তরমুজের বিচির রয়েছে আশ্চর্যজনক পুষ্টিগুণ। এর এত গুণাগুণ রয়েছে যা জানলে হয়ত আর একটি বীজও আপনি ফেলবেন না আজ থেকে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে এই পুষ্টি উপাদান সম্পূর্ণরুপে পাওয়ার জন্য তরমুজের বিচি শুকিয়ে খোসা ছাড়িয়ে খেতে হবে। কারণ খোসা ছাড়িয়ে নিলে এর থেকে অনেক ক্ষতিকর জিনিস বের হয়ে যাবে এবং এটি প্রোটিনে ভরপুর হয়ে উঠবে। নিচে এক নজরে দেখে নিন ছোট্ট এই বীজে কি কি পুষ্টি উপাদান রয়েছে এবং তা কি কি উপকার করতে পারে।
এক কাপ তরমুজের শুকনো দানায় অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের পাশাপাশি রয়েছে ৬০২ ক্যালোরি।
৩০.৬ গ্রাম প্রোটিন
৫১.২ গ্রাম চর্বি
১৬.৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট
৮২% ফসফরাস
৭৪% জিংক
৬% ক্যালসিয়াম
৮৭% ম্যাঙ্গানিজ
১৯% নিয়াসিন
১৬% ফোলেট
৪৪% আয়রন
ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে
তরমুজের বিচিতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসহ এন্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপদান যা শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেম কে শক্তিশালী করে শরীরকে ফিট রাখতে সাহায্য করে। বিশেষ করে এই বীজের ফোলেট, লৌহ এবং খনিজ উপাদান যা ইমিউন সিস্টেমের কার্যকারীতা বৃদ্ধি করে।
যৌন সক্ষমতা বৃদ্ধি করে
তরমুজের বীজ পুরুষের যৌন সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। কারণ এই বীজ ম্যাঙ্গানিজের ভালো একটি উত্স। আর গবেষণায় জানা যায় ম্যাঙ্গানিজ পুরুষের যৌন ক্ষমতা উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
একটি গবেষণা প্রতিবেদনে জানা যায় তরমুজের বিচির মধ্যে রয়েছে ওমেগা ৬ ফ্যাটি অ্যাসিড যা টাইপ ২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে। এছাড়া এই বীজ গ্লাইকোজেন স্টোরগুলোর সংশ্লেষণের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে যা ডায়াবেটিস চিকিৎসায় সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
হার্ট সুস্থ্য রাখে ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়
তরমুজের বিচিতে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম যা হার্টের স্বাভাবিক কার্যকলাপ সচল রাখতে সাহায্য করে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও ভূমিকা রাখে। এছাড়াও এতে রয়েছে স্টিরুলাইন নামে একটি পদার্থ যা অ্যাওর্টিক রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে এবং হার্টকে সুরক্ষিত রাখে। এই বিচিগুলোতে থাকা প্রোটিন, ভিটামিন বি, ম্যাগনেসিয়াম আর উপকারী ফ্যাট যা কোলেস্টেরল কমায় আর হার্টের অসুখ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাস করে।
এছাড়াও এই বীজের রয়েছে আরো নানা উপকারীতা। এই বীজ মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য উন্নত করে, পাচক স্বাস্থ্য বৃদ্ধি করে, মাথার চুল শক্তিশালী করে, ত্বক পরিষ্কার রাখে এবং উন্নত করে এবং চেহারায় বয়সের ছাপ পরতে দেয় না।
তরমুজের বিচির খোসা ছাড়ানোর পদ্ধতি
আগেই বলা হয়েছে যে এই বিচির খোসা ছাড়িয়ে সাদা অংশে রয়েছে অধিক পুষ্টি। ঘরোয়াভাবে যেকোন পদ্ধতিতে তরমুজের খোসা ছাড়ানো যেতে পারে। তবে পানিতে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ভিজিয়ে রাখার পর খোসা ছাড়ানোর কাজ সহজ হয়ে যায়। এতে বিচিগুলো জীবাণুমুক্ত হয়, পুষ্টিগুণ বাড়ে আর হজমে সহজ হয়।
তরমুজের বিচি খাওয়ার নিয়ম
তরমুজের বিচি সরাসরি খাওয়া যায়। এটি খাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট ধরাবাধা কোন নিয়ম নেই। এছাড়া সালাদের সঙ্গেও খেতে সুস্বাদু এই বীজ। তবে সেদ্ধ করে খাওয়ার উপকারিতার কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইট ডেমিক। এজন্য ২০ থেকে ৩০ টি তরমুজের বিচি প্রথমে ব্লেন্ডারে গুড়া করে নিতে হবে। এরপর একটি পাত্রে ২ লিটার পানি নিয়ে এর মধ্যে বিচির গুঁড়া দিন। ১৫ মিনিট সেদ্ধ করে পানি একটি গ্লাসের মধ্যে ছেঁকে নিন। পরপর দুই দিন পানীয়টি পান করুন। এবার তৃতীয় দিন বাদ দিন। এরপর চতুর্থ দিন পান করুন। সকালে ঘুম থেকে উঠে এ পানীয়টি পান করতে পারেন। তবে খাওয়ার পর শরীরে কোন অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করলে খাওয়া বন্ধ করে দিন।
আপনার পাশের মুদির দোকানে, খোলা বাজারে, ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলোতে এবং অনলাইনে এই বীজ কিনতে পাওয়া যায়। অনলাইনে অর্ডার দেয়ার আগে ভালো দানার ফ্রেস বীজ পাচ্ছেন কিনা তা নিশ্চিত হয়ে নিন।
GIPHY App Key not set. Please check settings