ব্রণ থেকে মুক্তির জন্য অনেক কিছুই হয়ত করেছেন। কিন্তু ঘরোয়া পদ্ধতিতে প্রাকৃতিক উপদান ব্যবহার করে ব্রণ থেকে সম্পূর্ণ মুক্তির উপায় রয়েছে। সেটি নিয়েই এবারের লেখা। উজ্জ্বল, মসৃণ ও সুন্দর ত্বক কার না ভাল লাগে? কিন্তু ত্বকে ব্রণের সমস্যা দেখা দিলে ত্বকের স্বাভাবিক সৌন্দর্য নষ্ট করে দেয় ও চরম বিরক্তির কারণ হয়ে ওঠে। বিশেষ করে কিশোর-কিশোরীদের ব্রণ নিয়ে বিব্রত অবস্থায় পড়তে দেখা যায়। তবে ব্রণ শুধু মাত্র কিশোর-কিশোরীদেরই নয় তরুণ-তরুণী এমনকি বয়স্কদের ত্বকেও হতে পারে। আবার অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায়, হরমোনের পরিবর্তনের কারণে ব্রণ হয়।
বেশিরভাগ ভাগ চিকিৎসক মতামত দেন, ব্রণ তৈলাক্ত ত্বককে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করে। ঘটনা যাই হোক না কেন, ব্রণ আমাদের অনেকের কাছে একটি ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্ন। তবে একটু সচেতন হলে ঘরে বসেই প্রাকৃতিক উপায়ে এর থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। প্রথমত, কার্যকরভাবে ব্রণ দূর করতে আপনার মুখ পরিষ্কার রাখা অপরিহার্য। এর পাশাপাশি আরো কিছু প্রাকৃতিক উপায় অনুসরন করে কিভাবে ব্রণ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় তা এই লেখা থেকে জানার চেষ্টা করব।
ব্রণ কেন হয়?
ব্রণ হওয়ার অনেক গুলো কারণ রয়েছে। ব্রণ বয়স সন্ধিকালীন সময়ে সবচেয়ে বেশি হয়। তবে ব্রণ হওয়ার যতগুলো করণ রয়েছে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণগুলো নিচে দেয়া হলো –
- ত্বকের কোষে ময়লা জমা হয়ে জীবানুর সংক্রমণ হয়, এর ফলে ত্বকের লোমকূপ বন্ধ হয়ে যায় এবং ত্বকের ছিদ্রগুলো আটকে থাকে তখন ত্বকে ফুসফুরি ওঠে। এছাড়াও ত্বক থেকে সেবাম অয়েল বের হতে পারে না তাই ত্বকের ওই স্থানে লাল হয়ে ফুলে ওঠে ও ব্রণ এর সৃষ্টি হয়।
- অনেকের অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভাস এমনকি রাত জাগার অভ্যাস রয়েছে এতে ত্বকে ব্রণ দেখা দেয়।
- অনেকের ত্বকে অতিরিক্ত পরিমাণে ধূলা বালি পরে এবং তা পরিস্কার না করে ঘুমিয়ে যান এজন্য ব্রণের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- আর একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো ত্বকে মাত্রারিক্ত প্রসাধনীর ব্যবহার। কেউ কেউ আবার মেকাপ করে তা তুলতে দেরি করেন যার ফলে ত্বকে এর প্রভাব পড়ে ও ব্রণের সমস্যা দেখা দেয়।
ব্রণ আমাদের অনেকের কাছে একটি ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্ন। তবে একটু সচেতন হলে ঘরে বসেই প্রাকৃতিক উপায়ে এর থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
কীভাবে ঘরে বসে প্রাকৃতিকভাবে ব্রণ দূর করবেন?
এবার দেখা কীভাবে ঘরে বসে প্রাকৃতিকভাবে ব্রণ দূর করা যায় এমন ৭টি কার্যকরী উপায়। মনে রাখবেন, আপনি একটু সচেতন হলেই বাড়িতে বসে প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে ব্রণ দূর করতে পারেন। ব্রণ থেকে মুক্তি পেতে ও ত্বকের মসৃণতা ফিরিয়ে আনতে নিয়মিত ত্বক পরিস্কার রাখা ও নিয়ম মাফিক জীবন যাপন করা জরুরি। চলুন জেনে নেই ব্রণ থেকে কিভাবে মুক্তি পাওয়া যায়।
শসার রস ত্বকের যে কোন চিকিৎসার জন্য একটি কার্যকর উপাদান হিসেবে পরিচিত। তাই প্রতিদিন ত্বকে শশার রস ব্যবহার করুন। শশার রস লাগানোর পূর্বে পরিস্কার পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। এছাড়াও আপনি যদি দ্রুত ব্রণ থেকে মুক্তি পেতে চান তাহলে, সমপরিমাণ শসা ও টেমেটোর রস মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে রাখুন। এরপর ১০ মিনিট ত্বকে লাগিয়ে মিশ্রণ টি ধুয়ে ফেলুন। এভাবে সপ্তাহে তিনদিন এই পদ্ধতি অনুসরন করে ব্রণের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। শশার রস লাগানোর পাশাপাশি প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায়ও শসা রাখতে পারেন। এতে, কোষ পরিস্কার করে ত্বকের শুষ্কতা দূর করবে এবং ত্বকের লাবন্য ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করবে।
২. মুলতানি মাটি
মুলতানি মাটি ত্বকের জন্য আদর্শ। এর অন্যতম কারণ মুলতানি মাটির পার্শপ্রতিক্রিয়া নেই। এটি ত্বক পরিস্কার রাখে ও ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনে। মুলাতানি মাটি ত্বকের উপরিভাগ যেমন তৈলাক্ত ভাব কমিয়ে ফেলে তেমনি ব্রণকে প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে, ফলে সচরাচর ব্রণ বের হতে পারে না। ভাল ফলাফল পেতে গোলাপ জলের সাহায্যে মুলতানি মাটি মিশিয়ে ত্বকে লাগাতে পারেন। এটি সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন করতে পারেন। মুলতানি মাটি অত্যন্ত কার্যকরী প্রাকৃতিক সমাধান যা দিয়ে দ্রুত ব্রণ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
৩. গ্রিন টি
গ্রিন টি ব্রণ দূর করার একটি জনপ্রিয় ঘরোয়া প্রতিকার। গ্রিন টি সপ্তাহে ৪ দিন ত্বকে প্রয়োগ করলে উল্লেখযোগ্য ভাবে ব্রণ হ্রাস পেতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে গ্রিন টি হল একটি অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল। আর এসব উপাদান ব্রণের বিরুদ্ধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম। আবার গ্রিন টি যুক্ত স্কিনকেয়ার পণ্য ব্যবহার করলেও ব্রণ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এছাড়াও প্রতিদিন ১/২ কাপ গ্রিন টি পানেও ত্বকের স্বাভাবিকতা বজায় রাখতে সহায়তা করে।
৪. মধু
মধু এমন একটি কার্যকর উপাদান যা ব্রণ হ্রাস করতে আশ্চর্যজনক ভাবে কাজ করতে পারে। এর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে এবং ব্রণের সমস্যা নিরাময় করে। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ব্রণ আক্রান্ত স্থানে এক বা দুই ফোঁটা লাগান এবং ৩০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত মধু ব্যবহারে ব্রণ হ্রাস করার একটি সহজ উপায় হতে পারে।
৫. বরফ কিউব
বরফ কিউব ত্বকে লাগালে ত্বককে প্রশান্তি এনে দেয়। তাই একটি বরফের কিউব একটি সূক্ষ্ম কাপড়ে মুড়িয়ে ব্রণের উপর রাখুন ও আস্তে আস্তে ঘষুন। খেয়াল রাখবেন ত্বকে সরাসরি বরফ ব্যবহার করবেন না বা এটিকে ২০ থেকে ৩০ সেকেন্ডের বেশি সময় ধরে রাখবেন না। এভাবে দিনে দুই বার বরফ ত্বকে লাগাতে পারেন। এতে ব্রণের ফোলা ভাব ও ব্যথা কমিয়ে দেবে এবং ব্রণ দ্রুত সংকুচিত করতে সাহায্য করবে।
৬. পর্যাপ্ত ঘুম
প্রাকৃতিক উপায়ে ব্রণ থেকে মুক্তি পেতে পর্যাপ্ত ঘুমের কোন বিকল্প নেই। তাই চিকিৎসকেরা পরামর্শ দেন প্রতিদিন ৬-৮ ঘণ্টা ঘুমানোর। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় ঘুমাতে যেতে হবে এবং একই সময় ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস করতে হবে। তবে ৮ ঘন্টার অধিক সময় ঘুমানোর প্রয়োজন নেই। নিয়ম করে নির্দিষ্ট সময় ঘুমালে ত্বকের প্রয়োজনীয় হরমোন নিঃসরণ হয়। সঠিক সময়ে ঘুম থেকে উঠা ও ঘুমানোর ফলে শরীরের কাজগুলো ঠিকমতো ঘটতে থাকবে এবং ব্রণ হওয়ার সম্ভাবনা কমে আসবে।
ব্রণ থেকে মুক্তি পেতে বাজারে নানা ধরনের ফেস মাস্ক পাওয়া যায়। বাজারে আপনি স্যালিসিলিক অ্যাসিড এবং বেনজয়াইল পারঅক্সাইডের মতো উপাদান দিয়ে তৈরি ফেস মাস্ক দেখতে পাবেন, যা সরাসরি ত্বকের ছিদ্র খুলে এবং প্রদাহ কমিয়ে ব্রণের চিকিৎসা করে। সবচেয়ে বেশি ভালো হয় বাড়িতে প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি ফেস মাস্ক এর ব্যবহার। অনেককেই চা গাছের তেল বা গ্রিন টি-এর মতো বোটানিকাল ব্যবহার করতে দেখা যায়। কারণ এই দুটিরই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা ত্বকের জন্য উপকারী।
সহজে ব্রণ থেকে মুক্তির আরো কিছু ঘরোয়া টিপস
- প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করুন। খাদ্য তালিকায় বেশী করে তাজা শাক-সব্জি ও মৌসুমী ফল রাখুন। এবং লেবুর রস ও ফলের রস খাওয়ার চেষ্টা করুন।
- মিষ্টি জাতীয় খাবার বা ফাস্ট ফুড যেমন তৈলাক্ত খাবার, পোলাও বিরিয়ানী, ভাজা-পোড়া খাবার এড়িয়ে চলুন।
- সব সময় পেট পরিস্কার রাখুন, পায়খানা প্রসাব চেপে রাখবেন না। প্রতিদিন ৯-১০ গ্লাস পানি পানের অভ্যাস করুন।
- নখ লম্বা করবেন না এবং নক দিয়ে ব্রণ কুচানোর অভ্যাস থাকলে এখনই তা বন্ধ করুন। এতে রক্ত বের হয়ে ত্বকে দাগের সৃষ্টি হবে।
- মুখে বেশী বেশী তেল জমলে, পানি দিয়ে ধুবেন। হালকা গরম পানি ব্যবহার করতে পারেন। খারযুক্ত সাবানের ব্যবহার করবেন না।
- সম্ভব হলে সেই সপ্তাহে ৩/৪ দিন কাঁচা হলুদ এর পেস্ট লাগাতে পারেন ।
পরিশেষে বলতে পারি, রাতারাতি ব্রণ দূর করা সম্ভব নয়। প্রাথমিক অবস্থায় বাড়িতে প্রাকৃতিক উপায়ে চেষ্টা করা উচিৎ। আপনার ধৈর্য ও রুটিন মাফিক যত্ন আর উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলো মেনে চললে ব্রণ এর সমস্যা দূর করা সম্ভব। আর যদি ব্রণ এর সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয় তাহলে ডাক্তার বা চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করুন।
GIPHY App Key not set. Please check settings