গর্ভাবস্থা যে কোন নারীর জন্যই খুবই গুরুত্বপূর্ন একটি সময়। এই সময় মায়েরা সর্বোচ্চ রকমের শারীরিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে সময় পার করে। অনেকেই এই সময় অসুস্থও হয়ে পড়ে। তাই এই সময় রমজান মাসের রোজা করা নিয়ে অনেকেরই দ্বিমত থাকে। অনেকেই জানতে চান গর্ভবতী মায়েদের রোজায় করনীয় কি, তারা রোজা করবে কিনা, রোজা থাকলে কোন ক্ষতি হতে পারে কিনা ইত্যাদি। এই সব প্রশ্নের উত্তর নিয়েই আমাদের আজকের আর্টিকেলটি সাজানো হয়েছে।
গর্ভবতী মায়ের রোজা রাখার বিষয়ে ইসলাম কি বলে?
প্রথমেই বলে নেয়া ভালো যে, গর্ভাবস্থায় রোজা রাখা ইসলামে নিষেধ করা হয়নি। যদি রোজা থাকলে গর্ভবতী মায়ের এবং গর্ভস্থ সন্তানের ক্ষতির কোন আশংকা না থাকে তবে গর্ভবতী মায়ের রোজা রাখায় কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে ক্ষতির আশংকা থাকলে মায়েরা রোজা থাকবেন না, এবং এতে তিনি গুনাহগারও হবেন না। তবে পরবর্তিতে তাকে এই রোজা গুলো কাজা আদায় করে নিতে হবে।
গর্ভবতী মায়ের রোজার ডায়েট কেমন হওয়া উচিত?
প্রথমেই আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিবেন। আপনার জন্য রোজা রাখা কতটা নিরাপদ হবে তা সবচেয়ে ভালো জানেন আপনার ডাক্তার। গর্ভবতী মায়েরা তাদের গর্ভের প্রথম দিকে বা মাঝামাঝি অবস্থায় থাকা কালীন রোজা করতে পারেন তেমন কোন অসুবিধা ছাড়ায়। শেষের ৩ মাসে রোজা করা কিছুটা কঠিন হতে পারে তবে সঠিক ডায়েট মেনে চললে মা ও শিশুর তেমন কোন ক্ষতি হয় না। চলুন দেখি গর্ভবতী মায়ের রোজায় ডায়েট কেমন হওয়া উচিত।
সেহেরীতে যা খাবেন
গর্ভবতী মায়ের পর্যাপ্ত ক্যালোরি ও আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া দরকার। আঁশযুক্ত খাবার ধীরে ধীরে হজম হয় ফলে ক্ষুধা কম লাগে। এছাড়াও গর্ভাবস্থায় কোষ্টকাঠিন্য খুব সাধারন একটি সমস্যা। আঁশযুক্ত খাবার এই সমস্যা থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করবে।
আঁশযুক্ত খাবারের জন্য বিভিন্ন প্রকারের শাক যেমন কচু শাক, মুলা শাক, পুঁই শাক ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে। সাজনা, মোচা, ঢেড়স ইত্যাদি সবজিতেও প্রচুর আঁশ রয়েছে।
গ্যাস বা এসিডিটি হতে পারে এমন ভাজা খাবার সেহেরিতে পরিহার করতে হবে। মা ও শিশু উভয়ের জন্যেই এই সময় প্রচুর পরিমানে প্রোটিন ও আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। অনেক বেশী খাবার এক সাথে না খেয়ে পুষ্টিকর খাবার ও ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার স্বাভাবিক পরিমানে খেতে হবে। একসাথে বেশী পরিমানে খাবার খেলে গর্ভবতী মায়ের বমির সমস্যা হতে পারে।
গর্ভবতী মায়েরা তাদের গর্ভের প্রথম দিকে বা মাঝামাঝি অবস্থায় থাকা কালীন রোজা করতে পারেন তেমন কোন অসুবিধা ছাড়ায়। শেষের ৩ মাসে রোজা করা কিছুটা কঠিন হতে পারে তবে সঠিক ডায়েট মেনে চললে মা ও শিশুর তেমন কোন ক্ষতি হয় না।
ইফতারে যা খাবেন
এই সময় ইফতারেও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত। ভাজাপোড়া খাবার না খেয়ে শুরুতে তাজা ফলের রস, ডাবের পানি, দই এর লাচ্ছি ইত্যাদি খেতে পারেন। শুরুতেই একসাথে বেশী খাবার না খেয়ে ধীরে ধীরে অল্প অল্প করে খাবার খাওয়া উচিত। এতে হজম করতে সুবিধা হবে।
শরীর যাতে ডিহাইড্রেড না হয়ে পড়ে তার জন্য প্রচুর পরিমানে পানি পান করতে হবে। পানির পাশাপাশী ডাবের পানি, লেবু চিনির সরবত, ঘোল, মাঠা, লাচ্ছি, তাজা ফলের সরবত ইত্যাদিও পান করা যেতে পারে। মনে রাখতে হবে যে, রোজা থাকার কারনে মায়ের শরীর যেন কোন মতেই ডিহাইড্রেড না হয়ে যায়।
এছাড়াও টাটকা ফল, প্রোটিন জাতীয় খাবার ও ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার ইফতারিতে খেতে হবে।
রাতের খাবারে যা খাবেন
যেহেতু রোজায় ইফতার ও রাতের খাবারের মধ্যে খুব বেশী সময় থাকে না তাই রাতের খাবারটা হালকা হওয়াই ভালো। রাতে হালকা ভাত, ডাল, সবজি ও মাছ/মাংস খেতে পারেন। অথবা আটার রুটি, সাথে সবজি ও প্রোটিন জাতীয় কিছু খেতে পারেন। সাথে এক গ্লাস দুধও খেতে পারেন।
ক্যাফেইন শরীরে পানির ঘাটতি এনে দিতে পারে। তাই রোজায় চা বা কফি না খাওয়ায় ভালো। এছাড়াও চিনি জাতীয় খাবার কম খেতে হবে। কারণ গর্ভাবস্তায় ডায়াবেটিসের ঝুঁকি থাকে।
সতর্ক হবেন কখন
১। যাদের গর্ভধারন ঝুঁকি পূর্ন তাদের রোজা না করায় ভালো। আর করলেও নিয়মিত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে।
২। ডায়াবেটিস থাকলে তা যদি অনিন্ত্রত হয়ে যায় তাহলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
৩। শরীর ডিহাইড্রেড হয়ে পড়লে বা ইউরিন ইনফেকশন অবশ্যই দ্রুত ডাক্তারের স্মরনাপন্ন হতে হবে।
৪। হঠাত রক্তচাপ কমে গেলে বা বেড়ে গেলে সতর্ক হতে হবে। ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করেই তবে পরবর্তী রোজা করবেন।
৫। প্রি-এক্লেমশিয়া থাকলে বা অন্য কোন শারীরিক জটিলতার জন্য যদি বিশেষ কোন চিকিৎসা চালানোর প্রয়োজন পড়ে সেক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া রোজা রাখা উচিত হবে না।
ইসলাম কখনো মুসলমানদের উপর কিছু জোরপূর্বক চাপিয়ে দেয় না। ক্ষতির আশংকা থাকলে গর্ভবতী মায়েদের রোজা না রাখায় ভালো। তাছাড়া ইসলামে এই সমস্যার সুন্দর ও সহজ সমাধান দেয়া আছে। তবে আমরা এখানে গর্ভবতী মায়েদের জন্য রোজায় করনীয় বিষয়গুলো সংক্ষেপে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। ক্ষতির আশংকা না থাকলে এই উপরের উল্লেখিত বিষয়গুলো বিবেচনা করে রোজা রাখতে পারেন। নিরাপদ থাকুন, সুস্থ থাকুন।
GIPHY App Key not set. Please check settings