নিয়াসিনামাইড বা নায়াসিনামাইড এর নাম সবাই জানি। আজকের লেখায় জানাবো নিয়াসিনামাইডের উপকারিতা ও ব্যবহারের সঠিক নিয়ম সম্পর্কে। আমাদের জীবনে ব্যস্ততা দিনদিন বেড়েই চলেছে। নিত্যদিনের এ ব্যস্ততার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে ত্বকের যত্ন নেয়ার সময়টুকুও মেলেনা। এর ফলস্বরূপ দেখা যায়, ত্বক রুক্ষ ও মলিন দেখায়, ব্রণ ওঠা শুরু করে, সেই সাথে ত্বকের উজ্জ্বলতাও কমে যেতে থাকে। আপনারা অনেকেই হয়তো জানেননা, স্কিন কেয়ার রুটিনে নিয়াসিনামাইড অ্যাড করলে এ সমস্যাগুলো থেকে দ্রুতই মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
নিয়াসিনামাইড সম্পর্কে কিছু তথ্য
যাদের নিয়াসিনামাইড সম্পর্কে তেমন ধারণা নেই, তাদের জন্য প্রাথমিক কিছু তথ্যঃ
- নিয়াসিনামাইড হলো ভিটামিন বি- থ্রি এর একটি ধরণ।
- এটি একটি পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন, যেটিকে নিকোটিনামাইডও বলা হয়ে থাকে।
- নিয়াসিনামাইডকে “মাল্টিটাস্কিং বায়ো অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট” বলা হয়, কেননা এই একটি মাত্র উপাদান আমাদের ত্বকের অনেক রকম সমস্যা সমাধান করতে খুব ভালো কাজ করে।
- আপনার স্কিন টাইপ যেটিই হোক না কেন, আপনি চাইলেই স্কিন কেয়ার রুটিনে নিয়াসিনামাইড যুক্ত করতে পারবেন।
নিয়াসিনামাইডের উপকারিতা
ত্বক সুন্দর ও স্বাস্থ্যজ্জ্বল রাখতে নিয়াসিনামাইডের মতো কার্যকরী উপাদান খুব কমই আছে। কি? বিস্তারিত জানতে ইচ্ছা হচ্ছে? চলুন এবার জেনে আসা যাক নিয়াসিনামাইডের উপকারিতাগুলো সম্পর্কে।
১। নিয়াসিনামাইড আমাদের ত্বকের ময়েশ্চার ব্যারিয়ার স্ট্রং করে তোলে। এটি ত্বকে সেরামাইড (লিপিড) ব্যারিয়ার তৈরি করতে সহায়তা করে। এ ব্যারিয়ার থাকলে লম্বা সময় ধরে ত্বক হাইড্রেটেড থাকে, ফলে রুক্ষতা কমে গিয়ে কোমল ও মসৃণ ত্বক পাওয়া সম্ভব হয়। তাই যদি আপনাদের ড্রাই স্কিন হয়ে থাকে অথবা একজিমা বা এ ধরনের কোন সমস্যা থাকে, তাহলে চোখ বন্ধ করে নিয়াসিনামাইড বেছে নিন।

২। যারা তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারী, তাদের ত্বকে সেবাম বা অয়েল প্রোডাকশনের হার অনেক বেশি থাকে। নিয়াসিনামাইড ত্বকের অতিরিক্ত অয়েল প্রোডাকশন সবসময় নিয়ন্ত্রণে রাখে। এতে করে ব্রণের সমস্যা থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়।
৩। পোরস বা লোমকূপ বড় হয়ে যাওয়া ত্বকের একটি সাধারন সমস্যা। নিয়াসিনামাইড আমাদের ত্বকের পোরগুলো কমিয়ে আনে, অর্থাৎ পোরের আকৃতি ছোট করে দেয়। ফলে ত্বকের টেক্সচার আরো উন্নত হয়।
৪। যাদের প্রচন্ড রোদে বাইরে যেতে হয়, তাদের চেহারায় খুব দ্রুতই সান ড্যামেজ হয়। বিশেষ করে ত্বকের বিভিন্ন জায়গায় কালচে ছোপ বা হাইপারপিগমেন্টেশন দেখা দেয়, যা দূর করা বেশ কষ্টসাধ্য। নিয়াসিনামাইড যেকোনো ধরণের সান ড্যামেজ থেকে আমাদের ত্বক নিরাপদে রাখে। শুধু তাই নয়, এটি হাইপারপিগমেন্টেশন কমিয়ে স্কিন টোন ইভেন করে তুলতেও দারুণ কার্যকরী।
৫। অনেকের ত্বকে অল্প বয়সে এজিং সাইনস বা বয়সের ছাপ, অর্থাৎ ফাইন লাইনস বা রিংকেল পড়ে যায়। আপনারা যদি নিয়মিত নিয়াসিনামাইড ব্যবহার করেন, তাহলে কিছুদিনের মধ্যেই দেখতে পাবেন আপনাদের ফাইন লাইন বা রিংকেল অনেকটা কমে গেছে।
৬। নিয়াসিনামাইড কেরাটিন তৈরি করতে সাহায্য করে। এই কেরাটিন এমন এক ধরনের প্রোটিন, যেটি আমাদের ত্বক ও চুল ভালো রাখার জন্য খুবই প্রয়োজনীয়।
৭। অনেক সময় দেখা যায়, নিয়মিত যত্ন নিতে না পারার কারণে ত্বকের উজ্জ্বলতা কমে যায়। এ সমস্যা দূর করতে নিয়াসিনামাইড একদম জাদুর মত কাজ করে। যদি আপনারা স্কিন কেয়ার রুটিনে এটি যুক্ত করেন,তাহলে কিছুদিনের মধ্যেই আগের চাইতে উজ্জ্বল ত্বক পেতে সক্ষম হবেন।
নিয়াসিনামাইড ব্যবহারের নিয়ম
আপনারা প্রতিদিন সকালে ও রাতে নিয়াসিনামাইড রয়েছে এমন পণ্য ব্যবহার করতে পারেন। তবে যদি সকালে ব্যবহার করেন, তাহলে ভালো সুরক্ষা দেয় এমন সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। তা না হলে ত্বকে র্যাশ বা রেডনেস দেখা দিতে পারে। আর অ্যালার্জিক লক্ষণগুলো এড়াতে ব্যবহারের আগে প্যাচ টেস্ট করে নিতে ভুলবেন না।

এবার আসি ব্যবহারের নিয়মে। এক্ষেত্রে পরামর্শ থাকবে শুরুতেই ফেইসওয়াশ দিয়ে ভালোমতো স্কিন ক্লিন করে নিন এবং নিজের পছন্দের ময়েশ্চারাইজার অ্যাপ্লাই করুন। তারপর যে প্রোডাক্টে নিয়াসিনামাইড রয়েছে সেটি পুরো ফেইসে ড্যাবিং মোশনে অ্যাপ্লাই করুন। কখনোই ময়েশ্চারাইজারের মতো ঘষে ঘষে অ্যাপ্লাই করতে যাবেন না। এতে করে লাভের চাইতে ক্ষতিই বেশি হবে।
আমি জানি, এখন অনেকেই প্রশ্ন করবেন, “কোন ব্র্যান্ডের নিয়াসিনামাইড কিনবো?”
এবার সে প্রশ্নের উত্তর দেই। নিয়াসিনামাইড রয়েছে এমন প্রোডাক্টগুলোর মধ্যে সিরামই সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। আপনারা মার্কেটে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নিয়াসিনামাইড সিরাম খুঁজে পাবেন। তবে যদি বাজেট ফ্রেন্ডলি এবং একইসাথে অথেন্টিক নিয়াসিনামাইড সিরাম খুঁজে থাকেন, তাহলে Ordinary বা Revolution -এ দু’টো ব্র্যান্ডের যেকোনো একটি ট্রাই করতে পারেন। আবার যদি অ্যাম্পুল ট্রাই করতে চান, সেক্ষেত্রে Nature Republic ব্র্যান্ডের অ্যাম্পুল ট্রাই করতে পারেন৷ এ প্রোডাক্টগুলো কোনোপ্রকার সাইড ইফেক্ট ছাড়া আমাদের ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে ত্বকের সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করে।
লেখার শেষে সবাইকে এটুকু বলতে চাই,যে ব্র্যান্ডের প্রোডাক্টই ব্যবহার করুন না কেন, চেষ্টা করবেন ধৈর্য্য ধরে নিয়মিত ব্যবহার করতে। তাহলেই আপনারা ভালো ফলাফল পেতে সক্ষম হবেন।
GIPHY App Key not set. Please check settings