সময়ে আদায় করে নেয়া উচিত এবং এই দিনগুলোতে বেশি বেশি নফল সালাত আদায় করা উচিত।
২. যথাযথভাবে সিয়াম পালন করা অর্থাৎ রোজা রাখা
যদি বিশেষ কোনো কারণ না থাকে, এবং শরীর খুব দূর্বল এবং অসুস্থ না থাকে, তাহলে অবশ্যই প্রতিদিনের রোজাগুলো সঠিকভাবে পালন করতে হবে।
প্রতিদিন সঠিক সময়ে সেহরী খেয়ে, রবের হুকুম পালন করে ইফতারের সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এবং চেষ্টা করতে হবে, যেন রোজা মাকরুহ হয়ে না যায়। এতে আমাদের প্রিয় রব নিশ্চয়ই খুশি হবেন।
আমরা বর্তমানে অনেকেই কেবলমাত্র ২৭ রমজানের রাতকে শবে ক্বদর হিসেবে গণ্য করি। আসলে, তা কিন্তু ভিত্তিহীন। প্রকৃত পক্ষে লাইলাতুল কদর নির্ধারিত কোনো রাতে হয় না। আমাদের উচিত রমজানের শেষ দশকের প্রত্যেক রাতেই কদর তালাশ করা। তবে তা শেষ দশকের যে কোনো বেজোড় রাতে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
৩. যথাসম্ভব কুরআন তিলাওয়াত করা
বিজোড় রাতগুলোতে কুরআন তিলাওয়াত করা উত্তম। কারণ এসময় কয়েক গুণ বেশি সওয়াব লাভ করা যায়। সাধারণ সময়ে, আমরা প্রতিটি হরফের জন্য ১০ নেকি করে সওয়াব পেয়ে থাকি।
কিন্তু, এই সময়টাতে অর্থাৎ নাজাতের বিজোড় দিনগুলোতে আল্লাহ তায়ালা আমাদের সামনে সওয়াব লাভ করার বিশালাকার দরজা খুলে দেন। কুরআনের সূরার অর্থ এবং আয়াতের গুরুত্ব বুঝে, তা জীবনে কাজে লাগালে, তার থেকে উত্তম কিছু হতে পারে না।
৪. শবে ক্বদরের সালাত আদায় করা
শবে ক্বদরের সালাত আদায় করার চেষ্টা করতে হবে। অনেকেই শুধুমাত্র ২৭ রমজান উপলক্ষ্যে শবে ক্বদরের সালাত আদায় করে থাকেন। কিন্তু, একজন প্রকৃত মুমিন হিসেবে, কুরআন এবং হাদিস থেকে পাওয়া যুক্তি অনুসারে, আমাদের নাজাতের ১০ দিনের পাঁচটি বিজোড় দিনেই, শবে ক্বদরের সালাত আদায় করা উচিত।
কারণ, এই দিনগুলোর কোনো একটিতেই আছে শবে ক্বদর নামের মহিমান্বিত রাতটি। যে রাতে নাজিল করা হয়েছে পবিত্র আসমানী কিতাব ‘আল কোরআন’। একজন প্রকৃত ইমানদার হিসেবে আমাদের কাজ সেই মহিমান্বিত রাতকে খুঁজে বের করা।
৫. জিকির করা
এসময় যতটা সম্ভব মহান আল্লাহ তায়ালার জিকিরে ডুবে থকতে হবে। সালাত আদায় করার পর, এমনকি দিনের অবসর সময়ে জিকির করতে হবে। নিম্নোক্ত জিকির গুলো রবের নিকট অধিক প্রিয়।
- সুবহানাল্লাহ
- আলহামদুলিল্লাহ
- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ
- আল্লাহু আকবার
৬. ইস্তিগফার
আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা চাওয়ার মাঝে কোনো দ্বিধা নেই। আছে স্বস্তি। আমরা যতটা সম্ভব ‘আসতাগফিরুল্লাহ‘ পাঠ করার চেষ্টা করবো। আমাদের জীবনের এক অনন্য সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেয় ইস্তিগফার।
নাজাতের শেষ দশদিন জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের সময়। আর শেষ বিজোড় ৫টি দিনও তারই অন্তর্ভুক্ত। এসময়টায় মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সকল চাওয়া পাওয়া কবুল করেন। আমাদের ক্ষমা করে দেন। এবং জাহান্নামের কঠিন আযাব থেকে মুক্ত করে দেন। তাই এসময়ে আমাদের উচিত আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন থাকা।
সবশেষে আশা করি, লেখাটি থেকে সকলেই কিছুটা উপকৃত হয়েছেন। নাজাতের বিজোড় ৫ টি দিন মুমিনের জীবনে বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ। তাই, প্রথম ২০ টি রোজা যেভাবেই কাটুক না কেন, আমাদের উচিত শেষ ১০ টি রমজানে বিশেষ করে বিজোড় দিনগুলোতে অধিক ইবাদত করা।
GIPHY App Key not set. Please check settings