আমরা যারা স্বাস্থ্য সচেতন, চিনির সাথে আমাদের সম্পর্ক কিছুটা তিক্ত, তাই না? যদিও মিষ্টি খাবার পছন্দ করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার তবে ডায়াবেটিস, স্থুলতা সহ আরো নানাবিধ শারীরিক জটিলতার নেপথ্যে রয়েছে এই মিষ্টি খাবার। চিনি ও চিনির তৈরি খাবারে ফ্যাটের পরিমান অনেক বেশী। অধিকাংশের মতামত হল চিনির এই ফ্যাট আমাদের ডায়েটে অতিরিক্ত ক্যালোরি যুক্ত করে। তবে আমরা যদি বলি, আপনি যা ভাবছেন তা সঠিক নয়? ফ্যাটকে বয়কট করার দিন অনেক আগেই চলে গেছে।
এখন, একাধিক গবেষণা দ্বারা এটা প্রমানিত হয়েছে যে ফ্যাট (একটি প্রধান ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্ট) আমাদের সামগ্রিক বৃদ্ধি এবং পুষ্টিতে একটি অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে। প্রকৃতপক্ষে, আমাদের খাদ্য থেকে চিনি সম্পূর্ণরূপে বাদ দিলে বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে।
এই প্রবন্ধে, আমরা দেখব ডায়েট থেকে একেবারে চিনি বাদ দিলে তার কি ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। একই সাথে আমরা দেখবো কতটা কার্যকরীভাবে আপনি এটিকে আপনার ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। আসুন চিনি কি তা আগে বোঝার চেষ্টা করা যাক।
চিনি কি?
চিনি বলতে আমরা সাধারনত সাদা রঙ্গের এক ধরনের দানাদার পদার্থকে বুঝি যা আমরা খাবারে মিষ্টতা বাড়াতে ব্যবহার করি। প্রকৃতপক্ষে চিনি হল একপ্রকারের যৌগ যেটা বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যেমে স্ফটিকাকার করা হলে তাকে খাদ্য উপাদান বলা হয়। www.sugar.org এর মতে, চিনি হল সুক্রোজ (ফ্রুক্টোজ এবং গ্লুকোজের মিশ্রণ), “একটি সাধারণ কার্বোহাইড্রেট যা ফল, সবজি এবং এমনকি বাদাম সহ সমস্ত উদ্ভিদে প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত হয়।” পুষ্টিবিদদের মতে, কার্বোহাইড্রেট আমাদের শরীরে শক্তি সরবরাহ করতে এবং মস্তিষ্ক, অঙ্গ এবং পেশীকে কাজ করতে এবং দৈনন্দিন ক্রিয়াকলাপে নিয়োজিত করতে সহায়তা করে। তাই, বিশ্বজুড়ে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন, আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় চিনি অন্তর্ভুক্ত করা গুরুত্বপূর্ণ, তবে পরিমিত।
ডায়েটে চিনি একেবারে বাদ দেয়ার কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
১। আমাদের হতাশাগ্রস্থ করে তোলে
একটি কেক বা চকোলেট তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের মুড ভালো করে। আপনি কি কখনও ভেবে দেখেছেন কেন এমন হয়? গবেষকদের মতে, চিনি আমাদের মস্তিষ্কের রিওয়ার্ড সিস্টেমকে প্রভাবিত করে, আমাদের মেজাজকে তার থেকেও বেশী প্রভাবিত করে। নিউট্রিয়েন্ট জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, চিনি ডোপামিন নিঃসরণকে বাড়িয়ে দেয়, যা তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের আনন্দের অনুভূতি দেয়। যখন আমরা আমাদের খাদ্য থেকে চিনি বাদ দিই, তখন আমাদের মনে হতাশা, উদ্বেগ, লালসা ইত্যাদির পরিমান বেড়ে যায়।
চিনি ও চিনির তৈরি খাবারে ফ্যাটের পরিমান অনেক বেশী। অধিকাংশের মতামত হল চিনির এই ফ্যাট আমাদের ডায়েটে অতিরিক্ত ক্যালোরি যুক্ত করে। তবে আমরা যদি বলি, আপনি যা ভাবছেন তা সঠিক নয়? ফ্যাটকে বয়কট করার দিন অনেক আগেই চলে গেছে। এখন, একাধিক গবেষণা দ্বারা এটা প্রমানিত হয়েছে যে ফ্যাট আমাদের সামগ্রিক বৃদ্ধি এবং পুষ্টিতে একটি অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে।
২। একাগ্রতার অভাব
চিন্তাভাবনা, স্মৃতিশক্তি এবং শেখার মতো মস্তিষ্কের কাজগুলো শরীরের গ্লুকোজের মাত্রার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। গ্লুকোজ মস্তিস্কের জন্য অনেকটা জ্বালানীর কাজ করে। যখন এই জ্বালানী উৎসের অভাব থাকে, তখন আপনি বিভিন্ন জ্ঞান-সম্পর্কিত সমস্যা অনুভব করতে শুরু করবেন। গবেষণা অনুসারে, এর অভাবে মনোযোগ ও একাগ্রতার অভাব ও দুর্বল স্মৃতিশক্তির মত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৩। ঘুমের সমস্যা
ঘুমের ধরণ আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর অনেকাংশে প্রভাব বিস্তার করে যা সরাসরি শরীরের গ্লুকোজ স্তরের সাথে যুক্ত। আমেরিকান জার্নাল অফ লাইফস্টাইল মেডিসিনে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুসারে, যারা সুগার ডিটক্স ডায়েটে রয়েছে, তাদের মধ্যে গ্লুকোজের অভাব (শরীরে) দেখা দিলে তাদের ঘুমের ধরণে পরিবর্তন দেখা যায়।
৪ বমি বমি ভাব এবং মাথা ঘোরা
আগেই বলা হয়েছে, চিনি হল ফ্যাট বা চর্বি, যা আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয় ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্টগুলোর মধ্যে অন্যতম হিসেবে বিবেচিত। তাই চিনির অভাব সাধারনভাবেই শরীরে একটি ভারসাম্যহীনতা তৈরি করে, যার ফলে দুর্বলতা, বমি বমি ভাব, মাথা ঘোরা এবং আরও অনেক সমস্যা তৈরি হয়।
৫। শক্তির অভাব
আমরা সকলেই জানি, চিনি হল গ্লুকোজের একটি শক্তিশালী উৎস এবং গ্লুকোজ আমাদেরকে শক্তি যোগাতে সাহায্য করে। ডায়েট থেকে চিনি একেবারে বাদ দিলে শরীরের গ্লুকোজের মাত্রা প্রভাবিত হয়। এর ফলে অনেকেই ক্লান্ত বোধ করে এবং কাজের জন্য শক্তির অভাব অনুভব করে।
আপনার ডায়েটে কীভাবে কার্যকরভাবে চিনি অন্তর্ভুক্ত করবেন?
১। ফল যোগ করুন
চিনি প্রাকৃতিকভাবে ফলে (এবং কিছু শাকসবজিতে) উৎপাদিত হয়। তাই, আপনার খাদ্যতালিকায় স্বাস্থ্যকর চর্বি অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সবসময় তাজা ফল এবং শুকনো ফল রাখুন। এমনকি কেক বা ডেজার্ট তৈরিতে চিনির পরিবর্তে মিস্টি ফল ব্যবহার করতে পারেন।
২। চিনির পরিবর্তে তালমিছরি ব্যবহার করুন
চিনির পরিবর্তে আরো একটা চমৎকার খাবার হল তালমিছরি। এটি প্রাকৃতিকভাবে তৈরি এবং এতে রয়েছে ভিটামিন বি১, বি২, বি৩, বি৬ ও বি১২। এছাড়াও ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন ও জিঙ্ক। এতে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স মাত্র ৩৫ তাই তাই সুগারের মাত্রাও নিয়ন্ত্রনে রাখে।
৩। মিষ্টি পানীয় অদলবদল করুন
কোলা এবং প্যাকেটজাত মিষ্টি পানীয়তেও চিনির পরিমাণ বেশি থাকে। তাই বিভিন্ন সফট ড্রিংস অথবা প্যাকেট জুসের পরিবর্তে আপনি তাজা ফলের রস পান করতে পারেন। ফলের রসের সাথে পুদিনা, লেবু ইত্যাদি যোগ করে স্বাদ ও গন্ধে আনতে পারেন দারুন পরিবর্তন।
৪। কেনার আগে লেবেল পড়ুন
আপনি কি প্রতিবার কেনার সময় প্যাকেটজাত খাবারে চিনির পরিমাণ পড়েন? যদি না হয়, তাহলে এখনই করা শুরু করুন! বেশ কিছু লবনাক্ত প্যাকেটজাত খাবারে চিনি থাকে যা আমাদের শরীরকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। আশাকরি এখন আর আপনার ডায়েটে একেবারে চিনি বাদ দিবেন না, বরঞ্চ এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো থেকে বাঁচতে প্রাকৃতিকভাবে মিষ্টি ফল খাওয়া শুরু করুন। স্বাস্থ্যকর খাবার খান, সুস্থ থাকুন।
GIPHY App Key not set. Please check settings