in

স্টেইনলেস স্টিল নাকি অ্যালুমিনিয়াম, কোন প্যান রান্নায় নিরাপদ?

stainless steel vs aluminum for cooking

বাজারে প্যানের নানাবিধ ধরনের অভাব নেই। সমস্যা হল স্টেইনলেস স্টিল নাকি অ্যালুমিনিয়াম কোন প্যানটি আপনার রান্নার জন্য নিরাপদ হবে সেটা নির্ধারন করা। আপনিও যদি এই একই সমস্যায় ভুগে থাকেন তাহলে আজকের আর্টেকেলটি আপনার জন্য।

রান্নার জন্য সঠিক প্যান বাছাই করার আগে আপনার এটা জেনে রাখা ভালো যে বিভিন্ন রকম রান্নার জন্য বিভিন্ন রকম প্যানের প্রয়োজন হয়। আর এই কারনে এই সব প্যানের নানারকম ধরনও রয়েছে। তাই রান্নার জন্য সঠিক প্যান বাছাই করা গুরুত্বপুর্ন। চলুন এই বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।

আপনি একজন পাকা রাঁধুনি হোন বা রান্না ঘরে একেবারেই নতুন কেউ, সঠিক বাসনপত্র আপনার রান্নায় পার্থক্য আনতে পারে। কেননা রান্নার পাত্র যে উপাদান থেকে তৈরি তা আপনার রান্নাকৃত খাবারের প্রতিটি দিক প্রভাবিত করতে পারে। আপনার হয়ত মনে হতে পারে হাতের কাছে যে প্যানটি রয়েছে তাতেই রান্নার কাজটি সেরে ফেলা যেতে পারে তবে সঠিক প্যান ব্যবহার হলে রান্নার গুনমান ও স্বাদ অনেক বেড়ে যেতে পারে।

মুচমুচে পাকোড়া ভাজা থেকে শুরু করে অল্প আঁচে ধীরে ধীরে রান্না করা তরকারী বাঙ্গালীর প্রতিটি বাড়িতেই দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু এই ভিন্ন ভিন্ন রান্নার জন্য সঠিক প্যান নির্বাচন করবেন কীভাবে? চিন্তা নেই, কোন প্যানটি আপনার কোন রান্নার জন্য উপযুক্ত তা জানার জন্য আমাদের সাথেই থাকুন।

রান্নার জন্য সঠিক প্যান নির্বাচনের পদ্ধতি

১। স্টেইনলেস স্টীল প্যান

স্টেইনলেস স্টীল প্যান নানারকম রান্নার কাজে ব্যবহার করা যায়। এগুলো টেকসই, সাধারনত কোন কিছুর সাথে বিক্রিয়া করে না, মরিচা ও দাগ প্রতিরোধ করতে পারে। এগুলো নানা রকম রান্নার কাজে ব্যবহারের জন্য একেবারে সঠিক পাত্র। এই প্যানগুলো মাংস, সবজি, পনির ইত্যাদি, পেঁয়াজ বাদামী করে ভাজা এমনকি তরকারি রান্নার জন্য মশলা কষিয়ে গ্রেভি তৈরি করার জন্যেও উপযুক্ত। এই প্যানগুলো উচ্চ তাপেও ভালো থাকে তাই মশলা ভাজতে ও ফোড়ন তৈরি করার জন্য খুবই ভালো। এছাড়াও স্টেইনলেস স্টীল অনেক ওভেনেও ব্যবহার করা যায়। তাই এই পাত্রে আপনি গ্যাসের চুলা থেকে শুরু করে ইন্ডাকশন এমনকি ওভেনেও ব্যবহার করতে পারবেন।

২। কাস্ট আয়রন প্যান

কাস্ট আয়রন প্যান অনেক বেশী মজবুত এবং তাপ ধরে রাখার ক্ষমতার জন্য অনেক বেশী জনপ্রিয়। ঢালাই লোহার কড়াই বা তাওয়া আমাদের বাঙ্গালী পরিবারগুলোতে এই কারনে দারুন জনপ্রিয়। এই ভারী প্যানগুলো রুটি, পরোটা, ডোসা ইত্যাদি তৈরির জন্য উপযুক্ত। এই কারনে আপনি যদি এই সব রেসিপি তৈরির জন্য ভারী প্যান কিনতে চান তবে ঢালাই লোহা বা এনামেল ঢালাই লোহার প্যান কিনতে পারেন। যুগ যুগ ধরে আমাদের বাঙ্গালীর রান্নাঘরে ব্যবহৃত হয়ে আসা এই সব ঢালাই লোহার প্যান বা কড়াই উচ্চ তাপমাত্রায় রান্নার জন্য আদর্শ। এছাড়াও সঠিক পদ্ধতি ও যত্ন নিয়ে এই প্যানগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে রান্নার কাজ করতে থাকলে এর পৃষ্ঠ ননস্টিকি প্যানের মত হয় যায়। ফলে তরকারী রান্নার পাশাপাশি এগুলোতে ফ্রাই করা, যে কোন ধরনের ভাঁজা বা যে কোন রান্নাই চমৎকার করা যায়। এই প্যানগুলো গ্যাসের চুলা বা লাকড়ির চুলাতেও ব্যবহার করা যায়। যত্ন নিয়ে ব্যবহার করলে এগুলো বছরের পর বছর ভালো থাকে।

৩। কাঁচের প্যান

বর্তমানে কাঁচের প্যান আমাদের দেশে অনেক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এগুলো বেকিং এর জন্য সবচেয়ে ভালো কারন এগুলো তুলনামূলক ধীরে ধীরে এবং সমানভাবে গরম হয়। বিভিন্ন বেকড ডেজার্ট যেমন, কেক, হালুয়া ইত্যাদি রান্না এই প্যানগুলোতে দারুন ভাবে করা যায়। কাঁচের প্যানের সবচেয়ে ভালো দিক হল, এগুলো অ্যাসিডিক খাবারের সাথে প্রতিক্রিয়া করে না তাই আপনার খাবারের স্বাদ ঠিক যেমন থাকার কথা তেমনই থাকে। এছাড়াও যেহেতু এই প্যানগুলো স্বচ্ছ, তাই ভেতরে রান্নার কী অবস্থা তা আপনি সহজেই রান্নার সময় দেখতে পারবেন। এই প্যানগুলোর আরো একটি ভালো দিক হল, এগুলো পরিস্কার করা সহজ এবং সরাসরি এগুলোকেই টেবিলে খাবার পরিবেশন করতে ব্যবহার করা যেতে পারে।  

৪। তামার প্যান

কপার বা তামার প্যান অসাধারন তাপ পরিবাহিতার জন্য সুপরিচিত। এই প্যানগুলো দ্রুত ও সমানভাবে গরম হয় এবং রান্নার সময় সহজেই তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন করা যায়। তাই সস, ক্যারামেল এবং টেম্পারিং চকোলেট তৈরির মতো সূক্ষ কাজের জন্য তামার প্যান ব্যবহার করতে পারেন। এগুলো জিলাপি, লাড্ডুর মত মিষ্টি তৈরির কাজেও ভালো কাজ করে। তবে তামার প্যানের অন্যান্য প্যানের তুলনায় বেশি যত্নের প্রয়োজন হয়। এছাড়াও এগুলোকে ঝকঝকে রাখার জন্য নিয়মিত পালিশ করতে হবে। 

৫। টেফলন এবং অ্যালুমিনিয়াম প্যান

টেফলন এবং অ্যালুমিনিয়াম প্যান তাদের নন-স্টিকি বৈশিষ্ট্যের জন্য সুপরিচিত। এই প্যানগুলোর উপরিভাগ নন-স্টিকি হওয়ার জন্য রুটি, চিতই পিঠা, ডোসা ইত্যাদি রান্নার জন্য উপযুক্ত। এমনকি ডিম ভাঁজা, মাছ ভাঁজা, প্যানকেক ইত্যাদিও ভালোভাবে রান্না করা যায়। এই প্যানগুলোতে তেল অনেক কম লাগে। তাই কম তেলে রান্নার জন্য এই প্যান সব চেয়ে ভালো। তবে এই প্যানগুলোর নন-স্টিকি সারফেসকে ঠিক রাখতে এবং স্ক্র্যাচিং এড়াতে সাবধানে ধোয়ামোছা করতে হবে।  

পরিশেষে, আপনার রান্নাঘরে ব্যবহার করা যাবে এমন বেশ কিছু প্যান নিয়ে আলোচনা করা হল। স্টেইনলেস স্টিল নাকি অ্যালুমিনিয়াম, কোন প্যানটি আপনার রান্নার জন্য সেরা তা আশাকরি উপরের আলোচনা থেকে বুঝে নিতে পারবেন। তবে যেই প্যানই নির্বাচন করুন না কেন, সঠিক রক্ষনাবেক্ষন ও যত্নের সাথে তা সংরক্ষন করতে হবে।

What do you think?

-1 Points
Upvote Downvote

Written by সানজিদা আলম

একজন ফ্রিল্যান্স কন্টেন্ট রাইটার। টেকনোলজি, স্বাস্থ্য, প্রোডাক্ট রিভিউ এবং ইনফরমেটিভ কন্টেন্ট নিয়ে কাজ করতে ভালো লাগে। লেখালেখির পাশাপাশি ভালোবাসি পড়তে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

Disadvantage of baby diaper Shopping Sheba

কেন বাচ্চাদের ডায়াপার পরা উচিত নয়

Smart Home The Future Home in Bangladesh

স্মার্ট হোম কি? স্মার্ট হোমের সুবিধা ও কিছু আইডিয়া