জীবনে কখনও কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যায় ভোগেনি এমন মানুষ হয়ত খুজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু সচেতনতা ও অবহেলার কারনে এ রোগ যে ডালপালা ছড়িয়ে বড় বড় রোগের কারন হতে পারে সে সম্পর্কে হয়ত অনেকেই সজাগ নয়।
কোষ্ঠকাঠিন্য কি?
পায়খানা কষা হয়ে যাওয়া বা শক্ত হয়ে যাওয়াকেই মূলত কোষ্ঠকাঠিন্য বলা হয়। এটি সবার কাছে খুব পরিচিত একটি স্বাস্থ্য সমস্যা। অনেকেরই মাঝে মাঝে পায়খানা খুব শক্ত হয়ে যায় এবং মলত্যাগের সময় অনেকক্ষণ কসরত করতে হয়।
এ ছাড়া পায়খানার পর মনে হয় পেট ঠিকমতো পরিষ্কার হয়নি। কোষ্ঠকাঠিন্য হলে পায়খানা শক্ত হয়, যার কারণে অনেকে মলত্যাগের সময় ব্যথা অনুভব করেন। কারও কারও ক্ষেত্রে একটানা তিন–চারদিন পায়খানা নাও হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এগুলো হচ্ছে সাধারণত কোষ্ঠকাঠিন্যের প্রাথমিক লক্ষণ।
দীর্ঘদিন যদি কোষ্ঠকাঠিন্য থাকে তাহলে এর থেকে বড় বড় রোগ যেমন, পাইলস বা অর্শ রোগ কিংবা এনাল ফিসার বা গেজ রোগ এর মতো বায়ুপথের রোগ তৈরি হতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্য কেন হয় তা জেনে কিছু সাধারন নিয়ম মেনে চললে এবং সতর্ক থাকলে এ সমস্যা এড়িয়ে চলা সম্ভব। তাহলে চলুন জেনে আসি কোষ্ঠকাঠিন্য কেন হয়, লক্ষণগুলো কি কি এবং কোষ্ঠকাঠিন্য হলে তা দূর করার উপায় কি?
কোষ্ঠকাঠিন্য কেন হয়
বিভিন্ন কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকে। এখানে সবচেয়ে গুরুতর কারণগুলো উল্লেখ করা হলো–
১) খাবারের তালিকায় যথেষ্ট পরিমাণে পুষ্টি উপাদান এবং আশ জাতীয় খাবারের ঘাটতি থাকলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়
২) পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করা
৩) শুয়ে-বসে থাকা ও শারীরিক পরিশ্রমের অভাব
৪) মানসিক চাপ, উদ্বেগ বা বিষণ্ণতা
৫) কিছু কিছু ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কারণেও কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়। এর মধ্যে কয়েকটি ওষুধ হল-
– আয়রন ট্যাবলেট
– ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট
– কেমোথেরাপিতে ব্যবহৃত কিছু ঔষধ
কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণ
সাধারণত যদি তিন দিনের বেশি পায়খানা না হয় তখন তাকে কোষ্ঠকাঠিন্য বলা হয়। কোষ্ঠকাঠিন্যের কিছু লক্ষণ রয়েছে। সেগুলো হলো-
- পায়খানা শুকনো, শক্ত চাকার মত হওয়া।
- পায়খানার আকৃতি স্বাভাবিকের চেয়ে বড় হওয়া।
- পায়খানা করতে কষ্ট হওয়া।
- পেট পরিষ্কার হচ্ছে না এমন মনে হওয়া।
- পেটে ব্যথা হওয়া, পেট ফাঁপা লাগা, বা বমি বমি ভাব হওয়া।
এগুলো ছাড়াও আরো কিছু কারন আছে যেগুলো কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। আমি এখানে গুরুতর কারণ গুলো উল্লেখ করেছি মাত্র।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঘরোয়া উপায়
১. ফাইবার বা আঁশ জাতীয় খাবার খাওয়া
ফাইবার বা আশঁ জাতীয় খাবারের প্রচুর পরিমাণে শর্করা পাওয়া যায়। পেট পরিষ্কার হওয়ার জন্য ফাইবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের পরিপাকতন্ত্রের যে জায়গায় পায়খানা তৈরি হয় ও জমা থাকে, সেখানে ফাইবার অনেকটা স্পঞ্জের মত কাজ করে।
আপনি যখন পরিমাণমতো পানি খাবেন, তখন ফাইবার পানি শোষণ করার মাধ্যমে পায়খানায় পানি ধরে রাখতে সাহায্য করবে। ফলে পায়খানা নরম ও ভারী হয়, সহজেই শরীর থেকে বের হয়ে আসে। কিন্তু খাবারে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার না থাকলে পায়খানা শক্ত হয়ে যায়, ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়।
২) পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা
পানি খাওয়ার ফলে পায়খানা ভারী ও নরম হয়। এর ফলে পরিপাকতন্ত্রের ভেতর দিয়ে পায়খানা চলাচল সহজ হয়। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে।
৩) নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম এবং ব্যায়াম
নিয়মিত ব্যায়াম এবং শারীরিক পরিশ্রমের মাধ্যমে আমাদের শরীরের পরিপাকতন্ত্র সচল থাকে। এতে স্বাভাবিকভাবে পায়খানা বেরিয়ে আসে। নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রমের অভাব হলে তাই কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।
৪) মানসিক চাপ, উদ্বেগ ও বিষন্নতা
অনেক ক্ষেত্রে অতিরিক্ত মানসিক চাপ, কোন কিছু নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা বা উদ্বেগ শরীরের স্বাভাবিক গতি প্রকৃতির পরিবর্তন করে থাকে। এর ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়। তাই কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে মানসিক চাপ মুক্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে।
এগুলো ছাড়াও আপনি যদি একসাথে চার-পাঁচটা ঔষধ সেবন করেন তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। এ বিষয়েও সচেতন থাকতে হবে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার আরো কিছু টিপস
সাধারণ কিছু টিপস মেনে চললে এবং সতর্ক থাকলে আমরা কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে পারি।
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে প্রচুর পরিমানে শাক সবজি খাওয়া প্রয়োজন। কোষ্ঠকাঠিন্য হলে সবুজ শাকসবজি বেশি খান। সবুজ শাকসবজি হল আপনার অন্ত্রের চলাচল সহজ করার সেরা উপায়।
- তিসির বীজ ভিজিয়ে খেতে পারেন। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি দেয় সহজেই।
- কোষ্ঠকাঠিন্য হলে পাতলা ডাল খেতে পারেন। কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য পাতলা ডাল অনেক ভালো কাজ করে।
- হজমের সমস্যার জন্য কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকে। তাই হজমের জন্য ভালো ভালো রসালো ফল খান।
শেষ কথা কোষ্ঠকাঠিন্যের মত রোগ নিয়ে বেশিরভাগই মানুষ লজ্জা পায়। যা মোটেও ঠিক নয়। এরকম অবস্থা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। দীর্ঘদিন ধরে কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগলে অনেক ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে বা বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগের সৃষ্টি হতে পারে। বেশিরভাগ সময়ে অস্বাস্থ্যকর খাবার থেকে কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ হয়ে থাকে, তাই অস্বাস্থ্যকর খাবার এড়িয়ে চলুন। নিয়মানুযী স্বাস্থ্যকর খাবার খাবেন, খাবার একটু কম খেলেও সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হবেন।
সুস্থ থাকুন, নিরাপদে থাকুন।
GIPHY App Key not set. Please check settings