বাড়িতে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করার জন্য ক্যামেরা রাখার বিকল্প নেই। এখন প্রায় সব বাড়িতেই ক্যামেরা সার্ভেইলেন্সের ব্যবস্থা থাকে। কিন্তু এখানে কিছু সমস্যা আছে। আমাদের প্রশ্নই হয়, ‘ভালো ক্যামেরা কোনটি?’ এই প্রশ্নের উত্তর আসলে কোন ব্র্যান্ড ভালো সেদিকে বেশি নির্দেশ করে। ক্যামেরার ধরন নিয়ে আলোচনা হয় কম।
এবার ভেবে দেখুন, বাজারে গেলে প্রশ্ন আসে আইপি ক্যামেরা নাকি সিসিটিভি ক্যামেরা নেবেন? বিপদ! সচরাচর অনেকে জিজ্ঞেস করেন, ভালো কোনটি? উত্তর তো বিক্রেতার কাছেও ভালোভাবে থাকে না। কোনোকিছু কেনার আগে সিদ্ধান্ত উপনয়ন জরুরি। সেক্ষেত্রে আগে থেকেই জেনে নেয়া ভাল আইপি ক্যামেরা নাকি সিসিটিভি ক্যামেরা কিনবেন।
মূলত এ নিয়েই আজকের আলোচনা। আইপি ক্যামেরা ও সিসিটিভি ক্যামেরার মধ্যে ফারাক আছে তো বটেই। একটার বুদ্ধি আছে আর আরেকটার নেই। শুনে চমকে উঠলেন? একটু অপেক্ষা করুন। বুঝিয়ে বলছি।
আইপি ক্যামেরা কি?
আইপি ক্যামেরার পূর্ণাঙ্গ মানে ইন্টারনেট প্রটোকল ক্যামেরা। বলা যায় এক ধরনের ডিজিটাল সিকিউরিটি ক্যামেরা। এ ধরনের ক্যামেরা আইপি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে আর ওই আইপি নেটওয়ার্কের মাধ্যমেই ফুটেজ পাঠায়। এ ধরনের ক্যামেরার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, লোকাল স্টোরেজ প্রয়োজন হয় না। একটি কম্পিউটার বা ফোনের সঙ্গে সংযুক্ত থেকে নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ফুটেজ পাঠায়।
আইপি ক্যামেরা কিভাবে কাজ করে?
এনালগ সিকিউরিটি ক্যামেরা সচরাচর একটি ক্যাবলের মাধ্যমে ডিজিটাল ভিডিও রেকর্ডার বা ডিভিআর-এর সঙ্গে যুক্ত থাকে। কিন্তু আইপি ক্যামেরার এত ঝামেলা নেই। এই ধরনের ক্যামেরা ওয়ারলেস কানেকশনে যুক্ত থাকে। ক্যামেরার সঙ্গে ইন্টারনেট সংযোগের জন্য ইথারনেট ক্যাবল যুক্ত থাকতে পারে। আর নাহলে ওয়াইফাই তো রয়েছেই। ক্যামেরা ভিডিও সংগ্রহ করে সরাসরি নেটওয়ার্ক ভিডিও রেকর্ডার বা এনভিআর-এ পাঠিয়ে দেয়।
আইপি ক্যামেরার ভিডিও এইচডিতে রেকর্ড করা হয়। ক্যামেরার ওপর নির্ভর করে আইপি ক্যামেরা ১৬ মেগাপিক্সেল ফুটেজ প্রসেস করে। ক্যামেরার ভেতরেই চিপটি থাকে। তবে ভিডিও ট্রান্সমিট করার জন্য এ ধরনের ক্যামেরাকে ভিডিও কমপ্রেস করতেই হয়। এভাবে আইপি ক্যামেরা বেশি ব্যান্ডউইথ নেয় না এবং ভিডিও পাঠানোর ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হয় না। কমপ্রেসন জরুরি হয় কারণ আপনার ফোন বা কম্পিউটারে এত স্পেস নাইবা থাকতে পারে।
আইপি ক্যামেরার সুবিধাসমূহ
আইপি ক্যামেরার সুবিধা অনেক। সেগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো:
- আইপি ক্যামেরার সবচেয়ে বড় সুবিধা টু ওয়ে অডিও। আপনি নিজে যেমন ক্যামেরার মাধ্যমে কথা বলতে পারবেন তেমনি শুনতেও পারবেন।
- আইপি ক্যামেরার এক্সেস পাওয়ার জন্য আপনাকে একটি কেন্দ্রিয় ডিভাইসের ওপর নির্ভর করতে হবে না। স্মার্টফোনেও এক্সেস পাওয়া সম্ভব।
- আইপি ক্যামেরায় রেজুলেশন এনালগ ক্যামেরার তুলনায় অনেক ভালো হয়।
- আপনার আইপি ক্যামেরার তারের ব্যবহার কমছে।
- ডিজিটাল জুম আইপি ক্যামেরার সবচেয়ে ভালো সুবিধা। চারগুণ পর্যন্ত জুম করা সহজ নয়।
- আইপি ক্যামেরার প্রসেসর থাকে। তাই আইপি ক্যামেরা মোশন সেন্সিং, বড় ডাইনামিক রেঞ্জ এবং লো লাইটে ভালো ফাংশনালিটি পাবেন।
- আইপি ক্যামেরাতে ওই নির্দিষ্ট আইপি প্রোভাইডার থেকে স্টোরেজ কেনা যায়। ফলে আপনার লোকাল ড্রাইভ তৈরি করতে হয় না। এটাও বাড়তি সুবিধা।
তবে আইপি ক্যামেরার কিছু অসুবিধাও আছে। ইন্টারনেট প্রটোকল নিরাপদ না হলে হ্যাকাররা যেকোনো সুযোগে এক্সেস পেতে পারে।
সিসিটিভি ক্যামেরা
সিসি বা সিসিটিভি ক্যামেরার কথা বললে প্রথমটির সঙ্গে তুলনার বিষয়টি বোঝা যায়। সিসিটিভি ক্যামেরা একটি ক্যাবলের মাধ্যমে ভিভিআরের সাথে যুক্ত থাকে। সিসিটিভি ক্যামেরার রেজুলেশন ভালো। কারণ ৪, ৮, ১৬ আর ৩২ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা সাপোর্ট করে। তবে ক্যামেরার ফুটেজ ডিভিআরে জমা হয়। এই ধরনের ক্যামেরার নিজস্ব প্রসেসর না থাকায় আইপি ক্যামেরার মতো ফাংশনালিটি থাকে না।
তাছাড়া সিসিটিভি ক্যামেরায় স্টোরেজ ফুরিয়ে গেলে ডিভিআর কিনতে হয়। তবে কমদামি ক্যামেরা হিসেবে সিসিটিভি ক্যামেরা কার্যকর। সবসময় আলো থাকে এমন জায়গায় সিসিটিভি ক্যামেরাই সবচেয়ে উপযুক্ত।
কোনটি আপনার জন্য উপযুক্ত?
কেনার ক্ষেত্রে আইপি ক্যামেরা কেনাই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের। এক সময় আইপি ক্যামেরার দাম ছিল বেশি। এখন প্রযুক্তির উন্নতি হয়েছে। আইপি ক্যামেরার দামও কমেছে। আইপি ক্যামেরার সবচেয়ে বড় সুবিধা আপনি এক্সপান্ড করতে পারবেন এক নেটওয়ার্কে। সিসিটিভি ক্যামেরা দামে কম হলেও এর এক্সপানশন করার খরচ অনেক। একাধিক গবেষণাতেও তা প্রমাণিত হয়েছে। তবে অবস্থাভেদে সিসিটিভি ক্যামেরাও অনেক ভাল। শুধু আপনার প্রয়োজনের নিরিখে। বাড়ি বা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তায় অবশ্যই আইপি ক্যামেরা ভালো। আর প্রয়োজন যদি হয় দোকান বা এমনিতে নজরদারির তাহলে সিসিটিভি ক্যামেরাই ভাল।
GIPHY App Key not set. Please check settings