সাপোজিটরি বা ডুস হিসেবে পরিচিত ঔষধটির সঠিক ব্যবহার পদ্ধতি না জানার ফলে অনেকসময় রোগীরা সঠিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হয়। এক্ষেত্রে ফার্মেসীতে বা ডাক্তার বা অন্য কারো কাছে এর ব্যবহার পদ্ধতি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে লজ্জাবোধ, নিজে নিজে না জেনেই এটি ব্যবহার করার প্রবণতা বা ব্যবহার করতে না জানার কথা চিন্তা করে সাপোজিটরি ব্যবহার না করার মত ঘটনা ঘটে থাকে। এছাড়াও এর ব্যবহার পদ্ধতি বা প্রক্রিয়ার মতন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সহ সম্পর্কিত ভিন্ন ভিন্ন দিক নিয়ে অনেকের মনেই রয়ে যায় নানান প্রশ্ন যে প্রশ্নেগুলোর উত্তর লজ্জাবোধের কারণে বেশিরভাগেরই আর জানা হয়ে উঠে না।
তাই আজকের লেখায় সাপোজিটরি নিয়ে এমন কিছু সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করব,
সাপোজিটরি কী?
সাপোজিটরি হল এক ধরনের ঔষধ বিতরন ব্যবস্থা যার মাধ্যমে কঠিন, তরল বা বায়ুবীয় ঔষধ উপাদান বিতরন করা হয় পায়ুপথে প্রয়োগ করার জন্য। সাপোজিটরির শক্ত অথবা স্থিতিস্থাপক আবরণ জিলাটিন নামক আমিষ (প্রোটিন) দিয়ে বা অন্যান্য উপাদান দ্বারা তৈরী হতে পারে যা পায়ুপথের সাধারণ তাপমাত্রায় সহজেই গলে যায় এবং পায়ুপথের ভেতরে ওষুধের সক্রিয় উপাদান মুক্ত করে দেয়।
সাপোজিটরি কি শুধু মলদ্বারের মাধ্যমেই দেহে প্রবেশ করানো হয়?
না, সাপোজিটরি শুধু মলদ্বারের মাধ্যমেই প্রবেশ করানো হয় না। ভিন্ন ধরণের সাপোজিটরি ভিন্ন ভিন্ন প্রবেশপথের মাধ্যমে দেহে প্রবেশ করানো হয়। সাপোজিটরি মূলত ৩ ধরণের হয়ে থাকে। যেমনঃ
১. রেক্টাল সাপোজিটরিঃ
এ ধরণের সাপোজিটরি মলদ্বারে ব্যবহার করা হয়। সচরাচর জ্বর, কোষ্টকাঠিন্যসহ বিভিন্ন সমস্যার জন্য এ ধরণের সাপোজিটরি ব্যবহার করা হয়। তবে এটি ছাড়াও আরো ২ ধরণের সাপোজিটরি রয়েছে৷ এগুলো হলঃ
২. যোনি সাপোজিটরিঃ
চিকিৎসার জন্য মহিলারা যোনিতে এ ধরণের সাপোজিটরি ব্যবহার করে থাকে। এ সাপোজিটরিগুলো ছত্রাকের সংক্রমণ এবং যোনি শুষ্কতার চিকিৎসায় সাহায্য করতে পারে। কেউ কেউ গর্ভনিরোধক হিসেবে জন্ম নিয়ন্ত্রণের জন্যও সাপোজিটরি ব্যবহার করে।
৩. ইউরেথ্রাল সাপোজিটরিঃ
পুরুষরা বিরল ক্ষেত্রে চিকিৎসার জন্য এক ধরনের ইউরেথ্রাল সাপোজিটরি ব্যবহার করতে পারে।
কোন কোন ক্ষেত্রে সাপোজিটরির ব্যবহার সুবিধাজনক?
আপনার একটি সাপোজিটরির প্রয়োজন হতে পারে যদি:
- আপনি যে ওষুধটি গ্রহণ করছেন তা আপনার পরিপাকতন্ত্রে খুব দ্রুত ভেঙে যাবে যদি আপনি এটিকে বড়ি বা তরল হিসাবে গ্রহণ করেন। আপনি ওষুধ গিলতে পারবেন না।
- আপনি বমি করছেন এবং একটি বড়ি বা তরল শরীরে ধারন করতে পারছেন না।
- ওষুধটি মুখ দিয়ে খেতে খুব খারাপ বা তিক্ত স্বাদ।
- এছাড়াও মুখে ঔষধ খাওয়ানো যাচ্ছে না এমন বৃদ্ধ বা শিশু কিংবা অচেতন লোকেদের চিকিৎসা দেয়ার জন্যও সাপোজিটরি ব্যবহার একটি কার্যকরী ব্যবস্থা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
কিভাবে সাপোজিটরি ব্যবহার করবেন?
রেক্টাল সাপোজিটরি ব্যবহার করার আগে এবং পরে আপনার হাত ভালভাবে ধুয়ে নিবেন। সাধারণত ওষুধটি ফয়েলে মোড়ানো থাকে। ব্যবহারের সময় ফয়েলের মোড়কটি সরিয়ে ফেলুন। ব্যবহার করার আগে ডান হাঁটু সামান্য বাঁকিয়ে বাম পাশে শুয়ে পড়ুন। এরপর আপনার আঙুল ব্যবহার করে, মৃদুভাবে
সাপোজিটরিটি মলদ্বারে ভালভাবে প্রবেশ করান (প্রথমে নির্দেশিত প্রান্ত)। পরে, যদি সম্ভব হয় ১৫-২০ মিনিটের জন্য একই অবস্থানে থাকুন যতক্ষণ না আপনি মলত্যাগের জন্য চাপ অনুভব করেন। তবে সাপোজিটরি মলদ্বারে প্রবেশের কিছুক্ষণ পরেই মৃদু মলত্যাগের ইচ্ছা দিলেও সাথে সাথেই মলত্যাগ করতে না যাওয়াই উত্তম। এক্ষেত্রে দেখা যায় শুধুমাত্র সাপোজিটরিটিই বের হয়ে যায়, মলত্যাগ হয় না।
আপনি যদি কোনও শিশুকে এই পণ্যটি ব্যবহার করতে সহায়তা করেন, তাহলে শিশুটিকে বাম পাশ হয়ে শুয়ানো অবস্থায় নীচের পা সোজা করে এবং উপরের পা পেটের দিকে বাঁকিয়ে রাখুন বাম হাটু ভাজ করিয়ে রাখতে বলুন। এরপর আপনার আঙুল ব্যবহার করে, আলতো করে মলদ্বারে সাপোজিটরি প্রবেশ করান (প্রথমে নির্দেশিত প্রান্ত)। কয়েক সেকেন্ডের জন্য নিতম্ব একসাথে ধরে রাখুন। তারপর, তাকে ১৫-২০ মিনিটের জন্য শুয়ে থাকতে বলুন যাতে সাপোজিটরি বের হওয়া থেকে বিরত থাকে।
তবে অবশ্যই মনে রাখবেন, সাপোজিটরি ব্যবহারের সময় তাতে পেট্রোলিয়াম জেলি বা তেল ব্যবহার করবেন না। এটি করলে সাপোজিটরির কার্যকারীতা কমে যেতে পারে।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াঃ
এক্ষেত্রে সাধারণত মলদ্বারে জ্বালা/পোড়া, পেটে অস্বস্তি বা মলে অল্প পরিমাণে শ্লেষ্মা হতে পারে। যদি এই প্রভাবগুলোর মধ্যে যেকোনটি স্থায়ী হয় তবে আপনার ডাক্তার বা ফার্মাসিস্টকে অবিলম্বে বলুন এবং তার পরামর্শ নিন।
GIPHY App Key not set. Please check settings