ত্বকের যত্নে আমরা সকলেই বিভিন্ন উপাদান ব্যবহার করি। তবে বর্তমানে অনেকেই বিভিন্ন ক্যামিকেল প্রেডাক্ট ব্যবহার করেন, যা কিনা ত্বককে রুক্ষ করে তোলে। সাময়িক সৌন্দর্য দেখা দিলেও, পরে ভুগতে হয় ত্বকের অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যায়। তবে ত্বকের যত্ন নেয়ার জন্য প্রাকৃতিক উপাদানের বিকল্প নেই, যার মধ্যে অন্যতম হলো মধু। আজ আমরা ত্বকের যত্নে মধুর ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করব।
ত্বকের যত্ন নেয়ার জন্য মধু একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ফুলের মধু তো বটেই, মৌমাছির চাক থেকে আনা মধুও ত্বকের যত্নে দারুণ। এতে আছে শর্করা, ফ্যাট সহ বিভিন্ন অ্যান্টি অসিডেন্টও। এসব পুষ্টি উপাদান ত্বককে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।
ত্বকের যত্নে মধুর ব্যবহার বলতে শুধুমাত্র মধু দিয়ে তৈরি ফেসপ্যাক গুলোকে ত্বকে ব্যবহার করাই বোঝায় না, বরং মধু পান করার সাথেও এর সম্পর্ক আছে। চলুন ধাপে ধাপে সবটা জেনে নেই।
১. নিয়মিত মধু পান
ত্বকের যত্নে পানির পর মধু পান করার বিকল্প নেই বললেই চলে। প্রতিদিন সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে, ১ চা চামচ মধু খেতে পারেন। আবার চাইলে, হাফ কাপ কুসুম গরম পানিতে মিশিয়েও পান করা যায়। এই পদ্ধতি অব্যাহত রাখলে ত্বক মাত্র দেড় মাসের মাথায় উজ্জ্বল হতে শুরু করে। ত্বকের কোষগুলোকে সতেজ রাখতেও মধু খান নিয়মিত।
ত্বকের যত্ন নেয়ার জন্য মধু একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ফুলের মধু তো বটেই, মৌমাছির চাক থেকে আনা মধুও ত্বকের যত্নে দারুণ। এতে আছে শর্করা, ফ্যাট সহ বিভিন্ন অ্যান্টি অসিডেন্টও। এসব পুষ্টি উপাদান ত্বককে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।
২. দুধ ও মধুর মিশ্রন
হাপ কাপ দুধ গরম করে তাতে ১ চা চামচ মধু মিশিয়ে নিন। অতঃপর তার সাথে ৩ টি জাফরান দিন। কুসুম গরম হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এরপর কুসুম গরম পানীয়টি পান করুন। এই পানীয় আপনার ত্বককে যমন সতেজ করবে, তেমনি আপনার পাকস্থলীর জন্য ভালো, শরীরের জন্যও স্বাস্থ্যকর।
৩. তৈলাক্ত ত্বকের প্রাকৃতিক টোনার
অনেকের ত্বকেই তৈলাক্ত ভাবটা লেপ্টে থাকে। যার জন্য ত্বকের সৌন্দর্য নষ্ট হয়। এক্ষেত্রে, ১০ টির মতো বড় তুলসী পাতা নিন। তারপর তা থেকে রস বের করে নিয়ে, রসটুকু একটা পাত্রে নিয়ে, তার সাথে কিছুটা মধু যোগ করুন। সেই মিশ্রন তুলা দিয়ে ত্বকে প্রয়োগ করুন। এটা প্রাকৃতিক টোনার হিসেবে বেশ কাজে দেয়।
৪. ব্রণের সমস্যায়
২ চা চামচ মধু নিন। ১০টি তুলসী পাতা নিন। এবার তুলসী পাতা মিহি করে বেটে নিয়ে রসটুকু সরিয়ে রাখুন। পাতাবাটার সাথে মধু মিশিয়ে, তা ত্বকে প্রয়োগ করুন। বিশেষ করে ব্রণ থাকলে এই মিশ্রন ব্যবহার করার ফলে, ব্রণ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। সপ্তাহে ২ দিন এই প্যাকটি ত্বকে অ্যাপ্লাই করলে, দারুন ফলাফল পাওয়া যাবে।
৫. ত্বককে মসৃন করতে
একটি পাত্রে ১ চা চামচ কাঁচা দুধ নিন। তার সাথে সমপরিমাণ মধু মেশান। মিশ্রনটি একটু ঘন হবে৷ এবার তা কোনো ব্রাশ দিয়ে (মেকআপ ব্রাশ) ত্বকে লাগান৷ পুরোটা ত্বকে এই মিশ্রন প্রয়োগ করে ১০ মিনিট অপেক্ষা করুন। অতঃপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ত্বক ধুয়ে ফেলুন। এতে, আপনার ত্বক মাত্র ১ মাসের মাথায় মসৃন হবে। প্রয়োজনে, প্যাকটি সপ্তাহে ২ বা ৩ দিন ব্যবহার করা যাবে।
৬. বলিরেখা দূর করতে
বয়সের ছাপ যেন আজকাল ফুটে ওঠে ত্বকেই। কারো বা অল্প বয়সেই ত্বকে বলিরেখা দেখা দেয়। এজন্য সপ্তাহে ২ দিন নিম্নোক্ত প্যাক ব্যবহার করুন।
একটি পাত্রে ২ চা চামচ চন্দন গুঁড়া নিন। তার সাথে কাঁচা দুধ মেশান ১ চা চামচ। মিশ্রণটা মাঝারি ঘনত্বের হবে। এবার ৫ ফোঁটা মধু মিশিয়ে নিন। মেকআপ ব্রাশ দিয়ে এবার ত্বকে মিশ্রনটি প্রয়োগ করুন।
এই মিশ্রণ ব্যবহারের ফলে শুধু আপনার বলিরেখাই দূর হবে না। একই সাথে ত্বকের কালো দাগ দূর করতে ও মৃত কোষ ঝরিয়ে ফেলতে সক্ষম এই প্যাক। চন্দনের পরিবর্তে মুলতানি মাটিও কাজে দেয়।
৭. ত্বকের জেল্লা বাড়াতে
ত্বকের জেল্লা বাড়ানোর জন্য মধুর কোনো বিকল্প নেই। মধুর সাথে কোনে কিছু না মিশিয়েও ত্বকে প্রয়োগ করা যায়। তবে ভলো হয়, যদি মধু ও গোলাপজল মিশিয়ে ব্যবহার করা যায়। সমপরিমাণ মধু ও গোলাপজল মিশিয়ে তা কাঁচের বয়ামে ভরে রেখেও দিতে পারেন।
এই মিশ্রন প্রতিদিন সকালে ত্বকে প্রয়োগ করা যেতে পারে। আর ত্বকের পাশাপাশি ঠোঁটেও এর প্রলেপ দেয়া যায়। ১০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলে ময়েশ্চারাইজার ক্রিম ত্বকে প্রয়োগ করা ভালো। এতে মাত্র অল্প কদিনের মধ্যে ত্বকের জেল্লা বৃদ্ধি পাবে।
৮. মধুর সাথে বেসন ত্বককে করবে উজ্জ্বল
মধুর সাথে বেসনটা বেশ ভালোই যায়। একটি পাত্রে ১ চা চামচ বেসন নিয়ে তার সাথে ১ চা চামচ কাঁচা দুধ নিয়ে মেশান। তারপরে তাতে হাফ চা চামচ মধু যোগ করুন। এবার ব্রাশ দিয়ে ত্বকে প্রয়োগ করুন। ঠান্ডা পানি দিয়ে ১০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন, এই প্যাক ব্যবহারের ফলে ত্বক প্রানবন্ত হয়ে উঠবে। পাশাপাশি উজ্জ্বলও হবে অতি দ্রুত।
যাদের মধু ব্যবহার না করাই ভালো
মধু ব্যবহার করা ভালো। তবে অনেকে আছেন, যাদের কিনা মধুতে অ্যালার্জির সমস্যা আছে। তাই, তাদেরকে মধু খাওয়ার পাশাপাশি, ত্বকে এটি ব্যবহার করতে অনুৎসাহিত করছি। এতে ত্বকে ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
তবে খুব বেশি দরকার হলে সামান্য পরিমাণে ব্যবহার করতে পারবেন। আর তখন মধুর সাথে অন্য কোনো উপাদান মিশিয়ে ব্যবহার করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, এর সীমা যেন মাসে ৩ দিনের বেশি না হয়। আর মধু ত্বকে ব্যবহার করলে অবশ্যই অ্যলার্জির সমস্যার ঔষধ গ্রহন করবেন।
সবশেষে আশা করি লেখাটি থেকে আপনারা উপকৃত হয়েছেন। ত্বকের যত্নে মধুর ব্যবহার সম্পর্কে এই লেখাটিতে সম্পূর্ণ তথ্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে৷ এরকম আরো গুরত্বপূর্ণ লেখা পেতে শপিং সেবা ব্লগ সাইটটি ফলো করে রাখবেন। ধন্যবাদ।
GIPHY App Key not set. Please check settings