কোলাজেন কী তা এখন আমরা মোটামটি অনেকেই জানি। ডায়েটিশিয়ানদের মতে, কোলাজেন আমাদের দেহের জন্য এক লুকিয়ে থাকা হিরো, যাকে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই উপেক্ষা করা হয়। তবে আমাদের সামগ্রীক স্বাস্থ্য ও জীবনীশক্তিকে জিইয়ে রাখার জন্য এই উপাদানটি অনেক বেশি জরুরী। তবে প্রশ্ন হচ্ছে ত্রিশের পর কোলাজেন আপনার জন্য কেন জরুরী?
কোলাজেন কী?
কোলাজেন হল এক ধরনের প্রোটিন যা আমাদের দেহের কোষগুলোকে উজ্জীবিত রাখার মূল কারিগর। আমাদের শরীরের সংযোগকারী টিস্যুগুলোকে সুস্থ্য রাখার ৮০ ভাগ দায়িত্ব কোলাজেন পালন করে। সমস্যা হচ্ছে আমাদের ৩০ বছর বয়সে পৌঁছানোর সাথে সাথে আমাদের শরীরের কোলাজেন উৎপাদন হ্রাস পেতে শুরু করে, যার ফলে বার্ধক্যের বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দেয়। আর এই কারনে আমাদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে তারুণ্য ধরে রাখার জন্য কোলাজেনের ঘাটতি পূরণ করা প্রয়োজন। বিষয়টি আরো বিস্তারিত জানার জন্য চলুন দেখি আমাদের প্রতিদিনের খাবার কোলাজেন থাকা কেন জরুরী।
ত্রিশের পর কোলাজেন কেন জরুরী?
১। হাড় সুস্থ রাখে
কোলাজেন হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষায় মূল ভূমিকা পালন করে। হাড়ের ক্ষয় কমানোর সাথে সাথে হাড়ের গঠনকে মজবুত করে। আমাদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে হাড় ক্ষয় ও অস্টিওপরোসিসের মতো সমস্যাগুলো থেকে বেঁচে থাকা এবং হাড়ের সুস্থতা বজায় রাখা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। আমাদের খাবারে তাই নিয়মিত কোলাজেন অন্তর্ভুক্ত করা হলে হাড়ের ঘনত্ব বৃধি পায় এবং ভঙ্গুরতা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
২। চুল ও নখ মজবুত করে
কখনও হাতের মজবুত চকচকে, সুন্দর নখ থাকার স্বপ্ন দেখেছেন? এটি পাওয়ার সহজ উপায় হল কোলাজেন। এটি কোষের অখণ্ডতা বজায় রেখে টিস্যুর কাঠামো প্রদান করে। নিয়মিত সঠিক মাত্রায় কোলাজেন গ্রহন করার মানে শুধু আপনার ত্বকের যত্ন নেয়া না সাথে আপনার চুল এবং নখকে শক্তিশালী এবং স্থিতিস্থাপক করা যা তাদের উজ্জ্বল ও আকর্ষনীয় করার জন্য জরুরী।
৩। অন্ত্রকে স্বাস্থ্যকর করে
একটি সুস্থ অন্ত্র হল সামগ্রিক সুস্থতার ভিত্তি। কোলাজেন পাচনতন্ত্রের লাইলিংকে সাপোর্ট দেয় যা ‘লিকি গাট সিন্ড্রোম প্রতিরোধ’ করে এবং অন্ত্রের সার্বিক সুস্থতা বজায় রাখে। এটি হজমে সহায়তা করতে পারে, প্রদাহ কমাতে পারে এবং হজম প্রকৃয়ার সকল সমস্যা দূরে রাখতে অবদান রাখতে পারে।
৪। হার্ট ভালো রাখে
হার্ট ভালো রাখা সম্পর্কে চিন্তা করার সময় কোলাজেন হয়ত প্রথম জিনিস নাও হতে পারে, তবে এটি কোলেস্টেরলের সঠিক মাত্রা বজায় রাখতে ভূমিকা পালন করে। এর অর্থ হল আপনার ডায়েটে কোলাজেন অন্তর্ভুক্ত করে, আপনি কেবল আপনার ত্বকের যত্নই নিচ্ছেন না সাথে আপনার হৃদয়ের প্রতি কিছুটা ভালবাসাও দেখাচ্ছেন।
৫। জয়েন্টের ব্যথা এবং ব্যথা কমায়
জয়েন্টে ব্যথা আমাদের বয়সের সাথে সাথে একটি সাধারণ সমস্যা, তবে কোলাজেন এই সমস্যা থেকে আমাদের উদ্ধার করতে পারে। অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদানগুলোর সাথে, কোলাজেন মানদেহের পেশী মেরামতে সাহায্য করতে পারে জয়েন্টের ব্যথা কমাতে সহায়তা করে।
৬। বলিরেখা কমায় এবং ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায়
ফাইন লাইন এবং বলি রেখাকে চির বিদায় দিন এবার! কোলাজেন ত্বকে আর্দ্রতা আটকে রাখে, স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায় এবং তারুণ্যের চেহারা বজায় রাখে। এটি যৌবন ধরে রাখার একটি প্রাকৃতিক ঝর্ণাধারার মতো যার জন্য আপনার ত্বক আপনাকে ধন্যবাদ জানাবে।
৭। মাড়ির স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়
আপনার মুক্তোর মত সাদা দাঁতেরও কিছু কোলাজেন ভালবাসা প্রাপ্য। কোলাজেন মাড়ির টিস্যুর অখণ্ডতা বজায় রাখতে সাহায্য করে, মুখের অভ্যন্তরের সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে অবদান রাখে। কোলাজেন একটি স্বাস্থ্যকর হাসি ও একটি সুস্থ শরীর উভয়ই উপরহার দিতে পারে।
৮। সহজে হজমযোগ্য প্রোটিনের উৎস
কোলাজেন মাংস এবং দুগ্ধজাত খাবার থেকে পাওয়া প্রোটিন থেকে ভিন্ন তাই এটি সহজেই হজম হয়ে যায়। এর মানে হল যে আপনি আপনার ডাইজেসটিভ সিসটেমের উপর চাপ প্রয়োগ না করেই এই পোটিনের সুবিধাগুলো উপভোগ করতে পারেন। এটি একইসাথে আপনার স্বাদ বৃদ্ধি করবে এবং আপনার অন্ত্রের জন্যেও উত্তম।
৯। পুষ্টি পুনরায় পূরণ করে
বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের শরীরে একটা সময় প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদানের অভাব শুরু হয়। কোলাজেন এই প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানগুলোকে পুনরায় পূরণ করতে সাহায্য করে এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং সুস্থতায় অবদান রাখে। এক কথায় এটিকে আপনার শরীরের বয়সের সাথে পরিবর্তিত চাহিদার সাথে উপযোগী একটি পুষ্টির বৃদ্ধি হিসাবে ভাবতে পারেন।
১০। আর্থ্রাইটিস এর ব্যথা কমায়
আর্থ্রাইটিস কষ্টদায়ক এক শারীরিক অবস্থা হতে পারে, তবে কোলাজেনের প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্যগুলো অনেকটা উপশম করতে পারে। আপনার প্রতিদিনের খাবারে কোলাজেন অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে আপনি শুধু এর উপসর্গগুলোই কম করতে পারবেন না সাথে আর্থ্রাইটিস-সম্পর্কিত অস্বস্তিও হ্রাস করতে পারবেন।
পরিশেষে, আশাকরি এখন আপনারা কোলাজেন কী এবং ত্রিশের পরে কোলাজেন আপনার জন্য কেন জরুরী তা জানতে পেরেছেন। তাই আজকে থেকেই কোলাজেন সমৃদ্ধ খাবার আপনার প্রতিদিনের ডায়েটে রাখুন আর ত্রিশের পরেও নিজের তারুণ্য ধরে রাখুন।
GIPHY App Key not set. Please check settings