বাচ্চাদের ডায়াপার পরা উচিত কি উচিত না এ বিষয়ে ভালো খারাপ উভয় দিকই উল্লেখ করা যায়। কিন্তু ডায়াপার ব্যবহারের খারাপ দিক নিয়ে আমরা কতটা সচেতন? আমাদের সবার কাছে ছোট্ট বাচ্চাদের দেখলে খুব আদুরে লাগে। তাদের যত্ন ও স্বাস্থ্যের জন্য আমরা সবসময় সচেতন থাকি। কিন্তু কখনও কি ভেবে দেখেছেন, বাচ্চাদের ডায়াপার পরা কতটা উপকারী? অনেকেই হয়তো জানেন না, ডায়াপার পরার কিছু নেতিবাচক দিক রয়েছে। আজ আমরা এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবো।
১. ত্বকের সমস্যা
ডায়াপার পরলে বাচ্চাদের ত্বক দীর্ঘ সময় ধরে ভেজা থাকে। যখন বাচ্চারা ডায়াপার পরে থাকে, তাদের ত্বক বেশিরভাগ সময়ই মূত্র এবং ঘামের সংস্পর্শে থাকে। এতে ত্বকের উপর প্রভাব পড়ে এবং ত্বক লালচে হয়ে যেতে পারে।
এই লালচে ভাব বাচ্চাদের জন্য খুবই অস্বস্তিকর হতে পারে। তাদের ত্বক চুলকাতে শুরু করে। চুলকানি বেশি হলে ত্বকে ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে। এই ফুসকুড়ি ত্বকের সংবেদনশীল অংশে হওয়ায় বাচ্চারা বেশি অস্থিরতা দেখায় এবং কান্নাকাটি করতে পারে।
যদি ডায়াপার পরার কারণে এই সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে তা ত্বকে সংক্রমণের কারণ হতে পারে। ত্বকের সংক্রমণ হলে সমস্যাটা আরও গুরুতর হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। ত্বকের এই ধরনের সমস্যা এড়াতে ডায়াপারের পরিবর্তে অন্যান্য বিকল্প যেমন প্যাডেড আন্ডারওয়্যার বা কাপড়ের ন্যাপকিন ব্যবহার করা যেতে পারে।
২. শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা
ডায়াপার ব্যবহারের কারণে বাচ্চাদের নিতম্ব এবং উরুর ত্বক ঠিকমতো শ্বাস নিতে পারে না। ফলে সেখানে ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাকের সংক্রমণ হতে পারে, যা বাচ্চার জন্য অত্যন্ত অস্বস্তিকর।
৩. টয়লেট ট্রেনিংয়ে বিলম্ব
ডায়াপার ব্যবহারের ফলে বাচ্চারা অনেক সময় ধরে নিজে থেকে টয়লেট করতে শেখে না। তারা স্বাভাবিকভাবে মূত্র ত্যাগ এবং মলত্যাগের প্রক্রিয়ায় অভ্যস্ত হতে পারে না। ফলে, ডায়াপার তাদের মধ্যে এমন এক অভ্যাস গড়ে তোলে যে তারা যে কোনো সময় এবং যে কোনো স্থানে মূত্র ত্যাগ করতে পারে।
ডায়াপার ব্যবহারের কারণে বাচ্চারা শিখতে পারে না যে কখন এবং কীভাবে টয়লেট ব্যবহার করতে হবে। এভাবে তাদের টয়লেট করার সঠিক সময় এবং স্থান বুঝতে দেরি হয়। এটি তাদের স্বাভাবিক টয়লেট ট্রেনিংয়ে বিলম্ব ঘটায়, যা পরবর্তীতে তাদের এবং তাদের পরিবারের জন্য অসুবিধার কারণ হতে পারে। টয়লেট ট্রেনিংয়ের এই বিলম্ব বাচ্চাদের জন্য কিছুটা মানসিক চাপও তৈরি করতে পারে। যখন বাচ্চারা ডায়াপার ছাড়া চলাচল করার চেষ্টা করে, তখন তারা হয়তো ভয় পেতে পারে বা নিজেদের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলতে পারে। এই পরিস্থিতি তাদের টয়লেট ট্রেনিংয়ের প্রক্রিয়াকে আরও দীর্ঘায়িত করে।
৪. পরিবেশ দূষণ
ডায়াপার ব্যবহার করার ফলে প্রচুর পরিমাণে বর্জ্য তৈরি হয়, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। ডায়াপার গুলো সহজে পচে না এবং তা পরিবেশ দূষণের কারণ হতে পারে।
৫. আর্থিক ব্যয়
ডায়াপার ব্যবহারের ফলে অভিভাবকদের প্রচুর টাকা খরচ করতে হয়। একটি পরিবারে একটি নবজাতক শিশুর জন্য প্রতিদিন গড়ে ৬-৮টি ডায়াপার প্রয়োজন হয়। ধরুন, এক মাসে ৩০ দিন, তাহলে প্রতিমাসে প্রায় ১৮০-২৪০টি ডায়াপারের প্রয়োজন হয়। একটি ডায়াপারের গড় দাম ১৫-২০ টাকা হলে, প্রতি মাসে ডায়াপারের খরচ ২,৭০০-৪,৮০০ টাকার মধ্যে হতে পারে। এভাবে বছরে ডায়াপারের পেছনে প্রায় ৩২,৪০০-৫৭,৬০০ টাকা খরচ হয়।
এই বিপুল অর্থ যদি ডায়াপার কেনায় না খরচ করা হয়, তবে তা পরিবারে অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজে ব্যয় করা যেতে পারে। এই টাকা বাচ্চার স্বাস্থ্য ও পুষ্টির জন্য ব্যয় করা যেতে পারে। স্বাস্থ্যকর খাবার এবং প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও মিনারেলস সমৃদ্ধ খাবার বাচ্চার সঠিক শারীরিক ও মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও প্রয়োজনীয় টিকা প্রদানেও এই অর্থ ব্যয় করা যেতে পারে। বাচ্চার জন্য প্রয়োজনীয় পোশাক, জুতা ও অন্যান্য সামগ্রী কেনার জন্য এই অর্থ ব্যয় করা যেতে পারে। এভাবে বাচ্চার দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করা সহজ হবে।
ডায়াপারের বিকল্প কী?
বাচ্চার ত্বক সুরক্ষিত রাখতে নিয়মিত প্যাডেড আন্ডারওয়্যার ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি ডায়াপারের মতো আরামদায়ক এবং বারবার ধুয়ে ব্যবহার করা যায়। এছাড়াও, বাচ্চাদের বেশি বেশি খোলা জায়গায় রাখতে পারলে তাদের ত্বক শ্বাস নিতে পারে এবং তারা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।
বাচ্চাদের স্বাস্থ্যের জন্য আমরা সবসময় সচেতন থাকি। তাই, ডায়াপারের নেতিবাচক দিকগুলো মাথায় রেখে তাদের আরাম এবং স্বাস্থ্যের জন্য বিকল্প চিন্তা করা উচিত। আশা করি, এই লেখাটি আপনাদের জন্য উপকারী হবে এবং বাচ্চাদের সঠিক যত্ন নেওয়ার জন্য আপনাদের সহায়তা করবে।
GIPHY App Key not set. Please check settings