স্মার্টনেস, প্রযুক্তি ও আধুনিকতার এই যুগে আমরাও যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলার চেষ্টা করছি। চলনে বলনে স্মার্টনেস আনার চেষ্টা করছি। আমাদের স্মার্টনেসের এই মাত্রাকে আরো এক ধাপ বাড়িয়ে দিতে পারে যে জিনিসটা তা হলো স্মার্ট বাল্ব বা স্মার্ট লাইট।
আপনি শুনে হয়তো ভাবছেন বাল্ব আবার স্মার্ট হয় কী করে? ঠিকই শুনেছেন। আজকে স্মার্ট বাল্বের গল্পই শুনব আমরা।
প্রতিনিয়ত প্রযুক্তি উন্নত থেকে উন্নততর হচ্ছে। প্রযুক্তির ক্ষেত্র নানা দিকে বিস্তৃত হচ্ছে। প্রযুক্তির জগতে যে নতুন আবিষ্কার আলোকবর্তিকা হয়ে এসেছে (আক্ষরিক অর্থেই আলোকবর্তিকা) তা হলো স্মার্ট বাল্ব। স্মার্ট বাল্ব হচ্ছে ইন্টারনেট অফ থিংসের অংশ। মূলত ইন্টারনেট অফ থিংস হচ্ছে বিভিন্ন অবজেক্ট, যন্ত্রপাতি, ডিভাইস ও সেন্সরগুলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে কানেক্টেড থাকা যেগুলো একে-অপরের সাথে যোগাযোগ করতে পারে, ডাটা আদান-প্রদান করতে পারে। মানুষের সংস্পর্শ বা মিথস্ক্রিয়ার কোনো প্রয়োজন এখানে হয় না। আমাদের বুদ্ধিমান বাল্বও এই কাজগুলো করতে সক্ষম। সাধারণ বাল্বের সাথে স্মার্ট বাল্বের বেশ পার্থক্য আছে। আলোর জগতে এক নতুন সলিউশন হয়ে এসেছে স্মার্ট বাল্বগুলো। যেগুলো আমাদের দৈনন্দিনের চাহিদা যেমন মেটাচ্ছে, তেমনি সৌন্দর্যবর্ধনের কাজেও আসছে।
স্মার্ট বাল্ব কি?
স্মার্ট বাল্বের ধারণা সাধারন বাল্বের মতোই যার প্রধান কাজ হলো আলো দেওয়া। কিন্তু আলোর পাশাপাশি এর মধ্যে ওয়ারলেস কানেকশন থাকে এবং ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট বা আইসি থাকে। সে হিসেবে বলা যায়, সাধারণ বাল্ব ইলেকট্রিক হলেও স্মার্ট বাল্ব হলো ইলেকট্রনিক্স। স্মার্ট বাল্বগুলো স্মার্টফোন অ্যাপ, ভয়েস অ্যাসিসটেন্ট বা হোম অটোমেশন সিস্টেমের মাধ্যমে দূর থেকেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ফলে ব্যবহারকারীরা সিস্টেমটা ব্যবহার করে আলোর তীব্রতা বাড়া-কমা করতে পারেন, কালার টেম্পারেচার নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। এমনকি ঠিক করে দিতে পারেন কখন বাল্ব জ্বলে উঠবে আর কখন নিভে যাবে।
কিছু স্মার্ট বাল্বে এমনভাবে কালার টেম্পারেচার সেট করা যায় যেটা প্রাকৃতিক সূর্যালোকের প্যাটার্নকে অনুকরণ করতে পারে। এটা আমাদের সার্কেডিয়ান রিদমের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ ঘুমের জন্য সার্কেডিয়ান রিদমই দায়ী। এতে আমাদের ঘুম হবে আরো সুন্দর। আমরাও থাকতে পারব শারীরিক ও মানসিকভাবে সুন্দর।
স্মার্ট বাল্বের কিছু দারুণ বৈশিষ্ট্য ও সুবিধা
রিমোট কন্ট্রোলঃ
স্মার্ট বাল্বের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে, রিমোট দিয়ে বা দূর থেকেই এটাকে কন্ট্রোল করা যায়। আপনি অফিসে বসে থেকেও ঘরের লাইট জ্বালাতে পারবেন, নেভাতে পারবেন। বিছানা থেকে উঠে গিয়ে লাইট নেভাতে আলসেমি লাগছে? জাস্ট অ্যাপে অফ করে দিলেই নিভে যাবে স্মার্ট বাল্ব। ইচ্ছামতো বদলাতে পারবেন আলোর তীব্রতা।
বিদ্যুৎ বাঁচায়ঃ
স্মার্ট এলইডি লাইট বাল্বকে এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যেন বিদ্যুৎ কম খরচ হয়। তার মানে, এই বাল্বগুলো খুব এনার্জি এফিশিয়েন্ট। আপনি চাইলে আলোর তীব্রতা কমিয়ে দিতে পারবেন। নানা রকম মুড অনুযায়ী কালার সেট করতে পারবেন। ব্রাইটনেস বাড়াতে পারবেন, কমাতেও পারবেন। এতে বিদ্যুতের বিলও বাঁচবে।
কালার কাস্টোমাইজ করা যায়ঃ
স্মার্ট বাল্বের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এই বাল্বগুলো প্রায় সব ধরণের কালার প্রোডিউস করতে পারে। কখনো উজ্জ্বল, কখনো নিষ্প্রভ, কখনো শান্ত-কোমল রঙ – সবই সেট করতে পারবেন স্মার্ট বাল্বে।

সুস্বাস্থ্য বজায় রাখেঃ
কিছু স্মার্ট বাল্বে এমনভাবে কালার টেম্পারেচার সেট করা যায় যেটা প্রাকৃতিক সূর্যালোকের প্যাটার্নকে অনুকরণ করতে পারে। এটা আমাদের সার্কেডিয়ান রিদমের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ ঘুমের জন্য সার্কেডিয়ান রিদমই দায়ী। এতে আমাদের ঘুম হবে আরো সুন্দর। আমরাও থাকতে পারব শারীরিক ও মানসিকভাবে সুন্দর।
স্মার্ট বাল্বের ভয়েস কন্ট্রোল সিস্টেম
বর্তমানে অ্যান্ড্রয়েড, আইওসে গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট, অ্যাপল সিরির মতো ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্টগুলো সহজেই পাওয়া যায়। এগুলো দিয়ে স্মার্ট বাল্ব কন্ট্রোল করা আরো সহজ হয়ে গিয়েছে। লাইট বন্ধ করতে বা চালু করতে অ্যাপ খোলারও প্রয়োজন নেই। আপনার মুখের কথাতেই জ্বলে উঠবে লাইট, বদলে যাবে কালার ও তীব্রতা। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের এই সমন্বয় আমাদের জীবনকে করতে চলেছে আরো সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যময়।
স্মার্ট বাল্বের কিছু অসুবিধা
স্মার্ট বাল্বের সুবিধার কথা তো অনেক হলো। অনেকে হয়তো একটা স্মার্ট বাল্ব অর্ডার দেওয়ার কথা এতক্ষণে ভেবে বসে আছেন। তবে অসুবিধাগুলোও একটু জেনে নেওয়া যাক। সবচেয়ে বড় অসুবিধা হচ্ছে এর দাম। সাধারণ ১০ ওয়াটের ইলেকট্রিক বাল্বের জন্য আপনাকে খরচ করতে হবে ২৫০ – ৩০০ টাকা যেখানে ১০ ওয়াটের স্মার্ট বাল্বের দাম ১৩০০-১৫০০ টাকা। তবে যেহেতু স্মার্ট বাল্বের এনার্জি সেভিং ফিচার আছে, তাই বিদ্যুৎ বিল বাঁচিয়ে ঐ খরচটা হয়তো পুষিয়ে ফেলতে পারবে।
সব স্মার্ট বাল্ব আবার যে কোনো হোম অটোমেশন সিস্টেমে কাজ করে না। তাই আপনাকে আগেই চেক করে নিতে হবে, আপনি যে স্মার্ট বাল্ব ব্যবহার করবেন সেটা আপনার বাসার হোম অটোমেশন সিস্টেম সাপোর্ট করে কী না।
বাংলাদেশে কোন স্মার্ট বাল্ব পাওয়া যায়?
বাংলাদেশে সম্ভবত সবচেয়ে কম দামে যে স্মার্ট বাল্বগুলো পাওয়া যায় তা নির্মাণ করে থাকে ওয়ালটন কোম্পানি। তাদের WLED-SMART-WIFI-9WB22 মডেলের বাল্বটির দাম তুলনামূলক অনেক কম। এটি ৯০ শতাংশ এনার্জি এফিশিয়েন্ট। এটি আলোর পাওয়ার ০.৫ ওয়াট থেকে – ৯ ওয়াটের মধ্যে ইন্টারচেঞ্জ করতে পারে। এ ছাড়া মুড চেঞ্জিং, ব্রাইটনেস চেঞ্জিং ফিচারও রয়েছে। ওয়াইফাই দিয়ে এটি কানেক্ট করতে পারবেন। ভয়েস এসিস্ট্যান্ট দিয়েও কন্ট্রোল করা যাবে।
আর এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে ভালো মানের স্মার্ট বাল্বগুলোর বাজার প্রায় পুরোটাই শাওমি ব্র্র্যান্ডের দখলে। এছাড়া ফিলিপস ও শাওমি যৌথ ব্যান্ডিংয়ে কিছু স্মার্ট বাল্ব দেশের বাজারে বিশেষ করে অনলাইন মার্কেকপ্লেসগুলোতে পাওয়া যায়, যার মান এক কথায় অসাধারন। এছাড়া বাসাস ব্র্যান্ডেরও ভালো মানের স্মার্ট লাইট আছে যা ইকমার্স সাইটগুলোতে পাওয়া যায়।
স্মার্ট বাল্বের যুগ
স্মার্ট বাল্বের যাত্রা মাত্র শুরু হয়েছে। প্রতিনিয়ত চলছে নিত্যনতুন গবেষণা ও মানোন্নয়ন। দিন দিন যুক্ত হচ্ছে চমৎকার ও আকর্ষণীয় সব ফিচার। আমরা শীঘ্রই হয়তো এমন এক ভবিষ্যত দেখতে যাচ্ছি যেখানে আপনার বাসার স্মার্ট বাল্ব আপনার প্রোডাক্টিভিটি বাড়াতে সাহায্য করবে, আপনার স্লিপ সাইকেল অনুযায়ী অ্যাডজাস্ট করবে বাল্বের ব্রাইটনেস কিংবা কালার টেম্পারেচার। স্মার্ট সিটির অপরিহার্য বিষয়ে হয়তো পরিণত হবে এটি।
GIPHY App Key not set. Please check settings