চুল সৌন্দর্যের বড় অংশ। আর এই চুল নিয়ে যুগ যুগ ধরে মানুষের চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছেই, আর ভবিষ্যতে ও চলবে। এখন কথা হচ্ছে, চুল সুস্থ্য রাখতে করনীয় কি?
প্রতিদিনের ধূলোবালি আর আবহাওয়ার অদল-বদলে চুলের স্বাভাবিক পুষ্টি হারিয়ে ফেলে। তাই প্রয়োজন চুলের বাড়তি যত্ন। তবে মুশকিল হলো, সবার আবার হুট করে পার্লারে যাওয়ার সময় হয় না।
তবে চিন্তা নেই, বাজারে পুষ্টি গুন সম্পন্ন অনেক ধরনের শ্যাম্পু পাওয়া যায়। তাই বাড়িতেই এই শ্যাম্পু গুলোর সঠিক ব্যবহারে ভাল ফলাফল পেতে পারেন। ভালো মানের শ্যাম্পু চুলকে গোড়া থেকে শক্তিশালী করবে, চুল পড়া কমাবে, খুশকি রোধে কাজ করবে এবং চুলের আগা ফাটা রোধে সাহায্য করবে।
এই সব দিক বিবেচনায় নিয়ে চুলের জন্য কেমন শ্যাম্পু সেটা জানতে হলে, পুরো লেখাটা যে অবশ্যই পড়তে হবে।
কিভাবে শ্যাম্পু বাচাই করবেন?
এটাতো সবাই জানি, চুল যেমন সৌন্দর্যের বড় একটি ভূমিকা পালন করে তেমনি এর যত্ন নেয়া ও অনেক সময় কষ্টকর হয়ে ওঠে।
এখন কথা হল, শ্যাম্পু কিভাবে বাছাই করা উচিৎ? শ্যাম্পু বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সবার আগে চুলের ধরনটা জেনে নিবেন। এবং অবশ্যই কেনার আগে ভালো মানের শ্যাম্পু দেখে কিনতে হবে। ভাবছেন লেকচার দিচ্ছি? হাহা! আসলে আমার অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি।
- যেমন ধরুন, আপনার চুলে কোন রুক্ষ ভাব বা অতিরিক্ত তেল চিটচিটে ভাব আছে কিনা খেয়াল করে দেখবেন। অথবা যদি দেখেন, চুলের ময়েশ্চার ঠিক পরিমাণে নেই তাহলে বুঝতে হবে আপনার চুল নরমাল।
- সাধারনত, কোকড়া, শুস্ক অথবা হালকা চুলের জন্য শ্যাম্পু বাছাই করা সহজ নয়। কাজেই, এই ধরনের চুলের জন্য শ্যাম্পু বাছাই করার আগে নিশ্চিত হয়ে নিন যে সেটি শুস্ক চুলের সাথে মানানসই কিনা।
- এছাড়াও শ্যাম্পু তৈরির কিছু উপাদান এলার্জির জন্য দায়ী। তাই চুলের যত্নে শ্যাম্পু হিসেবে হারবাল শ্যাম্পুই সবচেয়ে নিরাপদ ও কার্যকরী।
- দীর্ঘ সময় চুল সতেজ বা উজ্জ্বলতা ধরে রাখার জন্য ক্ল্যারিফাইং শ্যাম্পু সবচেয়ে কার্যকরী। এই ধরনের শ্যাম্পু সাধারনত পানিবিহীন হয় এবং স্প্রে ও পাউডার আকারে বাজারে পাওয়া যায়।
- এছাড়া চুলের তৈলাক্ত ভাব দূর করার জন্য এবং চুল পরিষ্কার করার জন্য ড্রাই শ্যাম্পুও অনেক ভাল।
- এতএব, যাদের চুল নরমাল তারা সাধারণত সব ধরনের শ্যাম্পুই বাছাই করতে পারেন। তবে, আমার নিজের চুলের জন্য আমি মেডিকেটেড শ্যাম্পু পছন্দ করি। কারণ এই শ্যাম্পুতে চুলের অনেক সমস্যার সমাধান পাই।
সুতরাং সব দিক বিবেচনায় আমি বলব, এমন শ্যাম্পু বাছাই করুন যা চুলে পুষ্টি জুগিয়ে চুলকে আরও নরম এবং ঝরঝরে করে তোলে।
সুস্থ্য চুলের যত্নে কেমন শ্যাম্পু?
কিভাবে শ্যাম্পু বাছাই করবেন সবইতো বললাম, চলুন আর কথা না বাড়িয়ে মূল কথায় আসি। আসলে আমরা প্রতিদিন যে শ্যাম্পু ব্যবহার করি সেটা হল ক্লিঞ্জিং শ্যাম্পু যা শুধু মাত্র চুল পরিস্কার করে।
কিন্তু সুস্থ্য ও ঝলমলে চুল পেতে আরো কিছু উপকারী উপাদান সমৃদ্ধ শ্যাম্পু প্রয়োজন। তাহলে চলুন দেখি সুস্থ্য চুলের জন্য কেমন শ্যাম্পু কিনবেন।
মেডিকেটেড শ্যাম্পু
প্রথমেই মেডিকেটেড শ্যাম্পু নিয়ে বলব, এ ধরনের শ্যাম্পুতে রয়েছে বিভিন্ন স্পেশাল উপাদান। এই উপাদান গুলো চুলের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। এমনকি, যদি নিয়ম করে এই শ্যাম্পু ব্যবহার করেন তাহলে অতিরিক্ত খুশকি বা উকুনের হাত থেকেও রক্ষা পেতে পারেন।
অহ, আরেকটি উল্লেখযোগ্য সমস্যা যেমন, স্কাল্প সম্পর্কিত যেকোন সমস্যায় এই শ্যাম্পু খুব ভাল কাজ করে। মেডিকেটেড শ্যাম্পুর মধ্যেও কিছু শ্যাম্পু আপনি ব্যবহার করে দেখতে পারেন। যেমন:
- Body Shop Ginzer
- Anti-Dandruff Shampoo
- Head & Shoulders Citrus Breeze Shampoo,
- Garnier Fructis Fortifying – Anti Dandruff ইত্যাদি হচ্ছে মেডিকেটেড শ্যাম্পু।
নরমাল শ্যাম্পু
এ ধরনের শ্যাম্পু চুলে আলাদা কোন উপকার করে না। তবে, রেগুলার চুল ধোওয়ার জন্য নিরাপদ। আপনি অবশ্যই এই নরমাল শ্যাম্পু চুলের জন্য বাচাই করতে পারেন। কারণ, এটি চুলে স্কাল্পে আটকে থাকা বিভিন্ন ময়লা পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। নরমাল শ্যাম্পুর মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য হলো –
- Pro-V classic
- Garnier Fructis Normal ইত্যাদি।
মাইল্ড শ্যাম্পু
মাইল্ড শ্যাম্পু সাধারণত হালকা শ্যাম্পু। এটি একটু ব্যতিক্রমী কারণ, এতে চুলের জন্য ক্ষতিকারক কোন উপাদান থাকে না। এই শ্যাম্পুতে সালফেট এবং প্যারাবেন নেই। মাইল্ড শ্যাম্পুতে রয়েছে জৈব উপাদান যা চুলের জন্য খুবই নিরাপদ।
সুতরাং জোর দিয়ে বলা যায়, এই শ্যাম্পু স্কাল্প সেনসিটিভ চুলের জন্য অনেক সহায়ক ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন ধরনের শ্যাম্পুর মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য মাইলড শ্যাম্পু হলো –
- Johnson’s Baby Shampoo
- loreal’s smooth intense shampoo
- Dove ইত্যাদি।
শ্যাম্পু কিভাবে ব্যবহার করবেন ?
বাইরে বের হলে চুলে প্রচুর ধুলোবালু আর ময়লা চুলে জমে থাকে। এই পরিস্থিতিতে চুলে নিয়মিত শ্যাম্পু করার বিকল্প নেই। তাই, চুল পরিষ্কারের জন্য চুলের ধরন বুঝে ভালো মানের শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করা উচিৎ। শ্যাম্পু ব্যবহার সবাই মুটামুটি জানি, তবু আরেকবার দেখে নেই কিভাবে শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন
- প্রথমে চুল পানি দিয়ে ভিজিয়ে নিন।
এখন হাতে অল্প পরিমাণ শ্যাম্পু নিন ও এবং তা সম্পুর্ন চুলে লাগিয়ে নিন। আর ও ভাল ফলাফল পেতে শ্যাম্পু করার সময় ভালো করে মাথার স্কাল্পে ম্যাসাজ করে শ্যাম্পু করুন।
- চুলে বেশি ময়লা থাকলে দুইবার শ্যাম্পু করে নিন। এরপর শ্যাম্পু ধুয়ে নিন। এখন ভালো মানের কন্ডিশনার লাগান। কারণ শ্যাম্পু করার পর কন্ডিশনার করাও জরুরী। এতে চুল উজ্জ্বল ও ঝলমলে দেখাবে।
- অবশেষে, পরিস্কার টাওয়াল দিয়ে চুল ভালো মতো মুছে শুকিয়ে নিন। ব্যাস! এভাবে সপ্তাহে ৩/৪ দিন ভালো শ্যাম্পু দিয়ে চুল পরিষ্কার করুন আর উজ্জ্বল চুলের অধিকারী হোন।
শ্যাম্পু নিয়ে অনেক সাফাই গাওয়া হলো এবার শেষ কথায় আসি, সুন্দর উজ্জ্বল চুলের যত্নের জন্য যে খুব ব্যয়বহুল লাইফস্টাইল অথবা প্রোডাক্টস ব্যবহার করতে হয় এমনটা নয়। এর সাথে প্রয়োজন নিয়মিত পরিচর্যা আর প্রয়োজন সঠিক পুষ্টির।
আবার, শুধু মাত্র শ্যাম্পু দিয়েই সুস্থ্য চুল পাওয়া সম্ভব সেটাও সত্যি নয়। তবে ভালো মানের শ্যাম্পুর বাছাইয়ের সাথে সাথে সঠিক খাদ্যাভাস, পুষ্টিকর খাবার ইত্যাদি চুলের পুষ্টি যোগাতে বড় ভূমিকা পালন করে।
GIPHY App Key not set. Please check settings