in

পরিবেশ রক্ষার জন্য গ্রিন ব্যাংকিং

সম্প্রতি বিশ্বে আলোচিত বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম জলবায়ু পরিবর্তন। এই একই ইস্যু নিয়ে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ হচ্ছে। শত শত মিটিং, সভা, সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আর এই একই ইস্যু আবার তৈরি করছে নতুন নতুন কার্যক্রম, বিধি, আইন, প্রজেক্ট ইত্যাদি। আসলে এই জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুটিই জন্ম দিয়েছে গ্রিন ব্যাংকিংয়ের। গ্রিন ব্যাংকিং সম্পর্কে এবার Go-Green Bangladeshকিছুটা জেনে নেয়া যাক।

এক কথায় বলতে গেলে গ্রিন ব্যাংকিং হলো এমন এক ধরণের ব্যংকিং সিস্টেম যার কার্যাবলীর মাধ্যমে পরিবেশ বান্ধব পরিস্থিতি তৈরি হয়। অর্থনীতির চাকা পরিবেশের উন্নয়নের জন্য সহায়ক হয় এবং এর মাধ্যমে কার্বন ফুটপ্রিন্ট গ্রাস করা যায়। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে পরিবেশকে রক্ষা করার জন্য একদল উদ্যোক্তা শ্রেণী কর্তৃক গৃহীত আর্ন্তজাতিক পদক্ষেপই হলো গ্রিন ব্যাংকিং। এটি এক ধরনের নীতিগত ব্যাংক যা সামাজিকভাবে দায়বদ্ধ এবং টেকসই। বাংলাদেশের পরিবেশবান্ধব টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য গ্রিন ব্যাংকিংকে একটি প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে ইতিমধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ ব্যবস্থায় পরিবেশের জন্য বিপজ্জনক নয় এমন পরিবেশবান্ধব পণ্য উদ্ভাবন এবং কার্যক্রমকে সহযোগিতা করা হয়। পরিবেশ ঝুঁকি মোকাবেলার (ইআরএম) নীতিমালার আওতায় গ্রিন ফাইন্যান্সিংয়ের মাধ্যমে বিনিয়োগ সংকুচিত নয় বরং ব্যাংকের সম্পদের গুণগত উন্নয়নের মাধ্যমে টেকসই আর্থিক ব্যবহার করা সম্ভব হবে।

অনলাইন ব্যাংকিংয়ের সাথে এর কিছু সখ্যতা থাকলেও গ্রিন ব্যাংকিংয়ের আরো অনেক সতন্ত্র বৈশিষ্ট রয়েছে। যেমন অরলাইন ব্যাংকিং চালুর ফলে কাগজের ব্যাবহার অনেক হ্রাস পায় যা পরিবেশের জন্য খুবই ভালো। গ্রীন ব্যাংককে আবার পরিবেশ বান্ধব বাংকও বলা হয়ে থাকে। অতিরক্ত কলকারখানা এবং রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যাবহারের ফলে পৃথিবীজুড়ে বৈষয়িক উষ্ণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া গ্রিন হাউজের প্রভাব, বায়ু দূষণ, পানি দূষণ এগুলোতো লেগেই আছে আমাদের প্রকৃতিকে ধ্বংস করার জন্য। গ্রিন ব্যাংকিং তাই একটি যুগোপযোগী উদ্যোগ নিঃসন্দেহে।

বাংলাদেশে প্রধানত যেসব করণে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটে থাকে সেগুলো হলো

  • জমি খন্ডণ
  • পানি দূষণ
  • বায়ু দূষণ
  • শব্দ দূষণ
  • প্রাকৃতিক দুর্যোগ
  • নদী ভাঙ্গন

উপরের এ কয়েকটি বিষয়কে নিয়ন্ত্রণ করা গেলে পরিবেশকে অনেকাংশে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করা যাবে। এজন্য গ্রিন ব্যাংকিং উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে। কারণ এসব দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য দরকার বিশেষ বরাদ্দ। বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছে গ্রিন ব্যাংকিংয়ের জন্য।

গ্রিন ব্যাংকিং নীতিমালা ঘোষণা

গ্রিন ব্যাংকিংকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে সব ব্যাংকে গ্রীণ ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করার নির্দেশ প্রদান করেছে। বিগত ২০১১ সালের ১ জানুয়ারী থেকে এই কার্যক্রম বাস্তবায়নের কাজ এগিয়ে চলছে। তিন বছরে এর সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন সম্ভব হবে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক আশা প্রকাশ করছে। এ হিসেবে আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে গ্রীণ ব্যাংকিং এর বাস্তাবায়ন কাজ সম্পন্ন হবে। ইতিমধ্যেই গ্রিন ব্যাংকিং নীতিমালা ঘোষণা করা হয়েছে। সকল আর্থিক বিনিয়োগ পরিবেশবান্ধব ব্যবসায় পরিচালনা হচ্ছে কি-না তার কোনো আইন অথবা গাইডলাইন এতদিন ছিল না। এ গাইডলাইনের মাধ্যমে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ বিতরণে বা বিনিযোগে পরিবেশগত ঝুঁকি বিশ্লেষণ করতে পারবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান গ্রিন ব্যাংকিং নীতিমালা মেনে চলার জন্য সকল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনুরোধ জানান। এ লক্ষ্যে ‘পরিবেশ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা’ (এনভায়রনমেন্ট রিস্ক ম্যানেজমেন্ট গাইডলাইন) তৈরি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি)।

কার্বন নিঃসরণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান নিচের দিকে। অথচ বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। এ কারণে আমাদের ইতিমধ্যে বন্যা, খরা ও ঘূর্ণিঝড়ের মতো বড় বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবেলা করতে হয়েছে। আমাদের পানিসম্পদ, ভূমি, কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা, মত্স্য ও পশুসম্পদ, বন, জীববৈচিত্র্য এবং মানব স্বাস্থ্যের ওপর ব্যাপক প্রভাব রেখেছে। ইন্টার গভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জের (আইপিসি) চতুর্থ মূল্যায়নে বলা হয়েছিল, কার্বন নিঃসরণের কারণে বিশ্বের তাপমাত্রা ১ দশমিক ৮ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। তখন ধারণা ছিল ২০১৭ সাল নাগাদ তাপমাত্রা বৃদ্ধি স্থির হয়ে আসবে। পঞ্চম মূল্যায়নে দেখা গেছে উষ্ণতা আরও বাড়বে। এর ফলে জলবায়ুর পরিবর্তন আরও খারাপ অবস্থার দিকে যাচ্ছে, যার প্রত্যক্ষ শিকার হবে বাংলাদেশ। অথচ উন্নত বিশ্বের দেশগুলো তা বুঝেও না বোঝার ভান করছে। অঙ্গীকার করেও তা তারা রক্ষা করছে না। এখন আবার অঙ্গীকার করতেও রাজি হচ্ছে না।

জলবায়ুর পরিবর্তনে আমাদের খাপ খাওয়ানোর ওপর বেশি জোর দিতে হবে। একই সঙ্গে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের কার্বন নিঃসরণ কমানোর চেষ্টা করতে হবে। প্রতিটি ব্যাংকের এনভায়রনমেন্ট রিস্ক ম্যানেজমেন্ট টিম সরাসরি ব্যবস্থাপনা পরিচালকের তত্ত্বাবধানে থাকা বাঞ্ছনীয়। তাহলে ওই টিমের মনিটরিং ভালো হবে, এতে ওই ব্যাংকগুলো পরিবেশগত ঝুঁকি মোকাবেলায় ভালো ভূমিকা রাখতে পারবে।

গ্রিন ব্যাংকিং সেবায় সেরা ১০ ব্যাংক

পরিবেশবান্ধব তথা গ্রিন ব্যাংকিং কার্যক্রমের সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রথমবারের মতো শীর্ষ ১০টি ব্যাংকের তালিকা প্রকাশ করেছে। তবে এ তালিকায় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক বা বিশেষায়িত কোনো ব্যাংকের নাম স্থান পায়নি।

সামগ্রিক গ্রিন ব্যাংকিং কার্যক্রমে সেরা ১০টি ব্যাংক হলো : শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, ইস্টার্ন ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক ও ট্রাস্ট ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, সবুজ ব্যাংকিং সেবার আওতায় যেসব বিষয় দেখানো হয়েছে সেগুলো হলো  ব্যাংকগুলোর নিজস্ব গ্রিন ব্যাংকিং পলিসি ও গ্রিন ব্যাংকিং ইউনিট রয়েছে কি না, তাদের এ খাতে বরাদ্দ কেমন, গ্রিন ফাইন্যান্সিং বা পরিবেশবান্ধব প্রকল্পে তাদের অর্থায়ন কেমন এবং অর্থায়িত প্রকল্পগুলোর পরিবেশগত ঝুঁকি নিরূপণ করা হয়েছে কি না। এছাড়া ব্যাংকগুলোর সৌরশক্তিসহ নবায়নযোগ্য জ্বালানি, বর্জ্য শোধনাগার বা ইটিপি ও ইটিপি সংযুক্ত প্রকল্প, পরিবেশবান্ধব ভবন, পরিবহন ব্যবস্থা, পানি ও ভূমি ব্যবস্থাপনায় আর্থিক অংশগ্রহণও বিবেচনায় এসেছে।

ড. আতিউর রহমানকে ‍গ্রিন গভর্নরের স্বীকৃতি বিশ্বব্যাংকের

বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট রেসেল কেইটি, পরিবেশবান্ধব ও ‍গ্রিন ব্যাংকিং কার্যক্রমের জন্য ড. আতিউর রহমানকেGreen Banking Dr Atiur Rahman গ্রিন গভর্নরের স্বীকৃতি দিয়েছেন। কাতারের দোহায় অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন ‘কপ ১৮’। এই অনুষ্ঠানে সর্বসম্মতভাবে ড. আতিউর রহমানকে এই উপাধি দেয়া হয়। বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট গ্রিন ব্যাংকিং এ‍র জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গৃহীত পদক্ষেপের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় গৃহীত পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন।

এখন কথা হলো বাংলাদেশে সবকিছু শুরু হয় মহাসমারোহে ধুমধামম করে। যত দিন যেতে থাকে ততই ঘূণ ধরা শুরু করে। কত বড় বড় কথা, আশার বাণী, পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা রিপোর্ট, কত সম্মেলন সবকিছু কোন এক অদৃশ্য এসে খেয়ে ফেলে। কারা খায় আমরা বুঝতে পারি। কিছু করতে পারিনা। আসুন এদের ধরে ধরে পশ্চাদদেশে পিএল দিয়ে বের করে দেয় এ দেশ থেকে। জয় হোক নিবেদিত প্রাণের। সত্য এবং সুন্দরের। তাহলেই বাংলাদেশের পরিবেশ বাঁচবে।

What do you think?

Written by কবির

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

5 Comments

    • ভাই গ্রিন ব্যাংকিং এক ধরনের কনসেপ্ট যার ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্তাবধানে নতুন নুতন প্রজেক্ট বাস্তবায়ন হচ্ছে। অন্যান্য ব্যাংকগুলো কিছুটা হলেও এর পিছনে বরাদ্দ দিচ্ছে। খারাপটা থোকায় পেলেন আপনি। কথা একটাই বাংলাদেশে সবকিছুই চালু হয় ভালোভাবে পাছে আপনাদের মত কিছু লোকদের জন্য তা ধান্দাবাজিতে পরিণত হয়।

      আর প্রয়োজন আছে কি নাই আইলা, সিডর, মহাসেন আসলে তখন টের পান আপনারা।

      আফসোস!

অনলাইনেই পড়ুন পুরনো ও বিখ্যাত সব বই

শিশুরা যা শুনে বড় হয় তাই শিখে