অনেক সময় আসে যখন বাস্তবতার প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি কিছুটা বিকৃত হয়ে যায়। আমাদের বিশ্বাস এবং পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণ করার প্রক্রিয়া দৃষ্টিভঙ্গিকে বদলে দিতে পারে। আমরা বেশি বেশি ভুল করি, নিজেদের ও অন্যদের ভুল বুঝি।
এই মেন্টাল ফাঁদগুলো চিন্তাকে দূষিত করে, কগনিটিভ বায়াস বা জ্ঞানীয় পক্ষপাত তৈরী করে। আমাদের সফল হওয়ার ক্ষমতা সহজেই এই পরিবর্তিত চিন্তাধারা দ্বারা ব্যর্থ হতে পারে। মনের ভেতরের চিন্তাগুলোকে নিয়ে চিন্তাভাবনা করলে আপনি জীবনের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারবেন, সফলতা অর্জনের সক্ষমতা অনেকগুণে বাড়িয়ে তুলতে পারবেন।
কিভাবে এসব মেন্টাল ফাঁদগুলো আপনার বাস্তবতার ব্যাপারে ভুল ধারণা দিতে পারে এবং সফলতাকে দূরে ঠেলে দিতে পারে তা বুঝতে হবে আপনাকে।
১. নিজেকে ছোট ভাবা
নিজেকে নিয়ে সংশয়ের পাশাপাশি অন্যান্য আত্ম-ছোটকারী বিষয়ের চেয়ে আপনার সফলতার সম্ভাবনা ও সক্ষমতার প্রতি ক্ষতিকর আর কিছুই হতে পারে না। আপনি নিজেকে বলেন, আমার এটা করার ক্ষমতা নেই, যোগ্যতা নেই অথবা করা উচিত নয়। এসব আত্ম-বিধ্বংসী বিষয় আপনাকে সফলতার পথ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যায়।
অনেক সময় নেতিবাচক অভিজ্ঞতার কারণে এসব বিশ্বাসের জন্ম হয়। আপনি যদি আত্ম-সীমাবদ্ধকারী বিশ্বাসগুলোকে নিজের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিতে দেন, তাহলে আপনার লক্ষ্য অর্জনের সক্ষমতা এবং পূর্ণ যোগ্যতাকে কাজে লাগানোর ক্ষমতার ওপর এটা বিষের মতো প্রভাব ফেলবে। নিজেকে বলবেন না যে, আমি এই কাজ করার যোগ্যতা রাখি না। বরং বলবেন, কিভাবে আমি কাজটা করতে পারি?
অধিকাংশ সময়েই অধিকাংশ প্রশ্নের শতভাগ সঠিক উত্তর থাকে না। বরং নানা উত্তর থাকে। সাদা-কালো চিন্তা বাদ দিলে দেখবেন, এই বিশ্বটা আসলে এক জটিল রংধনু। যেখানে আছে সব ধরনের আলোর ছটা। ভিন্ন ভিন্ন সম্ভাবনার প্রতি আপনার মনকে উন্মুক্ত করতে হবে।
২. পারফেকশনিস্ট হতে চাওয়া
আত্ম-উন্নতি এবং সেরা হতে চাওয়া ভালো জিনিস। এটা আপনাকে অনুপ্রাণিত করবে নতুন নতুন বিষয় শিখতে এবং নিজের উন্নতি চালিয়ে যেতে। কিন্তু এটাও মেনে নিতে হবে যে, আপনি পারফেক্ট নন। আসলে কোনো মানুষই নিখুঁত নয়। আপনি যদি পারফেকশনিস্ট হতে চান, কোনো কাজ একদম পারফেক্ট না হলে সন্তুষ্ট না হতে পারেন, তাহলে আপনার জন্য কোনো কাজ করা খুবই কঠিন হয়ে যাবে। পারফেকশনিজমই আপনাকে পিছু ঠেলে রাখবে।
মোদ্দা কথা হচ্ছে, আপনার পারফেকশনিজমের কারণ হচ্ছে ভয়। সমালোচনার ভয়, প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ভয়। আপনি ভয় পান যে সবাই আপনার ভুল-ত্রুটিগুলো দেখতে পাবে, আপনাকে ছোট মনে করবে। পারফেকশনিজমকে জীবনে প্রবেশ করতে দিলে আপনি কখনও লক্ষ্য অর্জন করতে পারবেন না। বারবার ডেডলাইন মিস করবেন। অন্যদের থেকে একাকী হয়ে পড়বেন। পারফেকশনিস্ট হতে চাওয়ার কারণে নিজের জীবনের অর্জনগুলো উপভোগ করতে পারবেন না, কারণ আপনার কাছে কোনো কিছুকেই যথেষ্ট ভালো বলে মনে হবে না।
৩. পরিবর্তনের ভয়
একটা কথা আছে না যে, “যদি কিছু নষ্ট না হয়, তাহলে সেটা ঠিক করার দরকার নেই।” আমরা যে নিজেকে বদলাতে ভয় পাই, এই কথাটা সেটারই সরাসরি প্রতিফলন। যদি এটা সরাসরি মনে না-ও হয়, তবুও আমাদের অনেকেই অনুভব করে যে সব কিছুকে আগের মতো রাখাটাই নিরাপদ ও সহজ। কারণ, সব তো ঠিকই আছে। তাহলে বদলানোর কি দরকার? কি দরকার আগ বাড়িয়ে ঝামেলা নিয়ে আসার। কিন্তু আমরা চাই বা না চাই, পরিবর্তন আসবেই। সফলতা আসে উদ্ভাবন এবং সৃজনশীল সমস্যা সমাধান থেকে। এগুলো হল আমাদের পরিবর্তনকে মেনে নেওয়ার এবং নিজের অবস্থাকে উন্নত করার সক্ষমতার প্রতিফলন।
৪. সাদা-কালো চিন্তাভাবনা
আমাদের মধ্যে একটা টেন্ডেন্সি আছে, আমরা সবকিছুকে সাদা বা কালো হিসেবে দেখতে চাই। আমরা হয় কোনো কিছুর পক্ষে অথবা বিপক্ষে। অস্পষ্ট বিষয় নিয়ে আমরা অস্বস্তি বোধ করি। এ জন্য সাদা-কালোর মাঝের অবস্থানটা বোঝা বা দেখা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। ফলে কোনো একটা বিষয়ের প্রকৃত অবস্থাও আমরা বুঝতে পারি না। কিন্তু কোনো কিছুই পুরোপুরি ভালো বা খারাপ হয় না, বরং মাঝামাঝিতে কিছু একটা হয়। জীবনটা এরকমই।
নিজেদের চিন্তাভাবনাকে প্রান্তিক করে ফেললে আমরা ফ্লেক্সিবল থাকতে পারি না, নিরপেক্ষ থাকা যায় না। অধিকাংশ সময়েই অধিকাংশ প্রশ্নের শতভাগ সঠিক উত্তর থাকে না। বরং নানা উত্তর থাকে। সাদা-কালো চিন্তা বাদ দিলে দেখবেন, এই বিশ্বটা আসলে এক জটিল রংধনু। যেখানে আছে সব ধরনের আলোর ছটা। ভিন্ন ভিন্ন সম্ভাবনার প্রতি আপনার মনকে উন্মুক্ত করতে হবে।
GIPHY App Key not set. Please check settings