সব ধরনের চা-ই ক্যামেলিয়া সিনেনসিস উদ্ভিদ থেকে তৈরী করা হয়। গ্রিন টি বা সবুজ চা এই অপ্রক্রিয়াজাত, আনফার্মেন্টেড পাতা থেকে তৈরী করার সময় যে পান্না সবুজ রঙ দেখা যায় সেখান থেকেই এই নামকরণ হয়েছে।
এর আদিকাল প্রায় ৫ হাজার বছর পূর্বে। তবে আমাদের এশিয়াতেই গ্রিন টি বেশি খাওয়া হয়।
গ্রিন টি এর আছে নানা উপকারিতা। যেমন,
- এর উচ্চ পলিফেনলের মাত্রা যা দেহকে নানা রোগ থেকে রক্ষা করে;
- এতে ক্যাফেইনের মতো নানা প্রাকৃতিক উত্তেজক আছে, যা ব্রেইনের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে;
- রক্তে শর্করার মাত্রা সুন্দরভাবে নিয়ন্ত্রণ;
- হৃদরোগের ঝুঁকি কমা;
- হজমশক্তি ভালো হওয়া।
১. প্রতিরক্ষামূলক পলিফেনলের উচ্চ মাত্রা
পলিফেনল নামক যৌগগুলি শরীরকে রোগের বিরুদ্ধে রক্ষা করতে গুরত্বপূর্ণ অবদান রাখে। স্বাস্থ্যকর, সুষম খাদ্য মেইনটেইন করতে এটি ভূমিকা রাখে। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যৌগগুলো ব্যাপকভাবে ফল, শাকসবজি এবং অন্যান্য অপ্রক্রিয়াজাত খাবারে পাওয়া যায়। গ্রিন টি-এর অসংখ্য স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। এর স্বাস্থ্যগত উপকারিতার অন্যতম কারণ হল এতে পলিফেনলের উপস্থিতি। গ্রিন টির প্রধান জৈব সক্রিয় যৌগগুলো হল ফ্ল্যাভোনয়েড, যার মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী হল ক্যাটেচিন এবং এপিগালোকাটেচিন গ্যালেট (EGCG)।
২. ব্রেইনের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি
গ্রিন টি-তে ক্যাফেইন সহ অনেকগুলো প্রাকৃতিক উদ্দীপক রয়েছে, যা কফির মতো এত না হলেও মনোযোগ এবং ফোকাস বজায় রাখতে সাহায্য করে। এসব ছাড়াও গ্রিন টি অ্যামিনো অ্যাসিড এল-থেনাইনের উৎস, যার একটি শিথিলকারী প্রভাব রয়েছে। এটি GABA, ডোপামিন এবং সেরোটোনিনের মত নানা উদ্দীপনাকারী রাসায়নিক হরমোনের পরিমাণ মস্তিষ্কে বৃদ্ধি করে। গ্রিন টির উপকারী পলিফেনল মস্তিষ্কে বার্ধক্যের প্রভাব কমাতেও সাহায্য করতে পারে।
৩. চর্বি কমাতে সহায়তা করে
কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, গ্রিন টি বিপাকীয় হারকে বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং চর্বি কমাতে সহায়তা করে। ধারণা করা হয়, ক্যাফেইন থেকে প্রাপ্ত প্রাকৃতিক থার্মোজেনিক বৈশিষ্ট্য এবং ক্যাটেশিনের মতো প্রাকৃতিক উদ্ভিদ যৌগের কারণেই এই উপকারিতা পাওয়া যায়।
৪. রক্তে শর্করার হার নিয়ন্ত্রণ
গবেষণায় দেখা গেছে যে, গ্রিন টি ইনসুলিন সংবেদনশীলতা কিছুটা কমাতে পারে। ফলস্বরূপ রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণে এটা উপকারী প্রভাব ফেলে।
৫. হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস পাওয়া
গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য মতে, হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে গ্রিন টি খুব উপকারী প্রভাব ফেলে। এ ছাড়া স্ট্রোকের ঝুঁকিও কমায় গ্রিন টি। এটি খুব ভালো ভাবে রক্তে চর্বির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, যার ফলে এসব ঝুঁকি কমে যায়।
গ্রিন টি কি সবার জন্য নিরাপদ?
অ্যানিমিয়ার কারণে দেহে আয়রনের ঘাটতি থাকে। অন্যান্য চা এর মতো গ্রিন টি-তেও ট্যানিন নামক একটি প্রাকৃতিক যৌগ থাকে। এসব যৌগগুলো দেহে আয়রনের শোষণকে বাধাগ্রস্ত করে। এ কারণে প্রচুর পরিমাণে আয়রণ আছে এমন খাবার খাওয়ার পরপর বা আগে গ্রিন টি না খাওয়াই ভালো। কারণ সে ক্ষেত্রে আয়রনযুক্ত খাবারের উপকারিতা আপনি পাবেন না যদি আপনার অ্যানিমিয়া থেকে থাকে। অন্তত আয়রনযুক্ত খাবার খাওয়ার এক ঘন্টা আগে-পরে গ্রিন টি খাবেন।
গ্রিন টি-র উপকারী প্রভাবের কারণে অনেক ‘হেলথ’ প্রোডাক্টেই গ্রিন টির কিছু অংশ জুড়ে দেওয়া হয়। তবে এসব হেলথ প্রোডাক্টগুলো কার্যকরী কী না তা নিয়ে তেমন প্রমাণ নেই। আপনি যদি স্বাস্থ্যগত কারণে গ্রিন টি ব্যবহার করতে চাইলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিন, যেন অতিরিক্ত স্বাস্থ্যঝুঁকিতে না পড়তে হয়।
আপনি ক্যাফেইনের প্রতি সংবেদনশীল হলে বেশি বেশি ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় খাবেন না। এতে আপনার ঘুমে সমস্যা দেখা দেবে। কারো কারো অ্যাংজাইটিও বেড়ে যায়। আপনার সাথেও এমনটা ঘটলে ক্যাফেইন খাওয়া কমিয়ে দিন। দুপুরের পর কোনো ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় খাবেন না।
GIPHY App Key not set. Please check settings