in

ভূমিকম্প! আতঙ্ক নয় দরকার সচেতনতা

স্রষ্টা চাইলে আরও ভয়াবহ বিপর্যয় আসতে পারে পৃথিবীতে। মানুষের হাত নেই এখানে, কিছুই করার নেই। তাই বলে ভয়ে আতঙ্কে ঘাবড়ে গেলে চলবে না বরং শক্তি সঞ্চয় করতে হবে আমাদেরকে।
৬-৮ মাত্রার ভূমিকম্পের প্রভাবে কিছুক্ষন আগে কাঁপিয়ে গেলো গোটা দেশ। এর কেন্দ্র ছিল ভারতের সিকিমে। কেন্দ্রের গভীরতা ছিল মাত্র ২০-৭ কিঃ মিঃ। কাছাকাছি এলাকায় পর পর দুইটি কম্পন হয় একটির মাত্রা ছিল ৬-৮ অন্যটির ৪-৮ প্রথমটি দ্বিতীয়টি
আরও বিস্তারিত জানতে এবং নিয়মিত আপডেট জানতে ক্লিক করুন এমন আঘাত আসতেই থাকবে- আমাদেরকেও হতে হবে সচেতন। তাই এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার প্রয়োজন আছে। জেনে নিন আমরা কতটা ঝুকির মধ্যে আছি আর আমাদের কি করার আছে।earth quake bangladesh

রাতে প্রায়ই ঘুম ভেঙ্গে স্ত্রীকে ডাকা ডাকি করেন – ভূমিকম্প হচ্ছে….!! বিল্ডিংটি কেপে উঠছে…!!! এই বুঝি থেমে গেলো জীবনের গল্প…!!! পৃথিবীর মানচিত্র থেকে মুছে গেলো একটি ভূখন্ড। ঢাকা ইতিহাসে নাম লিখালো দক্ষনি আমেরিকার ইনকা সভ্যতার মতো ধ্বংসপ্রাপ্ত আরেকটি শহরে। বন্ধুটি এতটাই আতংকগ্রস্থ হয়ে পরেছেন যে এক পর্যায়ে আমার কাছে সিদ্ধান্ত চাইছেন যে পরিবার নিয়ে ঢাকা যাবো কি না। আমি বন্ধুর মনের অবস্থা দেখে বললাম সপ্তাহ খানেক পরিবার থাকুক না গ্রামে। শেষ পর্যন্ত তিনি পরিবার রেখেই ঢাকা আসলেন কাজে যোগ দিতে।আমার বন্ধু একটি জাতিয় দৈনিকের সহকারী সম্পাদক হিসাবে কর্মরত আছেন এবং পরিবার নিয়ে ঢাকায় বসবাস করছেন। গত বছর ঈদে ছুটি শেষে কর্মস্থলে পরিবার নিয়ে ঢাকায় ফিরতে সাহস পাচ্ছিলেন না। তিনি একটি ভাড়া বাসার পঞ্চম তলায় থাকেন।

এমন আশংকা শুধু আমার বন্ধুর মনে নয় বরং অপরিকল্পিত ও নির্যাতিত নগরী ঢাকার অনেক মানুষই আজকাল স্রষ্টার উপর নিয়তী অর্পন করে রাতে বিছানায় ঘুমোতে যান। আমরা রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, বিনোদন এ সবের মাঝে ডুবে থেকে যতই ভুলে থাকার চেষ্টা করিনা কেন- সাম্প্রতিক কালের মৃদু ভূমিকম্প সমূহ আমাদেরকে বার বার সতর্ক করছে অপ্রত্যাশিত ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞের। আসুন বিষয়টি নিয়ে কিছুটা জানার চেষ্টা করি।

ভূমিকম্প কি?

গোলাকার এই পৃথিবী অনেকগুলো ব্লকে বিভক্ত।

পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে ভূপৃষ্ঠ পর্যন্ত মূল যে চারটি স্তর আছে এর মধ্যে কেন্দ্র থেকে প্রথম স্তরটি ১২০০ কি:মি:, ২য় টি ২৩০০ কি: মি:, ৩য় টি ২৮০০ কি: মি: এবং ত্বকের স্তরটি মাত্র ৮০ কি: what is earth quake, bangladeshমি: পুরু। সর্বশেষ বা ত্বকের এই স্তরটি সমস্ত পৃথিবী জুড়ে একটি স্তর নয় বরং বিভিন্ন ব্লক বা প্লেটে বিভক্ত যা ট্যাকটোনিক প্লেট (tectonic plates) নামে পরিচিত।

ট্যাকটোনিক প্লেট একটির সাথে অন্যটির ঘর্ষনের সৃষ্টি হয়, আঘাত করে এবং কখনো পিছলে পরার ঘটনা ঘটে। দুটি ট্যাকটোনিক প্লেটের সংযোগ স্থলকে বলা হয় প্লেট বাওয়ান্ডারী। একটি প্লেট যখন হঠাৎ করে অন্যটি থেকে স্লিপ করে তখন প্লেট বাওয়ান্ডারী এলাকায় ভূমিকম্পের (earthquake) সৃষ্টি হয়।

পৃথিবীর ইতিহাসে দেখা যায় বড় ভূমিকম্পের আগে বার বার মৃদু আকারে ভূমিকম্প দেখা দেয়। এবং বড় ভূমিকম্পের পর সপ্তাহ, মাস এমনকি বছরান্তে মৃদু ভূমিকম্প ঘটতে দেখা যায়।

ভূমিকম্প পরিমাপ:

measurement of earthquake bangladeshসিসমোগ্রাফ (seismographs) নামক যন্ত্রের সাহায্যে ভূমিকম্প পরিমাপ করা হয়। একটি স্প্রিং এ ভারী বস্তুর সাথে গ্রাফ অংকন কলম যুক্ত থাকে এবং পেপার ড্রাম যুক্ত থাকে। যখন ভূমিকম্প সংঘটিত হয় তখন মাত্রানুযায়ী গ্রাফ তৈরী হয় যা দেখে মাত্রা বুঝা যায়।

এই গ্রাফটির একক প্রকাশ করা হয় রিখটার স্কেলে ।ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত এই যন্ত্র প্রতিনিয়ত তথ্য দিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশে ভূমিকম্পের ইতিহাস:

বিগত ১৫০ বছরের বাংলাদেশে ৭ টি বড় আকারের ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটে, যার মধ্যে দুটির কেন্দ্র ছিলো বাংলাদেশের অভ্যন্তরে। এর মধ্যে একটি ১৯১৮ সালের ৮ জুলাই ঘটে, যার কেন্দ্র ছিলো সিলেটের শ্রীমঙ্গলে। ৭.৬ মাত্রার সে ভূমিকম্পে হতাহতের ঘটনা ঘটলেও তা তেমন উল্লেখ যোগ্য নয়। কারণ সে সময় বড় দালানে মানুষ বসবাস করতো না।
১৮৮৫ মালের ১৪ জুলাই একই মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্প হয় বগুড়া-সিরাজগঞ্জ অঞ্চলে যার কেন্দ্র ছিলো মানিকগঞ্জ। যেই ভূমিকম্প বদলে দেয় ময়মনসিংহ, জামালপুর ও শেরপুর অঞ্চলের ভূপ্রকৃতি। এই ভূমিকম্পের পূর্বে ব্রহ্মপূত্র নদের মূল স্রোত প্রবাহিত ছিলো জামালপুর, শেরপুর ও ময়মনসিংহ জেলায় কিন্তু বগুড়া সিরাজগঞ্জ এলাকার ভূমি স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় যমুনা সৃষ্টি হয় মূল প্রবাহের। এর পূর্বে যমুনা একটি খালের সমান ছিলো। ব্রহ্মপূত্র জামালপুর, শেরপুর ও ময়মনসিংহ অঞ্চলে পরিনত হয় মরা নদে।
আরো কয়েকটি ভূমিকম্প বাংলাদেশে কেন্দ্র না হলেও ধ্বংসের স্বাক্ষর রেখে যায় যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ১৮৯৭ সালের ১২ জুন ৮.৭ মাত্রার ভূমিকম্প যার কেন্দ্র ছিলো ভারতের শিলোং শহরে। উল্লেখযোগ্য আরেকটি হচ্ছে ১৭৬২ সালে ঘটে যাওয়া চট্টগ্রাম-আরাকানের ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্প ।

বাংলাদেশে ভূমিকম্পের ঝুকি:

জানুয়ারী ২০০৬-মে ২০০৯ এই সময়ের মধ্যে বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দল বাংলাদেশে ৮৬ টি ছোট ও ৪ টি মাঝারী মাত্রার কম্পনের রেকর্ড ধারন করেন। মে ২০০৭-জুলাই ২০০৮ এ অন্য একটি রেকর্ডে ৯০ টি কম্পনের রেকর্ড আছে এর মধ্যে ৯ টির মাত্রা ছিলো রিখটার স্কেলে ৫ মাত্রার উপরে এবং ৯৫% ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিলো ঢাকা শহরের ৬০০ কি: মি: এর মধ্যে। আশংকা করা হচ্ছে বঙ্গোপসাগরে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প সুনামী সহ দেশে ব্যপকাকারে ধ্বংশযজ্ঞ সৃষ্টি করতে পারে। বুয়েট কতৃক তৈরী বাংলাদেশের ভূমিকম্প ঝুকিপূর্ন এলাকার ম্যাপ থেকে দেখা যায় দেশের ৪৩% এলাকা উচ্চ ঝুকিপূর্ন, ৪১% মাঝারী ঝুকিপূর্ন ও ১৬% স্বল্প ঝুকির মধ্যে আছে।

কি ঘটতে পারে !

বড় ভূমিকম্পে দেশ জুড়ে হতাহতের সম্ভাবনা থাকলেও ঢাকার পরিনতি নিয়ে বিশেষজ্ঞগন এতটাই আতংকিত যে ভয়ে পুরোটা বলছেননা বলে মনে হচ্ছে। বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের লেখায় ও মিডিয়াতে সাক্ষাৎকারে শুধু আলোচনা হয় ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর কি হবে। এই মূহুর্তে কি করা উচিৎ তা কেউ বলছেননা। বলা হচ্ছে ঢাকার ৩০% দালান ধ্বসে যেতে পারে। যে বিষয়টি

earth-quake-bangladesh
৭ মাত্রার ভূমিকম্পে সবচাইতে বেশী ক্ষতির আশংকা করা হচ্ছে ঢাকা শহরের।

অনেকের মাথায় নেই তা হলো শহরের গ্যাস লাইন ফেটে গোটা শহর পরিনত হতে পারে একটি অগ্নিকুন্ডে। যে পরিমান মানুষ বিধ্বস্ত দালানের নিচে চাপা পরে মারা যাওয়ার আশংকা করা হচ্ছে আগুনে পুড়ে মারা যাওয়ার আশংকা তার চাইতে অরেক অনেক গুন বেশী। ভেঙ্গে পরবে দেশের আইন শৃংখলা পরিস্থিতি। ব্যাংকে, শেয়ার মার্কেটে কোটি কোটি টাকা থাকলেও বেচে থাকা মানুষের খাদ্য কেনার জন্য নগদ টাকা থাকবেনা হাতে। কোটি টাকায় তৈরী স্বপ্নের বাড়ীটি লাখ টাকায় কেনার মতো লোক খুজে পাওয়া যাবেনা। মানুষ খাদ্য ও নিরাপত্তার খোজে ছুটতে থাকবে গ্রামের দিকে কিন্ত পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পরায় হাটতে থাকবে পরিবার নিয়ে শত শত মাইল! পথে ঘাটে দিনে দুপুরে খুন-লুট পাট হবে নিত্য দিনের ঘটনা- এমন ঘটনা ঘটতে পারে একটি রুটির জন্য! মানুষের মৃতদেহ পচনের ফলে সারা দেশে ছরিয়ে পরতে পারে রোগ, চিকিৎসার অভাবে সৃষ্টি হতে পারে মহামারী। দেশের সরকার, বিরোধি দল, সেনাবাহিনী সহ যাদের সাহায্য আশা করে দেশবাসী তারাও নিজ পরিবারের বাইরে ভাবার মতো বাস্তব পরিস্থিতি নাও থাকতে পারে। ধারনা করা হচ্ছে পৃথিবীতে দ্বিতীয় কোনো শহরের পরিনতি ১৬০০ শতাব্দীর ইনকা সভ্যতার মতো হলে সেটি হবে ঢাকা!
চিত্রটি মাত্রাতিরিক্ত কাল্পনিক মনে হতে পারে- এমন বিপর্যয় মোকাবেলা করার প্রস্তুতি সবার থাকলে ক্ষতির সম্ভাবনা তুলনামূলক ভাবে কম হবে।

আমাদের করনিয়:

ভূমিকম্প এমন একটি প্রকৃতিক দুর্যোগ যার কোনো পূর্বাভাস নেই। নিজেদেরকে সজাগ ও সতর্ক রেখে যতটুকু রক্ষা পাওয়া যায়। প্রত্যেকের উচিৎ নিজ পরিবারের সদস্যদেরকে প্রশিক্ষন what to do during earthquake-bangladeshদেয়া যে ভূমিকম্প শুরু হলে কে কিভাবে নিজেকে রা করার চেষ্টা করবে।

সরকারের এখনই পরিকল্পনা করা উচিৎ ঢাকা শহরের মানুষকে সারা দেশে পূনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে ঢাকা শহরকে নিরাপদ বাসস্থান সৃষ্টির দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে দ্রুত বাস্তবায়ন শুরু করা। এ ব্যপারে মিডিয়াতে বার বার সতর্ক করা হলেও সরকার বা নীতি নির্ধারকদের উদাসিনতা দেখে সন্ধেহ হয় যে তাদের কাছে মানুষের জীবনের আদৌ কোনো মূল্য আছে কি না। আভ্যন্তরীন পরিকল্পনার পাশাপাশি সরকারের উচিৎ এই ঝুকিপূর্ণ ভূখন্ডের জনসংখ্যার একটা বড় অংশ অষ্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যন্ডের মতো দেশ গুলোতে স্থায়ী ভাবে স্থানান্তরের জন্য আন্তর্জাতিক জনমত তৈরী করা। মনে রাখতে হবে ”টু থাউজেন্ড টুয়েল্ভ” অথবা ”ডে আফটার টুমোরো” ছবির বাস্তব দৃশ্যটি সংগঠিত হওয়ার আগেই ভাবতে হবে নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে।

 

 

বাংলাদেশ কতটা ঝুকির মধ্যে আছে!

বাংলাদেশের প্রস্তুতি কতটা দূর্বল!!!

গত ৭ দিনে পৃথিবীর কোন কোন স্থানে ভূমিকম্প হলো দেখুন

ভূমিকম্প সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

 

লেখক: মোজাম্মেল কবির

What do you think?

-1 Points
Upvote Downvote

Written by কবির

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

কৃষিক্ষেত্রে বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনা

ওয়েবে কৃষি বিষয়ক তথ্য ভান্ডার