in

পুরুষের শালীন পোশাক- ইসলাম কী বলে?

পুরুষের শালীন পোশাক

আসসালামু আলাইকুম। ইসলাম শান্তির ধর্ম। জীবন-সমাজের প্রতিটি স্তরে ইসলাম শান্তি রক্ষায় সচেষ্ট থাকে। সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য দায়ী বর্তমান কারণগুলোর মধ্যে পোশাকের শালীনতা বজায় না রাখা অন্যতম।
শুধু যে নারীই পর্দা করবে,আব্রু রক্ষা করে চলবে এমন নয় বরং পুরুষের প্রতিও আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ প্রদান করেছেন যেন তারা সঠিক পোশাকে সজ্জিত হয়।

ইসলামের দৃষ্টিতে একজন পুরুষের পোশাকের ধরন নিয়ে আল্লাহ তায়ালা যেসকল নির্দেশনা দিয়েছেন তা আল কুরআন থেকে প্রাপ্ত এবং রাসুলুল্লাহ (স) এর দেখানো ব্যাখ্যা সহ বিভিন্ন হাদিস থেকেও আমরা জানতে পারি। আজকের আলোচনার বিষয়ে আলোকপাত করছি:

ইসলামে পুরুষের শালীন পোশাক

তিন সুন্নত, এক মুস্তাহাবে শালীনতা

১. বিসমিল্লাহ বলে ডান পাশ দিয়ে পোশাক পরিধান করা ও খোলার সময় বাম পাশ দিয়ে খোলা সুন্নত।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—”তোমরা পোশাক পরিধান করার সময় আর ওজু করার সময় ডান পাশ দিয়ে শুরু করবে।” (আবু দাউদ, ৪১৪১)
সুন্নত পালনের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির কারণ করে তুলুন আপনার পোশাকও।

সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য দায়ী বর্তমান কারণগুলোর মধ্যে পোশাকের শালীনতা বজায় না রাখা অন্যতম। শুধু যে নারীই পর্দা করবে,আব্রু রক্ষা করে চলবে এমন নয় বরং পুরুষের প্রতিও আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ প্রদান করেছেন যেন তারা সঠিক পোশাকে সজ্জিত হয়।

২. নতুন পোশাক পরিধান করার সময় আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা ও দোয়া পড়া সুন্নাত।

আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) নতুন কাপড় পরিধান করার সময় এই দোয়া পড়তেন—

الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي كَسَانِي مَا أُوَارِي بِهِ عَوْرَتِي وَأَتَجَمَّلُ بِهِ فِي حَيَاتِي

উচ্চারণ: আলহামদু লিল্লাহিল্লাজি কাসানি মা উয়ারি বিহি আওরাতি ওয়া আতাজাম্মালু বিহি ফি হায়াতি।

অর্থ: সব প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাকে কাপড় পরিয়েছেন, যা দিয়ে আমি লজ্জাস্থান ঢাকি এবং জীবনে সৌন্দর্য লাভ করি। (তিরমিজি, ৩৫৬০)।

৩. সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করা সুন্নাত। তবে খেয়াল রাখতে হবে, এতে করে যেন আবার অহঙ্কার চলে না আসে।

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন—”যার অন্তরে অণুপরিমাণ অহঙ্কার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, মানুষ চায় যে, তার পোশাক সুন্দর হোক, তার জুতা সুন্দর হোক, এ-ও কি অহঙ্কার? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- আল্লাহ সুন্দর, তিনি সুন্দরকে ভালোবাসেন। প্রকৃতপক্ষে অহঙ্কার হচ্ছে দম্ভভরে সত্য ও ন্যায় অস্বীকার করা এবং মানুষকে ঘৃণা করা।” (মুসলিম, ৯১)

৪. সাদা পোশাক পরিধান করা মুস্তাহাব। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- “তোমরা সাদা পোশাক পরিধান কর। কেননা সাদা পোশাকই তোমাদের জন্য সর্বোত্তম। আর তোমাদের মৃতদেরও সাদা পোশাকে দাফন কর।” (তিরমিজি, ৯৯৪)

কী কী পরিত্যাগ করলে পোশাক শালীন হবে

  • রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “এই দুটি জিনিস (স্বর্ণ ও সিল্ক) আমার উম্মতের পুরুষদের জন্য নিষিদ্ধ, তবে নারীদের জন্য অনুমতি রয়েছে।” (ইবনে মাজাহ, ৩৬৪০)
    অর্থাৎ হাদিস থেকে আমরা জানতে পারলাম, পুরুষ ভাইগণ প্রকৃত মুমিন হয়ে থাকলে অবশ্যই তাকে স্বর্ণ ও সিল্কের পরিধেয় বস্ত্র ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে।
    আবার, পরিশোধন করা ছাড়া কোনো মৃত প্রাণীর চামড়া পরিধান করার ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে কিছু প্রাণির পশম যেমন- ভেড়া, ছাগল কিংবা উটের পশম দ্বারা প্রস্তুতকৃত পোশাক পরা জায়েজ, আপনি ব্যবহার করতেই পারেন।
  • আমরা জানি নারীর ক্ষেত্রে পাতলা কাপড় ব্যবহার করা নিষিদ্ধ কারণ এতে শরীরের অবয়ব দেখা যায়।একইভাবে পুরুষেরাও শালীনতা বজায় রেখে এমন কাপড় পরা থেকে বিরত থাকবেন। আপনার আব্রু রক্ষা করুন।
  • অনেক পুরুষ আছেন শখ করে রঙ বেরঙ এর বিভিন্ন জামা কাপড় পরেন। এই সময়ে এ চল বেশি দেখা যায়, যাকে আমরা ফ্যাশন সেন্স বলে থাকি। কিন্তু কোনো পোশাক যদি কাফির-মুশরিকদের অনুসরণ করার মতো হয়ে থাকে তবে তা হারাম। সুতরাং কাফিরদের জন্য নির্দিষ্ট এমন কোনো পোশাক পরিধান করা নাজায়েজ।
    আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল ‘আস (রা.) হতে জেনে নিই, তিনি বলেছেন- “রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার পরিধানে হলুদ রঙের দুটি বস্ত্র দেখে বললেন, এগুলো কাফিরদের বস্ত্র। অতএব তুমি এসব পরবে না।” (মুসলিম,২০৭৭)।
  • তাই পুরুষেরা হলুদ বস্ত্র পরা থেকে বিরত থাকুন। আপনি মুমিন হিসাবে আল্লাহ তায়ালার সুশীতল স্নেহছায়াতলে থাকবেন (ইনশাআল্লাহ)।
  • পুরুষের জন্য নারীর অনুকরণে পোশাক পরিধান করা নিষেধ বলে গণ্য হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) ওই সব পুরুষকে অভিশাপ দিয়েছেন, যারা নারীদের অনুকরণ করে। আবার ওই সব নারীকে অভিশাপ দিয়েছেন, যারা পুরুষদের অনুকরণ করে। (বুখারি, ৫৫৪৬)। নারীদের মত সাজসজ্জা এগুলোও এইসবের মধ্যে গণ্য।
  • পুরুষের জন্য টাখনুর নিচে পোশাক পরিধান করা হারাম। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- “পোশাক টাখনুর নিচে যতটুকু যাবে ততটুকু জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে।” (বুখারি, ৫৪৫০)। টাখনুর নিচে পোশাক পরিধান করার ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে আরও অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে।
  • প্রসিদ্ধি লাভের জন্য দম্ভভরে কোনো পোশাক পরিধান করা হারাম। ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- “যে ব্যক্তি প্রসিদ্ধি লাভের উদ্দেশ্যে দম্ভভরে পোশাক পরিধান করবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে লাঞ্ছনা ও অপমানের পোশাক পরিধান করাবেন।” (ইবনে মাজাহ, ৩৬০৭)

পোশাকের শালীনতা বজায় রাখার জন্য উপরোক্ত নিয়মাবলী অনুসরণ করলে ইনশাআল্লাহ সকলে উপকৃত হবেন। মনে রাখবেন, পোশাক-আশাকে আপনার রুচি এবং ব্যক্তিত্ব প্রকাশ পায় তাই আল্লাহর বান্দা হিসাবে আপনার করণীয় নিজেকে সর্বোচ্চ ব্যক্তিত্বের অধিকারী করা। আপনাকে আল্লাহ তায়ালা সঠিক পোশাকে আচ্ছাদিত হওয়ার তৌফিক দান করুন, আমিন।

What do you think?

Written by নুসরাত জাহান

পেশায় একজন নার্স হলেও ইসলামিক বিষয় নিয়ে পড়তে ও লিখতে ভালো লাগে। আমার লেখা থেকে যদি কেউ বিন্দুমাত্র উপকৃত হয় তবেই আমার প্রশান্তি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

আজওয়া খেজুরের উপকারিতা

আজওয়া খেজুরের উপকারিতা ও পুষ্টিগুন

ফলের কাস্টার্ড

ফ্রুট কাস্টার্ড রেসিপি