শসা এবং চন্দন, ত্বকের যত্নে স্বীকৃত উপাদান। এই দুটি উপাদান ত্বকের যত্নে বহুদিন ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এগুলো ত্বককে সমৃদ্ধ করে। আজকে আলোচনা করবো ত্বকের যত্নে শসা ও চন্দন কিভাবে ব্যবহার করা যায়।
শসা
সব ধরনের ত্বকের যত্নে শসা একটি কার্যকরী প্রাকৃতিক উপাদান। ত্বককে মসৃণ, কোমল ও উজ্জ্বল করতে শসার কোনো বিকল্প নেই। এতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যেমন ভিটামিন সি, ভিটামিন কে; যা আমাদের ত্বকের গভীরে গিয়ে ত্বকের কোষে শক্তি জোগায়। ফলে আমাদের ত্বক হয়ে ওঠে স্থায়ীভাবে উজ্জ্বল, সুস্থ ও মসৃণ। এছাড়া এতে উপস্থিত ভিটামিন কে এবং ভিটামিন সি আমাদের ত্বককে টানটান রাখতে সাহায্য করে। ফলে ত্বকে বয়সের ছাপ বা বিভিন্ন ধরনের দাগ ও বলিরেখা সম্পূর্ণ দূর হয়ে যায় এবং ত্বক হয়ে উঠে মসৃণ ও আকর্ষণীয়।
সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মির কারণে আমাদের ত্বক বিভিন্ন সময়ে পুড়ে যায়। শসা ত্বকের এই পোড়া দাগ দূর করে এবং ত্বককে নরম ও উজ্জ্বল রাখে। পানিশূন্যতা প্রতিরোধে শসার বিকল্প নেই।
শসার ব্যবহার
১. লেবু এবং মুলতানি মাটির সাথে শসা
শসা, মুলতানি মাটি এবং লেবুর রসের এই প্যাক তৈলাক্ত ত্বকের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। আধা চামচ শসা নিন এবং একটি পাত্রে থেতো করে নিন এবং ২ চা চামচ মুলতানি মাটি এবং ২-৩ ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে নিন। ভালো করে মেশান এবং মিশ্রণটি মুখে ও ঘাড়ে লাগান এবং শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি একদিন পর পর ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন।
২. দুধ এবং চিনাবাদামের সাথে শসা
ত্বকের শুষ্কতা দূর করবে এই প্যাকটির ব্যবহার। একটি শসা, ২ টেবিল চামচ মুলতানি মাটি, ২-৩ টি চিনাবাদাম এবং তরল দুধ দিয়ে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করুন। ব্লেন্ড করার আগে বাদামগুলোকে পানি বা দুধে ভিজিয়ে নরম করে নিন। ত্বক পরিষ্কার, মসৃণ এবং কোমল রাখতে প্রতিদিন মুখে এই পেস্টটি ব্যবহার করুন।
৩. মুলতানি মাটি এবং মেথির সাথে শসা
শসা, মুলতানি মাটি, মেথি ব্রণের সমস্যা দূর করতে বেশ উপকারী কিছু উপাদান। একটি পাত্রে একটি মাঝারি আকারের শসা থেতো করে নিন। ২ টেবিল চামচ মুলতানি মাটি এবং ১ চা চামচ মেথি গুঁড়ো ভালো করে মিশিয়ে নিন। পেস্টটি মুখে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এটির নিয়মিত ব্যবহার ব্রণের সমস্যা কমাতে সাহায্য করবে।
চন্দন
ত্বকের যত্নে চন্দনের ছোঁয়া যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। ত্বকের সুরক্ষা ঋতুভেদে পরিবর্তিত হয়। তবে শীত হোক বা গ্রীষ্ম সব ঋতুতেই চন্দন আপনাকে সুন্দর ত্বক পেতে সাহায্য করবে। প্রসাধনীতে যদি চন্দন ব্যবহার করা হয়, তাহলে ত্বকও শীতল অনুভূতি পায়।
মর্ফোলজিস্টরা এটিকে একটি অলরাউন্ডার মানের উপাদান হিসেবে দেখেন। ত্বক পরিষ্কার করা, উজ্জ্বল করা, রোদে পোড়া ভাব দূর করা এবং ত্বককে পুনরুজ্জীবিত করা ছাড়াও এই উপাদানটির রয়েছে অসংখ্য গুণাগুণ। যেমন- এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে, ত্বকের ক্লান্তি দূর করে, ব্রণ বা ত্বকের দাগ দূর করে, ত্বকের কালো দাগ দূর করতে সাহায্য করে, চন্দনের সঠিক ব্যবহার ত্বকে কোমলতা আনে, যাদের ত্বক বয়সের কারণে ঝুলে যায় তাদের জন্য চন্দন খুবই উপকারী। কারণ এটি ত্বককে টানটান রাখে।
চন্দন কাঠের ব্যবহার
১. শুধু চন্দন ব্যবহার করুন
চন্দন ত্বকে সান ট্যান প্রতিরোধ করার জন্য একটি চমৎকার উপাদান। কিছু চন্দন নিন। এগুলোর একটি পেস্ট তৈরি করুন। পেস্টটি আপনার ত্বকে লাগান। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন এবং সঠিকভাবে ধুয়ে ফেলুন। এটি রোদে পোড়া দাগ দূর করবে।
২. মধুর সাথে চন্দন
আপনার যদি শুষ্ক ত্বক থাকে, তবে মধু এবং চন্দনের মিশ্রণ আপনাকে শুষ্ক ত্বক থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করবে। মিশ্রণটি তৈরি করার জন্য, ২ চা চামচ চন্দন পেস্ট এবং ১ চা চামচ মধু নিন। ভালো করে মিশিয়ে নিন। তারপর মিশ্রণটি আপনার ত্বকে লাগান। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন এবং ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। আপনি মধুর বিকল্প হিসেবে দুধও ব্যবহার করতে পারেন।
৩. গোলাপ জলের সাথে চন্দন
আপনার যদি তৈলাক্ত ত্বক থাকে তবে এটি আপনাকে তৈলাক্ত ত্বক থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করবে। ২ বা ৩ চা চামচ চন্দন পেস্ট এবং ১ চা চামচ গোলাপ জল নিন। এগুলিকে ভালভাবে মেশান। তারপর মিশ্রণটি আপনার ত্বকে লাগান। ৫ মিনিট অপেক্ষা করুন এবং ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।
বাজারের বিভিন্ন কেমিক্যাল ত্বকের জন্য অনেক সময় বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অন্যদিকে ত্বকের যত্নে প্রাকৃতিক এসব উপাদানের ব্যবহার সম্পূর্ন নিরাপদ ও স্থায়ীভাবে সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে।
GIPHY App Key not set. Please check settings