in

রমজানে রোজা রাখার স্বাস্থ্য উপকারিতা ও ধর্মীয় ব্যাখ্যা

রোজার স্বাস্থ্য উপকারিতা

ইসলামি বর্ষপঞ্জি অনুসারে রমজান বা রামাদান হলো নবম মাস এবং পবিত্রতম মাস। এই মাসে আমরা মুসলিমগণ আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্য ফরজ রোজা ৪ প্রকার যার মধ্যে রমজান মাসের রোজা ১ টি। রোজা শব্দটি ফারসি শব্দ ও বাংলাদেশে বহুল ব্যবহৃত।

প্রকৃতপক্ষে আরবি প্রতিশব্দ হলো সাওম, অর্থ সংযম। এই মাসে আমরা শেষ রাতে সেহরি সম্পন্ন করে মহান পরওয়ারদিগার এর উদ্দেশ্য সূর্যাস্ত বা মাগরিবের ওয়াক্ত অব্দি পানাহার ও যাবতীয় পাপাচরণ থেকে বিরত থাকি বা নিজেকে সংযত রাখি। তাই রমজানকে সংযমের মাস বলে।

কিন্তু এই সংযমের কী কী উপকারিতা রয়েছে? শুধু কি ধর্মীয় অনুশাসন নাকি সুস্থ থাকার পাথেয় আমরা আজ সেটাই জানবো। ধর্মীয় দিকটি সম্পর্কে কম বেশি সবারই কিছু না কিছু ধারণা আছে। তবে শারীরিক উপকারিতা সম্পর্কে বেশিরভাগ মানুষই সচেতন জ্ঞান রাখেন না।

আল্লাহ তায়ালার দেয়া অন্যান্য বিধানের মতোই রমজান মাসের এই ত্রিশ দিনব্যাপি সিয়াম সাধনাও শুধু ধর্মীয় দিক থেকে নয় বরং শারীরিক সুস্থতার কারণের দিক সমৃদ্ধ। যেমন-

রমজান মাসে রোজা রাখার শারীরিক উপকারিতা

  • রমজান মাসে রোজা রাখাকালীন সময়ে সারাদিন আমরা কোনো খাবার খাইনা। দিনের বেলায় কম খাওয়ার জন্য শারীরিক কিছু জটিল সমস্যা যেমন- হাই কোলেস্টেরল, হার্ট এর রোগ ও স্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা কমে।
  • রমজানে ইফতারের সময় নানারকম ফলফলাদি খেতে ভালোবাসি আমরা। বেশিরভাগ মানুষই ইফতারে খেজুর বেছে নেন। খেজুর অতি উচ্চ পুষ্টিসম্পন্ন ফল। একটি খেজুরে ৩১ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট থাকে। এতে রয়েছে ফাইবার যা হজমে সহায়তা করে। খেজুরে যথেষ্ট পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ভিটামিন বি ও সামান্য পরিমাণে সোডিয়াম থাকে। খেজুর তাই সুপারফুড হিসাবেও পরিচিত। রমজানে এই ফল প্রতিনিয়ত খেয়ে আমরা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সক্ষম হই।
  • মানুষের যুক্তিতর্ক, বিচার বিশ্লেষণ সবই মস্তিষ্কের খেলা। রোজা আমাদের মস্তিষ্ককে সক্রিয় করে তোলে। পানাহার না থাকায় শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের কাজের ধরনে সামান্য পরিবর্তন আসে।বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, ব্রেইনে নতুন সেল বা কোষ গঠনে সাহায্য করে রোজা রাখা। একইভাবে রোজা রাখলে অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি থেকে উৎপন্ন হরমোন কর্টিসলের পরিমাণ কমার জন্য মানসিক চাপ হ্রাস করে।
  • রমজানে রোজা রাখলে পাকস্থলী সংকুচিত হয়। যাদের বেশি খাওয়া অভ্যাস তারা পেট ভরে খেলেও মনে করেন পেট হয়তো ভরেনি ফলে বারবার খেতে থাকেন। ওজন বেড়ে তখন তা শরীরের ক্ষতি করে। পাকস্থলী সংকোচনের ফলে কম খাবার খেলেও তা পূর্ণ মনে হয়। যারা ওজন কমাতে চাইছেন রমজান মাসে আল্লাহর রহমতে রোজার ওসিলায় এটি সম্ভব হবে।
  • কিছু অভ্যাস আছে যা মানুষের শরীরের দীর্ঘমেয়াদী জটিল সমস্যার জন্য দায়ী। যেমন -ধূমপান করা, অতিরিক্ত চা-কফি খাওয়া, চর্বিজাতীয় গোশত মাত্রাতিরিক্ত ভক্ষণ ইত্যাদি। রমজান মাসে আল্লাহ ভয়ে ভীত মুসলিমগণ যখন সারাদিন পানাহার থেকে বিরত থাকেন এবং ইবাদত বন্দেগী করেন তখন তাদের মধ্যে এই প্রবণতা কমে যায়। ধূমপানের জন্য অতি অল্প বয়সে ফুসফুস, কণ্ঠনালীর ক্যান্সার হয়। অতিরিক্ত কফি খেলে এই ক্যাফেইন আপনার ঘুমের মাত্রা অস্বাভাবিক হারে কমিয়ে দিয়ে শরীরের ভারসাম্য নষ্ট করে ফেলে। চর্বিজাতীয় গোশত অতিরিক্ত খেলে শরীরে ক্ষতিকারক ফ্যাট জমে তা থেকে হৃদপিন্ডের বিভিন্ন অসুখ যেমন – হার্ট এটাক, স্ট্রোক, হার্ট এর নালীতে চর্বি জমা এই সকল সমস্যা দেখা দিতে পারে। রমজান মাসে রোজা রাখলে এই সমস্যাগুলোর হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার মতো সংযমী অভ্যাস আপনার গড়ে উঠবে।
  • দীর্ঘ অনিয়মের ফলে শরীর অনেকসময় একেবারেই ভেঙে পড়ে। ফলে অকাল বার্ধ্যকের শিকার হন অনেকেই। বার্ধক্য শরীর এবং মন দুটোকেই অসহায় বোধ করায়। রমজান মাসে রোজা রাখলে আয়ু বাড়ে কারণ এটি বার্ধক্যের কারণ জনিত নানা সমস্যার সাথে যুদ্ধ করে মানুষকে টিকে থাকতে সহায়তা করে।
  • খাবারে অরুচি হওয়া এই প্রজন্মের সাধারণ একটি সমস্যা। দীর্ঘ এক মাস যদি টানা সারাদিন না খেয়ে থাকা হয় তখন জিহ্বা ও লালাগ্রন্থি বিশ্রাম পায়। অনেকক্ষণ পর খাবার খেলে এরা দ্রুত সক্রিয় হয়ে ওঠে। বেশিক্ষণ না খেয়ে থাকায় খাওয়ার ইচ্ছেও বেড়ে যায় মানুষের। অরুচিজনিত সমস্যা পরিবারের কারো থাকলে তাকে রোজা রাখতে বেশি করে উৎসাহ দিন।

রমজান মাসে রোজা রাখার ধর্মীয় ব্যাখ্যা

১. আল্লাহ তায়ালা বলেন,

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا کُتِبَ عَلَیۡکُمُ الصِّیَامُ کَمَا کُتِبَ عَلَی الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِکُمۡ لَعَلَّکُمۡ تَتَّقُوۡنَ ﴿۱۸۳﴾ۙ

বাংলা অনুবাদ:

“হে মুমিনগণ, তোমাদের উপর সিয়াম ফরয করা হয়েছে, যেভাবে ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর; যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর।” (সূরা আল বাকারাহ, আয়াত ১৮৩)

তাকওয়া অর্থ বিরত থাকা। আল্লাহ তায়ালা এখানে শুধু পানাহার নয় বরং সকল পাপাচরণ থেকেও বিরত থাকার কথা ব্যক্ত করেছেন।

২. রাসূলুল্লাহ (স) ইরশাদ করেছেন, “যে ব্যক্তি পরিপূর্ণ বিশ্বাস ও পর্যালোচনাসহ রমজান মাসের সিয়াম পালন করবে, তার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল গুণাহ মাফ করে দেওয়া হবে। “(সহীহ বুখারি,৩৮, সহীহ মুসলিম,৭৬০)

আবু হুরায়রা (র) হতে উক্ত হাদিসটি বর্ণিত। এখানে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে রোজার মাহাত্ম্য এতটাই বেশি যা আমাদের সকল গুণাহ মাফ করে দিতে সক্ষম (সুবহানাল্লাহ)! তবে কেন আমরা আল্লাহকে মানব না? কেন আমরা পরওয়ারদিগারের এই উপহার থেকে বঞ্চিত করব নিজেদের?

৩. রাসূলুল্লাহ (স) বলেন, “তোমাদের নিকট রমজান মাস উপস্থিত। এটা এক অত্যন্ত বরকতময় মাস। আল্লাহ তায়ালা এ মাসে তোমাদের প্রতি সাওম ফরজ করেছেন। এ মাসে আকাশের দরজাসমূহ উন্মুক্ত হয়ে যায়, এ মাসে জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং এ মাসে বড় বড় শয়তানগুলোকে আটক রাখা হয়। আল্লাহর জন্যে এ মাসে একটি রাত আছে, যা হাজার মাসের চেয়েও অনেক উত্তম। যে লোক এ রাত্রির মহা কল্যাণলাভ হতে বঞ্চিত থাকল, সে সত্যিই বঞ্চিত ব্যক্তি। “(সুনানুন নাসায়ী, ২১০৬)

আবু হুরায়রা (র) হতে বর্ণিত। উক্ত বিশেষ রাত হলো কদরের রাত। লাইলাতুলকদর পেতে হলে একনিষ্ঠ মনে সাওম পালন করতে হবে।

রমজান মাসে রোজা রাখার মাহাত্ম্য ধর্মীয় বা শারীরিক এবং মানসিক কোনো অংশেই কম নয়। এটি বান্দার জন্য আল্লাহর বিশেষ এক নিয়ামত। তবে আমাদের রোজা রাখার উদ্দেশ্য শুধুমাত্র এক আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ছাড়া আর কিছুই নয়। তাই মুসলিম ভাইবোনগণ, সবসময় সচেষ্ট থাকুন রমজানের সকল রোজা রাখার। আল্লাহ তায়ালা আপনাদের সেই তৌফিক দান করুন, আমিন।

What do you think?

Written by নুসরাত জাহান

পেশায় একজন নার্স হলেও ইসলামিক বিষয় নিয়ে পড়তে ও লিখতে ভালো লাগে। আমার লেখা থেকে যদি কেউ বিন্দুমাত্র উপকৃত হয় তবেই আমার প্রশান্তি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

ভেষজ চা

ভেষজ চা: যেগুলো পান করা দরকার

Ramadan healthy iftar in Bangladesh

আসছে রমজান, জেনে নিন ইফতার ও সেহেরির স্বাস্থ্যকর খাবার তালিকা