বিটরুট বর্তমান সময়ে ত্বকের যত্নে খুবই জনপ্রিয় এবং কার্যকরী একটি উপাদান। এটি মূলত একটি বিদেশি সবজি, যা উত্তর আমেরিকায় Beet নামে পরিচিত। কিন্তু প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে অনেক বাংলাদেশীরাই বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে দেখে বিটরুট চাষ করা শুরু করেছিলেন। ধীরে ধীরে এটি সমগ্র বাংলাদেশে ছড়িয়ে যায়। বর্তমানে বেশ কিছু কোম্পানি বিটরুট দিয়ে বিভিন্ন ফেস মাস্ক, লিপ স্ক্রাব, লিপ বাম তৈরি করছে। অনেকে বিটরুট প্রক্রিয়াজাত করে গুড়ো করে বিক্রি করছে। বর্তমানে এটি বাংলাদেশ এবং ভারতের কিছু কিছু জায়গায় ত্বক এবং ঠোঁটের যত্নে এর উপকারীতার জন্য ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তবে বাজারে বিক্রি করা সেই প্রোডাক্টগুলো অনেকেই ব্যবহার করতে ভরসা পান না। অনেকেই মনে করে থাকেন যদি সেই প্রোডাক্টগুলোতে কেমিক্যাল থাকে, যদি ত্বকের কোনো ক্ষতি হয়। তাদের জন্যই আমাদের আজকের লেখা। বিটরুট দিয়ে ঘরোয়া পদ্ধতিতে কিভাবে ফেস মাস্ক বানিয়ে ব্যবহার করবেন, সেগুলোর কিছু উপায় আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। তার আগে জেনে নেয়া যাক বিটরুটের উপকারিতাগুলো কি কি এবং কেন বিটরুট ব্যবহার করবেন?
বিটরুটের উপকারিতা
বিটরুটে বিদ্যমান বিভিন্ন উপাদান এবং তাদের উপকারিতা
বিটরুটে রয়েছে আয়রন, ভিটামিন C, ভিটামিন B9, পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ইত্যাদি খনিজ উপাদান, যেগুলোর সবই ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। বাংলাদেশে লৌহ বা আয়রনের অভাবজনিত অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা সাধারণ একটি সমস্যা,এর ফলে ত্বক ফ্যাকাশে হয়ে যায়, চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে। বিটরুটে যেহেতু আয়রন রয়েছে তাই আপনার নিয়মিত খাদ্য তালিকায় বিটরুট যোগ করতে পারেন। তাহলে ত্বক হবে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল, সুন্দর, ত্বকে গোলাপি আভা আসবে।
আবার ভিটামিন সি ত্বকের লালচে ভাব দূর করবে, কোলাজেন এর উৎপাদন বৃদ্ধি করবে, ত্বকের শুষ্কতা দূর করে আর্দ্রতা ফিরিয়ে আনবে, চোখের নিচের কালো দাগ দূর করবে, ত্বককে করবে উজ্জ্বল, অতি বেগুনি রশ্মির কারনে ত্বকের রঙ বদলে যাওয়া রোধ করবে। অনেকের ত্বকে ভাজ পড়ে বা ত্বক ঝুলে পড়ে, ভিটামিন সি এই ধরনের সমস্যা দূর করে।
সূর্যের রশ্মির কারনে DNA ড্যামেজের মত বিভিন্ন সমস্যা হয়, ভিটামিন B9 এগুলো প্রতিরোধ করে। ত্বকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বজায় রাখে। ভিটামিন সি এর মত এটিও ত্বকের কোলাজেন উৎপাদন বৃদ্ধি করে, অনেকের ত্বক বয়সের আগেই ঝুলে পড়ে বা ত্বকে ভাজ পড়ে এক কথায় যাকে বলে Premature aging, ভিটামিন B9 তা প্রতিরোধ করে। ত্বকের অক্সিড্যাটিভ স্ট্রেস এর মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। ত্বকের ব্রন উঠা কমাতে বা ব্রন দূর করতে সাহায্য করে।
পটাশিয়ামও ভিটামিন সি এর মত ত্বকের শুষ্কতা দূর করে। নতুন নতুন কোষ জন্মাতে সাহায্য করে, আবার নতুন কোষের বৃদ্ধি ত্বকের দাগ দূর করতে সাহায্য করে। ত্বক শুষ্ক হলে ত্বকের পি এইচ (pH) এর মান অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যায় বা নিয়ন্ত্রন হারায়। পটাশিয়াম ত্বকের সেই পি এইচ (pH) এর মান নিয়ন্ত্রিত রাখে। ত্বক কে দীর্ঘ সময় ধরে উজ্জ্বল, সুন্দর রাখে। ম্যাংগানিজ একটি আন্টি অক্সিডেন্ট, যা বিভিন্ন দাগ পড়ার কারনে হওয়া ক্ষতি থেকে ত্বক কে সুরক্ষিত রাখবে। ‘Superoxide Dismutase’ নামক এনজাইম অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট তৈরিতে মাংগানিজ সাহায্য করে, এটি এমন একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এর কারনে হওয়া ক্ষতি বা Oxidative Damage থেকে ত্বক কে সুরক্ষিত রাখে। ম্যাঙ্গানিজের অভাবে ত্বকে ব্রন উঠতে পারে, সেরিয়াসিস বা প্রদাহজনিত রোগ হতে পারে, ডার্মাটাইটিস রোগও হতে পারে ত্বকে।
এত গুণাবলি সম্পন্ন বিটরুট দিয়ে বিভিন্ন ফেসপ্যাক বানানো যায়, যার ফলে ত্বক হয় আরো সুন্দর, কোমল।
বিটরুটের ফেসপ্যাক
- বিটরুটের সাথে মধু মিশিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে। দুই টেবিল চামচ বিটরুটের রস ও এক চামচ মধু মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। ত্বক উজ্জ্বল ও সতেজ হবে।
- বিটরুট পেস্টের সাথে মুলতানি মাটি মিশিয়ে ব্যবহার করা যায়।এই প্যাক ব্যবহারে ত্বকের তৈলাক্ততা দূর হবে।
- এক চা চামচ বিটরুটের রস ও এক চা চামচ কমলার রস একসাথে মিশিয়ে ব্যবহার করলে ত্বকের কালচে দাগ দূর হবে। তবে এই রস মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিটের মত অপেক্ষা করে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ পরিষ্কার করতে হবে।
- বিটরুটের গুড়োর সাথে গোলাপ জল মিশিয়েও ব্যবহার করতে পারেন বা দুধ মিশিয়েও ব্যবহার করতে পারেন। ত্বক উজ্জ্বল হবে,বিভিন্ন বলিরেখা দূর হবে।
বিটরুট অনেক উপকারী একটি সবজি। তাই শুধু ত্বকের যত্নে না বরং সুস্থ -সুন্দর জীবনযাপনের জন্য আপনার নিয়মিত খাদ্য তালিকায়ও বিটরুট রাখতেই পারেন।
GIPHY App Key not set. Please check settings