ধুরু! কিযে একটা টিভি কিনে আনলাম এতো টাকা দিয়ে, না দেখা যায় ঠিকঠাক ভাবে খেলা না দেখা যায় নেটফ্লিক্সে সিনেমা। এমন বিরক্তবোধক শব্দ আমাদের সবার ঘরে ঘরেই প্রায় চলমান। ত্রিশ থেকে চল্লিশ বা আরো বেশি টাকা দিয়ে টিভি কিনেও আমাদের ভুগতে হয় অনেক। চ্যানেল পরিবর্তন করা যায় না ঠিকঠাক ভাবে, কিংবা ঠিকঠাক ভাবে কোনো হাই-ফাই সিনেমা দেখতে পারেন না। চ্যানেল পরিবর্তন করার সময় ধীর গতি হয়ে যায়। শাওমি স্মার্ট টিভি বক্স এস হতে পারে এসব কিছুর সহজ সমাধান।
আজকে আলোচনা করবো শাওমি এমআই বক্স এস (Xiaomi MI TV BOX S) ফোরকে টিভি বক্স নিয়ে। বেশ কিছুদিন হলো বাজারে একচেটিয়া ভাবে রাজ করে যাচ্ছে শাওমি ব্র্যান্ডের এই স্মার্ট টিভি বক্সটি। আপনি আপনার হাতের এন্ড্রয়েড মোবাইল দিয়ে যে কাজগুলো করতে পারেন তার অনেক ফিচার-ই পেয়ে যাবেন এই টিভি বক্সটিতে। আরো অতিরিক্ত কি কি ফিচার পাবেন এবং বক্সটিতে কি কি সমস্যা রয়েছে, কেন এই টিভি বক্সটি আপনার কেনা উচিত অথবা উচিত না এসব নিয়ে আজকে বিস্তারিত আলোচনা করব। তো আসুন শুরু করা যাক।
টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশন
পণ্যের নাম: এমআই বক্স এস (MI BOX S)
পণ্যের রং: কালো
পাওয়ার সাপ্লাই: পাওয়ার এ্যাডাপ্টর
ওজন: ২০০ গ্রাম
এক্সট্রা ফিচার: গুগল এ্যাসিস্ট্যান্ট, সিমি ম্যানেজার
এপস ইউজ লিমিট: প্রায় ৪০০০ টিভি এ্যাপস
প্রসেসর: কোয়াড কোর হাই প্রসেসর
র্যাম: ২ জিবি
রোম: ৮ জিবি
সার্টিফাইড বাই: গুগল
বক্সটির ডিজাইন একেবারে চোখে পরার মতো। প্লাস্টিকের তৈরি হলেও সাধারণ যেনোতেনো প্লাস্টিক দিয়ে এটি তৈরি করা হয়নি। বক্সটি হাতে নিলেই খানদানি একটা ভাব চলে আসে।
এই বক্সটির সাথে পাবেন, একটি ইউজার ম্যানুয়াল, একটি ক্যাবল এবং একটি পাওয়ার এ্যাডাপ্টর। এবং এরপর সবচেয়ে আকর্ষণীয় একটি রিমোট পেয়ে যাচ্ছেন। রিমোটটি গুগল এ্যাসিস্ট্যান্ট সাপোর্টেড, কষ্ট করে চাপাচাপি করে চ্যানেল পরিবর্তন করার বদলে মুখের কথাতেই চ্যানেল পরিবর্তন করতে পারবেন। বাসায় যাদের বৃদ্ধ বাবা মা আছেন তারা অনেক সময় এতো ফাংশন বুঝে উঠে না। তাদের জন্য খুবই উপকারী একটি ফিচার হলো গুগল এসিস্ট্যান্ট।
ত্রিশ থেকে চল্লিশ বা আরো বেশি টাকা দিয়ে টিভি কিনেও আমাদের ভুগতে হয় অনেক। চ্যানেল পরিবর্তন করা যায় না ঠিকঠাক ভাবে, কিংবা ঠিকঠাক ভাবে কোনো হাই-ফাই সিনেমা দেখতে পারেন না। চ্যানেল পরিবর্তন করার সময় ধীর গতি হয়ে যায়। শাওমি স্মার্ট টিভি বক্স এস হতে পারে এসব কিছুর সহজ সমাধান।
কোথায় ব্যবহার করতে পারবেন এম আই বক্স এস?
আপনার বাসায় থাকা যেকোনো টিভি কিংবা মনিটরে ব্যবহার করতে পারবেন। বাসায় থাকা শুধু নতুন মডেলের টিভি গুলোই না, পুরাতন মডেলের যেকোনো টিভিতেও ব্যবহার করতে পারবেন। শুধু তাই না আপনি চাইলে ট্যাবলেট এমনকি মোবাইলেও ব্যবহার করতে পারবেন এই বক্সটি। এক কথায় যেকোনো বড় ছোট স্ক্রীনেই এই জাদুর বাক্সটি ব্যবহার করা যাবে।
ব্যবহার বিধি
আপনি যে ডিভাইসে বক্সটি ব্যাবহার করতে চাচ্ছেন সেই ডিভাইসের সাথে ইউজার ম্যানুয়াল দেখে সংযোগ দিয়ে দিন প্রথমে। যেহেতু আমি বুঝতে পারছি না আপনি কোন ডিভাইসে ব্যবহার করবেন তাই আমি নির্দিষ্ট করে কোনোটি দেখালাম না।
পাওয়ার সাপ্লাই এর জন্য এ্যাডাপ্টার সংযোগ করে দিন। এরপর আপনার প্রয়োজন হবে একটি ওয়াই-ফাই এর। অন করার সাথে সাথে আপনি ওয়াই-ফাই সংযোগ এর অপশন পাবেন। সেখান থেকে ওয়াই-ফাই যুক্ত করে নিন। এরপর জিমেইল যুক্ত করার পালা। আপনার জিমেইলের পাসওয়ার্ড দিয়ে যুক্ত করে নিন জিমেইল। এখানে বলে রাখা ভালো যে, রিসেট না দিলে আপনাকে আর কখনোই এসব ঝামেলার মধ্য দিয়ে যেতে হবে না। শুধুমাত্র একবার-ই এই ঝামেলা পোহাতে হবে।
জিমেইল যুক্ত করার পর আপনার কাজ প্রায় শেষ। ফাইল ম্যানেজার এ্যাপস থেকে আপনার সে এ্যাপস গুলো প্রয়োজন সেগুলো ইন্সটল করে নিন। ব্যাস কাজ শেষ। এইবার পছন্দসই যা দেখতে মনে চায় আপনি দেখা শুরু করে দিতে পারেন।
সবচেয়ে আকর্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে শাওমি বক্সটি এস ফোরকে ভিডিও সাপোর্টেট। এতো কম বাজেটেও যে এতো ভালো ভিডিও কোয়ালিটি দিচ্ছে সেটা আসলেই প্রশংসার দাবিদার। নেট কানেকশন এর উপর ভিত্তি করে স্বয়ংক্রিয় ভাবে ভিডিও কোয়ালিটি অপটিমাইজ করতে সক্ষম এই বক্সটি। তাই আপনাকে কষ্ট করে বার বার ভিডিও কোয়ালিটি কম বেশি করার কোনো প্রয়োজন-ই নাই।
কাস্টিং অপশন
কাস্টিং অপশন সম্পর্কে অনেকেই ভালো করে জানেন না। আমাদের প্রত্যেকের মোবাইলেই কাস্টিং নামের একটি অপশন থাকে, যেটি মুলত কাজ করে স্ক্রিন শেয়ারিং এর জন্য। মোবাইলে কোনো ভিডিও প্লে করা হচ্ছে সেই ভিডিও চালু হচ্ছে টিভিতে, মজার না বিষয়টি? ইউটিউবে কাস্টিং অপশন থেকে এই সুবিধাটি পেয়ে যাবেন টিভি বক্সটিতে।
অসুবিধার দিক
অনেক তো বললাম সুবিধার কথা এইবার একটু বলি অসুবিধার কথা। এ্যান্ড্রোয়েড টিভি বক্সটি ব্যবহার করে আমার কাছে শুধু মাত্র একটিই অসুবিধা মনে হয়েছে, সেটি হচ্ছে তার রোম নিয়ে। ৮ জিবি লিখা থাকলেও পাওয়া যায় ৬ জিবির মতো। ভারি কয়েকটি এ্যাপস রান করলেই রোম ফুল হয়ে যায়। এক্ষেত্রে আলাদা করে মেমরি কিংবা পেনড্রাইভ ব্যবহার করতে হয়। এছাড়া আমি অসুবিধের তেমন কিছু পাই নি।
দাম
শাওমি ব্র্যান্ডের এই ফোরকে সাপোর্টেড টিভি বক্সটির দাম ৫ থেকে ৬ হাজার টাকার মধ্যেই। বাজারে অনেকে নকল ডিভাইস বিক্রি করে কম দাম দিয়ে। তাই একটু দেখেশুনে কিনা উচিত, অল্প কিছু টাকা বাচাতে গিয়ে যেনো আমরা আবার ঠকে না যাই।
আপনি যদি মনে করেন আপনার একটি ভালো মানের টিভি বক্স দরকার তবে বিনা দ্বিধায় শাওমি বক্স এস নিতে পারেন।
GIPHY App Key not set. Please check settings