in

AngryAngry

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ এবং করণীয় সম্পর্কে যা জানা জরুরী

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ

ভাইরাস জনিত যতগুলো রোগের কারণ আছে তার মধ্যে ডেঙ্গু জ্বর (সমর্থক শব্দ ডেঙ্গি) একটি অত্যন্ত মারাত্মক জ্বরের নাম। এডিস মশা এই ডেঙ্গু ভাইরাসের বাহক। এই মশার কামড়ে সংক্রমিত ভাইরাসটি ১৫ দিনের মধ্যে মানুষের শরীরে দ্রুত বিস্তার লাভ করে এবং এর উপসর্গগুলো দেখা যায়। ডেঙ্গু ভাইরাস জনিত এই রোগটিতে আক্রান্ত হয়েছেন বুঝতে পারলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

ডেঙ্গু জ্বর সচারচর ভয়াবহ না হলেও কখনো কখনো এটা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। কিভাবে ডেঙ্গু জ্বর হতে পারে? ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ বা উপসর্গ গুলো কি কি? ডেঙ্গু জ্বর হলে করণীয় কি? প্রতিকারের উপায় কি? আরো সকল প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য আজ এই আয়োজন। আসুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কিত সকল তথ্য।

কিভাবে ডেঙ্গু ছড়ায়?

এডিস মশকী (স্ত্রী মশা) দ্বারাই এই রোগের সংক্রমিত হয়ে থাকে এবং এই রোগটি ছড়িয়ে পড়ে একজন থেকে আরেকজনের শরীরে। কিভাবে ডেঙ্গু ছড়ায়? তা আমাদের সচেতন মনে অবশ্যই প্রশ্ন জাগবে।এডিস ইজিপ্টি মশকী এই রোগের প্রধান বাহক। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত কোন ব্যক্তিকে যদি এই রোগের জীবাণু বহনকারী এডিস মশা কামড়িয়ে সুস্থ কোনো একটি শরীরে কামড়ায় তাহলে সুস্থ ব্যক্তির ডেঙ্গু জ্বর হওয়ার সম্ভাবনা অবশ্যই রয়েছে। একজন আক্রান্ত ব্যক্তির থেকে শরীরে দুই থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে রোগটি ছড়িয়ে পড়ে এবং মশার কামড়ের দ্বারা এক শরীর থেকে অন্য শরীরে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ/উপসর্গ গুলো কি কি?

ডেঙ্গু জীবাণু আক্রান্ত ব্যক্তির কিছু কিছু উপসর্গ বা লক্ষণ দেখলে বোঝা যায় তিনি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। সাধারণত অতিরিক্ত জ্বর, মাথাব্যথা, বমি, গেঁটে বা পেশীতে ব্যথা, শরীরে ফুসকুড়ি এইসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে। প্রধানত ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ বা উপসর্গগুলোকে দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে :-
১) ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বর
২) হেমোরেজিক ফিভার

১) ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বর

শরীরে প্রচন্ড জ্বর হওয়ার সাথে সাথে গায়ে তীব্র ব্যথা অনুভব হলে বুঝতে হবে ক্লাসিকাল ডেঙ্গু জ্বর হয়েছে। শরীরের এই ব্যথার তীব্রতা প্রচন্ড অনুভব হয় বিশেষ করে বিভিন্ন হাড়ের জোড়ায় জোড়ায়, মেরুদন্ডের হাড়ে, কোমরে, মাংসপেশীতে। তীব্র এই জ্বরের তাপমাত্রা ১০৪° থেকে ১০৫° ফারেনহাইট ছাড়িয়ে যেতে পারে।

কখনো কখনো এই জ্বরের তীব্রতার সাথে ব্যাথা এত ভয়াবহ হয় বলেই এটিকে “ব্রেক বোন ফিভার বা হাড়ভাঙ্গা জ্বর” বলা হয়ে থাকে। এই জ্বরের লক্ষণগুলো:-

  • শরীরে এলার্জির মত লালচে লালচে দানা বা ফুসকুড়ি দেখা দেয়।
  • বমি বমি ভাব আসে। অনেক সময় বমিও হতে পারে।
  • শরীর অতিরিক্ত ক্লান্ত হয়ে যায়।
  • খাওয়া- দাওয়ার রুচি কমে যায়।
  • হাড়ে ব্যথার তীব্রতা দেখলে মনে হবে শরীরের সমস্ত হাড় ভেঙে যাচ্ছে।
  • চোখের পিছনে এবং মাথার মধ্যে প্রচন্ড ব্যথা করতে পারে।

ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বর তিন থেকে পাঁচ দিন পর্যন্ত শরীরে অনুভব হতে পারে। এমনকি জ্বর সেরে যাওয়ার পর আবারো এই জ্বর আসার ঝুঁকি থাকতে পারে। সেরে যাওয়ার পর আবার যদি আক্রান্ত রোগী আক্রান্ত হয় তখন এটিকে “বাই ফেজিক ফিভার” বলা হয়। তাই ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে অবশ্যই নিজেকে সতর্ক থাকতে হবে।

২) হিমোরেজিক ফিভার

সাধারণ ডেঙ্গু জ্বরের মাত্রা যদি অতিরিক্ত মাত্রায় খারাপের দিকে যায় সেটিকে হেমোরেজিক ফিভার বলা হয়। হেমোরেজিক ফিভারের লক্ষণগুলো:-

  • শরীরের বিভিন্ন অংশে এমন কি চামড়ার নিচে রক্তের ছোপ ছোপ মনে হয়।
  • চোখের মধ্যে এবং চোখের বাইরে রক্তের আভা দেখা যায়।
  • নাক, মুখ, দাঁতের মাড়ি এমনকি কাশির কফের সাথে রক্ত বমি হতে পারে।
  • মেয়েদের অসময়ে ঋতুস্রাব হতে পারে যা কখনো কখনো অনেকদিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।
  • কালো রংয়ের পায়খানা হয় এবং পায়খানার সাথে টাটকা রক্ত বের হতে পারে।
  • কারো কারো পেটে পানি ও বুকে পানি জমতে দেখা যায়।
  • লিভার আক্রান্ত হয়ে জন্ডিসের রূপান্তরিত হতে পারে।
  • কখনো কখনো ডেঙ্গু শক সিনড্রোম রূপ ধারণ করে এর ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি করে যাতে রক্তচাপ হঠাৎ কমে যেতে পারে।
  • কিডনি আক্রান্ত হয়ে রেনাল ফেইলিউর এর মতো অবস্থা হতে পারে।
  • নারীর স্পন্দন দ্রুত অথবা ক্ষীণ হতে পারে।
  • রক্তক্ষরণের ফলে হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া, প্রসাব কমে যাওয়া, রক্ত বমি করা শুরু হতে পারে।
  • হঠাৎ করে রোগী অজ্ঞান হয়ে যায়।
  • এই সকল লক্ষণগুলো ডেঙ্গু জ্বর অতিরিক্ত মাত্রায় পৌঁছালে হতে পারে। এমনকি রোগীর মৃত্যু হতে পারে।

ডেঙ্গু জ্বর হলে করণীয় কি?

সুস্থ থাকতে কে না চায়? যদি আপনি কিংবা আপনার রোগী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে ডেঙ্গু জ্বর হলে আপনার করণীয় কি এটি জেনে নিন।

  • এর প্রধান উপায় হচ্ছে এডিস মশার কামড়ের হাত থেকে নিজেকে পরিবারের সদস্যকে বাঁচিয়ে রাখা।
  • শরীরের অধিকাংশ অংশ ঢেকে রাখে এমন পোশাক পরিধান করা।
  • সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে।
  • বেশি বেশি তরল খাবার খেতে হবে। ফলের রস, পানি, ডাবের পানি, ওরাল স্যালাইন বেশি বেশি খেতে হবে।
  • শরীর অতিরিক্ত দুর্বল হয়ে পড়লে স্যালাইন দিতে হবে।
  • অতিরিক্ত মাত্রা হয়ে গেলে রক্ত দিতেও হতে পারে।
  • জ্বর কমাতে প্যারাসিটামল দেওয়া যেতে পারে বাচ্চাদের জন্য সিরাপ থাকবে।তাই বলে কখনো এন্টিবায়োটিক ও ননস্টেরয়েডাল ব্যথা উপসংকারী ঔষধ খাওয়া যাবেনা। নয়তো রক্তপাতের ঝুঁকি থাকতে পারে।

ডেঙ্গু জ্বর প্রতিকারের উপায়

ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধে নিজেদেরকে সতর্ক থাকতে হবে। কিছু নিয়ম পালনের মাধ্যমে ডেঙ্গু জ্বর প্রতিকার করা সম্ভব যেমন:-

  • মশার আবাসস্থল ধ্বংস করে মশার বংশবিস্তার প্রতিরোধ করতে হবে।
  • এডিস মশার বংশবিস্তারের উপযোগী বিভিন্ন অন্ধকার স্থান, পানি জমে থাকে কাপ,ডাবের খোলস, ফুলের টব, টায়ার, গর্তে জমে থাকা পানি, ছাদ ইত্যাদিতে আটকে থাকা পানি অপসারণ করতে হবে।
  • ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করতে হবে।
  • মশার স্প্রে বা জেল ব্যবহার করতে হবে।

পরিশেষে, একটু সচেতনতা আপনাকে আমাকে ডেঙ্গু জ্বরের হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। জ্বরের লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গু জীবাণু বহনকারী এডিস মশার প্রকোপ বেশি দেখা দেয় তাই শিশুদের উপর বিশেষ নজর রাখতে হবে। আসুন এডিস মশা নিধনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করি।

What do you think?

Written by নুসরাত জাহান

পেশায় একজন নার্স হলেও ইসলামিক বিষয় নিয়ে পড়তে ও লিখতে ভালো লাগে। আমার লেখা থেকে যদি কেউ বিন্দুমাত্র উপকৃত হয় তবেই আমার প্রশান্তি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

কম দামে সেরা উপহার

কম দামে উপহার দেয়ার মতো দারুণ কিছু পণ্য

Online Beauty Cosmetics Store Bangladesh

অনলাইনে প্রসাধনী ক্রয়ের সতর্কতা