আপনি যদি কোরিয়ান স্কিনকেয়ার রুটিন অনুসরণ করে হেলদি ও গ্লোয়িং স্কিন পেতে চান, তাহলে এই লেখাটি অবশ্যই আপনার উপকারে আসবে।
কোরিয়ান নারীদের স্কিন কতটুকু চকচকে ও নিঁখুত তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখেনা। তাদের ত্বক এতই সুন্দর যে বাড়তি কোনো মেকআপও সেভাবে প্রয়োজন হয়না। তাদের মতো ব্রণহীন, দাগদীন ও মসৃণ ত্বক পেতে চান প্রতিটি নারী। বিশেষজ্ঞদের মতে, কোরিয়ান নারীদের স্কিনকেয়ার রুটিন একটু আলাদাই বটে। কারণ তারা ত্বকের যত্ন নিতে অনেকগুলো ধাপ অনুসরণ করেন,যেগুলো অন্য দেশে সচরাচর করা হয়না। আজকের লেখায় আপনাদের বিস্তারিতভাবে জানাবো কোরিয়ান স্কিনকেয়ার রুটিনে কী কী ধাপ অনুসরণ করা হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত।
কোরিয়ান স্কিনকেয়ার রুটিনের ১০ টি ধাপ
সাধারণ স্কিনকেয়ার রুটিনের সাথে কোরিয়ান স্কিন কেয়ার রুটিনের মূল পার্থক্য হলো এটিতে ত্বকের ধরণ ও সমস্যা বুঝে অনেকগুলো প্রোডাক্ট একসাথে ব্যবহার করা হয়। আর তাইতো এই স্কিনকেয়ার রুটিন অনুসরণ করলে খুব দ্রুত ত্বকে পজেটিভ চেঞ্জ লক্ষ্য করা সম্ভব হয়। তাহলে চলুন আর দেরি না করে সেই ১০ ধাপ সম্পর্কে জেনে আসা যাক।
ধাপ ০১
ডাবল ক্লিনজিং কোরিয়ার স্কিনকেয়ারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। ফেইস থেকে যাবতীয় ধুলোবালি বা মেকআপ রিমুভ করতে এই ধাপটি অনুসরণ করা হয়। ডাবল ক্লিনজিংয়ের জন্য শুরুতেই কয়েক ফোঁটা অয়েল বেইজড ক্লিনজার নিন এবং পুরো ফেইস শুকনো থাকা অবস্থায় ভালোভাবে ১-২ মিনিট ম্যাসাজ করুন। তারপর সাধারণ তাপমাত্রার পানিতে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
ধাপ ০২
এবার ডাবল ক্লিনজিংয়ের দ্বিতীয় ধাপ কমপ্লিট করার পালা। এই ধাপে নিজের পছন্দের যেকোনো মাইল্ড ও ওয়াটার বেইজড ফেসওয়াশ নিন এবং সেটির সাহায্যে পুরো ফেইস সাধারণ তাপমাত্রার পানিতে আবার ধুয়ে ফেলুন। এতে করে আপনার ত্বকে আর কোনো মেকআপ বা ধুলোবালি অবশিষ্ট থাকবে না।
ধাপ ০৩
আমাদের ত্বকের লোমকূপগুলো বন্ধ হয়ে যাতে ব্রণ, হোয়াইটহেডস অথবা ব্ল্যাকহেডস সৃষ্টি করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে তৃতীয় ধাপে একটি কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েটর ইউজ করুন। কয়েক ফোঁটা এক্সফোলিয়েটর হাতের তালুতে অথবা কটন প্যাডে নিয়ে পুরো ফেইসে ড্যাবিং মোশনে ব্যবহার করুন। বিগিনারদের জন্য উপযুক্ত একটি কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েটর হলো Cosrx এর AHA/ BHA Clarifying Treatment Toner. তবে সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিনের বেশি এটি ব্যবহার করা যাবেনা।
ধাপ ০৪
ত্বকের পিএইচ লেভেল ব্যালেন্স করতে টোনারের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনারা নিজের পছন্দের যেকোনো টোনার ব্যবহার করতে পারেন। তবে পরামর্শ থাকবে অ্যালকোহল ফ্রি টোনারগুলো বেছে নেয়ার, কারণ তাতে স্কিন ড্রাই হয়না।
ধাপ ০৫
কোরিয়ান স্কিনকেয়ারের একটি ইউনিক দিক হলো এসেন্স। এসেন্স এমন একটি প্রোডাক্ট যেটি আমাদের ত্বক হাইড্রেটেড রাখার পাশাপাশি ডেডসেল দূর করতে সাহায্য করে। তাই স্কিনকেয়ার রুটিনের পঞ্চম ধাপে এসে কয়েক ফোঁটা এসেন্স হাতের তালুতে নিয়ে পুরো ফেইসে ব্যবহার করুন। সব স্কিনটাইপে স্যুইটেবল একটি এসেন্স হলো Cosrx Galactomyces 95 Tone Balancing Essence, চাইলে এটি ব্যবহার করে দেখতে পারেন।

ধাপ ০৬
সিরাম ছাড়া হেলদি স্কিন পাওয়া একদমই অসম্ভব। কারণ, সিরামে যে ইনগ্রেডিয়েন্টগুলো থাকে সেগুলো আমাদের ত্বকের গভীরে পৌঁছে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করতে খুবই কার্যকরী। এক্ষেত্রে নিজের স্কিন টাইপ ও স্কিন কন্ডিশন দু’টো বিবেচনা করে সিরাম ব্যবহার করুন। যেমন ধরুন, যদি আপনার ড্রাই স্কিন হয়ে থাকে, তাহলে হায়ালুরনিক অ্যাসিড সিরাম ব্যবহার করতে পারেন।
ধাপ ০৭
সিরাম ব্যবহারের পর ত্বকে আরেকটু হাইড্রেশন দিতে শিটমাস্ক ব্যবহার করা হয়। এটিতে বিভিন্ন অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট, ভিটামিন ও মিনারেল থাকায় ত্বকের জন্য এটি খুবই ভালো কাজ করে। তাই নিজের পছন্দের যেকোন শিট মাস্ক অ্যাপ্লাই করুন এবং ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর উঠিয়ে ফেলুন।
ধাপ ০৮
আপনারা কি জানেন, চোখের আশেপাশের এরিয়াতেই বয়সের ছাপ সবার আগে বোঝা যায়? একারণেই কোরিয়ান নারীরা চোখের নিচে যাতে রিংকেল না পড়ে সেজন্য আই ক্রিম ব্যবহার করেন। আই ক্রিম ডার্ক সাইকেল প্রতিরোধেও খুব ভালো কাজ করে। তাই খুব অল্প পরিমাণে আই ক্রিম নিন এবং চোখের নিচে লাগান। বাজেটের মধ্যে 3W Clinic এর Honey Eye Cream বা Snail Eye Cream ব্যবহার করে দেখতে পারেন। তাছাড়া The Body Shop এর Vitamin E Eye Cream টিও খুবই ভালো।
ধাপ ০৯
কোরিয়ান স্কিনকেয়ার রুটিনে ময়েশ্চারাইজার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কারণ ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের মাধ্যমেই বাকি প্রোডাক্টগুলো সবচেয়ে ইফেকটিভলি কাজ করতে পারে। এক্ষেত্রে পরামর্শ থাকবে, যদি ড্রাই স্কিন হয়ে থাকে, তাহলে অয়েল বেইজড ও যদি অয়েলি স্কিন হয়ে থাকে, তাহলে ওয়াটার বেইজড লাইট ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
ধাপ ১০
যতই স্কিনকেয়ার করুননা কেন, যদি দিনের বেলা সানস্ক্রিন ব্যবহার না করেন, তাহলে পুরো পরিশ্রমই বৃথা যায়। সবাইকে সাজেস্ট করবো অন্তত এসপিএফ ৫০ আছে এমন সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে। আপনি দিনের বেলা বাসায় থাকুন কিংবা বাইরে যান, অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। তবে যদি রাতের বেলা স্কিনকেয়ার করে থাকেন, তাহলে এই ধাপটি স্কিপ করতে পারেন।
পরিশেষে সবাইকে বলতে চাই, এই দশটি ধাপ অনুসরণ করা কিছুটা কঠিন মনে হলেও যদি ধৈর্য্য ধরে অনুসরণ করতে পারেন, তাহলে অবশ্যই ভালো ফলাফল পাবেন।
GIPHY App Key not set. Please check settings