জাফরান কি?
জাফরান মূলত একটি উদ্ভিদ। এই জাফরান ক্রোকাস স্যাটিভাস ফুলের সোনালী বর্ণের পরাগ-বহনকারী কাঠামো, যা শুকানো হয় এবং খাবারে মশলা হিসেবে ব্যাবহৃত হয়। এছাড়াও রঙিন খাবার এবং অন্যান্য পন্যের রঙ হিসেবে ব্যাবহার করা হয়ে থাকে।
জাফরানে রয়েছে শক্তিশালী সুবাস এবং তিক্ত স্বাদ। অধিকাংশ ক্ষেত্রে অনেক ভূমধ্যসাগরীয় এবং এশিয়ান খাবারের রঙ এবং স্বাদে, বিশেষ করে ভাত, মাছ, এবং ইংরেজি, স্ক্যান্ডিনেভিয়ান, বলকান রুটিতে জাফরানের ব্যাবহার দেখা যায়। বউলাইবাইস স্যুপের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এই জাফরান।
জাফরান চাষ এবং ইতিহাস
জাফরান প্রধানত ইরানে চাষ করা হয় তাছাড়া স্পেন, ফ্রান্স, ইতালি (অ্যাপেনাইনস রেঞ্জের নিম্ন প্রান্তে) এবং ভারতের কিছু অংশেও চাষ করা হয়। জাফরান খুবই যত্ন এবং পরিশ্রমের মাধ্যমে চাষ করা হয়ে থাকে। প্রতিটি ফুল থেকে তিনটি করে স্টিগমাস (পরাগ-বহনকারী কাঠামো) স্বয়ংক্রিয় মেশিনের সহায়তা ছাড়াই নিজের হাতে বেছে নেয়া হয়, তারপর তা ট্রেতে ছড়িয়ে দেয়া হয় এবং কাঠ এবং কয়লার আগুনে পুড়িয়ে খাবারের সুগন্ধি এবং রং হিসেবে ব্যাবহার করা হয়।
প্রায় ৭৫০০০ ফুল থেকে এক পাউন্ড (০.৪৫ কিলোগ্রাম) জাফরান তৈরি হয়। জাফরানে 0.5 থেকে 1 শতাংশ অপরিহার্য তেল থাকে, যার প্রধান উপাদান হল পিক্রোক্রোসিন।
ধারণা করা হয়, ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল, এশিয়া মাইনর, ইরান এবং কাশ্মীরে জাফরান ক্রোকাস দীর্ঘদিন ধরে চাষ করা হয়েছিল। তারপর মঙ্গোল আক্রমনের পর তা ক্যাথেতে প্রচলিত হয় বলে মনে করা হয়। উক্ত তথ্য চীনা ম্যাটেরিয়া মেডিকাতে উল্লেখ করা হয়েছে (Pun tsaou, 1552-78) ।
প্রথম দিকে অবশ্য চাষের প্রধান ভূমি ছিল এশিয়া মাইনরের সিলিসিয়ায়। ৯৬১ সালে স্পেনের আরবরা এটি চাষ করেছিলো এবং একটি ইংরেজি লিচবুকে উল্লেখ করা হয়েছিলো, জাফরান পরবর্তী সময়ে ইউরোপ থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায় এবং পুনরায় ক্রুসেডারদের দ্বারা চাষ শুরু হয়। বিভিন্ন সময়কাল অতিবাহিত হওয়ার পর জাফরান স্বর্ণের ওজনের চেয়ে অনেক বেশি মুল্যবান হয়েছে। এটি এখনও বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল মসলা।
প্রাচীনকালে ইন্ডিয়াতে জাফরানের স্টিগমাস(পরাগ ধারণকারী অংস) থেকে পানিতে দ্রবণীয় একধরণের সোনালী রঙ পাতিত হয়েছিলো। গৌতম বুদ্ধের মৃত্যুর কিছুদিন পর, তাঁর পুরোহিতরা জাফরানকে তাদের পোশাকের রঙ হিসেবে ঘোষণা করে।বিভিন্ন সংস্কৃতিতে রাজকীয় পোশাকের জন্য জাফরান রং ব্যবহার করা হয়েছে।
“সং অফ সোলেমনে” জাফরানকে মিষ্টি গন্ধের ঔষধী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিলো। সুগন্ধ থাকার কারণে জাফরান, প্রাচীন গ্রিক ও রোমান দরবার, আদালত, থিয়েটার এবং গোসলের ট্যাবে বিছিয়ে রাখা হতো। রোমের রাস্তায় জাফরান ছিটিয়ে দেওয়া হয়েছিল যখন নিরো (রোমের পঞ্চম সম্রাট) শহরে প্রবেশ করেছিল।
জাফরানে এমন রাসায়নিক রয়েছে যা মেজাজ পরিবর্তন করে, ক্যান্সার কোষকে হত্যা করে, ফোলাভাব কমায় এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মতো কাজ করে। কখনো কখনো পাপড়ি, স্টিগমাস ঔষধ তৈরিতেও ব্যাবহৃত হয়।

GIPHY App Key not set. Please check settings