আমরা যখন বাড়তি ওজন কমানোর চেষ্টা করি তখন খাবারে নিয়ন্ত্রন, ব্যায়াম, ক্যালোরি ডায়েট সহ আনুষঙ্গিক প্রায় সব প্রচলিত পদ্ধতিই অনুস্বরণ করি। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত মধুর মত এত সুপরিচিত ঔষধিগুন সমৃদ্ধ খাবারটির কথা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভুলে যাই। হ্যা, আপনি ঠিক পড়ছেন। তরল মিষ্টি মধু শুধু আপনার খাবারের স্বাদই বাড়ায় না সাথে আপনার বাড়তি ওজন কমাতেও অনেক সাহায্য করে।
আমেরিকান কলেজ অফ নিউট্রিশনে প্রকাশিত এক গবেষনায় বলা হয়েছে যে, মধু ক্ষুধা কমাতে খুবই কার্যকর। এমনকি আপনি যদি ঠিক ঘুমাতে যাওয়ার আগে মধু খান তাহলে ঘুমের প্রথম কয়েক ঘন্টার মধ্যে বেশ কিছু ক্যালোরি পোড়াতে পারবেন। মধুতে কিছু গুরুত্বপূর্ন হরমোন থাকে যা ক্ষুধা কমিয়ে ওজন কমাতে সাহায্য করে। সুতরাং আপনি যদি ওজন কমানোর যুদ্ধের সৈনিক হয়ে থাকেন তবে আপনার খাদ্য তালিকাতে অবশ্যই মধু রাখুন।
ওজন কমানোর জন্য মধুর পাঁচটি সহজ রেসিপি
ওজন কমাতে মধুর কার্যকারিতা সম্পর্কে আমরা জেনেছি কিন্তু প্রশ্ন হল একে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকাতে কিভাবে রাখা যাবে। আপনাদের সুবিধার্থে এখানে রইলো ওজন কমানোর জন্য মধুর পাঁচটি সহজ রেসিপি।
১। মধু ও দারুচিনির সরবত
আমরা জানি যে মধু ওজন কমাতে সাহায্য করে কিন্তু আপনি জানেন কি দারুচিনিও আপনার বাড়তি ওজন কমাতে কার্যকর। সত্যি বলতে সবথেকে স্বাস্থ্যকর মশলাগুলোর একটি হল দারুচিনি । কারন এতে রয়েছে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টিপ্যারাসাইটিক এর মত উপাদান।
এটি শরীরে ইনসুলিন সংবেদনশীলতা এবং মেটাবলিজমের পাশাপাশি রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা উন্নত করে। এক গ্লাস পানিতে কয়েক টুকরা দারুচিনি দিয়ে ফুটিয়ে নিন। কয়েক মিনিট ফোটানো হলে পানিটা ছাকনি দিয়ে ছেকে নিন। এবার এতে এক চামচ মধু মিশিয়ে পান করুন।
২। মধু এবং রশুনের মিশ্রণ
মধুর সাথে রশুনের কম্বিনেশন কিছুটা অদ্ভূত মনে হচ্ছে কি? কিন্তু এই সংমিশ্রনের স্বাস্থ্য উপকারিতা বিস্ময়কর। আমরা জানি যে রশুনের স্বাদ বেশ কড়া এবং কটু তাই অনেকের ক্ষেত্রেই এটা খাওয়া বেশ কষ্টকর। কিন্তু রশুন সরাসরি খেতে খারাপ লাগলেও মধুর সাথে এর স্বাদ বেশ চমৎকার হয়ে যায়।
ওজন কমানোর জন্য তাই এক গ্লাস গরম পানিতে রশুন পাউডার বা পেস্ট এবং মধু মিশিয়ে পান করুন।
৩। মধু ও লেবু পানির সরবত
মধু ও লেবু পানি ওয়েট লস বা ওজন কমানোর জন্য সবচেয়ে সুপরিচিত একটি রেসিপি। যারা ওয়েট লসের জন্য বিভিন্ন স্বাস্থ্যকর ডায়েট করেন তাদের বেশীরভাগই এই পানীয় পান করে থাকেন। এই সাধারন পানীয়টি তৈরি করতে প্রয়োজন শুধু ১ গ্লাস হালকা গরম পানি, অর্ধেকটা লেবু, আর ১ টেবিল চামচ মধু। যদিও এই পানীয়টি দিনের যে কোন সময় পান করা যায় তবে পুষ্টিবিদরা এটি প্রতিদিন সকালে খালি পেটে পান করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
৪। দুধ এবং মধু
দুধ যদি আপনার পছন্দের খাবার হয়ে থাকে তাহলে ওজন নিয়ন্ত্রনের জন্য এতে ১ টেবিল চামচ অর্গানিক মধু মিশিয়ে পান করতে পারেন। ১ কাপ সমপরিমান দুধে আনুমানিক ৭.৬৯ গ্রাম প্রোটিন থাকে। দুধ মেটাবলিজম বাড়িয়ে দিতে পারে, তাই দুধ খেলে আপনি দীর্ঘ সময় ক্ষুধা অনুভব করবেন না। একইসাথে এটি পেটের চর্বি কমায় এবং রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
৫। গ্রীন টি এবং মধু
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গ্রীন টি অনেক বেশি জনপ্রিয় পানীয় হয়ে উঠেছে। যদিও এর তিক্ত এবং কষা স্বাদের জন্য অনেকেই গ্রীন টি খেতে পছন্দ করেন না। তবে নিয়মিত খেতে থাকলে এর স্বাদের সাথে অভ্যস্ত হতে খুব বেশি সময়ও লাগে না। তবে একেবারে অভ্যস্ত হতে না পারলে এতে ১ চামচ মধু মিশিয়ে নিন। এতে একইসাথে গ্রীন টি এবং মধুর সুফল পাবেন আর চায়ের তিক্ত স্বাদও পরিবর্তিত হয়ে মিষ্টি হয়ে যাবে।
পরিশেষে, আমরা এখানে যে রেসিপিগুলোর উল্লেখ করেছি তা কেবল সাধারন তথ্য প্রদানের উদ্দেশ্যে, কোন রোগের চিকিৎসা প্রদানের উদ্দেশ্যে নয়। আপনি প্রকৃতপক্ষে মধু সেবন করতে পারবেন কিনা, পারলে কতটা পারবেন এবং তাঁর পরিমান কতটুকু হতে পারে ইত্যাদি তথ্যসমূহ জানতে একজন অভিজ্ঞ ডায়েটেশিয়ানের সাথে পরামর্শ করুন।
সতর্কতাঃ আপনি যে রেসিপিই অনুস্বরণ করুন না কেন, ডায়েটে মধু যোগ করলে তা যেন পরিমিত পরিমানে হয় সেদিকে লক্ষ রাখুন। সবথেকে ভালো হয় যদি কোন অভিজ্ঞ ডায়েটেশিয়ানের কাছ থেকে আপনার দৈনিক মধু সেবনের পরিমান জেনে নেন। আর অবশ্যয় খেয়াল রাখতে হবে, বাজারে খাঁটি মধুর নামে সস্তায় অনেক ভেজাল মধু পাওয়া যায়। সহজে ভালো মধু কিনতে বিশ্বস্ত বিক্রেতা এবং ভালো ব্র্যান্ডের মধু সম্পর্কে সচেতন হওয়াটা জরুরী। আরো ভালো হবে যদি সেটা অর্গানিক মধু হয়।
GIPHY App Key not set. Please check settings