in

স্তন্যদানকারী মা কি খাবেন আর কি খাবেন না

ডায়েট টিপস

what-to-eat-what-not-to-eat-for-a-new-mother

স্তন্যদানকারী মায়েদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং শিশুকে খাওয়ানোর বিষয়টি সহজ করার জন্য স্বাস্থ্যকর খাবারের গুরুত্ব অপরিসীম। কারন পরিপূর্ন পুষ্টি আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে জীবনযাত্রাকে সহজতর করতে সাহায্য করে। তাই আজকে আমরা স্তন্যদানকারী মায়ের ডায়েট টিপস-এ কি খাবেন আর কি খাবেন না সে সম্পর্কে আলোচনা করবো।  

নবজাতক শিশুদের জন্য মায়ের দুধ সবচেয়ে সেরা খাবার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় স্বাস্থ্য সংস্থাগুলো একটি শিশুর জীবনের অন্তত প্রথম ছয় মাস একচেটিয়া শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়ানোর উপর জোর দিয়ে থাকে। তারা বলেন যে বুকের দুধ শিশুর প্রথম খাবার যা শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশকে ত্বরান্বিত করে। মায়ের বুকের দুধ নবজাতকের জন্য একটি সম্পূর্ন খাবার কেননা এতে প্রয়োজনীয় সকল পুষ্টি উপাদান রয়েছে। শিশুর ইমিউনিটি, মস্তিষ্কের বিকাশ এবং স্বাস্থ্যকর বৃদ্ধির জন্য বুকের দুধ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া শিশু মায়ের স্তন্যপান করলে অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি আরো অনেক ঝামেলা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। শিশুর খাবার ও স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হলেও অনেক সময় স্তন্যদানকারী মায়েদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে উদাসীন থাকি। এবারের লেখায় তাই চলুন স্তন্যদানকারী মায়ের ডায়েট টিপসগুলো জেনে নেই।

স্তন্যদানকারী মায়েরা কি কি খাবেন

১। ক্যালোরি

মায়ের শরীর দুধ উৎপাদনে প্রচুর শক্তি ব্যয় করে, দিনে তাই অতিরিক্ত ৩০০-৩৫০ ক্যালোরির চাহিদা থাকে। শরীরকে তাই শক্তি জোগাতে শস্য জাতীয় খাদ্য ডায়েটে রাখুন। কারন এগুলো পুষ্টি সমৃদ্ধ এবং এগুলোতে স্বাস্থ্যকর ক্যালোরি রয়েছে। শরীরে শক্তির চাহিদা পূরনে তাই ফল, দুগ্ধজাত খাবার, উদ্ভিজ্জ তেল এবং বাদাম এবং বীজ জাতীয় খাদ্য গ্রহন করুন।

২। প্রোটিন

মায়ের শরীরে দুধ উৎপাদনে প্রোটিন ফুয়েলের কাজ করে। শুধু তাই নয়, প্রসূতি মায়ের প্রসব জনিত শারীরিক ক্ষতি পূরনেও সাহায্য করে। তাই আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকাতে দুগ্ধজাত খাবার, ডিম, মুরগি, মাংস, এবং বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ রাখুন।  

৩। চর্বি এবং তেল

বিভিন্ন খাবারে থাকা ভালো চর্বিও শক্তির ভালো উৎস। এছাড়াও তেল খাবারে বাড়তি স্বাদ যোগ করে। এমনকি স্বাস্থ্যকর চর্বি আমাদের মস্তিস্ক এবং নার্ভাস সিস্টেমকে উন্নত করতে ভূমিকা রাখে। তাই স্তন্যদানকারী মায়ের খাদ্য তালিকাতে চর্বি ও তেল জাতীয় খাবার থাকাও প্রয়োজন।

৪। বিভিন্ন রকম ভিটামিন এবং মিনারেল      

যে সব মায়েরা পর্যাপ্ত পরিমাণে মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট গ্রহণ করেন, তারা শিশুকে স্তন্যদানের মাধ্যমে তা পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহও করতে পারেন। মায়ের ভিটামিন বা মিনারেলের অভাব হলে তার শিশুর বৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে। ভিটামিন বি১২ মস্তিষ্কের বিকাশ এবং পর্যাপ্ত পরিমানে লোহিত রক্তকণিকার উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন। আমিষ খাবারে বি১২ বেশ ভালো পরিমানে পাওয়া যায়।  

গর্ভাবস্থায় এবং স্তন্যদানের সময় আয়োডিন একটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ। আয়োডিনের ঘাটতি থাকা মায়েরা সন্তানের বুদ্ধিবৃত্তি এবং সাইকোমোটর বিকাশের জন্য পর্যাপ্ত পুষ্টি সরবরাহ করতে সক্ষম নাও হতে পারে। আয়োডিনের ঘাটতি পূরনের জন্য আয়োডিনযুক্ত লবণ, দুধ, সামুদ্রিক মাছ এবং ডিম খাদ্য তালিকাতে রাখা প্রয়োজন। এর সাথে আপনার ক্যালসিয়াম এবং ফলিক অ্যাসিডও পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রয়োজন।

এছাড়াও আরো কিছু খাবার আছে যেগুলো মাতৃস্তনে দুধ উৎপাদনে সাহায্য করে যেমনঃ

  • মেথি
  • মৌরি
  • কালিজিরা
  • বিভিন্ন ভেষজ যেমন শতাবরী
  • রশুন ইত্যাদি

এসবের বাইরেও আয়ুর্বেদ শাস্ত্রমতে কিছু ভেষজ উপদান এবং মশলা যা ঐতিহ্যগতভাবে ব্যবহার করা হয় যা দুধের উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে। যেমন-আদা গুঁড়া, এলাচ, জাফরান। বিভিন্ন ধরনের খাবার খাদ্যতালিকায় থাকলে তা আপনার দুধের গন্ধ পরিবর্তন করতে সাহায্য করবে, এর ফলে শিশুকে যখন দুধ ছাড়িয়ে বাড়তি খাবারের জন্য প্রস্তুত করবেন তখন এটি সহজ হবে। আর তাছাড়া খাবারে ভিন্নতা থাকলে আপনি খাবার থেকে সব রকমের পুষ্টিও পাবেন।

স্তন্যদানকারী মায়েরা কি খাবেন না

১। অ্যালকোহল

স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য অ্যালকোহল নিরাপদ নয়। কারন বুকের দুধের মাধ্যমে তা শিশুর শরীরে প্রবেশ করে শিশুর মারাত্বক ক্ষতি করতে পারে। তাই যতক্ষণ আপনি আপনার শিশুকে দুধ খাওয়াচ্ছেন ততক্ষণ যেকোন ধরনের অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন।

২। ক্যাফেইন

ক্যাফেইন আপাতদৃষ্টিতে খুব বেশি ক্ষতিকর নয় তবে অতিরিক্ত পরিমানে গ্রহন করা ঠিক নয়। মা দিনে ৪ থেকে ১০ কাপ চা, কফি, কোমল পানীয়, এনার্জি ড্রিঙ্ক, চকলেট ইত্যাদি খেলে শিশুর ঘুম কমে যাওয়া, বিরক্তবোধ, কান্নাকাটি ইত্যাদি করতে পারে। তবে দিনে ১/২ কাপ খেলে খুব বেশি একটা সমস্যা হবে না।

৩। মার্কারি

মার্কারি অনেক মূল্যবান ধাতু হলেও এটি মানবদেহের জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকর। মায়ের শরীরে সাধারনত মাছের মাধ্যমে এই ধাতু প্রবেশ করে। তাই মাছ কেনার সময় এর উৎসের প্রতি বিশেষভাবে নজর দেয়া জরুরী।

শিশুকে স্তন্যপান করানো মা এবং শিশু উভয়ের জন্য একটি খুব মানসিকভাবে তৃপ্তিদায়ক মুহূর্ত। তাই ভালো খাবার ও অভ্যাসগুলো আয়ত্ব করে খারাপ খাবার ও অভ্যাস পরিহার করুন। শিশুকে স্তন্যদানের প্রতিটি মূহুর্ত উপভোগ করুন। নিরাপদে থাকুন, সুস্থ্য থাকুন!

What do you think?

Written by সানজিদা আলম

একজন ফ্রিল্যান্স কন্টেন্ট রাইটার। টেকনোলজি, স্বাস্থ্য, প্রোডাক্ট রিভিউ এবং ইনফরমেটিভ কন্টেন্ট নিয়ে কাজ করতে ভালো লাগে। লেখালেখির পাশাপাশি ভালোবাসি পড়তে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

tips to keep mobile phone battery safe

মোবাইলের ব্যাটারিকে রাখুন সুরক্ষিত

Mobile phone charger buy in BD

মোবাইল ফোন চার্জারঃ কেনার আগে জানা দরকার