কোলাজেন হল এমন এক প্রকারের প্রোটিন যা আমাদের ত্বক ও সংযোগকারী টিস্যুর সামগ্রীক গঠন সম্পন্ন করে থাকে যা আমরা পূর্বেই আলোচনা করেছি। কোলাজেন আমাদের ত্বকের ফ্লেক্সিবিলিটিকে ধরে রাখে। এর কারনেই মূলত আমাদের ত্বকের টান টান ভাব বজায় থাকে। শিশুদের ত্বকে অপেক্ষাকৃত কোলাজেন বেশী থাকার কারনে তার ত্বক টান টান বেশী থাকে। আর বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানব শরীরে কোলাজেন কমতে শুরু করে যার কারনে ত্বকে বলি রেখা আসে এবং ত্বক ঝুলেও পড়ে।
কোলাজেন সমৃদ্ধ খাবার
নিয়মিত কোলাজেন সমৃদ্ধ খাবার খেলে কোন প্রকার সাপ্লিমেন্ট ছাড়াই তারুণ্য ধরে রাখতে পারবেন দীর্ঘদিন। এখন প্রশ্ন হল কোলাজেন সমৃদ্ধ খাবার কোনগুলো? আজকের এই আর্টিকেলে আমারা প্রাকৃতিকভাবে যে খাবারগুলো শরীরে কোলাজেনের চাহিদা পূরণ করতে পারে সেগুলো নিয়ে আলোচনা করবো। চলুন তাহলে শুরু করি।
১। বোন ব্রুথ
বোন ব্রুথ হল প্রানীর হাড় তৈরি এক প্রকার স্যুপ জাতীয় খাবার। আমরা জানি যে প্রানীর হাড় থেকে পর্যাপ্ত পরিমানে কোলাজেন পাওয়া যায়। তাই গরু, ছাগল, এমনকি মুরগীর হাড় দীর্ঘসময় পানিতে সিদ্ধ করে এই স্যুপ তৈরি করা হয়। বড় পাত্র বা হাড়িতে অর্গানিক পদ্ধতিতে লালন পালন করা গরু ছাগলের হাড়ের সাথে পছন্দমত মশলা ও সবজি দিয়ে ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টা অল্প আচে রান্না করে তৈরি করা হয় বোন ব্রুথ। দীর্ঘসময় হাড় সিদ্ধ করার কারনে এতে থাকা কোলাজেন পানির সাথে বিক্রিয়া করে জিলাটিনে রূপান্তরিত হয়। এই জিলাটিন খুব দ্রুতই মানব শরীরে শোষিত হয়ে যায়।
২। সামুদ্রিক মাছ
কোলাজেনের বেশ কিছু ভাগ রয়েছে। এদের মধ্যে টাইপ ওয়ান কোলাজেন বলতে সাধারনত সামুদ্রিক কোলাজেনকে বোঝানো হয়। এই প্রোটিন উপাদানটি মানুষের শরীরের হাড় ও অন্যান্য কোষকে সুস্থ রাখে এবং ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা রক্ষা করে। সামুদ্রিক মাছ বিশেষ করে এদের পাখনা, লেজ, কাটা ইত্যাদি সামুদ্রিক কোলাজেনের খুব ভালো উৎস। এই কোলাজেন খুব দ্রুত দেহে শোষিত হয় এবং দেহের জন্য খুব উপকারীও। এমনকি যারা নিরামিষ ভোজি তারাও সামুদ্রিক মাছের কোলাজেন গ্রহন করতে পারেন এবং শরীরের প্রয়োজনীয় কোলাজেনের চাহিদাও পূরন করতে পারে।
৩। গরুর মাংস
টাইপ ওয়ান এবং টাইপ টু কোলাজেনের যৌগ প্রাথমিকভাবে বোভাইন কোলাজেন নামে পরিচিত। এই কোলাজেন সাধারনত অর্গানিকভাবে লালিত পালিত গরুর মাংস ও হাড় থেকে প্রচুর পরিমানে পাওয়া যায়। এই বোভাইন কোলাজেন দাঁত, হাড়, সংযোগকারী কোষ ত্বক ইত্যাদির জন্য বিশেষভাবে উপকারী।
৪। মুরগির মাংস
মুরগির মাংস প্রচুর পরিমানে টাইপ টু কোলাজেন পাওয়া যায় যা হাড়ের সংযোগস্থলের সুরক্ষার জন্য উপকারী। তাই এটি বাতের ব্যাথা ও আর্থ্রাইটিস দূর করতে সাহায্য করে। মুরগির মাংস থেকে পরিপূর্ন কোলাজেন পেতে চাইলে চামড়া ও পাখনা সহ খাওয়া উচিত।
৫। ডিম
ডিমের সাদা অংশে প্রচুর পরিমানে প্রোলিন থাকে। এই প্রোলিন কোলাজেন উৎপাদনের জন্য অ্যামিনো অ্যাসিড হিসেবে কাজ করে। যদিও ডিমের কুসুমে কোলাজেন থাকে না তবে এতে কোলাজেন উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান রয়েছে। সিদ্ধ, রান্না, তেলে ভাজা, পানি পোঁচ ইত্যাদি নানাভাবে ডিম নিয়মিত খাওয়া যেতে পারে।
৬। সাইট্রাস ফল
লেবু জাতীয় টক ফলকে সাইট্রাস ফল বলা হয়। তবে এই ফলগুলো থেকে সরাসরি কোলাজেন পাওয়া যায় না। লেবু, কমলা, মাল্টা আঙ্গুর ইত্যাদির মত টক ফলে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি থাকে। এই ভিটামিন সি মানবদেহে কোলাজেন উৎপাদনে সাহায্য করতে পারে। এই সব সাইট্রাস ফলগুলোর মতই জাম ও বেরি যেমন স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি ইত্যাদি ফলেও পর্যাপ্ত পরিমানে ভিটামিন সি থাকে যা কোলাজেন তৈরিতে ভূমিকা পালন করতে পারবে।
৭। ডেইরি পণ্য
ডেইরি পণ্য বলতে দুধ বা দুধের তৈরি খাবারকে বোঝায়। দুধ, দুধের তৈরি খাবার, দই, পনির ইত্যাদি খাবার থেকে সরাসরি কোলাজেন পাওয়া যায় না। তবে দুগ্ধজাত এই খাবারগুলোতে প্রচুর পরিমানে প্রোলিন ও গ্লাইসিন নামক অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে যা কোলাজেন তৈরির মূল যৌগ হিসেবে কাজ করে। এভাবে উৎপাদিত কোলাজেন হাড় মজবুত করতে এবং ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা রক্ষা করতে খুব ভালো কাজ করে। এছাড়াও এটি হাড়ের সংযোগস্থল ভালো রাখতে দারুন কাজ করে।
পরিশেষে, আলোচনা করছিলাম কোলাজেন সমৃদ্ধ খাবার নিয়ে। উপরের আলচনা থেকে জেনেছি যে, খুব কম খাবার থেকেই সরাসরি কোলাজেন পাওয়া যায়। তাই মানবদেহে কোলাজেন উৎপাদনে সাহায্য করবে এমন কিছু খাবার নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে। তাই উপরে আলোচিত খাবারগুলো পছন্দ অনুযায়ী আপনার খাদ্যতালিকাতে অন্তর্ভূক্ত করে নিন আর তারুণ্য উপভোগ করুন দীর্ঘদিন।
GIPHY App Key not set. Please check settings