আইফোনের সঙ্গে একটা না একটা চার্জার থাকবেই, এ কথা এখন বলার সুযোগ একটু কম। এখন তো ছোট একটা বক্সে শুধু আইফোন গছিয়ে দিয়েই অ্যাপল খুশি। অবশ্য অ্যাপল থেকেই চার্জার কেনার সুযোগ থেকে যায়। সেই চার্জার কেনার জন্যেও অনেক টাকা খরচ করতে হবে। কিন্তু যারা একটু আধটু খোঁজখবর রাখেন তারা আবার অন্য ব্র্যান্ডের দিকেও ঝুঁকে পড়েন।
থার্ড পার্টি আইফোন চার্জার কেনার পক্ষে বিপক্ষে অনেক মন্তব্যই আছে। অনেকে মনে করেন অ্যাপলের চার্জার নেয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। আবার অনেকে বলেন, অ্যাপলের চার্জারের থেকে তুলনামূলক কমদামে যদি ভালো মানের একটা চার্জার পাওয়া যায় তাহলে সমস্যা কোথায়?
আমরাও একমত। কারণ অ্যাপলের টেকনোলজির সঙ্গে তাল মিলিয়ে অনেক ব্র্যান্ডই খুব ভালো মানের চার্জার প্রস্তুত করছে। তারপরও প্রশ্ন থেকে যায়, এই যেমন:
থার্ড পার্টি আইফোন চার্জার কি বিশ্বাসযোগ্য?
আমাদের বাজারে অনেক চার্জারই নকল। মানে পরিচিত ব্র্যান্ডের কপি। এসব বিভিন্ন দোকানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। আবার রাস্তার ধারে সুদৃশ্য মোড়কেও এদের দেখা যায়। আসল-নকল শনাক্ত করে কিনতে না পারায় ঠকতে হয়। দেখা যায় আইফোন ঠিকঠাক চার্জ হয় না। আবার ফোনের ব্যাটারিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আমরা মনে করি, আসল চার্জার কিনতে পারলে এমন সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে না। শুধু একটু ভেবেচিন্তে কিনতে হবে।
অন্য ব্র্যান্ডের চার্জার কেনার ক্ষেত্রে যা জানা জরুরী
যেমনটা বলছি, যেকোনো গ্যাজেট কেনার ক্ষেত্রে খুব সাবধান থাকতে হয়। বাজারে গিয়ে বাজেটের ভিত্তিতে অনেকে কিছু পণ্য দেখেন আর যেটা ভালো লাগে চোখে সেটা কিনে ফেলেন। এমনটাই ভুল। গ্যাজেট কেনার আগে প্রথম থেকেই প্রস্তুতি নিতে হয়। আজকাল অনলাইনেই অনেক রিভিউ আছে। ওই রিভিউ দেখেই আপনি বুঝতে পারবেন কোনটি ভালো।
তারপরও আইফোনের চার্জারের আলাদা বিশেষত্ব আছে বলে কিছু বিষয়ে একটু মনোযোগ রাখা দরকার। এই যেমন:
ইউএসবির ধরন
অ্যাপলের চার্জার কেনা মানে শুধু অ্যাপলের গ্যাজেটেই চার্জ দিতে পারবেন। চার্জিং টেকনোলজিটা ওই ফোনের জন্যেই করা। কিন্তু থার্ড পার্টি চার্জারের ক্ষেত্রে একটু বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায়। বিগত কয়েক বছরে অ্যাপল ইউএসবি টাইপ-সি এর দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছে। ফলে অ্যান্ড্রয়েড ফোনে চার্জ দেয়ারও একটা সুবিধা তৈরি হয়েছে।
তাই ইউএসবি টাইপ-সি এর একটা চার্জার নিতে পারলে আপনি অন্য ডিভাইসেও চার্জ দিতে পারবেন। অনেক সময় ম্যাকবুক বা নোটবুকেও চার্জ দেয়া সহজ হয়। তবে সবচেয়ে ভালো হয় যদি আপনি লাইটনিং চার্জার এ্যাডাপ্টার কিনতে পারেন। লাইটনিং চার্জার এ্যাডাপ্টারের মাধ্যমে সহজেই ফোনে চার্জ দিতে পারেন। বাজারে ভালো লাইটনিং চার্জার এ্যাডাপ্টারগুলোর মধ্যে নিচেরটি একটি।
iPhone GL043 Lightning to 3.5mm Audio & Call & Charger Adapter
এটি শুধু চার্জই নয় আরো অনেক সুবিধা দেয়। ওয়াল চার্জারের ক্ষেত্রে আইফোন বাদে অন্য ডিভাইস চার্জ দেয়ার প্রয়োজন থাকলে এটি নিতে পারেন।
আগে নির্ধারণ করুন বাজেট
বাজারে গিয়ে কখনো দোকানদারকে বাজেট ধরে পণ্য কেনার চেষ্টা করবেন না। বরং আগে থেকেই নিজের বাজেট নির্ধারণ করে অনলাইনে ঘাটুন। ভালো মানের আইফোন থার্ড পার্টি চার্জার ৯০০ টাকা বা তারচেয়েও কম টাকা থেকে শুরু হয়। অ্যাপলের চার্জার সচরাচর ৩০০০ টাকার ভেতরেও পাওয়া যায়। কিন্তু থার্ড পার্টি চার্জারের দাম অনেক সময় ২৮০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
থার্ড পার্টি চার্জারে যেহেতু বাড়তি কিছু সুবিধা আছে, তাই দামটা পোষায়। তবে দামের ওপর সুবিধার বিষয়টিও নির্ভর করে। শুধু আইফোনের চার্জার বলেই দাম বেশি হবে এমনটা নয়। যেমন: বাজারে Joyroom L-Qp202 এর ২০ ওয়াটের একটি চার্জার আছে। এই চার্জারটি দাম মাত্র ৯০০ টাকা। আইফোন চার্জ দেয়ার জন্য এটি খুবই ভালো একটি মডেল। আবার এই চার্জারে আলাদা টাইপ-সি পোর্ট থাকায় সহজেই অন্য ডিভাইস চার্জ দেয়া যায়।
আবার একটু বেশি দাম দিয়ে আপনি ভালো চার্জার নিলে অনেকদিন সার্ভিস পাবেন। যেমন Anker Nano 3–এই চার্জারটি বহনযোগ্য এবং ফাস্ট চার্জ সাপোর্ট করে। অনেক চার্জারে ফাস্ট চার্জ সুবিধা থাকে না। যদিও তারা বলে। কিন্তু আইফোন যখন চার্জ টানে তখন চার্জার গরম হয়ে যায়। ফাস্ট চার্জিং সুবিধা দেয়ার ক্ষেত্রে সক্ষমতা ও প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা থাকা জরুরি। দামটাও এই প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা দ্বারা নির্ধারিত হয়। পুরোনো জেনারেশনের আইফোনে কমদামি একটি চার্জার নিলেও আইফোন ১৩ বা ১৪ এর জন্য দাম বাড়িয়েই নিতে হবে।
ব্যাটারিতে কেমন প্রভাব ফেলে
আইফোনের ব্যাটারি লাইফ আপনি সেটিংস থেকেই দেখতে পাবেন। আইফোনের ইউজার ইন্টারফেস অনেক স্মুথ হলেও ব্যাটারির উপর এর কার্যকারিতা নির্ভর করে। ব্যাটারি যদি মাদারবোর্ডে সঠিক আউটপুট না দেয় তাহলে ফোনও ভালোভাবে কাজ করবে না।
চার্জ দেয়ার ফলে ব্যাটারির কার্যকারিতাও পরিবর্তিত হয়। একটা ফোন যখন বানানো হয় তখন এর ব্যাটারি কতবার চার্জ নিতে পারবে তা মেপে নেয়া থাকে। বারবার চার্জ দেয়ার ক্ষেত্রে ব্যাটারি ক্ষতিগ্রস্ত না হলেও এর আয়ু কমে। আবার চার্জার ভালো না হলেও ব্যাটারির আয়ু কমে। তাই যে চার্জারটি কিনছেন তার আউটপুট দেখে নিতে হয়। আইফোনের ব্যাটারি ঠিক কত ওয়াটের আউটপুট নিতে পারবে? সচরাচর ২০ ওয়াট বা ৩০ ওয়াটের চার্জার ভালো আউটপুট দেয় আইফোনে। আবার কিছু চার্জার স্বয়ংক্রিয়ভাবে মোবাইলের আউটপুট অনুসারে চার্জ দেয়।
তাই আগে থেকেই একটু দেখে নিন। তারপর সিদ্ধান্ত নিন কোন চার্জারটি কিনবেন।
চার্জারের ধরন
কেমন চার্জার নেবেন? ওয়ারসহ নাকি ওয়ারলেস? এটাও ভাবা জরুরি। ওয়ারলেস হলে তো বাজেট বাড়াতেই হবে। তবে আইফোনের ওয়ারলেস চার্জারের দাম অনেক। কিন্তু কমদামে থার্ড পার্টি অনেক চার্জারই পাওয়া যায়। যেমন WiWU Air Wireless Charger আইফোন, এয়ারপডসহ আরো কিছু সুবিধা দেয়।
আবার ওয়ারসহ চার্জারের ক্ষেত্রে হিসেবটা আলাদা। উপরের তিনটি ফিচার দেখে নিলেই হয়ে যাওয়ার কথা।
আসল পণ্য যাচাই করুন
আসল পণ্য কিভাবে যাচাই করবেন? অধিকাংশ থার্ড পার্টি আইফোন চার্জারের ম্যানুফ্যাকচারার একটি কিউ-আর কোড দিয়ে থাকে। সেটি স্ক্যান করে নিন। আসল পণ্য হলে পণ্যের ম্যানুফ্যাকচারার ওয়েবসাইটে পণ্যের সিরিয়াল নাম্বার ম্যাচ করবে। এছাড়া সব ব্র্যান্ডই আসল পণ্য শনাক্ত করার নানা পদ্ধতি দিয়ে রাখে। আপনি শুধু সেটা দেখে নিবেন। আর অবশ্যয় ভালো অনলাইন শপ বা দোকান থেকে কিনবেন।
ভালো ব্র্যান্ড দেখে কিনুন
থার্ড পার্টি আইফোন চার্জার যেসব কোম্পানী তৈরি করছে তাদের মধ্যেও রয়েছে তীব্র প্রতিযোগীতা। নতুন নতুন ব্র্যান্ডও আসছে বাজারে প্রতিনিয়ত। তবে যেসব ব্র্যান্ড এরই মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয় এবং ব্যবহারকারীদের বিশ্বস্ততা অর্জন করতে পেরেছে তাদের মধ্যে অন্যতম হলো এ্যাংকর (Anker), বাসাস (Baseus), উইউ (WiWU), ম্যাকডোডো (Mcdodo), জয়রুম (Joyroom) ইত্যাদি।
থার্ড পার্টি আইফোনের চার্জার কেনাটা অবশ্যয় সাশ্রয়ী। তবে কেনার আগে উপরের বিষয়গুলো জানা জরুরী। আশা করি আমাদের এই লেখাটি আপনাকে যাচাই-বাছাইয়ের সুবিধা করে দিয়েছে।
GIPHY App Key not set. Please check settings