in ,

প্রসব পরবর্তী মায়ের মানসিক সমস্যা ও তার সমাধান

mental health of new mothers solutions

বিয়ের পর দীর্ঘ ৫/৬ বছর পর প্রথম মাতৃত্বের স্বাদ পেয়েছিল ঈশা। কিন্তু সমস্যা হল প্রসবের পর তার নানাবিধ শারীরিক জটিলতা শুরু হয় সেই সাথে নবজাতকের দেখাশোনার বাড়তি দায়িত্ব সব মিলিয়ে সে মারাত্বক অবসাদে ভুগতে থাকে। এই অবসাদ থেকে সৃষ্টি হয় বিষণ্ণতার মত বড় এক মানসিক সমস্যার। প্রসব পরবর্তী মায়ের মানসিক সমস্যা ও তার সমাধান নিয়ে আমাদের দেশে খুব একটা  আলোচনা বা পর্যালোচনা হয় না কিন্তু এই সমস্যা কেবলমাত্র ঈশার নয় বরং অনেক নতুন মা-ই এই সমস্যায় ভুগে থাকেন। কিন্তু সবসময় এই সমস্যা সুপ্ত থাকে না বরং কখনো কখনো এটি মারাত্বক আকার নিতে পারে। তাই এই সমস্যা নিয়ে আলোচনা ও সচেতনতা সৃষ্টি করা খুবই জরুরী।

প্রসব পরবর্তী মায়ের মানসিক সমস্যাগুলো কি ধরনের হতে পারে?

১। পোষ্ট পার্টাম ব্লু বা বেবি ব্লু

প্রসবের পরে শতকরা ৮৫ ভাগ মা এই সমস্যায় ভুগে থাকেন। প্রসব জনিত শারীরিক যন্ত্রনা, হরমোনের ব্যাপক পরিবর্তন, শিশু দেখাশোনার বাড়তি দায়িত্ব সব মিলিয়ে যে বিশাল ধকল মায়ের উপর দিয়ে যায় সেটাই মূলত এই সমস্যার মূল কারণ। মা পোষ্ট পার্টাম ব্লু বা বেবি ব্লু তে আক্রান্ত হলে প্রসবের ৩/৪ দিনের মধ্যেই নিম্নলিখিত লক্ষনগুলো প্রকাশ পেতে শুরু করে।

লক্ষন

  • মা অকারনে কান্নাকাটি করে
  • আবেগের পরিবর্তন যেমন হঠাৎ মন খারাপ করা বা খুশি হয়ে ওঠা
  • মেজাজ খিটখিটে হওয়া বা অকারনে রেগে যাওয়া
  • ঘুম কম হওয়া এবং ঘোর লাগা ভাব থাকা
  • অপ্রয়োজনে বিরক্তবোধ করা
  • সন্তানের প্রতি মনোযোগ না দেয়া
  • নিজেকে বঞ্চিত বা অবহেলিত ভাবা
  • অল্পতেই অধৈর্য হয়ে পড়া

মায়ের এই সমস্যা সমাধানের জন্য খুব বেশী একটা ডাক্তারের প্রয়োজন পড়ে না। পরিবারের সদস্যদের সহযোগীতা থাকলে ২ সপ্তাহের মধ্যেই মা স্বাভাবিক হয়ে উঠেন। তবে দুই সপ্তাহের পরেও এই সমস্যা থাকে চিকিৎসকের স্বরনাপন্ন হওয়া উচিত।

প্রসবের পর মায়েদের নানাবিধ শারীরিক জটিলতা শুরু হয়, সেই সাথে নবজাতকের দেখাশোনার বাড়তি দায়িত্ব সব মিলিয়ে সে মারাত্বক অবসাদে ভুগতে থাকে। এই অবসাদ থেকে সৃষ্টি হয় বিষণ্ণতার মত বড় এক মানসিক সমস্যার। প্রসব পরবর্তী মায়ের মানসিক সমস্যা ও তার সমাধান নিয়ে আমাদের দেশে খুব একটা  আলোচনা বা পর্যালোচনা হয় না কিন্তু এই সমস্যা কেবলমাত্র ঈশার নয় বরং অনেক নতুন মা-ই এই সমস্যায় ভুগে থাকেন।

২। পোষ্ট পার্টাম ডিপ্রেশন

বিষণ্নতা যে কারো জন্যই একটি বড় সমস্যা। আর প্রসব পরবর্তী সময়ে বিষণ্নতা অর্থাৎ পোষ্ট পার্টাম ডিপ্রেশন আরো মারাত্বক হতে পারে। এই সমস্যার লক্ষনগুলো সাধারনত প্রসবের এক মাসের মধ্যেই প্রকাশ পেতে শুরু করে। এই লক্ষনগুলো বেবি ব্লু-এর মতই তবে দীর্ঘমেয়াদি এবং গভীরও। বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায় যে, প্রায় ৩০ শতাংশ নারী গর্ভাবস্থা থেকে বিষণ্নতায় ভোগেন এবং সে সময়ই এর জন্য চিকিৎসা সেবা না নিলে প্রসবের পরে তাদের প্রায় ৫০ শতাংশ মা পোষ্ট পার্টাম ডিপ্রেশনে আক্রান্ত হন।

লক্ষন

  • অনেক বেশী বিষণ্ন থাকা বা বেশিরভাগ সময় মন খারাপ থাকা
  • দিনে বা রাতে কোন সময়ই পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া
  • মেজাজ খিটখিটে হওয়া এবং রাগ নিয়ন্ত্রন করতে না পারা
  • সন্তানের দেখভালের প্রতি অনীহা এবং আকর্ষন কমে যাওয়া
  • ক্ষুধা না থাকা বা খেতে না পারা
  • অতিরিক্ত ক্লান্তি অনুভব করা
  • বিষাদগ্রস্থ থাকা এবং অহেতুক দুশ্চিন্তা করা
  • পরিবারের সদস্যদের থেকে দূরে সরে থাকা

সমস্যা অতি গুরুতর হলে মায়ের মনে এক ধরনের অপরাধবোধ তৈরি হয় যে সে তার সন্তানকে ঠিকমত লালনপালন করতে পারবে না। একারনে তার মনে আত্মহত্যা বা সন্তানকে মেরে ফেলার মত ভয়াবহ চিন্তাও আসতে পারে। তাই পোস্ট পার্টাম ডিপ্রেশনের লক্ষণ দেখা দিলে অতি দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। যথাযথ চিকিৎসা নিলে এই রোগ সম্পূর্ণ নিরাময় হয়।

৩। পোষ্ট পার্টাম সাইকোসিস

প্রসব পরবর্তী মায়েদের মানসিক সমস্যাগুলোর মধ্যে পোষ্ট পার্টাম সাইকোসিস সবচেয়ে গুরুতর। এই সমস্যার লক্ষনগুলো প্রকাশ পেতে শুরু করলে খুব দ্রুত একজন অভিজ্ঞ মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করতে হবে। প্রতি হাজারে ১ বা ২ জন মা এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।

লক্ষন

  • কথাবার্তা ও আচরনে অস্বাভাবিকতা প্রকাশ পাওয়া
  • নানবিধ ভ্রান্ত বিশ্বাস রাখা এবং অকারনে সন্দেহ করা
  • হ্যালুসিনেশন হওয়া অর্থাৎ কাল্পনিক কোন ব্যক্তির সাথে কথা বলা
  • নিদ্রাহীন হওয়া
  • অতিরিক্ত বিরক্তি প্রকাশ করা
  • ব্যক্তিগত ও সন্তানের পরিচ্ছন্নতার প্রতি উদাসীন হওয়া
  • সন্তানকে ভালোবাসতে না পারা ও যত্ন না নেয়া
  • ভুল বকা বা বিড় বিড় করে একা একা কথা বলা
  • বাড়ির বাইরে এদিক সেদিক চলে যাওয়া

এই লক্ষনগুলো একজন মায়ের মধ্যে দেখা দিলে একেবারে দেরি করা ঠিক হবে না। কারণ মানসিক স্থিরতা না থাকার কারণ অনিচ্ছাকৃতভাবে নিজের ও সন্তানের ক্ষতি করে ফেলতে পারেন। তাই এই সময় খুব দ্রুত মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে। আমাদের দেশে প্রসূতির শারীরিক অবস্থা যেভাবে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয় সেভাবে মানসিক অবস্থার করা হয় না। এমনকি মানসিক সমস্যার লক্ষনগুলো প্রকাশ পেলেও মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে অনেকেই চরম অনাগ্রহ দেখায়। ফলে মা এবং শিশু উভয়ই ক্ষতিগ্রস্থ হয়। কিন্তু উপরে উল্লেখিত সবগুলো সমস্যাই যথাসময়ে চিকিৎসা নিলে সেরে যায় এবং রোগী সম্পূর্নরূপে সুস্থ্য হয়ে ওঠে। আর এর জন্য প্রয়োজন সচেতনতা বৃদ্ধি। তাই প্রসূতির প্রতি যত্নবান হোন ও সচেতন থাকুন।

What do you think?

-1 Points
Upvote Downvote

Written by সানজিদা আলম

একজন ফ্রিল্যান্স কন্টেন্ট রাইটার। টেকনোলজি, স্বাস্থ্য, প্রোডাক্ট রিভিউ এবং ইনফরমেটিভ কন্টেন্ট নিয়ে কাজ করতে ভালো লাগে। লেখালেখির পাশাপাশি ভালোবাসি পড়তে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

What kind of hair shampoo should be used?

কোন চুলে কেমন শ্যাম্পু ব্যবহার করা উচিত?

Mi TV Box S

ভাঙাচুরা টিভি যখন স্মার্টঃ এমআই টিভি বক্স এস নিয়ে যতকথা