স্মার্ট বাল্ব শব্দটা শুনলে একটু হোচট খেতে হয়। বাল্বও স্মার্ট হয় নাকি! তাহলে বাকিগুলো কি? আনস্মার্ট বাল্ব তো আর বলা যাবেনা। আসলে মূল বিষয়টা স্মার্ট তকমায় নয় যতটা এর ব্যবহারে। সাধারন বাল্ব ব্যবহার করলে বিদ্যুতের অপচয় নিয়ে বহু আলোচনা পাওয়া যাবে। এখন যদি প্রকৃতির কথা ভাবতে যাই তাহলে জ্বালানি ও বিদ্যুতের ব্যবহারে কষে লাগাম বাঁধতে হবে। কিন্তু আপাতত তা সম্ভব নয়। কিন্তু যদি প্রযুক্তির ব্যবহারে কিছুটা হলেও সমন্বয় ও নিয়ন্ত্রণ আনা যায় তখন তাকে স্মার্ট না বলে উপায় কি? বিদ্যুৎ সংকটের এই সময়ে একদিকে যেমন সাশ্রয়ী হওয়ার কথা বলা হচ্ছে তেমনি মাত্রাতিরিক্ত বিদ্যুতের দামের কথা মাথায় রেখেও সাশ্রয় করতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকে। এমন সময় স্মার্ট বাল্বের ব্যবহার বাড়ানো গেলে বিদ্যুতের অপচয় অনেকখানি কমানো যাবে। কিন্তু তার আগে জিনিসটা কি তা জানতে তো হবে। সে বিষয়ে জানাতেই আজকের এই লেখা।
যেমনটা বলেছি, স্মার্ট বাল্ব মানে যে বাল্বের ওপর আপনার নিয়ন্ত্রণ থাকবে। আপনার স্মার্টফোনে ইন্টারনেট সংযোগ চালু থাকলেই হলো। খুব সহজেই স্মার্ট বাল্বে বিভিন্ন নির্দেশনা পাঠাতে পারবেন। এখন আপনি ভাবতেই পারেন, এ আর এমন কি! একটু কষ্ট করে সুইচ ব্যবহার করলেই তো হয়। এখানেই তো অনেকে ভুল করেন।
স্মার্ট বাল্বে এক ধরনের ওয়ারলেস টেকনোলজি আগে থেকেই দেয়া থাকে। তাই আপনি ঘরে না থাকলেও বাল্বের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারবেন। তারমানে আপনার কাছে যতক্ষণ মোবাইল আছে ততক্ষণ সুইচ আপনার পকেটে, না হয় হাতের মুঠোয়। এক্ষেত্রে স্মার্ট বাল্ব অ্যান্টেনার কাজ করে। আপনার ফোন থেকে সিগনাল পেলেই হলো। বাড়ির ভিতরে-বাহিরে সবখানেই বাল্বের নিয়ন্ত্রণ আপনার কাছে।
প্রত্যেকটি প্রযুক্তিরই কিছু উপকারি দিক রয়েছে। স্বভাবতই উন্নত প্রযুক্তি হিসেবে স্মার্ট বাল্বেরও কিছু উপকারি দিক আছে। এখনও অনেকে ভাবেন, স্মার্ট বাল্ব একটি বিলাসবহুল প্রযুক্তি। এমনটা ভাবার পেছনের কারণ হলো, এই বাল্বের দাম সাধারন বাল্ব থেকে অনেক বেশি। দামের বিষয়টা মানসিকভাবে এমন সিদ্ধান্ত নিতে আমাদের বাধ্য করে। কিন্তু আমরা যদি এর উপকারি কিছু দিক ভালোভাবে লক্ষ্য করি তাহলে এই পণ্যটি সবার জন্যই জরুরি হয়ে উঠতে পারে। এই যেমন–
সাধারন বাল্বের মেয়াদ ও টেকসইতার কথা ভাবুক একবার। খুব বেশিদিন আপনায় সার্ভিস দিবেনা। নতুন বাল্বের আলো প্রথম দু-তিন সপ্তাহ বা দুই-তিন মাস ভালো থাকলেও আস্তে আস্তে ঝিমিয়ে যেতে শুরু করে। কিন্তু স্মার্ট বাল্বের প্রযুক্তি ব্যায়বহুল হওয়ায় পণ্যের সর্বোচ্চ মান নিশ্চিত করা হয়। তাই আলোর মান সহসাই কমে যাবেনা।
বাড়িতে সাধারন সুইচ টিপে তো আলো জ্বালানোই যায়। কিন্তু একবার ভেবে দেখুন, সিড়ি ভেঙে নিচে নামার পর হুট করে মনে পড়লো বাতিটা নেভানো হয়নি। আবার এমনও হতে পারে বাতিটা আদৌ নিভিয়েছেন নাকি নেভান নি। এমন সময়ে অনেকে দ্বিধাদন্দ্বে ভোগেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আবার সিড়ি ভেঙে উপরে উঠতে হয়। এই পরিশ্রম দেয়ার সময়ই বা কোথায়? তবে স্মার্ট বাল্বের পুরো নিয়ন্ত্রণ আপনার হাতে থাকায় সে কাজটিও করতে হবেনা। এ গেলো একটি দিক। অনেক সময় সুইচ নষ্ট হয়ে গেলে বাতি জ্বালানো কঠিন হয়ে যায়। এমন সময়েও কিন্তু স্মার্ট বাল্ব ভীষণ কার্যকর।
কিন্তু ঝুঁকি কমাতে কিভাবে স্মার্ট বাল্ব কাজ করে? প্রথমত, বাল্বে কোনো অস্বাভাবিকতা হলে অ্যাপের মাধ্যমেই আপনি জানতে পারবেন। এমনকি অনেক স্মার্ট বাল্ব আপনার সুইচে কোথাও ইলেকট্রিক ডিসচার্জ থাকলে তার জানান আপনাকে দিতে পারে। শক খাওয়ার ঝুঁকি এভাবে অনেকাংশেই কিন্তু কমে।
সাশ্রয়ী
স্মার্ট বাল্ব নিজে কম বিদ্যুৎ খরচ করে আপনার ব্যয় কমাবে এমন ভাবার কারণ নেই। প্রথমেই বলেছি, স্মার্ট বাল্ব আপনার বিদ্যুৎ খরচের মাত্রার দিকে নজর দেয়ার সুযোগ করে দিবে। স্মার্ট বাল্বের প্রযুক্তি বিদ্যুৎ সাশ্রয় করে একথা সত্য। কিন্তু শুধু এই সুবিধা বাদের আরেকটি সুবিধা আপনি পাচ্ছেন। সেটি হলো নজরদারির। একবার ভেবে দেখুন, আপনার হাতের স্মার্টফোনের ব্যাটারির জায়গা কিন্তু বেশি নয়। অন্তত ব্যবহারের উপর নির্ভর করে ব্যাটারি যথেষ্ট কি-না। আপনি যেদিন যেভাবে ব্যবহার করবেন সেভাবে চার্জ ক্ষয় হবে। তাই আপনাকে চলার পথে সিদ্ধান্ত নিতে হয়, আজ কিভাবে ফোন ব্যবহার করলে আপনি ফোন বন্ধ না হয়েই সারাদিন পার করে ফেলা যাবে। স্মার্ট বাল্বের ক্ষেত্রেও এমন কিছুই বলা যায়। আপনি যখন দেখবেন আপনার কতটুকু বিদ্যুৎ খরচ হচ্ছে, কতক্ষণে হচ্ছে তখন বিদ্যুৎ ব্যবহার কমানোর বিষয়েও আপনি সতর্ক হবেন।
GIPHY App Key not set. Please check settings