“দোস্ত, এই ফোনটা ৩০ হাজার টাকা দিয়ে ২ মাস আগে কিনলাম।জোশ একটা ফোন। সবকিছু ঠিকঠাক চলতেছে। কিন্তু জানিস, চার্জ টিকতেছে না ঠিকঠাক।” এই ধরনের কথাবার্তা হরহামেশাই আমরা আমাদের আশেপাশের বন্ধুবান্ধবদের থেকে শুনে থাকি। মোবাইলের ব্যাটারি সমস্যা একটা জাতীয় সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে ইদানীং!
আমরা দোষ দেই যে, আমাদের ফোনগুলোই ভালো না। কমদামি ব্যাটারি হয়তো ব্যবহার করছে কোম্পানিগুলো, এই জন্যই হয়তো ঠিকঠাক ভাবে চলে না। কিন্তু একটা বিষয় কি জানেন? আমাদের মোবাইলের ব্যাটারি আমরা নিজেরাই নষ্ট করে ফেলি। সঠিক ব্যবহার করতে না পেরে আমরা ১ মাসের মধ্যেই আমাদের ব্যাটারি নষ্ট করে ফেলি। ফলস্বরূপ দেখায় আমাদের ফোনে চার্জ থাকে না, চার্জ হতে দীর্ঘ সময় লাগে কিংবা ব্যাটারি তুলনামূলক ভাবে বেশি গরম হয়ে যায়।
আজকে আমি আলোচনা করব ব্যাটারি নিয়ে কিছু ব্যাসিক কথাবার্তা। যেগুলো ফলো করলেই ব্যাটারির লাইফটাইম বেড়ে যাবে অনেকগুন। আহামরি কিছু না, একটু সতর্ক হয়ে ব্যাটারি ব্যবহার করেই ব্যাটারিকে দীর্ঘস্থায়ী করা যায়। আর বেশি পটর পটর না করে এবার শুরু করি তবে।
ব্যাটারি চার্জ দেয়ার সঠিক নিয়ম
ফোন চাপতেছি, একটা কাজ পরে গেলো। আমরা কি করি, ঠুস করে চার্জে দিয়ে চলে যাই। ব্যাটারি চার্জ ফুল হয়ে অনেক্ষন বসে থাকে পোর্টে।
ভুল! ভুল! ভুল! এই কাজগুলো কখনই করবেন না। ব্যাটারির একটা লাইফটাইম থাকে, যে আপনি সর্বোচ্চ এতো ঘন্টা ব্যবহার করতে পারবেন বা চার্জ দিতে পারবেন। প্রতি একবার ফুল চার্জে সেই সাইকেল পূর্ন হয়ে যায়। ধরুন আপনার ব্যাটারির চার্জিং লিমিট ১ হাজার বার। তো আপনি ১ হাজার বার ই ব্যাটারি চার্জ করতে পারবেন। এর বেশি নয়। আর এইটা হিসেব করা হয় ০ থেকে ১০০% হওয়ার মধ্যে।
তো আপনি যদি প্রতিবার ১০০% চার্জ না করেন তাহলে কিন্তু দেখা যাবে সাইকেল টা পূর্ণ হচ্ছে না এন্ড চার্জিং লিমিটও শেষ হয়ে যাচ্ছে না। এইটা বলা যেতে পারে ব্যাটারির সাথে চালাকি।
১৫% এর উপরে ২০% এর মাঝে হলে চার্জে লাগাবেন এবং ৮৫% হলেই আর চার্জ দিবেন না। এইটাই হচ্ছে স্ট্যান্ডার্ড নিয়ম মোবাইল চার্জিং এর জন্য।
কোন চার্জার ব্যবহার করবেন? নাকি পাওয়ার ব্যাংক?
বাসায় নিজের ফোনের চার্জার দিয়েই চার্জ দেন আপনার ফোন। কিন্তু অফিসে দেখলেন ভিন্ন ব্যান্ডের একটা চার্জার আছে। ঢুস করে পয়েন্টে লাগিয়ে দিলেন। আসলে আপনি আপনার ব্যাটারির সর্বনাশ করলেন।
প্রতিটা চার্জারের ফ্রিকোয়েন্সী ব্যাটারির জন্য ভিন্ন ভিন্ন। তো ভিন্ন চার্জার দিয়ে কখনোই চার্জে দিবেন না আপনার ফোন।
আবার আপনার চার্জারও কাওকে দিবেন না ব্যবহার করতে। এতে চার্জারের ক্ষতি হতে পারে, তা প্রভাব পরতে পারে আপনার মোবাইল ফোনে।
এবার আসি পাওয়ার ব্যাংকের হিসাব। পাওয়ার ব্যাংক তো ইদানীং কালে ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রয়োজন ছাড়াই সারাক্ষন পাওয়ার ব্যাংক দিয়েই ফোন চার্জ করে অনেকে। এইটা একদমই ঠিক না।ইমার্জেন্সি প্রয়োজন ছাড়া কখনই পাওয়ার ব্যাংক ব্যাবহার করা ঠিক না। এতে ব্যাটারি ড্রেইন বেড়ে যায় অনেকাংশে।
পাওয়ার ব্যাংক থেকে যে কারেন্ট আসে সেটা হচ্ছে মিনি এসি কারেন্ট। অর্থাৎ ডিসি এবং এসির মাঝামাঝি। এতে হয় কি কারেন্ট ফ্লো একেক সময় একেক রেঞ্জে হয়। ব্যাটারি এসব সহ্য করতে না পেরে ড্রেইন করে দেয়। সাথে সাথে টের না পেলেও দীর্ঘস্থায়ী একটি সমস্যা সৃষ্টি হয়ে যায়। তাই আমি আবারো বলছি খুব দরকার না হলে পাওয়ার ব্যাংক এড়িয়ে চলুন।
চার্জে দেয়া অবস্থায় ফোন ব্যবহার করা
আপনার ফোনে চার্জ নাই। ১২% চার্জ। কিন্তু আপনি একজন গেমার, একটু পরই আপনার একটা ম্যাচ শুরু হয়ে যাবে। আপনি চার্জে দিয়েই খেলা শুরু করে দিবেন। আসলে আপনি যে কতটুকু ক্ষতি করছেন আপনার এবং আপনার ফোনের এইটা নিজেও জানেন না।
একদিকে এইটা যেমন আপনার শরীরে জন্য ভীষণ ক্ষতিকর। চার্জে দিলে ফোন থেকে অনেক বেশি পরিমান রেডিয়েশন বের হতে থাকে। যা আমাদের ক্যান্সারের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অন্যদিকে আপনার ব্যাটারি প্রচন্ড পরিমান গরম হয়ে যায়। একদিকে আপনি তাকে চার্জ দিচ্ছেন আবার অন্যদিকে চার্জ খেয়েও দিচ্ছেন। আমরা যে ফোন ব্রাস্ট হয়ে যাওয়ার কথা শুনি তার বেশিরভাগই হয় চার্জে দিয়ে মোবাইল চালানোর জন্য। তাই ভুলেও এই কাজটা কখনই করবেন না।
নেটওয়ার্ক এর সাথে চার্জের সম্পর্ক
আপনি কি কখনো একটা বিষয় খেয়াল করেছেন যে, মোবাইল ডাটা দিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করলে যতটুকু চার্জ শেষ ফুরায় তারচেয়ে অনেক কম চার্জ ফুরায় ওয়াফাই ব্যবহার করলে।
হ্যা, এমনটাই হয়। এর কারণ হচ্ছে সঠিকভাবে নেটওয়ার্ক ক্যাচ করার ক্ষমতা। যখন নেটওয়ার্ক দূর্বল থাকে তখন মোবাইলের প্রফেসরকে অনেক স্ট্রংলি কাজ করতে হয় নেটওয়ার্ককে রেঞ্জের ভিতর আনতে। এতে করে প্রসেসর অনেকটুকু চার্জ খেয়ে ফেলে। অন্যদিকে যদি নেটওয়ার্ক এর ঝামেলা না থাকে তবে এই সমস্যা এতোটা দেখা যায় না।
তাই আপনি যদি ডাটা ইউজার হয়ে থাকেন তবে চেষ্টা করবেন আপনার এলাকায় যে সিম কোম্পানি ভালো সার্ভিস দেয় সেই কোম্পানির সিম ইউজ করতে। এতে কিছুটা হলেও আপনার ব্যাটারি সুরক্ষিত থাকবে।
শেষকথা, আমি যতটুকু পেরেছি ব্যাটারি সম্পর্কে ধারনা দিতে ততটুকু দিয়েছি। আমার এই কথাগুলো অনেক রিসার্চ করে বের করা। আপনি এই কয়েকটা পদ্ধতি ব্যবহার করলে আশা করতে পারি যে আপনার ব্যাটারি আগের চেয়ে ভালো ব্যাকাপ দিবে। আজ আর লিখতে চাচ্ছি না। সবাই ভালো থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ!
GIPHY App Key not set. Please check settings