in

মাশরুম হতে পারে নারীদের কর্মসংস্থানের উপায়

নারীদের কর্মসংস্থানের জন্য মাশরুম একটি অন্যতম ক্ষেত্র হতে পারে। গৃহবধূ থেকে শুরু করে চাকরিজীবীসহ সব শ্রেণী ও বয়সের নারীরা পারিবারিক কাজের পাশাপাশি মাশরুম চাষ করে অনায়াসে কিছু বাড়তি আয় করতে পারে।

নারীরা কিভাবে মাসরুম চাষ করে জীবীকা নির্বাহ করতে পারে তার আগে মাসরুম সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নেয়া যাক।

মাশরুম কি?

মাশরুম একটি বিজ্ঞানসম্মত খাবার হলেও বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের কাছে বিশেষ করে গ্রাম এলাকায় এটি ব্যাঙের ছাতা নামে পরিচিত। তবে দিন বদলে গেছে। এখন ব্যাঙের ছাতা ঢাকা শহরের নামিদামি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলোতে পাওয়া যায়। ব্যাঙের ছাতা নামে যেটি পরিচিত সেটি আসলে এক প্রকার বিষাক্ত ছত্রাক যা বন জংগলে স্যাঁতসেঁতে যায়গায় হয়ে থাকে। খাদ্য হিসেবে যে মাশরুম পাওয়া যায় সেটিও দেখতে ব্যাঙের ছাতার মতই। কিন্তু এটি পরিছন্ন পরিবেশে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে চাষ করা সুস্বাদু, পষ্টিকর এবং ভেষজগুণে ভরপুর ক্লোরোফিলবিহীন উদ্ভিদ এবং এক প্রকার সবজি।

লোকের কাছে এটি অপরিচিত নাম। আমরা মাশরুমকে “ব্যাঙের ছাতা” বলেই চিনি। মূলতঃ মাশরুম গবেষণাগারে উদ্ভাবিত অঙ্কুর বা রেণু দ্বারা পরিচ্ছন্ন পরিবেশে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে চাষ করা, সুস্বাদু পুষ্ঠিকর ও ঔষধি গুণসম্পন্ন খাওয়ার। প্রতিকেজি শুকনো মাশরুম এক হাজার থেকে ১২শ’ টাকায় বিক্রি হয়। বর্তমানে উন্নত দেশে মাশরুমের কদর অত্যন্ত বেশী।

মাশরুমের পুষ্টিগুণ:

মাশরুম অত্যন্ত পুষ্টিগুণসম্পন্ন একটি খাবার। এতে আছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন (৩০%)। এ প্রোটিনে আছে মানবদেহের জন্য অত্যাবশ্যকীয় সব এমাইনো এসিড। যার জন্য এ প্রোটিনটি প্রাণিজ প্রোটিনের মতো একটি সম্পূর্ণ প্রোটিন। কিন্তু প্রাণিজ প্রোটিনের মতো এতে কোলস্টেরল না থাকায় এবং ফ্যাট কম থাকায় সব বয়সের মানুষের জন্য এবং রোগীদের জন্যও আদর্শ খাবার। মাশরুমে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই২, নায়াসিন, ফলিক এসিড যার মাত্রা যথাক্রমে ১.৮-৫.১, ৩১-৬৫ ও ০.৩০-০.৬৪ মি. গ্রাম/১০০ গ্রাম। মাশরুম মিনারেলসের ও একটি ভালো উৎস। এতে পটাশিয়াম, ফসফরাস, জিংক ও কপারের পরিমাণ যথাক্রমে ২৬.৭-৪৭.৩ গ্রাম, ৮.৭-১৩.৯ গ্রাম, ৪৭-৯২ মি. গ্রাম ও ৫.২-৩৫ মি. গ্রাম/কেজি (শুকনো ভিত্তিতে) যা মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় অধিকাংশ ভিটামিন এবং সব মিনারেলসের জোগান দিতে পারে (Dutta, ২০০৭)।

মাশরুম চাষ পদ্ধতি

বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রিত (Total Control) পরিবেশে মাশরুম চাষ করা হয় বলে এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল। কিন্তু বাংলাদেশে পরিবেশ মাশরুম চাষের জন্য অত্যন্ত অনুকুল। এখানে আংশিক নিয়ন্ত্রিত (Semi-control) পরিবেশে সারা বছর দিব্যি মাশরুম চাষ করা যায় যার উৎপাদন খরচ অনেক কম।

মাশরুম চাষ করার জন্য কোন কীটনাশক, রোগনাশক এমন কি কোনো রাসায়নিক সারের প্রয়োজন হয় না। এটি চাষের জন্য প্রয়োজন হয় কেবল কৃষিজ বা বনজ বর্জ্য যেমন- ধানের খড়, গমের খড়, আখের ছোবা, কাঠের গুঁড়া ইত্যাদি যা যত্রতত্র পড়ে থেকে পরিবেশকে দূষিত করে। মাশরুম চাষ করার জন্য আলোহীন স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ প্রয়োজন, তবে ঘরে পর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌঁছানোর ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। মাশরুমের স্পূন রাখার জন্য ছোট ছোট মাচা ব্যবহার করা যেতে পারে। লোহা, বাঁশ বা কাঠ দিয়ে এগুলো সহজেই তৈরি করা যায়। অতিরিক্ত গরম মাশরুম চাষের জন্য প্রতিকূল। এজন্য প্রয়োজন হলে ফ্যান ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণে পানির ব্যবস্থা রাখতে হবে। হ্যান্ড স্প্রে মেশিনের সাহায্যে স্পূনগুলোতে নিয়মিত পানি দিয়ে স্যাঁতসেঁতে করে রাখতে হবে। শীত ও বর্ষাকালে মাশরুম উৎপাদন অধিক পরিমাণে হয়ে থাকে। এ সময় একটি ভালো মানের স্পূন থেকে প্রতি আড়াই মাসে ২০০-২৫০ গ্রাম মাশরুম উৎপাদন করা যায়। ১০-১২ টাকা মূল্যের এই স্পূনগুলো প্রতি আড়াই মাস পর পর পরিবর্তন করতে হয়।

নারীদের কর্মসংস্থান হতে পারে মাশরুম

এবার শিরোনাম প্রসঙ্গে আসা যাক। মানে কিভাবে নারীরা মাশরুম চাষ করে আয় করতে পারে এবং সাবলম্বি হতে পারে সে প্রসঙ্গ। উপরের আলোচনা থেকেই জানা গেছে যে মাশরুম চাষ খুবই সহজ একটি পদ্ধতিতে করা যায়। জায়গা কম লাগে এবং মাত্র আনুমানিক ১৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেই মাশরুম চাষ শুরু করা যেতে পারে। তবে ব্যবসা শুরুর আগে এ বিষয়ে অবশ্যয় প্রতিক্ষন নিতে হবে। নারীদের জন্য সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগে প্রশিক্ষন প্রকল্পের মাধ্যমে সহায়তা করা হচ্ছে। গ্রামের বেশিরভাগ নারীই গ্রিহিনী কেউ কেউ হয়ত হস্তশিল্প বা এ জাতীয় কিছু কাজের সাথে জড়িত। এসব বেকার নারীরা খুব সহজেই মাত্র কিছু দিনের প্রশিক্ষণ নিয়ে মাশরুম চাষের ব্যবসা শুরু করতে পারে।

ইতিমধ্যে অনেক এলাকায় মাশরুম চাষ একটি জনপ্রিয় ব্যবসা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। বিশেষ করে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, রাজবাড়ী, কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জ, চাঁদপুর এবং রাজশাহীসহ অনেক জায়গায় মাশরুম চাষ অত্যন্ত জনপ্রিয়। ঢাকা শহরেও বিভিন্ন এলাকায় যেমন গোড়ান, কোর্ট কাচারি, রামপুরা, বনশ্রী, সাভার এবং টঙ্গীতে অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে মাশরুম চাষ হচ্ছে। এসব জায়গায় পুরুষদের পাশাপশি নারীরাও এগিয়ে। তবে একটি রিপোর্ট থেকে মহিলাদের মাশরুষ চাষের ক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতার কথা জানা যায়। এগুলো বস্তুত অন্যান্য সমস্যার মত পিছিয়ে থাকা মহিলাদের গতানুগতিক সমস্যার সমরূপ। সমস্যগুলোর দিকে একটু চোখ বুলিয়ে নিন; সমাধানের চেষ্টা করুন।

  • সচেতনতার অভাব। মাশরুম চাষ করে যে নারীরা নিজের পারে দাড়াতে পারে সে ব্যাপারে তারা এখনও সচেতন না। আবার এটি যে একটি পুষ্টিকর সবজি সে বিষয়ে অনেকের কোন ধারণাই নাই
  • মাশরুম চাষের পর একজন নারীর পক্ষে একা সেই পণ্যকে শহরে বিক্রয় করা খুবই দুরুহ ব্যাপার
  • বাংলাদেশের নারীদের মার্কেট অ্যাক্সেস বা ব্যবসা বাণিজ্যে এদের পদচারণা অনেক কম
  • মাশরুম সম্পর্কে নারীদের জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের অভাব
  • অর্থনৈতিক সহায়তার অভাব। যদিও নারী উদ্যোক্তাদের এখন বিভিন্নভাবে ঋণের আওতায় আনা হচ্ছে। কিন্তু কতজন গ্রামের নারী এ সম্পর্কে সচেতন
  • সামাজিক ও ধর্মীয় অজুহাত দেখিয়েও অনেক জায়গায় মহিলাদের এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে রাখা হয়েছে। তবে মাশরুম চাষের ক্ষেত্রে কিছুটা ব্যাতিক্রম লক্ষ করা যায়। যেহেতু পুরুষরা মাঠে বেশি কাজ করে তাই মহিলারা ঘড়োয়াভাবে খুব সহজেই মাশরুম চাষ করতে পারে।

মাশরুম চাষকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং মহিলাদের এক্ষেত্রে জড়িত করার জন্য কি করতে হবে তা আশা করি বুঝতে পেরেছেন।

মাশরুম সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্যের জন্য জাতীয় মাশরুম উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ কেন্দ্র সাভার, ঢাকা অথবা দেশের বিভিন্ন সাব সেন্টারের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

What do you think?

Written by রাজা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

4 Comments

Breakup Tips

ব্রেকআপের পর ১০টি বিষয় যা কখনও করা উচিত না

ভেষজ চিকিৎসা: তুলসি পাতা